নিউইয়র্ক ০৩:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

চলে গেলেন জয়ললিতা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:১৬:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ ডিসেম্বর ২০১৬
  • / ১০৫১ বার পঠিত

ঢাকা: চলে গেলেন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর ছয়বারের মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা জয়রাম (৬৮)। তিন মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার (৫ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৩০ মিনিটে চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। জয়ললিতার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁর দল অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাবিড়া মুনেত্রা কাজাগামের (এআইএডিএমকে) নতুন নেতা নির্বাচিত করা হয়েছে পনিরসেলভামকে। সোমবার রাতেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর শপথ নেওয়ার কথা জানায় টাইমস অব ইন্ডিয়া।
এদিকে জয়ললিতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ বহু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং এমপিরা। শোক প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলনেতা করুণানিধি। তামিলনাড়ুতে তিনদিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। জয়ললিতার মৃত্যুর খবরে শোক জানিয়ে টুইটারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লেখেন, জয়ললিতার মৃত্যুতে ভারতের রাজনীতিতে বিশাল এক শূন্যতার সৃষ্টি হলো।
গত ২২ সেপ্টেম্বর শ্বাসকষ্ট এবং ডিহাইড্রেশনের সমস্যা নিয়ে অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। এরপর আর তাঁকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন বলেও জানিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সপ্তাহ খানেক চিকিৎসার পরও বিশেষ কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় সিঙ্গাপুর থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সসক দলকে নিয়ে আসা হয়। তাদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় রোববার (৪ ডিসেম্বর)।
রোববার সন্ধ্যায় মারাত্মক কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ভর্তি করা হয় অ্যাপোলো হাসপাতালের আইসিইউতে। আক্রান্ত হন হৃদরোগে (হার্ট অ্যাটাক)। শারীরিক অবস্থা আরও সংকটাপন্ন হয়ে পড়লে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসযন্ত্রের (লাইফ সাপোর্ট) মাধ্যমে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখা হয়। অ্যাপোলোর বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দল ছাড়াও জয়ললিতার চিকিৎসায় চেন্নাই চলে যান এআইএমএস-এর একটি বিশেষজ্ঞদল। পরামর্শ নেওয়া হয় লন্ডনের ডাক্তারদেরও। কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যায়।
অপরদিকে তাঁর অবস্থার অবনতির খবরে রোববার থেকেই চেন্নাইয়ে অ্যাপোলো হাসপাতালের সামনে শত শত সমর্থক জড়ো হতে থাকেন। প্রার্থনা-আরাধনাও শুরু হয় রাজ্যজুড়ে। এর মধ্যে সোমবার বিকেলে স্থানীয় একাধিক টেলিভিশন চ্যানেল তাঁর মৃত্যুর খবর প্রচার করলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তখন আশ্বস্ত করে, জয়ললিতা বেঁচে আছেন।
সাবেক চলচ্চিত্র তারকা জয়ললিতা ভারতের অত্যন্ত জনপ্রিয় রাজনীতিকদের একজন। তামিলনাড়ুতে তিনি প্রায় দেবতুল্য মর্যাদা পেতেন। তাঁর মৃত্যুতে রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম জানায়, বোববার বিকেলে দু’টি তামিল টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত খবরের জেরে এবং জয়ললিতার দল এআইএডিএমকে সদর দফতরে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকতে দেখে দাবানলের মতো ছড়ায় জয়ললিতার মৃত্যুর খবর। পরে চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, মুখ্যমন্ত্রী বেঁচে আছেন। তবে তার জীবন সংকটাপন্ন। মৃত্যুর খবরে বন্ধ হয়ে যায় কোনো কোনো এলাকার বাস সার্ভিস।
১৯৪৮ সালে জয়ললিতা জন্মগ্রহণ করেন। গোড়া থেকেই নিজের কাজের জন্য তামিলনাড়ুর মানুষের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিলেন জয়ললিতা। প্রথম জীবনে অভিনয় এবং পরবর্তী সময়ে রাজনীতি – দুই মাধ্যমেই তামিলনাড়ুর সাধারণ মানুষের ঘরের মেয়ে হয়ে উঠেছিলেন তিনি। অভিনয় জীবনে ১৪০টিরও বেশি তামিল, তেলুগু এবং কন্নড় ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। ১৯৮৪ সালে প্রথমবার রাজ্যসভার সদস্যপদ পেয়েছিলেন জয়া। তখন থেকেই পাকাপাকিভাবে রাজনীতির হাতেখড়ি। শোনা যায়, তামিলনাড়ুর বিখ্যাত অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ এম জি রামচন্দ্রের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই রাজনীতিতে এসেছিলেন অভিনেত্রী। কিন্তু এরপর থেকে পাকাপাকিভাবে রাজনীতির হয়েই থেকে গিয়েছেন নেত্রী। ১৯৮২ সালে প্রথমবার এআইএডিএমকের সদস্যপদে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। আর এরপর ধীরে ধীরে বহু বাধা অতিক্রম করে শেষটায় এআইএডিএমকে’র সভাপতি পদে আসীন হন নেত্রী। ১৯৯১ সালে প্রথমবার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর বহুবার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তামিলনাড়ুর মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

চলে গেলেন জয়ললিতা

প্রকাশের সময় : ০৮:১৬:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ ডিসেম্বর ২০১৬

ঢাকা: চলে গেলেন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর ছয়বারের মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা জয়রাম (৬৮)। তিন মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার (৫ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৩০ মিনিটে চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। জয়ললিতার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁর দল অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাবিড়া মুনেত্রা কাজাগামের (এআইএডিএমকে) নতুন নেতা নির্বাচিত করা হয়েছে পনিরসেলভামকে। সোমবার রাতেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর শপথ নেওয়ার কথা জানায় টাইমস অব ইন্ডিয়া।
এদিকে জয়ললিতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ বহু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং এমপিরা। শোক প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলনেতা করুণানিধি। তামিলনাড়ুতে তিনদিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। জয়ললিতার মৃত্যুর খবরে শোক জানিয়ে টুইটারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লেখেন, জয়ললিতার মৃত্যুতে ভারতের রাজনীতিতে বিশাল এক শূন্যতার সৃষ্টি হলো।
গত ২২ সেপ্টেম্বর শ্বাসকষ্ট এবং ডিহাইড্রেশনের সমস্যা নিয়ে অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। এরপর আর তাঁকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন বলেও জানিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সপ্তাহ খানেক চিকিৎসার পরও বিশেষ কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় সিঙ্গাপুর থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সসক দলকে নিয়ে আসা হয়। তাদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় রোববার (৪ ডিসেম্বর)।
রোববার সন্ধ্যায় মারাত্মক কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ভর্তি করা হয় অ্যাপোলো হাসপাতালের আইসিইউতে। আক্রান্ত হন হৃদরোগে (হার্ট অ্যাটাক)। শারীরিক অবস্থা আরও সংকটাপন্ন হয়ে পড়লে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসযন্ত্রের (লাইফ সাপোর্ট) মাধ্যমে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখা হয়। অ্যাপোলোর বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দল ছাড়াও জয়ললিতার চিকিৎসায় চেন্নাই চলে যান এআইএমএস-এর একটি বিশেষজ্ঞদল। পরামর্শ নেওয়া হয় লন্ডনের ডাক্তারদেরও। কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যায়।
অপরদিকে তাঁর অবস্থার অবনতির খবরে রোববার থেকেই চেন্নাইয়ে অ্যাপোলো হাসপাতালের সামনে শত শত সমর্থক জড়ো হতে থাকেন। প্রার্থনা-আরাধনাও শুরু হয় রাজ্যজুড়ে। এর মধ্যে সোমবার বিকেলে স্থানীয় একাধিক টেলিভিশন চ্যানেল তাঁর মৃত্যুর খবর প্রচার করলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তখন আশ্বস্ত করে, জয়ললিতা বেঁচে আছেন।
সাবেক চলচ্চিত্র তারকা জয়ললিতা ভারতের অত্যন্ত জনপ্রিয় রাজনীতিকদের একজন। তামিলনাড়ুতে তিনি প্রায় দেবতুল্য মর্যাদা পেতেন। তাঁর মৃত্যুতে রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম জানায়, বোববার বিকেলে দু’টি তামিল টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত খবরের জেরে এবং জয়ললিতার দল এআইএডিএমকে সদর দফতরে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকতে দেখে দাবানলের মতো ছড়ায় জয়ললিতার মৃত্যুর খবর। পরে চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, মুখ্যমন্ত্রী বেঁচে আছেন। তবে তার জীবন সংকটাপন্ন। মৃত্যুর খবরে বন্ধ হয়ে যায় কোনো কোনো এলাকার বাস সার্ভিস।
১৯৪৮ সালে জয়ললিতা জন্মগ্রহণ করেন। গোড়া থেকেই নিজের কাজের জন্য তামিলনাড়ুর মানুষের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিলেন জয়ললিতা। প্রথম জীবনে অভিনয় এবং পরবর্তী সময়ে রাজনীতি – দুই মাধ্যমেই তামিলনাড়ুর সাধারণ মানুষের ঘরের মেয়ে হয়ে উঠেছিলেন তিনি। অভিনয় জীবনে ১৪০টিরও বেশি তামিল, তেলুগু এবং কন্নড় ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। ১৯৮৪ সালে প্রথমবার রাজ্যসভার সদস্যপদ পেয়েছিলেন জয়া। তখন থেকেই পাকাপাকিভাবে রাজনীতির হাতেখড়ি। শোনা যায়, তামিলনাড়ুর বিখ্যাত অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ এম জি রামচন্দ্রের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই রাজনীতিতে এসেছিলেন অভিনেত্রী। কিন্তু এরপর থেকে পাকাপাকিভাবে রাজনীতির হয়েই থেকে গিয়েছেন নেত্রী। ১৯৮২ সালে প্রথমবার এআইএডিএমকের সদস্যপদে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। আর এরপর ধীরে ধীরে বহু বাধা অতিক্রম করে শেষটায় এআইএডিএমকে’র সভাপতি পদে আসীন হন নেত্রী। ১৯৯১ সালে প্রথমবার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর বহুবার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তামিলনাড়ুর মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।