চকবাজার ট্র্যাজেডি : বিশ্ব মিডিয়ার চোখে বড় কারণ অব্যবস্থাপনা

- প্রকাশের সময় : ০৫:২২:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
- / ৮১৩ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারী) প্রধান শিরোনাম ছিল চকবাজারের অগ্নিকান্ড। বিবিসি, সিএনএন, এএফপি, আলজাজিরা, গার্ডিয়ান, রয়টার্স, টেলিগ্রাফসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বেশ গুরুত্ব দিয়ে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। এসব গণমাধ্যমের প্রায় সব কটিতেই অগ্নিকান্ডের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে কর্তৃপক্ষের চরম অব্যবস্থাপনাকে। বিশেষ করে একই ভবনে বসবাস এবং রাসায়নিক পদার্থ সংরক্ষণের বিষয়টিকে উল্লেখ করা হয়েছে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে। বিবিসির খবরে বলা হয়, কয়েক শতকের পুরনো শহর চকবাজারের ভবনগুলো একেবারে গায়ে গায়ে লাগানো। ভবন নির্মাণ এবং জননিরাপত্তা নিয়ে কঠোর নীতিমালা না থাকায় বাংলাদেশে প্রায়ই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। চকবাজারের অগ্নিকান্ডের মতো একাধিক ঘটনায় গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে কয়েক শ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলেও বিবিসির খবরে উল্লেখ করা হয়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যমটি আরো জানায়, মোগল আমলের শহর চকবাজারের রাস্তাগুলো এতটাই সরু যে তাতে কোনো যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতে পারে না। এর মধ্যে বিদ্যুৎ, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগের তার শহরটিকে আরো ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হলো, চকবাজারের বেশির ভাগ বহুতল ভবনের ওপরের তলাগুলোয় মানুষজন বসবাস করে, আর নিচের তলা ব্যবহার করা হয় রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের দোকান কিংবা গুদাম হিসেবে।
২০১০ সালের নিমতলীর ঘটনার কথা উল্লেখ করে বিবিসি জানায়, ওই অগ্নিকান্ডে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়। এরপর তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছিল, আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিক গুদামগুলো যেন অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু গত ৯ বছরে এ ব্যাপারে সরকার কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
ফ্রান্সভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে পাশের একটি কমিউনিটি সেন্টারে থাকা বিয়ের লোকজনও হতাহত হয়। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের বরাত দিয়ে এএফপির খবরে বলা হয়, ‘গুদামের মালিক, সিটি করপোরেশন ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এ ঘটনার জন্য দায়ী।’
রয়টার্সের খবরে চকবাজারের ঘটনাকে ২০১২ সালের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বিবিসির মতো যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ সংবাধমাধ্যমটিও জননিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশের দুর্বল নীতিমালার বিষয়টিকে সামনে এনেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বরাত দিয়ে রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ‘সরকারের উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণেই এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।’ রয়টার্স জানায়, নিমতলী ট্র্যাজেডির পর চকবাজারের বাসিন্দারা রাসায়নিক পদার্থের গুদাম সরিয়ে নিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু তাদের সেই দাবি উপেক্ষিতই থেকে গেছে।
আলজাজিরার খবরে বলা হয়, ভবন নির্মাণের নীতিমালা যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় বাংলাদেশে প্রায়ই ভবনধস কিংবা অগ্নিকান্ডে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে। রাসায়নিক পদার্থ সংরক্ষণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না বলেও উল্লেখ করে আলজাজিরা। উদাহরণ হিসেবে সংবাদমাধ্যমটি রানা প্লাজা থেকে শুরু করে বয়লার বিস্ফোরণের মতো বড় বড় কয়েকটি দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরে।
টেলিগ্রাফের খবরে বলা হয়, নিমতলী ট্র্যাজেডির পর সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে সব ভবনকে সংশ্লিষ্ট নীতিমালার আওতায় আনা হবে এবং রাসায়নিক পদার্থের দোকানগুলোকে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হবে। তবে এখনো সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি।
এক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, ‘একটি কারের পেছনে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মাধ্যমে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয় এবং আলোর গতিতে তা আশপাশের ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। আর যে সড়কে বিস্ফোরণ ঘটে, সেখানে প্রচন্ড যানজট ছিল। এ কারণে অনেকেই সেখানে আটকা পড়ে।’ ‘পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের’ উদ্ধৃতি দিয়ে গার্ডিয়ানের খবরে আরো বলা হয়, ঢাকা শহরে প্রায় এক হাজার রাসায়নিক কারখানা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৮৫০টি গড়ে উঠেছে অবৈধভাবে। ফায়ার সার্ভিসের এক জরিপের ভিত্তিতে পত্রিকাটি আরো জানায়, ঢাকার ৩৬০টি রাসায়নিক পদার্থের গুদাম আবাসিক ভবনে অবস্থিত।
নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, অগ্নিনিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভবনগুলো খুবই নাজুক। বেশির ভাগ ভবনেই নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়। ভবন নির্মাণের নীতিমালা যেটা আছে, তারও যথাযথ প্রয়োগ নেই।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, প্রায় ৪০০ বছর আগে গড়ে ওঠা চকবাজার বিভিন্ন খাবারের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু গত কয়েক দশকে সেখানে জনসংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে রাসায়নিক পণ্যের কারখানা। (সূত্র: কালের কন্ঠ)