হককথা ডেস্ক: অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনী ভূখন্ড গাজায় চলমান ইসরাইলী আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার (১৪ মে) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানায়। অপরদিকে গাজায় আগ্রাসনে যুক্তদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত করা হবে বলে সতর্ক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) চিফ প্রসিকিউটর ফাতু বেনসুদা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৩১ শিশু ও ১৯ নারী রয়েছে। এছাড়া হামলায় আরো আট শ’ ৩০ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাথে সাক্ষাতকারে আইসিসির চিফ প্রসিকিউটর ফাতু বেনসুদা বলেন, গাজায় চলমান সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত হতে পারে। তিনি বলেন, ইসরাইলের কাছ থেকে সহযোগিতা না পেলেও তিনি তদন্ত চালিয়ে যাবেন।
বেনসুদা বলেন, ‘আমরা গুরুত্বের সাথেই এই ঘটনাপ্রবাহ লক্ষ্য করছি। আমরা নিবিড়ভাবে তা পর্যবেক্ষণ করছি। সাথে সাথে আমি মনে করিয়ে দিতে চাই একটি তদন্ত চলছে এবং এই ঘটনার বিবর্তন এমন কিছু হতে পারে আমরা যার সন্ধান করছি।’
গাজায় ইসরাইলী হামলায় নিহতের লাশ দাফনের জন্য নেয়া হচ্ছে। ছবি : সংগৃহীত
এদিকে হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া শুক্রবার ফিলিস্তিনীদের প্রতি বিক্ষোভ অনুষ্ঠানের আহবান জানিয়েছেন। মসজিদুল আকসায় ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর হামলা এবং গাজায় চলমান আগ্রাসনের প্রতিবাদে পশ্চিম তীর ও ইসরাইল ভূখন্ডে বিক্ষোভ অনুষ্ঠানের জন্য তিনি আহ্বান জানান।
ফিলিস্তিনে চলমান অস্থিরতার জেরে ইসরাইলের অভ্যন্তরে ইহুদি ও ইসরাইলি আরবদের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। ফলে দেশটি গৃহযুদ্ধের মতো অবস্থায় রয়েছে। ইতোমধ্যেই চার শ’র বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইসরাইল সরকার বেশির ভাগ সঙ্ঘাতের জন্য আরব মুসলিমদের দায়ী করছে। অন্যদিকে আরবরা বলছে, তারা ইসরাইলি দাঙ্গাবাজদের হাতে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের ঘরবাড়িতে হামলা চালানো হচ্ছে।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গানটজ অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা প্রশমন করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক সমাবেশ ঘটানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
গাজায় ইসরাইলের পূর্বে দেয়া স্থল হামলার ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে গাজা-ইসরাইল সীমান্তে বিপুল সৈন্য ও ট্যাঙ্ক জড়ো করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। তবে এখন পর্যন্ত গাজায় স্থল বাহিনী প্রবেশ করেনি বলে ইসরাইল জানিয়েছে।
অধিকৃত জেরুসালেমের শেখ জাররাহ মহল্লা থেকে ফিলিস্তিনী বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে ইহুলি বসতি স্থাপনে গত ২৫ এপ্রিল ইসরাইলী আদালতের আদেশের জেরে ফিলিস্তিনীদের সাম্প্রতিক বিক্ষোভে পরপর কয়েক দফা মসজিদুল আকসায় হামলা চালায় ইসরাইলী বাহিনী। সোমবার (১০ মে) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে মসজিদুল আকসা থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে ইসরাইলকে আলটিমেটাম দেয় গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনী স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পর গাজা থেকে ইসরাইলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামাস রকেট হামলা শুরু করে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজা থেকে ইসরাইলি ভূখন্ডে শত শত রকেট নিক্ষেপ করেছে হামাস। ইসরাইলী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমে বেশিরভাগ রকেট ধ্বংস করা হলেও বেশ কিছু রকেট ইসরাইলের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানে। শুক্রবার পর্যন্ত এতে এক সৈন্যসহ অন্তত ছয় ইসরাইলি ও এক ভারতীয় নারী নিহত হয়েছেন।
হামাসের রকেট হামলার পর ইসরাইল সোমবার রাত থেকেই গাজায় বিমান হামলা শুরু করে। সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি ও আলজাজিরা।