গাজার হাসপাতালে হামলা চালালো কে? ভিডিও-ছবি যা বলছে
- প্রকাশের সময় : ০৭:০৫:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৩
- / ৪৬ বার পঠিত
আর্ন্তজাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার আল-আহলিল হাসপাতালে গত মঙ্গলবার ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। এ হামলায় প্রায় ৫০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
হামলার পরপরই হামাস দাবি করে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে এমন নৃসংস ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) হামলার দায় অস্বীকার করে এবং তারা দাবি করে গাজার আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের ছোড়া একটি রকেট হাসপাতালটির উপর আঘাত হেনেছে। এমন অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের কারণে— হামলাকারীদের শনাক্ত করার বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়েছে।
ভয়াবহ এই হামলা কে চালিয়েছে সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এজন্য ঘটনাস্থলের ভিডিও ও ছবি বিচার-বিশ্লেষণ করছে তারা।
বিস্ফোরণের সময়
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে হামলার ঘটনা ঘটে। ওই হামলার ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভালো করে খেয়াল করলে, ওই ভিডিওতে ক্ষেপণাস্ত্র/রকেট ধেয়ে আসার শব্দ শোনা যাবে। ওই শব্দের ঠিক পরপরই বিশাল বিস্ফোরণ ও বড় আগুন দেখা যায়।
কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সন্ধ্যা ৬টা ৫৯ মিনিটের দিকে সরাসরি সম্প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, গাজার আকাশে একটি আলোর ঝলকানি উপরের দিকে উঠছে। ওই আলোটি দুইবার জ্বলে ওঠার পর হঠাৎ করে দিক পরিবর্তন করে এরপর সেটি বিস্ফোরিত হয়। এর ঠিক পরপর গাজার দূরের একটি জায়গায় ছোট ও বড় বিস্ফোরণ দেখা যায়।
কয়েকজন বলেছেন, এটি ছিল কোনো রকেটের বিস্ফোরণ।
বিবিসি জানিয়েছে, ২০টি পর্যবেক্ষক সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠানের অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল তারা। যার মধ্যে ৯টি এখন পর্যন্ত কোনো বক্তব্য দেয়নি। পাঁচটি জানিয়েছে তারা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করবে না। আর বাকি ছয়টি বিবিসির সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছে।
এই ছয়টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিবিসি প্রশ্ন করেছিল— বিস্ফোরণের মাত্রা, বিস্ফোরণের আগের শব্দের মাধ্যমে কি হাসপাতালের ভয়াবহ হামলার কারণ নিরূপণ করা যাবে?
এসব বিশেষজ্ঞ যেসব মতামত দিয়েছেন সেগুলো অমিমাংসিত। তারা নিশ্চিত করে কোনো কিছু বলেননি। তবে তিনজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ওই হাসপাতালে যে বিস্ফোরণ দেখা গেছে— সেটির সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত অস্ত্রের সাদৃশ্য নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের ভেন্ডারবিল্ট হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক আন্দ্রেস গানোন বলেছেন, বিস্ফোরণের যে মাত্রা দেখা গেছে, সেটি খুবই ছোট। যার অর্থ রকেটের জ্বালানি উত্তপ্ত হয়ে এ বিস্ফোরণ হয়েছে, এটি কোনো ওয়ারহেড নয়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক জাস্টিন ব্রোঙ্ক বলেছেন, কী কারণে হাসপাতালে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে যেসব প্রমাণ রয়েছে, সেগুলো দেখে মনে হচ্ছে সেখানে কোনো রকেটই বিস্ফোরিত হয়েছে।
গ্যানন আরও বলেছেন, ভিডিওতে যে ক্ষেপণাস্ত্র/রকেটটি দেখা গেছে সেটি নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে কিনা সেটি নিশ্চিত নয়। তবে তিনি বলেছেন, আকাশে আলোর যে ঝলকানি দেখা যাচ্ছিল, তাতে মনে হচ্ছে ওই বস্তুটি ইঞ্জিনসহ একটি রকেট ছিল। যেটি হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়।
তবে পর্যবেক্ষক সংস্থা সিবিলাইনের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষক ভ্যালেরিয়া স্কুটো বলেছেন, ইসরায়েল যে শুধুমাত্র বড় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় এমন নয়। তাদের ড্রোন দিয়ে আকাশ হামলা চালানোর অস্ত্র রয়েছে। এসব ড্রোনে তারা হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে থাকতে পারে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র উত্তপ্ত হয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। তবে এ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বড় ধরনের কোনো গর্তের সৃষ্টি হয় না।
বিস্ফোরণস্থলে থাকা প্রমাণ
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করেছে, তারা যদি হামলা চালাত তাহলে হাসপাতালের আশপাশের ভবনও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হতো। কিন্তু সেখানে এ ধরনের কোনো প্রমাণ দেখা যায়নি। যার অর্থ তাদের অস্ত্র দিয়ে হাসপাতালে হামলা চালানো হয়নি। তবে বিবিসির প্রকাশিত একটি ছবিতে হামলাস্থলে গর্ত, দেওয়াল এবং বেড়া ধ্বংস হওয়ার প্রমাণ দেখা গেছে।
আরেকটি বিষয় হলো যখন কোথাও হামলা হয়— সেখানে হামলায় ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্র বা রকেটের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। কিন্তু গাজার সেই হাসপাতালের কাছে এখন পর্যন্ত হামলায় ব্যবহৃত বস্তুটির সন্ধান পাওয়া যায়নি। সূত্র : বিবিসি