গাজায় যুদ্ধ : প্রথমবারের মতো ইসরায়েলকে সহায়তা বন্ধের হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের
- প্রকাশের সময় : ০২:১৫:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪
- / ৬৯ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: গাজা উপত্যকায় জরুরি মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ বাড়াতে ইসরায়েলকে ৩০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই সময়ের মধ্যে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত না হলে, ইসরায়েলকে দেওয়া কিছু সামরিক সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র কাটছাঁট করবে বলে সতর্ক করেছে ওয়াশিংটন।
খবরে প্রকাশ, ৩০ দিনের মধ্যে গাজার মানবিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ইসরাইলে সামরিক সহায়তা বন্ধের হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই হুমকির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার থাডের প্রথম চালান গ্রহণ করেছে ইসরাইল। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানিয়েছেন, গাজার মানবিক পরিস্থিতি উন্নয়নের স্বার্থে ইসরাইলকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিøনকেন আর প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্রত্যাশিত উন্নয়নের শর্ত দিয়ে গাজায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে বাধা না দিতে বলেছেন তারা।
আমেরিকান সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের এক সাংবাদিক মঙ্গলবার এক্স-এ (সাবেক টুইটার) এই চিঠির বিবরণ পোস্ট করেছেন। এর মাধ্যমে গত বছর যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম সহায়তা বন্ধের হুমকি দিলো বাইডেন প্রশাসন। ইসরায়েলের নিউজ ১২-এর এক সাংবাদিক প্রথম চিঠির বিষয়বস্ত এক্স-এ প্রকাশ করেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছে এমন দুটি সূত্র চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তবে চিঠি নিয়ে মন্তব্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পেন্টাগন তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি। একইভাবে ইসরায়েলী সরকারের পক্ষ থেকেও কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
চিঠিতে বলা হয়েছে ইসরায়েলী কর্তৃপক্ষ কিছু মানবিক সহায়তার ওপর নতুন যাচাই-বাছাইয়ের নিয়ম চালু করার পর থেকে খাদ্য সরবরাহের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে এবং বাণিজ্যিক সরবরাহও কমানো হয়েছে। চিঠিতে ইসরায়েলকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে বেশ কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৫০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া, সহায়তা সরবরাহের জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা এবং সামরিক প্রয়োজন ছাড়া বেসামরিক ফিলিস্তিনীদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ বাতিল করা।
চিঠিতে সতর্ক করে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন ও বজায় রাখার জন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রতিশ্রæতি দিতে ব্যর্থ হলে আমেরিকান নীতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে… এবং প্রাসঙ্গিক আমেরিকান আইনের ওপরও। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিদেশি সহায়তা আইনের ৬২০আই ধারায় যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তা সরবরাহে বাধা দেওয়া দেশগুলোর জন্য সামরিক সহায়তা নিষিদ্ধ করা হয়। চিঠিতে ফেব্রæয়ারীতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জারি করা একটি জাতীয় নিরাপত্তা স্মারকের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের ব্যবহার আন্তর্জাতিক বা যুক্তরাষ্ট্রের আইন লঙ্ঘন করছে না এমন বিষয়ে ইসরায়েলের প্রতিশ্রæতি বিশ্বাসযোগ্য কি না, তা নিয়ে কংগ্রেসে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরের শুরুতে আমেরিকান কর্মকর্তারা বলেছিলেন, গাজায় সামরিক অভিযান পরিচালনার সময় যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করে থাকতে পারে ইসরায়েল।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, ইসরায়েলকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের মধ্যে ‘বিপর্যয়কর পরিস্থিতি’ সমাধানে দ্রæত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সহায়তা সরবরাহ সীমিত করার মাধ্যমে ‘দুর্ভোগ বাড়ানো’ বন্ধ করতে হবে। লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরাইলের নির্বিচার হামলা নিয়েও উদ্বেগ জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, লেবানন পরিস্থিতিটি খুব নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে, গাজা ও লেবানন পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করার দিনই ইসরাইলে পৌঁছেছে অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা-থাডের চালান। ম‚লত: ইরান ও লেবাননের রকেট ও ড্রোন হামলা প্রতিরোধে ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম শতভাগ সফলতা না পাওয়ায় দ্রæততম সময়ে থাডের চালান পাঠানোর উদ্যোগ নেয় বাইডেন প্রশাসন। উল্লেখ্য, ২০১১ সাল থেকে ‘আয়রন ডোম’ ব্যবহার করছে ইসরাইল।