গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এবার যুক্তরাষ্ট্রের, ভেটো দিল চীন–রাশিয়া
- প্রকাশের সময় : ০৪:৩০:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ মার্চ ২০২৪
- / ৫০ বার পঠিত
গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘে উত্থাপিত যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাবে এবার ভেটো দিয়েছে রাশিয়া ও চীন। এতোদিন যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর জন্য অন্যান্য দেশ প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিল। চীন এবং রাশিয়াও তাতে তাল মেলাচ্ছিল। বরাবরই যুক্তরাষ্ট্র সেই প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়ে আসছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রস্তাব ইসরায়েলের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের কঠোর অবস্থানেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এতোদিন যুদ্ধবিরতির পক্ষে কথা বললেও রাশিয়া ও চীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে। মস্কো বলেছে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভন্ডামি’। গাজা পরিস্থিতি নিয়ে ওয়াশিংটন ও তেল আবিবের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন পদক্ষেপ এলো।
ওয়াশিংটন স্পষ্ট করে বলেছে, তারা আশা করে, ইসরায়েল গাজায় আক্রমণের তীব্রতা কমিয়ে আনবে। যেখানে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কমপক্ষে ৩১ হাজার ৯৮৮ জন নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশ নারী ও শিশু।
ওয়াশিংটন আরও বলেছে, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার পরিকল্পনা ছাড়া রাফাহ শহরে ইসরায়েলি হামলাকে তারা সমর্থন করবে না। পাশাপাশি গাজায় আরও মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য ইসরায়েলকে অনুরোধও করা হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল তার প্রধান মিত্রের সমর্থন ছাড়াই রাফাহে একটি পরিকল্পিত স্থল অভিযান পরিচালনা করবে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আলোচনার জন্য তেল আবিবে অবস্থানকালে বলেছেন, এই ধরনের সামরিক অভিযান সমীচীন নয়।
তিনি বলেছেন, এ ধরনের অভিযানে আরও বেশি বেসামরিক লোকের প্রাণহানির ঝুঁকি রয়েছে। এটি আরও বড় বিপর্যয় ঘটার ঝুঁকি তৈরি করবে, সেই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলকে আরও বিচ্ছিন্ন করার এবং দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলবে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতা সম্পন্ন পাঁচ স্থায়ী সদস্যের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একটি। এর আগে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে উত্থাপিত প্রস্তাবগুলো যুক্তরাষ্ট্র ঠেকিয়ে দিয়েছে। বলেছে, এ ধরনের পদক্ষেপ ভুল হবে, যখন যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির জন্য ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে আলোচনা চলছে।
তবে শুক্রবার জাতিসংঘে পাঠানো প্রস্তাবে কিছু সাবধানি শব্দচয়ন সংবলিত খসড়ায় প্রকাশ্যে অবস্থান পরিবর্তন করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রের লিখিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘নিরাপত্তা পরিষদ, একটি অবিলম্বে এবং টেকসই যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করে এবং সেই লক্ষ্যে দ্ব্যর্থহীনভাবে সমস্ত অবশিষ্ট জিম্মির মুক্তির ক্ষেত্রে এই জাতীয় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার জন্য চলমান আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে।’
রাশিয়া ও চীন খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দিলেও ১৫ সদস্যের কাউন্সিলের ১১টি দেশ এর পক্ষে ভোট দিয়েছে। আলজেরিয়া বিপক্ষে ভোট দিয়েছে এবং গায়ানা ভোটদানে বিরত থেকেছে। ভোটের আগে জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটিকে ‘অতিমাত্রায় রাজনৈতিক’ বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, এটিতে রাফাহে ইসরায়েলের পরিকল্পিত আক্রমণ এড়াতে কিছুই বলা হয়নি।
গাজার ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি জনগণের অর্ধেকেরও বেশি দক্ষিণের শহর রাফাহে আশ্রয় নিয়েছে। ইসরায়েল বলছে, সেখানে হামাস নেতারা লুকিয়ে আছেন এবং হামাসের যোদ্ধারা এখনো সক্রিয়। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস–গ্রিনফিল্ড রাশিয়া এবং চীনের পদক্ষেপকে ‘অত্যন্ত নিন্দনীয়’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়া এবং চীন কেবল যুক্তরাষ্ট্র প্রণীত একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে চায়নি, কারণ এতে তারা এই কাউন্সিলকে সফল হওয়ার চেয়ে বরং আমাদেরকে ব্যর্থ দেখতে পাবে।’
এদিকে নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পরিস্থিতির ‘গুরুত্ব বোঝানোর’ চেষ্টা করছে। ‘জিম্মিদের মুক্তির সঙ্গে যুদ্ধবিরতি সম্পর্কিত’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি এমন একটি বিষয় যা ভেটো দেওয়া দেশগুলোও সমর্থন দিয়ে পাশে থাকতে পারে।’
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, তাঁর দেশ এখন একটি বিকল্প সমাধান নিয়ে কাজ করবে। তিনি বলেন, ‘লক্ষ্য করা জরুরি যে, যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান পরিবর্তন করেছে। এখন খুব স্পষ্টভাবে, একটি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার জন্য তাদের আগ্রহ দেখিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে, আমেরিকানরা এ ব্যাপারে গুটিয়ে ছিল। এখন সেই সংযম ভেঙেছে।’ সূত্র : আজকের পত্রিকা।