নিউইয়র্ক ০৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

গাজায় ইসরাইলের হামলা দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশ করেছে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৫:৫৮:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৩
  • / ১৪৪ বার পঠিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের স্থল অভিযান দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। শনিবার এক টেলিভিশন ভাষণে একে ‘দীর্ঘমেয়াদী ও কঠিন’ যুদ্ধ এবং ইহুদিদের টিকিয়ে রাখতে তিন হাজার বছরের পুরনো যুদ্ধ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমরা জিতব। আমরা জয়ী হব। হামাসকে পরাজিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’

হামাসকে পরাস্ত করতে ইসরাইলি অতিরিক্ত স্থল বাহিনী এখন গাজা উপত্যকার সর্বত্র মোতায়েন রয়েছে বলে তিনি জানান। তার এমন ঘোষণার পরপরই শনিবার রাতে দক্ষিণ ইসরাইল থেকে গাজায় একাধিক হামলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে গাজা শহরকে একটি ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ ঘোষণা দিয়ে বাসিন্দাদের দক্ষিণে চলে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্কীকরণ লিফলেট ফেলা হয়েছে। ইন্টারনেট মনিটরিং গ্রুপ নেটব্লকস বলেছে, গাজা উপত্যকায় শুক্রবার থেকে টেলিফোন লাইন ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় সেখানকার বেসামরিক নাগরিকরা বহির্বিশ্ব থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। তবে রবিবার সকাল থেকে তা আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

গত সাতই অক্টোবর হামাসের আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এ লড়াইকে ইসরাইলের ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ’ হিসেবে অভিহিত করে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তিনি বলেন: ‘আমরা যুদ্ধ করব এবং আমরা আত্মসমর্পণ করব না। আমরা স্থলে বা আকাশে কোথাও সৈন্য প্রত্যাহার করব না।’ পশ্চিমা দেশ ও আরব বিশ্বের মিত্ররা ইসরাইলের পাশে আছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এর আগে আজ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগান ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনেন। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী কারও নাম উল্লেখ না করেই বলেছেন, ‘আমাদেরকে যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করবেন না। আমাদের সৈন্যদের যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা ভণ্ডামির শামিল। আমরা বিশ্বের সবচেয়ে নৈতিক সেনাবাহিনী।’

এদিকে নেতানিয়াহুর ঘোষণার ফলে গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করা একটি গৌণ উদ্দেশ্যে পরিণত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত সাতই অক্টোবর ইসরাইল থেকে অপহৃত ২২০ জনেরও বেশি জিম্মির বিনিময়ে হামাস ইসরাইলের কারাগারে থাকা সব ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তির প্রস্তাব দেয়। হামাস এ পর্যন্ত কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দিলেও এখনও বেশিরভাগ তাদের হাতে বন্দি রয়েছে। নেতানিয়াহু হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া ইসরাইলিদের পরিবারের সাথে দেখা করেছেন, যারা গাজায় তীব্র হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জিম্মিদের নিরাপত্তা ও মুক্তি নিশ্চিত করতে ইসরাইল গাজায় সামরিক হামলা থামাতে পারে, যারা এমনটা আশা করেছিলেন তারা নেতানিয়াহুর ঘোষণায় অনেকটাই হতাশ।

হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের এই যুদ্ধকে তিন স্তরে ভাগ করার কথা জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। গত সপ্তাহে, পার্লামেন্ট কমিটিকে তিনি বলেছেন, ‘প্রথম পর্যায়ে অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল, হামাসকে পরাজিত ও ধ্বংস করার জন্য তাদের অবকাঠামো ধ্বংস করা।’ তিনি দ্বিতীয় পর্যায়টিকে ক্রমাগত লড়াই হিসাবে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘দ্বিতীয় পর্যায়ে ইসরাইলি সেনারা, হামাস সদস্যদের খুঁজে বের করে তাদের নির্মূল করার লড়াই চালিয়ে যাবে।’ এবং তৃতীয় পর্যায়ে, ‘ইসরাইলের নাগরিকদের জন্য নতুন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হবে,’ গ্যালান্ট বলেন।

গত সাতই অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে ইসরাইলের পাল্টা হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে আট হাজার ছাড়িয়েছে। শুক্রবার, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটিও অবলম্বে গাজায় সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি গাজায় ত্রাণ সহায়তা সরবরাহের জন্য বার বার গাজায় প্রবেশের আবেদন জানিয়ে আসছে। শনিবার গভীর রাতে রেড ক্রস জরুরি সতর্কতা জারি করে। ‘বিশাল বোমাবর্ষণ ও সামরিক অবরোধের মধ্যে গাজায় ২০ লাখ মানুষের কোনও পালানোর জায়গা নেই, তারা আটকা পড়েছে’। সূত্র : বিবিসি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

গাজায় ইসরাইলের হামলা দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশ করেছে

প্রকাশের সময় : ০৫:৫৮:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের স্থল অভিযান দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। শনিবার এক টেলিভিশন ভাষণে একে ‘দীর্ঘমেয়াদী ও কঠিন’ যুদ্ধ এবং ইহুদিদের টিকিয়ে রাখতে তিন হাজার বছরের পুরনো যুদ্ধ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমরা জিতব। আমরা জয়ী হব। হামাসকে পরাজিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’

হামাসকে পরাস্ত করতে ইসরাইলি অতিরিক্ত স্থল বাহিনী এখন গাজা উপত্যকার সর্বত্র মোতায়েন রয়েছে বলে তিনি জানান। তার এমন ঘোষণার পরপরই শনিবার রাতে দক্ষিণ ইসরাইল থেকে গাজায় একাধিক হামলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে গাজা শহরকে একটি ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ ঘোষণা দিয়ে বাসিন্দাদের দক্ষিণে চলে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্কীকরণ লিফলেট ফেলা হয়েছে। ইন্টারনেট মনিটরিং গ্রুপ নেটব্লকস বলেছে, গাজা উপত্যকায় শুক্রবার থেকে টেলিফোন লাইন ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় সেখানকার বেসামরিক নাগরিকরা বহির্বিশ্ব থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। তবে রবিবার সকাল থেকে তা আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

গত সাতই অক্টোবর হামাসের আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এ লড়াইকে ইসরাইলের ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ’ হিসেবে অভিহিত করে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তিনি বলেন: ‘আমরা যুদ্ধ করব এবং আমরা আত্মসমর্পণ করব না। আমরা স্থলে বা আকাশে কোথাও সৈন্য প্রত্যাহার করব না।’ পশ্চিমা দেশ ও আরব বিশ্বের মিত্ররা ইসরাইলের পাশে আছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এর আগে আজ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগান ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনেন। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী কারও নাম উল্লেখ না করেই বলেছেন, ‘আমাদেরকে যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করবেন না। আমাদের সৈন্যদের যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা ভণ্ডামির শামিল। আমরা বিশ্বের সবচেয়ে নৈতিক সেনাবাহিনী।’

এদিকে নেতানিয়াহুর ঘোষণার ফলে গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করা একটি গৌণ উদ্দেশ্যে পরিণত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত সাতই অক্টোবর ইসরাইল থেকে অপহৃত ২২০ জনেরও বেশি জিম্মির বিনিময়ে হামাস ইসরাইলের কারাগারে থাকা সব ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তির প্রস্তাব দেয়। হামাস এ পর্যন্ত কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দিলেও এখনও বেশিরভাগ তাদের হাতে বন্দি রয়েছে। নেতানিয়াহু হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া ইসরাইলিদের পরিবারের সাথে দেখা করেছেন, যারা গাজায় তীব্র হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জিম্মিদের নিরাপত্তা ও মুক্তি নিশ্চিত করতে ইসরাইল গাজায় সামরিক হামলা থামাতে পারে, যারা এমনটা আশা করেছিলেন তারা নেতানিয়াহুর ঘোষণায় অনেকটাই হতাশ।

হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের এই যুদ্ধকে তিন স্তরে ভাগ করার কথা জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। গত সপ্তাহে, পার্লামেন্ট কমিটিকে তিনি বলেছেন, ‘প্রথম পর্যায়ে অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল, হামাসকে পরাজিত ও ধ্বংস করার জন্য তাদের অবকাঠামো ধ্বংস করা।’ তিনি দ্বিতীয় পর্যায়টিকে ক্রমাগত লড়াই হিসাবে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘দ্বিতীয় পর্যায়ে ইসরাইলি সেনারা, হামাস সদস্যদের খুঁজে বের করে তাদের নির্মূল করার লড়াই চালিয়ে যাবে।’ এবং তৃতীয় পর্যায়ে, ‘ইসরাইলের নাগরিকদের জন্য নতুন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হবে,’ গ্যালান্ট বলেন।

গত সাতই অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে ইসরাইলের পাল্টা হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে আট হাজার ছাড়িয়েছে। শুক্রবার, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটিও অবলম্বে গাজায় সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি গাজায় ত্রাণ সহায়তা সরবরাহের জন্য বার বার গাজায় প্রবেশের আবেদন জানিয়ে আসছে। শনিবার গভীর রাতে রেড ক্রস জরুরি সতর্কতা জারি করে। ‘বিশাল বোমাবর্ষণ ও সামরিক অবরোধের মধ্যে গাজায় ২০ লাখ মানুষের কোনও পালানোর জায়গা নেই, তারা আটকা পড়েছে’। সূত্র : বিবিসি।