কোন দেশে ধর্ষণের সাজা কেমন

- প্রকাশের সময় : ১২:০৯:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ অক্টোবর ২০২০
- / ৮৪ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: সারা বিশ্বে ধর্ষণের সংখ্যা বাড়ছে দ্রæতগতিতে। সাম্প্রতিক সময়ে যেন ধর্ষণের প্রতিযোগিতা চলছে দেশে দেশে। নীতি আর নৈতিকতা হারিয়ে গেছে যেন এই পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে। তার পরও এই নৈতিকতার অবক্ষয় রুখতে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। চলুন জেনে নিই এমনই কিছু দেশে ধর্ষণের শাস্তির আইন সম্পর্কে-
বাংলাদেশ
দেশে ধর্ষণের শাস্তি কি তা বাংলাদেশ দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৩৭৬ ধারায় বলা হয়েছে। এই ধারায় ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড। এই ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি ধর্ষণের অপরাধ করে, তবে সে ব্যক্তি যাবজীবন কারাদন্ডে, অথবা দশ বৎসর পর্যন্ড যেকোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থ দন্ডেও দন্ডিত হবে, যদি না ধর্ষিত স্ত্রীলোকটি তার নিজ স্ত্রী হয় ও বারো বৎসরের কম বয়স্কা না হয়; যদি তদ্রæপ হয়, তবে সে ব্যক্তি দুই বৎসর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে, অথবা অর্থ দন্ডে, অথবা উভয়বিধ দন্ডেই দন্ডিত হবে।’
এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৯ নম্বর ধারায়ও ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের কথা বলা আছে। তবে এ আইনে ধর্ষণের ফলে মৃত্যু হলে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডে কথা বলা আছে। ৯ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডণীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদন্ডে দন্ডণীয় হইবেন। (২) যদি কোন ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ পরবর্তী তাহার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদন্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডণীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ডেও দন্ডণীয় হইবেন। (৩) যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ফলে উক্ত নারী বা শিশুর মৃত্যূ ঘটে বা তিনি আহত হন, তাহা হইলে ওই দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদন্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডণীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ডেও দন্ডণীয় হইবেন।’ (৪) যদি কোন ব্যক্তি কোন নারী বা শিশুকে (ক) ধর্ষণ করিয়া মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডণীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডণীয় হইবেন।’
ভারত
প্রতিবেশি দেশ ভারতে ২০১৩ সালে ধর্ষণের শাস্তি আগের চেয়ে কঠোর করা হয়েছে। দেশটিতে বিশেষ ক্ষেত্রে ধর্ষককে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হচ্ছে। তবে সচরাচর ৭ বছর থেকে ১৪ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়।
চীন
এশিয়ার বড় দেশ চীনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় ধর্ষকের যৌনাঙ্গ কেটে দেওয়া হয়।
ইরান
এশিয়ার আরেক দেশ ইরানে সাধারণত ধর্ষককে জনসম্মুখে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা গুলি করে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধর্ষিতার অনুমতি নিয়ে ধর্ষককে জনসম্মুখে একশ’ দোররা মারা অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়।
গ্রিস
গ্রিসে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। আর এই শাস্তি কার্যকর করা হয় আগুনে পুড়িয়ে।
মিশর
মিশরে জনাকীর্ণ এলাকায় জনসম্মুখে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
উত্তর কোরিয়া
উত্তর কোরিয়ায় ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। ধর্ষককে ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে মাথায় গুলি করে এই শাস্তি কার্যকর করা হয়।
আফগানিস্তান
আফগানিস্থানে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। আদালতের রায়ের চার দিনের মধ্যে ধর্ষকের মাথায় গুলি করেই রায় কার্যকর করা হয়।
সৌদি আরব
সৌদি আরবে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তি মৃত্যুদন্ড। জনসম্মুখে ধর্ষকের শিরচ্ছেদ করে এই সাজা কার্যকর করা হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাত
সংযুক্ত আরব আমিরাতে যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদন্ড। রায়ের সাতদিনের মধ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে সাজা কার্যকর করা হয়।
ফ্রান্স
ফ্রান্সে ধর্ষণের শাস্তি কি তা ভিকটিমের ক্ষতি কতটা গুরুতর, তার ওপর নির্ভর করে। সেখানে ধর্ষকের সাজা ৩০ বছরের কারাদন্ড থেকে আমৃত্যু কারাদন্ড দেওয়ার নজির রয়েছে। তবে ১৫ বছরের কারাদন্ডেরও বিধান আছে।
নেদারল্যান্ড
নেদারল্যান্ডসে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে ৪ বছর থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড দেওয়া হয়। ওই দেশে যেকোনো ধরনের যৌন নিপীড়ন, অনুমতি ছাড়া জোর করে চুম্বনও এ ধরনের অপরাধ হিসেবে গণ্য করে শাস্তি দেওয়া হয়ে থাকে।
রাশিয়া
বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্র রাশিয়ায় ধর্ষণের শাস্তি ৩ বছর থেকে ৩০ বছর কারাদন্ড।
যুক্তরাষ্ট্র
বিশ্বের আরেক শক্তিধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রে দুই ধরনের আইন প্রচলিত রয়েছে। এগুলো হলো- অঙ্গরাজ্য আইন এবং ফেডারেল আইন। ফেডারেল আইনে মামলা হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়। তবে অঙ্গরাজ্য আইনে একেক অঙ্গরাজ্যে একেক রকম শাস্তি।
নরওয়ে
নরওয়েতে ধর্ষকের সাজা ৪ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদন্ড।
ইসরায়েল
ইসরায়েলে ধর্ষণের শাস্তি ৪ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১৬ বছরের কারাদন্ড।
সূত্র: স্কুপহুপ, ওয়েবসাইট। (দৈনিক কালের কন্ঠ)