আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিচ্ছিন্ন সহিংসতা, বিস্ফোরণ ও বিরোধী দলগুলোর নানা অভিযোগের মধ্য দিয়ে রোববার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায় পুরসভা (সিটি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।
এ ভোটে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিরোধী বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিআইএম জাল ভোটের অভিযোগ তুলে। তবে তৃণমূল এসব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
২০২০ সালের মে মাসে এ ভোট হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে তা পিছিয়ে যায়। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিরোধী বিজেপি, সিপিআইএম ও কংগ্রেসের চেয়ে এগিয়ে আছে তৃণমূল।
এদিন কলকাতা শহরের ১৪৪টি ওয়ার্ডের ৪ হাজার ৯৫৯টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। মোট ৪০ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫২ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছেন।
হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়, সকালে ভোট শুরুর পর বেশ উৎসবের মেজাজেই চলে ভোটগ্রহণ। এরপরই বুথ জ্যাম, জালভোট, মারধর, ভুয়া ভোটার, বোমাবাজিসহ নানা অভিযোগ তোলে বিরোধী দলগুলো।
এ নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অভিযোগ জমা দেয় বিজেপির প্রতিনিধিদল।
ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ এনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ডাক দেন। তার দাবি, এই নির্বাচন সুষ্ঠু এবং অবাধ হয়নি। তাই পথে নেমে তারা প্রতিবাদ জানাবেন।
জাল ভোটের অভিযোগ এনেছে সিপিআইএমও। এ অভিযোগে বাঘাযতীনে পথ অবরোধ করেন বাম কর্মী-সমর্থকরা। দলীয় পতাকা হাতে বাঘাযতীন মোড়ে রাস্তায় বসে পড়েন বাম কর্মী-সমর্থকরা।
কলকাতার বেহালার ১২১ নম্বর ওয়ার্ডেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিপিআইএম প্রার্থী আশিস মণ্ডলকে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া বিভিন্ন বুথে বুথ-জ্যামেরও অভিযোগ ওঠে ঘাসফুল শিবিরের বিরুদ্ধে।
নগরীর ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেস পোলিং এজেন্টকে মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ওয়ার্ডের খান্না হাই স্কুল ও শিয়ালদহে টাকি হাইস্কুলের সামনে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অন্তত একজন আহত হয়েছেন। এর জেরে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয় ওই ওয়ার্ডে।
এদিন সিপিআইএম, কংগ্রেস ও বিজেপি মিলিতভাবে বিক্ষোভ দেখিয়েছে উত্তর কলকাতার বড়তলা থানার সামনে। তিন বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকরা একসঙ্গে বসে স্লোগান দেন তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। অনেক স্থানে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখান সিপিআইএমের নেতাকর্মীরা।
খিদিরপুরে সিপিআইএম প্রার্থীর গাড়ি ভঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সিপিআইএম কর্মীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান।
তবে জালভোট, বোমাবাজি, মারধোরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিকেল ৪টার দিকে ভ্রাতৃবধূ, তথা ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থীকে নিয়ে মিত্র ইনস্টিটিউশনে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
তিনি বিরোধীদের সব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দেন। পরে প্রার্থী কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ভোট দিতে দেন মমতা।
ভোট দিতে এসে মমতা বলেন, ‘কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে এখনও পর্যন্ত ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে, যা কার্যত রেকর্ড। আমি খুব খুশি মানুষ শান্তিতে ভোট দিতে পেরেছেন। ভোট ভালই হচ্ছে। কলকাতা পুলিশ খুব দক্ষতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। আর যারা নানা অভিযোগ করছেন সেসব ভিত্তিহীন। নাটক করছেন।’
বাঘাযতীন মোড়ে রাস্তায় বসে অবরোধ বাম নেতা-কর্মীদের
তবে বিরোধীদের অভিযোগ নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমকে অনুরোধ করব আপনাদের কাছে যদি কোনও ফুটেজ থাকে, কোন প্রমাণ করতে পারেন তৃণমূল কংগ্রেসের কেউ এ ঘটনায় যুক্ত রয়েছেন সেক্ষেত্রে আমরা কড়া ব্যবস্থা নেব।’
অভিষেক বলেন, ‘তৃণমূলের কোনও কর্মী, সমর্থক বা নেতা যদি যুক্ত থাকেন, আপনারা সেই ফুটেজ প্রকাশ্যে আনুন। পাবলিক ডোমেনে আনুন। সামনে আনুন। দলীয় স্তরে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেব।’