নিউইয়র্ক ০৬:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

করোনা সংকট : যুক্তরাষ্ট্র পারলেও বাংলাদেশ কি পারবে, প্রশ্ন হারারির

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:২৯:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২০
  • / ১৭৫ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক: করোনাভাইরাস সংকট থেকে উদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্র ২ ট্রিলিয়ন বা ২ লাখ কোটি ডলার উদ্ধার প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারে, কিন্তু ইকুয়েডর বা মিসর বা বাংলাদেশ কি তা পারবে? এ প্রশ্ন তুলেছেন ইসরায়েলের জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইউভাল নোয়া হারারি। করোনা সংকট থেকে উদ্ধারে বৈশ্বিক পরিকল্পনা নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। বর্তমান সংকট নিয়ে অধ্যাপক হারারির সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন গণমাধ্যম এনপিআরের উইকেন্ড এডিশন সানডের উপস্থাপক লুলু গার্সিয়া-নাভারো। ওই অডিও সাক্ষাৎকারে হারারি বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। এই কথোপকথনের মুখ্য বিষয় ছিল করোনা মহামারি থেমে গেলে কী ঘটবে। এ নিয়ে নিজের মত তুলে ধরেন জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ইউভাল নোয়া হারারি।

অধ্যাপক হারারি বলেন, ‘করোনার এই সময়ে বদলে যাচ্ছে সবকিছু। আমরা যেভাবে কাজ করছি, জীবনধারণ করছি, যোগাযোগ করছি যা সরকারের কাছে যা প্রত্যাশা করছি সব বদলে যাচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারি আমাদের জীবনে এ বদল এনেছে।’ এ মহামারির সময় বিস্তৃত সামাজিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রসঙ্গে হারারি বলেন, ‘সবখানেই পরীক্ষা চলছে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কোর্স অনলাইনে নেওয়া হয়েছে। কয়েক বছর ধরেই ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু করা হয়ে ওঠেনি। এখন আমরা বিশাল পরীক্ষায় পড়েছি। ভাবুন তো, যখন পুরো বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে নেওয়া হবে, তখন কী হতে পারে? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয় নিয়ে কয়েক বছর ধরে কথাবার্তা চলছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার এ পথে পা বাড়িয়েছে। অফিস বা কারখানায় না গিয়ে লাখ লাখ মানুষ যখন ঘরে থেকে কাজ করবে, তখন কী হবে। তাই এগুলো সবই সামাজিক পরীক্ষার অংশ, যা বিস্তৃত আকারে করা হচ্ছে। এটা পৃথিবী বদলে দিতে পারে। কী ঘটতে পারে আমরা তার পূর্বাভাস দিতে পারি। কারণ, আসল ঘটনা হচ্ছে আমাদের অনেক পছন্দের বিষয় আছে। এ মহামারি থেকে শুধু আমরা একটি পূর্বনির্ধারিত ফল পাব, এমনটা নয়।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে হারারি বলেন, ‘এ সংকটের ফলে সংগঠিত শ্রম ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হতে পারে। অথবা আমরা প্রবণতা বিপরীত দিকে নিতে পারি। মানুষ বুঝতে পারবে সরকারি অর্থায়নে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা থাকার মতো একটা সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর গুরুত্ব কতটা। এটা যেকোনো দিকেই যেতে পারে। মানুষকে এটা বুঝতে হবে যে আমাদের অনেক পছন্দ রয়েছে। ইতিহাস যখন দ্রুত এগিয়ে চলেছে, তখন এটি একটি সুযোগের ছোট্ট জানালা। এটি দ্রুত চলে যাচ্ছে। আগে যেসব ধারণা শুনে পাগলের প্রলাপ মনে হতো, সরকার এখন তা পরীক্ষা করে দেখার চেষ্টা করতে ইচ্ছুক। এবং এটি শেষ হয়ে গেলে আবার আগের জায়গায় চলে যেতে পারে। ২০২১ সালে (যুক্তরাষ্ট্রের) যিনিই প্রেসিডেন্টে হোন না কেন, এটি মূলত এক পার্টি শেষ হওয়ার পরে আরেক পার্টিতে আসার মতো। একটাই কাজ বাকি থাকবে, তা হলো ময়লা বাসন পরিষ্কার করা। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সরকার ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করবে। তাই আমরা এখন যে সমস্যার মুখে রয়েছি তা বুঝতে পারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু স্বাস্থ্য খাতে সীমাবদ্ধতা নয়, কতজন আক্রান্ত হলো বা কতটা ভেন্টিলেটর আছে, এসব বিষয়ে আটকে থাকা নয় বরং সম্পদ কারা পাবে, সেটা বিবেচনা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

অধ্যাপক হারারির মতে, বর্তমান পরিস্থিতি এমন যে বছরের পর বছর এবং দশকের পর দশক ধরে মানুষের ভেতরে গেড়ে বসা বদ্ধমূল ধারণা দ্রুতই উল্টে যেতে পারে। বেশির ভাগ দেশে রাজনীতিকদের পুরোপুরি হতবাক করে দিয়েছে এটি। এ পরিস্থিতির জন্য তারা মোটেও প্রস্তুত ছিল না। কী করতে হবে, তার কোনো পরিকল্পনা তাদের কাছে ছিল না। তাই তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করে দেওয়ার এটি দুর্লভ একটি সুযোগ। সাধারণ সময়ে তারা যা ভাবত না, এখন তা চেষ্টা করার সময়। কিন্তু এটার ফল উভয়মুখী হতে পারে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগের বিষয়ে অধ্যাপক হারারির ভাষ্য, ‘একটি উদ্বেগ হলো (দেশে দেশে) স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা এবং একনায়কতন্ত্রের উত্থান। জরুরি পরিস্থিতির জন্য এটি কুখ্যাত। মানুষ তার জীবনভয়ে ভীত। অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে। মানুষ প্রত্যাশা করে শক্তিশালী নেতৃত্ব, যিনি সবকিছু জানেন এবং তাদের দেখভাল করতে সক্ষম। বিশ্বের কিছু দেশে তা ঘটতেও দেখা যাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে হাঙ্গেরির কথা বলা যায়। ইসরায়েলের দৃষ্টান্তও দেওয়া যায়। সুতরাং আমরা একটি স্বৈরতান্ত্রিক দিকনির্দেশনায় যেতে পেরেছি। সবকিছু নজরদারি করার জন্য এখন এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতেও নজরদারি করার নতুন পদ্ধতির প্রয়োগ আমরা দেখছি। জরুরি প্রয়োজন ফুরালে এটি তুলে নেওয়া হবে—এমন প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না।’

ইসরায়েলের প্রসঙ্গে হারারি বলেন, ইসরায়েলে নজরদারির জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগানো হচ্ছে। নজরদারির বিপক্ষে না হয়েও (বলছি) কে তা করছে সেটি উদ্বেগের বিষয়। এটি যেকোনো দিকেই যেতে পারে। সরকারের নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণে যখন স্বচ্ছতা থাকে না আবার যখন প্রচুর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করে তখন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ সময়ে সরকারকেও তাই পার্লামেন্ট, নাগরিক ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে নজরদারিতে রাখতে হবে। সরকারও যাতে ইচ্ছেমতো জরুরি ঘোষণা যাতে দিতে না পারে, সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।

হারারির মতে, ‘আমরা বিশ্বে নেতৃত্বের মারাত্মক অভাব দেখেছি। মনে হচ্ছে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো উপযুক্ত কেউ নেই। জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা বা অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করার কোনো বৈশ্বিক পরিকল্পনা নেই। আমরা এখনো এর খারাপ দিকটি দেখিনি। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে যখন এ মহামারি ও অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেবে, তখন এর কদর্য রূপটি দেখা যেতে পারে।’

বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে হারারি বলেছেন, করোনা সংকটের পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্র ২ ট্রিলিয়ন ডলারের উদ্ধার প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারে; কিন্তু ইকুয়েডর বা মিসর বা বাংলাদেশ তা পারবে? পারবে না। তাই প্রশ্ন হচ্ছে, (আমরা) কখন বৈশ্বিক পরিকল্পনা দেখতে পাব? আর যদি পরিকল্পনা করা হয়ও, তাহলে তা কীভাবে মহামারি রোধ এবং এর ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করবে? সূত্র : প্রথম আলো

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

করোনা সংকট : যুক্তরাষ্ট্র পারলেও বাংলাদেশ কি পারবে, প্রশ্ন হারারির

প্রকাশের সময় : ০২:২৯:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২০

হককথা ডেস্ক: করোনাভাইরাস সংকট থেকে উদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্র ২ ট্রিলিয়ন বা ২ লাখ কোটি ডলার উদ্ধার প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারে, কিন্তু ইকুয়েডর বা মিসর বা বাংলাদেশ কি তা পারবে? এ প্রশ্ন তুলেছেন ইসরায়েলের জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইউভাল নোয়া হারারি। করোনা সংকট থেকে উদ্ধারে বৈশ্বিক পরিকল্পনা নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। বর্তমান সংকট নিয়ে অধ্যাপক হারারির সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন গণমাধ্যম এনপিআরের উইকেন্ড এডিশন সানডের উপস্থাপক লুলু গার্সিয়া-নাভারো। ওই অডিও সাক্ষাৎকারে হারারি বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। এই কথোপকথনের মুখ্য বিষয় ছিল করোনা মহামারি থেমে গেলে কী ঘটবে। এ নিয়ে নিজের মত তুলে ধরেন জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ইউভাল নোয়া হারারি।

অধ্যাপক হারারি বলেন, ‘করোনার এই সময়ে বদলে যাচ্ছে সবকিছু। আমরা যেভাবে কাজ করছি, জীবনধারণ করছি, যোগাযোগ করছি যা সরকারের কাছে যা প্রত্যাশা করছি সব বদলে যাচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারি আমাদের জীবনে এ বদল এনেছে।’ এ মহামারির সময় বিস্তৃত সামাজিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রসঙ্গে হারারি বলেন, ‘সবখানেই পরীক্ষা চলছে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কোর্স অনলাইনে নেওয়া হয়েছে। কয়েক বছর ধরেই ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু করা হয়ে ওঠেনি। এখন আমরা বিশাল পরীক্ষায় পড়েছি। ভাবুন তো, যখন পুরো বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে নেওয়া হবে, তখন কী হতে পারে? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয় নিয়ে কয়েক বছর ধরে কথাবার্তা চলছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার এ পথে পা বাড়িয়েছে। অফিস বা কারখানায় না গিয়ে লাখ লাখ মানুষ যখন ঘরে থেকে কাজ করবে, তখন কী হবে। তাই এগুলো সবই সামাজিক পরীক্ষার অংশ, যা বিস্তৃত আকারে করা হচ্ছে। এটা পৃথিবী বদলে দিতে পারে। কী ঘটতে পারে আমরা তার পূর্বাভাস দিতে পারি। কারণ, আসল ঘটনা হচ্ছে আমাদের অনেক পছন্দের বিষয় আছে। এ মহামারি থেকে শুধু আমরা একটি পূর্বনির্ধারিত ফল পাব, এমনটা নয়।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে হারারি বলেন, ‘এ সংকটের ফলে সংগঠিত শ্রম ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হতে পারে। অথবা আমরা প্রবণতা বিপরীত দিকে নিতে পারি। মানুষ বুঝতে পারবে সরকারি অর্থায়নে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা থাকার মতো একটা সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর গুরুত্ব কতটা। এটা যেকোনো দিকেই যেতে পারে। মানুষকে এটা বুঝতে হবে যে আমাদের অনেক পছন্দ রয়েছে। ইতিহাস যখন দ্রুত এগিয়ে চলেছে, তখন এটি একটি সুযোগের ছোট্ট জানালা। এটি দ্রুত চলে যাচ্ছে। আগে যেসব ধারণা শুনে পাগলের প্রলাপ মনে হতো, সরকার এখন তা পরীক্ষা করে দেখার চেষ্টা করতে ইচ্ছুক। এবং এটি শেষ হয়ে গেলে আবার আগের জায়গায় চলে যেতে পারে। ২০২১ সালে (যুক্তরাষ্ট্রের) যিনিই প্রেসিডেন্টে হোন না কেন, এটি মূলত এক পার্টি শেষ হওয়ার পরে আরেক পার্টিতে আসার মতো। একটাই কাজ বাকি থাকবে, তা হলো ময়লা বাসন পরিষ্কার করা। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সরকার ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করবে। তাই আমরা এখন যে সমস্যার মুখে রয়েছি তা বুঝতে পারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু স্বাস্থ্য খাতে সীমাবদ্ধতা নয়, কতজন আক্রান্ত হলো বা কতটা ভেন্টিলেটর আছে, এসব বিষয়ে আটকে থাকা নয় বরং সম্পদ কারা পাবে, সেটা বিবেচনা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

অধ্যাপক হারারির মতে, বর্তমান পরিস্থিতি এমন যে বছরের পর বছর এবং দশকের পর দশক ধরে মানুষের ভেতরে গেড়ে বসা বদ্ধমূল ধারণা দ্রুতই উল্টে যেতে পারে। বেশির ভাগ দেশে রাজনীতিকদের পুরোপুরি হতবাক করে দিয়েছে এটি। এ পরিস্থিতির জন্য তারা মোটেও প্রস্তুত ছিল না। কী করতে হবে, তার কোনো পরিকল্পনা তাদের কাছে ছিল না। তাই তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করে দেওয়ার এটি দুর্লভ একটি সুযোগ। সাধারণ সময়ে তারা যা ভাবত না, এখন তা চেষ্টা করার সময়। কিন্তু এটার ফল উভয়মুখী হতে পারে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগের বিষয়ে অধ্যাপক হারারির ভাষ্য, ‘একটি উদ্বেগ হলো (দেশে দেশে) স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা এবং একনায়কতন্ত্রের উত্থান। জরুরি পরিস্থিতির জন্য এটি কুখ্যাত। মানুষ তার জীবনভয়ে ভীত। অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে। মানুষ প্রত্যাশা করে শক্তিশালী নেতৃত্ব, যিনি সবকিছু জানেন এবং তাদের দেখভাল করতে সক্ষম। বিশ্বের কিছু দেশে তা ঘটতেও দেখা যাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে হাঙ্গেরির কথা বলা যায়। ইসরায়েলের দৃষ্টান্তও দেওয়া যায়। সুতরাং আমরা একটি স্বৈরতান্ত্রিক দিকনির্দেশনায় যেতে পেরেছি। সবকিছু নজরদারি করার জন্য এখন এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতেও নজরদারি করার নতুন পদ্ধতির প্রয়োগ আমরা দেখছি। জরুরি প্রয়োজন ফুরালে এটি তুলে নেওয়া হবে—এমন প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না।’

ইসরায়েলের প্রসঙ্গে হারারি বলেন, ইসরায়েলে নজরদারির জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগানো হচ্ছে। নজরদারির বিপক্ষে না হয়েও (বলছি) কে তা করছে সেটি উদ্বেগের বিষয়। এটি যেকোনো দিকেই যেতে পারে। সরকারের নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণে যখন স্বচ্ছতা থাকে না আবার যখন প্রচুর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করে তখন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ সময়ে সরকারকেও তাই পার্লামেন্ট, নাগরিক ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে নজরদারিতে রাখতে হবে। সরকারও যাতে ইচ্ছেমতো জরুরি ঘোষণা যাতে দিতে না পারে, সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।

হারারির মতে, ‘আমরা বিশ্বে নেতৃত্বের মারাত্মক অভাব দেখেছি। মনে হচ্ছে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো উপযুক্ত কেউ নেই। জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা বা অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করার কোনো বৈশ্বিক পরিকল্পনা নেই। আমরা এখনো এর খারাপ দিকটি দেখিনি। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে যখন এ মহামারি ও অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেবে, তখন এর কদর্য রূপটি দেখা যেতে পারে।’

বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে হারারি বলেছেন, করোনা সংকটের পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্র ২ ট্রিলিয়ন ডলারের উদ্ধার প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারে; কিন্তু ইকুয়েডর বা মিসর বা বাংলাদেশ তা পারবে? পারবে না। তাই প্রশ্ন হচ্ছে, (আমরা) কখন বৈশ্বিক পরিকল্পনা দেখতে পাব? আর যদি পরিকল্পনা করা হয়ও, তাহলে তা কীভাবে মহামারি রোধ এবং এর ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করবে? সূত্র : প্রথম আলো