নিউইয়র্ক ০২:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

কংগ্রেসের সামনে কাবুল ‘বিপর্যয়’ বর্ণনা করতে গিয়ে কাঁদলেন  আমেরিকান সেনা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:৩১:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩
  • / ৯৫ বার পঠিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :  ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে আনে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তালেবান যখন কাবুল দখল করে নিয়েছে, তখন তাড়াহুড়া করে সেনা প্রত্যাহার করতে গিয়ে এক ‘বিপর্যয়ের’ জন্ম দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির এক সাবেক মেরিন সদস্য কংগ্রেসের কাছে সেই সেনা প্রত্যাহারের বর্ণনা দিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে বিবিসি। খবরে জানানো হয়েছে, গুরুতর আহত হওয়া টাইলার ভার্গাস-অ্যান্ড্রুস ওই সেনা প্রত্যাহারকে ‘বিপর্যয়কর’ বলে বর্ণনা করেন। রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন ওই শুনানিতে সেসময় বাইডেন প্রশাসনের পদক্ষেপগুলো পুনরায় পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। টাইলার তার জবানবন্দিতে কাবুল থেকে পালানোর বিশৃঙ্খল এবং অপ্রস্তুত অবস্থার কথা জানান। অন্যরাও তাদের স্থায়ী ট্রমা এবং মিত্রদের বিপদের মুখে ফেলে আসার আত্মগ্লানির কথা বর্ণনা করেন কংগ্রেসের কাছে।

২৫ বছর বয়সী টাইলারকে ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। ওইদিনই দুটি আত্মঘাতী বোমা হামলা হয় সেখানে। যে-সব আমেরিকান সেনা ও আফগান নাগরিক তাড়াহুড়া করে আফগানিস্তান ছাড়ছিল, তাদের টার্গেট করা হয় ওই হামলায়। ওই হামলায় ১৩ সেনা  এবং ১৭০ আফগান নাগরিক নিহত হয়েছিল। টাইলার জানান, তিনি হামলার আগেই বোম্বিং-এর বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছিলেন। তিনি বিস্ফোরণের আগেই জনতার মধ্যে হামলাকারীকে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন।টাইলার জানান, তিনি তার সুপারভাইজারকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন এবং ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে সেই অনুমতি দেয়া হয়নি। টাইলর অভিযোগ করে বলেন, এটি একদমই সহজ এবং স্পষ্ট একটি বিষয়। আমাদের বিষয়টিকে পুরোপুরি অবহেলা করা হয়েছে। বিস্ফোরণের মাত্রা এত ভয়াবহ ছিল যে আমি আকাশে উড়ে গিয়েছিলাম। চোখ খুলে আমি আমার চারদিকে নিহত সহযোদ্ধাদের দেখতে পেয়েছিলাম। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন টাইলার।

আরোও পড়ুন। যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে আমেরিকা সংঘাতে উসকানি দিচ্ছে: পুতিন

তিনি বলেন, বিস্ফোরণের ধাক্কায় আমার শরীর অবশ হয়ে গিয়েছিল। আমার পেট ছিঁড়ে গিয়েছিল। আমার শরীরের খোলা প্রতিটি স্থানে ধারালো কণাগুলো আঘাত করেছিল। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সেনা প্রত্যাহারের সময় তারা অবহেলার শিকার হয়েছিলেন। পুরো বিষয়টি নিয়ে কোনো জবাবদিহিতাও ছিল না। টাইলার বলেন, আমি এখনও সবসময় আমাদের ফেলে আসা সেই মানুষদের চেহারা দেখতে পাই। যাদেরকে আমরা বাঁচাতে পারতাম কিন্তু আমরা ফেলে এসেছিলাম।

হাউসের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি আফগানিস্তানে কী হয়েছিল তা নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে। তারই অংশ হিসেবে সেখানে থাকা আমেরিকান সেনাদের জবানবন্দি নেয়া হচ্ছে। টাইলর ছাড়াও আরও কয়েকজন আমেরিকান সেনা জবানবন্দি দেন। এই পরিস্থিতির কারণে তারা কি কি মানসিক ট্রমা এবং অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন তা উল্লেখ করেন তারা। অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল ডেভিড স্কট মান সে সময়ে আফগানদের দেশ ছাড়তে সহায়তা করছিলেন। তিনি বলেন, আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহারের পর ভেটেরান অ্যাফেয়ার্স হটলাইনে কলের সংখ্যা ৮১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তিনি সতর্ক করেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ‘মানসিক সমস্যার সুনামির দ্বারপ্রান্তে’ রয়েছে। তার যে বন্ধু তার সঙ্গে আফগানিস্তানে যুদ্ধ করেছিলেন তিনি পরে আত্মহত্যা করেন। তার বন্ধু যেভাবে নৈতিকভাবে আহত হয়েছিলেন, সেখান থেকে বের হয়ে আসার কোনো রাস্তা খুঁজে পাননি।

জবানবন্দি দেয়া বেশিরভাগ সেনাই ওই বিপর্যয়ের জন্য বর্তমান বাইডেন প্রশাসনসহ সাবেক প্রশাসনগুলোকে দায়ী করেন। তারা একইসঙ্গে আফগানিস্তানে থাকা মিত্রদের সহায়তায় জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানায়। যারা আফগানিস্তানে থেকে গেছে এবং যারা যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পেয়েছে, তারা সকলেই এখন অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল মান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের পরিত্যাগের জন্য কুখ্যাতি অর্জন করেছে। আগামী কয়েক প্রজন্মেও এই কুখ্যাতি যাবে না। আফগানিস্তানের এই সংকটের জন্য রিপাবলিকানরা বাইডেন প্রশাসনের উপর দোষ চাপাচ্ছে। তারা বহুদিন ধরেই ওই সেনা প্রত্যাহার নিয়ে তদন্তের দাবি তুলে আসছিল। টেক্সাসের হাউস রিপাবলিকান প্যানেলের চেয়ারম্যান মাইক ম্যাককল বলেন, কাবুল থেকে সেনা প্রত্যাহার প্রতিটি স্তরে ফেডারেল সরকারের ভাঙন এবং বাইডেন প্রশাসনের ব্যর্থতা প্রমাণ করে। তার অভিযোগের জবাবে ডেমোক্রেটরা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পক্ষে অবস্থান নেন।

নিউইয়র্ক থেকে কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিক্স বলেন, বাইডেন আমাদের সমস্ত সৈন্যকে কাবুল থেকে ফিরিয়ে আনার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আফগানিস্তানে যুদ্ধের জন্য আরও সেনা পাঠানো কোনো ভাল বিবেচনা হতে পারে না। বাইডেন এর আগে তালেবানের সঙ্গে প্রত্যাহার চুক্তির জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে দোষারোপ করেছিলেন।

সুমি/হককথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

কংগ্রেসের সামনে কাবুল ‘বিপর্যয়’ বর্ণনা করতে গিয়ে কাঁদলেন  আমেরিকান সেনা

প্রকাশের সময় : ০২:৩১:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :  ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে আনে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তালেবান যখন কাবুল দখল করে নিয়েছে, তখন তাড়াহুড়া করে সেনা প্রত্যাহার করতে গিয়ে এক ‘বিপর্যয়ের’ জন্ম দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির এক সাবেক মেরিন সদস্য কংগ্রেসের কাছে সেই সেনা প্রত্যাহারের বর্ণনা দিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে বিবিসি। খবরে জানানো হয়েছে, গুরুতর আহত হওয়া টাইলার ভার্গাস-অ্যান্ড্রুস ওই সেনা প্রত্যাহারকে ‘বিপর্যয়কর’ বলে বর্ণনা করেন। রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন ওই শুনানিতে সেসময় বাইডেন প্রশাসনের পদক্ষেপগুলো পুনরায় পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। টাইলার তার জবানবন্দিতে কাবুল থেকে পালানোর বিশৃঙ্খল এবং অপ্রস্তুত অবস্থার কথা জানান। অন্যরাও তাদের স্থায়ী ট্রমা এবং মিত্রদের বিপদের মুখে ফেলে আসার আত্মগ্লানির কথা বর্ণনা করেন কংগ্রেসের কাছে।

২৫ বছর বয়সী টাইলারকে ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। ওইদিনই দুটি আত্মঘাতী বোমা হামলা হয় সেখানে। যে-সব আমেরিকান সেনা ও আফগান নাগরিক তাড়াহুড়া করে আফগানিস্তান ছাড়ছিল, তাদের টার্গেট করা হয় ওই হামলায়। ওই হামলায় ১৩ সেনা  এবং ১৭০ আফগান নাগরিক নিহত হয়েছিল। টাইলার জানান, তিনি হামলার আগেই বোম্বিং-এর বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছিলেন। তিনি বিস্ফোরণের আগেই জনতার মধ্যে হামলাকারীকে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন।টাইলার জানান, তিনি তার সুপারভাইজারকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন এবং ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে সেই অনুমতি দেয়া হয়নি। টাইলর অভিযোগ করে বলেন, এটি একদমই সহজ এবং স্পষ্ট একটি বিষয়। আমাদের বিষয়টিকে পুরোপুরি অবহেলা করা হয়েছে। বিস্ফোরণের মাত্রা এত ভয়াবহ ছিল যে আমি আকাশে উড়ে গিয়েছিলাম। চোখ খুলে আমি আমার চারদিকে নিহত সহযোদ্ধাদের দেখতে পেয়েছিলাম। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন টাইলার।

আরোও পড়ুন। যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে আমেরিকা সংঘাতে উসকানি দিচ্ছে: পুতিন

তিনি বলেন, বিস্ফোরণের ধাক্কায় আমার শরীর অবশ হয়ে গিয়েছিল। আমার পেট ছিঁড়ে গিয়েছিল। আমার শরীরের খোলা প্রতিটি স্থানে ধারালো কণাগুলো আঘাত করেছিল। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সেনা প্রত্যাহারের সময় তারা অবহেলার শিকার হয়েছিলেন। পুরো বিষয়টি নিয়ে কোনো জবাবদিহিতাও ছিল না। টাইলার বলেন, আমি এখনও সবসময় আমাদের ফেলে আসা সেই মানুষদের চেহারা দেখতে পাই। যাদেরকে আমরা বাঁচাতে পারতাম কিন্তু আমরা ফেলে এসেছিলাম।

হাউসের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি আফগানিস্তানে কী হয়েছিল তা নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে। তারই অংশ হিসেবে সেখানে থাকা আমেরিকান সেনাদের জবানবন্দি নেয়া হচ্ছে। টাইলর ছাড়াও আরও কয়েকজন আমেরিকান সেনা জবানবন্দি দেন। এই পরিস্থিতির কারণে তারা কি কি মানসিক ট্রমা এবং অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন তা উল্লেখ করেন তারা। অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল ডেভিড স্কট মান সে সময়ে আফগানদের দেশ ছাড়তে সহায়তা করছিলেন। তিনি বলেন, আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহারের পর ভেটেরান অ্যাফেয়ার্স হটলাইনে কলের সংখ্যা ৮১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তিনি সতর্ক করেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ‘মানসিক সমস্যার সুনামির দ্বারপ্রান্তে’ রয়েছে। তার যে বন্ধু তার সঙ্গে আফগানিস্তানে যুদ্ধ করেছিলেন তিনি পরে আত্মহত্যা করেন। তার বন্ধু যেভাবে নৈতিকভাবে আহত হয়েছিলেন, সেখান থেকে বের হয়ে আসার কোনো রাস্তা খুঁজে পাননি।

জবানবন্দি দেয়া বেশিরভাগ সেনাই ওই বিপর্যয়ের জন্য বর্তমান বাইডেন প্রশাসনসহ সাবেক প্রশাসনগুলোকে দায়ী করেন। তারা একইসঙ্গে আফগানিস্তানে থাকা মিত্রদের সহায়তায় জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানায়। যারা আফগানিস্তানে থেকে গেছে এবং যারা যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পেয়েছে, তারা সকলেই এখন অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল মান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের পরিত্যাগের জন্য কুখ্যাতি অর্জন করেছে। আগামী কয়েক প্রজন্মেও এই কুখ্যাতি যাবে না। আফগানিস্তানের এই সংকটের জন্য রিপাবলিকানরা বাইডেন প্রশাসনের উপর দোষ চাপাচ্ছে। তারা বহুদিন ধরেই ওই সেনা প্রত্যাহার নিয়ে তদন্তের দাবি তুলে আসছিল। টেক্সাসের হাউস রিপাবলিকান প্যানেলের চেয়ারম্যান মাইক ম্যাককল বলেন, কাবুল থেকে সেনা প্রত্যাহার প্রতিটি স্তরে ফেডারেল সরকারের ভাঙন এবং বাইডেন প্রশাসনের ব্যর্থতা প্রমাণ করে। তার অভিযোগের জবাবে ডেমোক্রেটরা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পক্ষে অবস্থান নেন।

নিউইয়র্ক থেকে কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিক্স বলেন, বাইডেন আমাদের সমস্ত সৈন্যকে কাবুল থেকে ফিরিয়ে আনার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আফগানিস্তানে যুদ্ধের জন্য আরও সেনা পাঠানো কোনো ভাল বিবেচনা হতে পারে না। বাইডেন এর আগে তালেবানের সঙ্গে প্রত্যাহার চুক্তির জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে দোষারোপ করেছিলেন।

সুমি/হককথা