নিউইয়র্ক ০১:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ওয়াশিংটনে মোদি-বাইডেন বৈঠক ২২ জুন : আলোচনায় থাকছে বাংলাদেশ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৪১:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ জুন ২০২৩
  • / ৭৪ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক : আগামী ২২ জুন (বৃহস্পতিবার) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমেরিকায় এমন একটি বিরল সম্মান পেতে চলেছেন, যা তাকে উইনস্টন চার্চিল বা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে এক কাতারে বসিয়ে দেবে। আসলে সে দিনই দুপুরে ইউএস কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে দ্বিতীয়বারের মতো ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদির। যে গৌরব চার্চিল, ম্যান্ডেলা বা হাল আমলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ছাড়া আর কেউই পাননি। শুধু তাই নয়, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি ড. জিল বাইডেনের আমন্ত্রণে মোদির এই সফরে তাকে একাধিকবার হোয়াইট হাউসে আপ্যায়িত করা হবে। নরেন্দ্র মোদির সম্মানে বাইডেন দম্পতি শুধু বিশেষ নৈশভোজই দিচ্ছেন না, প্রেসিডেন্ট তার সঙ্গে একান্তে ও প্রতিনিধিপর্যায়ে একাধিকবার বৈঠকেও বসছেন। দিল্লি ও ওয়াশিংটনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সফরকে ভারত যে একটি ‘মাইলস্টোন মোমেন্ট’ বলে বর্ণনা করছে- তাতে তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই।

এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোাদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ‘মোদি-বাইডেন’ আলোচনায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ থাকছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে- ‘মোদি-বাইডেন’ আলোচনায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আসবে। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী মোদির সম্মানে প্রেসিডেন্ট বাইডেন দম্পতি যে নৈশভোজ, সংবর্ধনা এবং কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষনের সময় ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরানও সেখানে আমন্ত্রিত। ফলে মোদির এই সফরে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। অপরদিকে আন্তর্জাতিক সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ও এই আসন্ন সফরের পটভূমিতে লিখেছে, ‘ভারত যদিও পশ্চিমাদের পছন্দ করে না, আমেরিকার কাছে আজ তারা অপরিহার্য’ আর এই সফরে তারই প্রতিফলন ঘটতে চলেছে।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্টও মন্তব্য করেছে, চীনের বিরুদ্ধে একটি ‘প্রতিরোধ’ (বুলওয়ার্ক) গড়ে তোলার জন্য ভারতকে আমেরিকার আজ যে জরুরি প্রয়োজন- ততটা আগে কখনোই ছিল না। বস্তুত এর আগে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক স্তরে অন্তত ছ’বার প্রধানমন্ত্রী মোদি আমেরিকা সফর করেছেন- কিন্তু এটাই হতে যাচ্ছে আমেরিকায় তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর, যা ধারে ও ভারে তার আগেকার সফরগুলোর চেয়ে অনেক বেশি ওজনদার ও গুরুত্বপূর্ণ। ফলে আগামী ২১ থেকে ২৩ জুন, আমেরিকায় নরেন্দ্র মোদির তিন দিনব্যাপী এই সফরের দিকে শুধু ভারত বা আমেরিকা নয়, নজর থাকবে গোটা আন্তর্জাতিক বিশ্বেরই।

আলোচনা হবে যা নিয়ে
বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াটরা সোমবার (১৯ জুন) দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মোদির এই সফরের আলোচ্যসূচীতে কী কী থাকতে পারে, তার একটি সম্ভাব্য রূপরেখা তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, ভারত ও আমেরিকার মধ্যে রাজনৈতিক স্তরে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতার একটা প্রভাব অবশ্যই এই সফরে পড়বে এবং নরেন্দ্র মোদি ও জো বাইডেনের মধ্যে ব্যক্তিগত স্তরেও একটা ‘লিডারশিপ কানেক্ট’ গড়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে তিনটি বিষয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে যে, সব বিষয়ে সমঝোতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তার মধ্যে একটি হল ১৮০ কোটি ডলারের ১৮টি প্রিডেটর-বি আর্মড ড্রোন ক্রয় সংক্রান্ত। আমেরিকার তৈরি এই ড্রোনগুলো দুর্গম সীমান্ত বা সামুদ্রিক এলাকায় দূর পাল্লাতেও নিখুঁত লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে এবং নজরদারি চালাতে পারে। এর পাশাপাশি, যৌথভাবে যুদ্ধবিমানের (ফাইটার জেট) ইঞ্জিন বানানোর জন্য দুই দেশের মধ্যে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তিও স্বাক্ষরিত হতে পারে। এই চুক্তি সম্পাদিত হলে ম্যাসাচুসেটসের এ্যারোস্পেস ম্যানুফ্যাকচারিং জায়ান্ট জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানি (জিই) ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত হিন্দুস্থান এরোনটিকস লিমিটেডের (হ্যাল) সঙ্গে মিলে তেজস লাইট এয়ারক্র্যাফটের ইঞ্জিন বানাতে পারবে।

এদিকে ভারতে যে সব সংস্থা প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরি করে থাকে, এসব সমঝোতার প্রত্যাশায় সেই সব সংস্থার অনেকগুলোর শেয়ার দর ইতিমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে। অনেকটা এই কারণেই ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ লিখেছে, ভারতের সঙ্গে আমেরিকা এই সব প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে মরিয়া বলেই ইউক্রেন কিংবা ভারতে গণতন্ত্রের অধোগতি নিয়ে মোদির সফরে তারা নীরব থাকবে। তাদের ভাষায়, দতেলের জন্য তৃষ্ণার্ত ভারত যেভাবে রাশিয়ার যুদ্ধ-অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে, চীন ছাড়া অন্য কোনও দেশ ততটা করেনি। গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার র‍্যাঙ্কিংয়েও ভারত যতটা নিচে নেমেছে, ততটা খুব কম দেশই নেমেছে।’

কিন্তু তার পরেও নরেন্দ্র মোদি ওয়াশিংটনে রাজসিক অভ্যর্থনা পাবেন এবং সেই উচ্ছাসে এই সব অস্বস্তিকর প্রসঙ্গের অবতারণা হবে না, দ্য ইকোনমিস্ট সেই পূর্বাভাসও সেরে রেখেছে। ওয়াশিংটন পোস্টও পাশাপাশি মনে করিয়ে দিচ্ছে, ‘এই সফরে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই সর্বশক্তিতে চেষ্টা করতে হবে, কিন্তু সে দেশে মোদির শাসনামলে গণতন্ত্রের যে অধ:পতন হয়েছে সেটা নিয়ে চুপ থাকাটাও সমীচীন হবে না।’

বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আসবে?
বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে বাধাপ্রদানকারীদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হবে বলে আমেরিকা সম্প্রতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মোদি ও বাইডেনের আলোচনায় সে প্রসঙ্গ আসবে কি না ভারত সরাসরি তার কোনও জবাব দেয়নি। তবে মিয়ানমার সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের জবাবে এদিন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, ‘আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো বিষয় নিয়েই দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হতে পারে। ঠিক কোন কোন ইস্যুতে তারা কথা বলবেন, তা নিয়ে আগেভাগে আমি কোনো মন্তব্য করব না।’তবে দিল্লিতে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বিবিসিকে আভাস দিয়েছেন, বাংলাদেশে ‘সুষ্ঠু গণতন্ত্রের স্বার্থে’ আমেরিকা সম্প্রতি যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে দিল্লি তাদের মনোভাব অবশ্যই ওয়াশিংটনের কাছে তুলে ধরবে।

ভারত ও আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এজেন্ডায় দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক রাজনীতি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে উপেক্ষা করা দুই দেশের কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।

বিবিসি আরও জানতে পেরেছে, নরেন্দ্র মোদির সম্মানে বাইডেন দম্পতি হোয়াইট হাউসের সাউথ লনে যে নৈশভোজ এবং আলাদা করে যে সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন, তার দুটিতেই ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মুহাম্মদ ইমরান এর আগে দিল্লিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর-সহ মোদি সরকারের বহু কর্মকর্তা ও নীতি-নির্ধারকের সঙ্গেই তার ঘনিষ্ঠ পরিচয় রয়েছে।

কূটনৈতিক মহলের অভিমত বাংলাদেশকে হোয়াইট হাউসের অনুষ্ঠানগুলোতে (এবং সেই সঙ্গে ইউএস কংগ্রেসের অধিবেশনে) আমন্ত্রণ জানানোর মধ্যে দিয়ে এটা স্পষ্ট যে ‘ভারত-মার্কিন’ আলোচনায় বাংলাদেশের ছায়া পড়বেই।গত সপ্তাহে দিল্লিতে ভারত ও আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের মধ্যে বৈঠকেও বাংলাদেশে আমেরিকান ভিসা-নীতির প্রসঙ্গ উঠেছিল বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম রিপোর্ট করেছে।ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল না কি সেই বৈঠকে বলেছিলেন, ‘আমেরিকার এমন কিছু করা উচিত হবে না যা এই (দক্ষিণ এশিয়া) অঞ্চলে ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করে’ … তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছিল ভারতের একটি প্রথম সারির দৈনিক।

আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সেই রিপোর্ট স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করেনি তবে বাংলাদেশে আমেরিকার সাম্প্রতিক ‘অতি-সক্রিয়তা’ যে দিল্লি খুব সহজভাবে নিচ্ছে না সেই ইঙ্গিত নানা ভাবেই পাওয়া যাচ্ছে। এই সপ্তাহে নরেন্দ্র মোদি ও জো বাইডেনের মধ্যে পর পর বৈঠকগুলোতে সে প্রসঙ্গের অবতারণা হওয়াটা তাই শুধু প্রত্যাশিত নয়, একরকম অবধারিত।

নাসরিন /হককথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

ওয়াশিংটনে মোদি-বাইডেন বৈঠক ২২ জুন : আলোচনায় থাকছে বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ০৮:৪১:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ জুন ২০২৩

হককথা ডেস্ক : আগামী ২২ জুন (বৃহস্পতিবার) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমেরিকায় এমন একটি বিরল সম্মান পেতে চলেছেন, যা তাকে উইনস্টন চার্চিল বা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে এক কাতারে বসিয়ে দেবে। আসলে সে দিনই দুপুরে ইউএস কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে দ্বিতীয়বারের মতো ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদির। যে গৌরব চার্চিল, ম্যান্ডেলা বা হাল আমলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ছাড়া আর কেউই পাননি। শুধু তাই নয়, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি ড. জিল বাইডেনের আমন্ত্রণে মোদির এই সফরে তাকে একাধিকবার হোয়াইট হাউসে আপ্যায়িত করা হবে। নরেন্দ্র মোদির সম্মানে বাইডেন দম্পতি শুধু বিশেষ নৈশভোজই দিচ্ছেন না, প্রেসিডেন্ট তার সঙ্গে একান্তে ও প্রতিনিধিপর্যায়ে একাধিকবার বৈঠকেও বসছেন। দিল্লি ও ওয়াশিংটনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সফরকে ভারত যে একটি ‘মাইলস্টোন মোমেন্ট’ বলে বর্ণনা করছে- তাতে তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই।

এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোাদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ‘মোদি-বাইডেন’ আলোচনায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ থাকছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে- ‘মোদি-বাইডেন’ আলোচনায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আসবে। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী মোদির সম্মানে প্রেসিডেন্ট বাইডেন দম্পতি যে নৈশভোজ, সংবর্ধনা এবং কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষনের সময় ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরানও সেখানে আমন্ত্রিত। ফলে মোদির এই সফরে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। অপরদিকে আন্তর্জাতিক সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ও এই আসন্ন সফরের পটভূমিতে লিখেছে, ‘ভারত যদিও পশ্চিমাদের পছন্দ করে না, আমেরিকার কাছে আজ তারা অপরিহার্য’ আর এই সফরে তারই প্রতিফলন ঘটতে চলেছে।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্টও মন্তব্য করেছে, চীনের বিরুদ্ধে একটি ‘প্রতিরোধ’ (বুলওয়ার্ক) গড়ে তোলার জন্য ভারতকে আমেরিকার আজ যে জরুরি প্রয়োজন- ততটা আগে কখনোই ছিল না। বস্তুত এর আগে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক স্তরে অন্তত ছ’বার প্রধানমন্ত্রী মোদি আমেরিকা সফর করেছেন- কিন্তু এটাই হতে যাচ্ছে আমেরিকায় তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর, যা ধারে ও ভারে তার আগেকার সফরগুলোর চেয়ে অনেক বেশি ওজনদার ও গুরুত্বপূর্ণ। ফলে আগামী ২১ থেকে ২৩ জুন, আমেরিকায় নরেন্দ্র মোদির তিন দিনব্যাপী এই সফরের দিকে শুধু ভারত বা আমেরিকা নয়, নজর থাকবে গোটা আন্তর্জাতিক বিশ্বেরই।

আলোচনা হবে যা নিয়ে
বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াটরা সোমবার (১৯ জুন) দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মোদির এই সফরের আলোচ্যসূচীতে কী কী থাকতে পারে, তার একটি সম্ভাব্য রূপরেখা তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, ভারত ও আমেরিকার মধ্যে রাজনৈতিক স্তরে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতার একটা প্রভাব অবশ্যই এই সফরে পড়বে এবং নরেন্দ্র মোদি ও জো বাইডেনের মধ্যে ব্যক্তিগত স্তরেও একটা ‘লিডারশিপ কানেক্ট’ গড়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে তিনটি বিষয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে যে, সব বিষয়ে সমঝোতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তার মধ্যে একটি হল ১৮০ কোটি ডলারের ১৮টি প্রিডেটর-বি আর্মড ড্রোন ক্রয় সংক্রান্ত। আমেরিকার তৈরি এই ড্রোনগুলো দুর্গম সীমান্ত বা সামুদ্রিক এলাকায় দূর পাল্লাতেও নিখুঁত লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে এবং নজরদারি চালাতে পারে। এর পাশাপাশি, যৌথভাবে যুদ্ধবিমানের (ফাইটার জেট) ইঞ্জিন বানানোর জন্য দুই দেশের মধ্যে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তিও স্বাক্ষরিত হতে পারে। এই চুক্তি সম্পাদিত হলে ম্যাসাচুসেটসের এ্যারোস্পেস ম্যানুফ্যাকচারিং জায়ান্ট জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানি (জিই) ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত হিন্দুস্থান এরোনটিকস লিমিটেডের (হ্যাল) সঙ্গে মিলে তেজস লাইট এয়ারক্র্যাফটের ইঞ্জিন বানাতে পারবে।

এদিকে ভারতে যে সব সংস্থা প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরি করে থাকে, এসব সমঝোতার প্রত্যাশায় সেই সব সংস্থার অনেকগুলোর শেয়ার দর ইতিমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে। অনেকটা এই কারণেই ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ লিখেছে, ভারতের সঙ্গে আমেরিকা এই সব প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে মরিয়া বলেই ইউক্রেন কিংবা ভারতে গণতন্ত্রের অধোগতি নিয়ে মোদির সফরে তারা নীরব থাকবে। তাদের ভাষায়, দতেলের জন্য তৃষ্ণার্ত ভারত যেভাবে রাশিয়ার যুদ্ধ-অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে, চীন ছাড়া অন্য কোনও দেশ ততটা করেনি। গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার র‍্যাঙ্কিংয়েও ভারত যতটা নিচে নেমেছে, ততটা খুব কম দেশই নেমেছে।’

কিন্তু তার পরেও নরেন্দ্র মোদি ওয়াশিংটনে রাজসিক অভ্যর্থনা পাবেন এবং সেই উচ্ছাসে এই সব অস্বস্তিকর প্রসঙ্গের অবতারণা হবে না, দ্য ইকোনমিস্ট সেই পূর্বাভাসও সেরে রেখেছে। ওয়াশিংটন পোস্টও পাশাপাশি মনে করিয়ে দিচ্ছে, ‘এই সফরে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই সর্বশক্তিতে চেষ্টা করতে হবে, কিন্তু সে দেশে মোদির শাসনামলে গণতন্ত্রের যে অধ:পতন হয়েছে সেটা নিয়ে চুপ থাকাটাও সমীচীন হবে না।’

বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আসবে?
বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে বাধাপ্রদানকারীদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হবে বলে আমেরিকা সম্প্রতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মোদি ও বাইডেনের আলোচনায় সে প্রসঙ্গ আসবে কি না ভারত সরাসরি তার কোনও জবাব দেয়নি। তবে মিয়ানমার সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের জবাবে এদিন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, ‘আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো বিষয় নিয়েই দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হতে পারে। ঠিক কোন কোন ইস্যুতে তারা কথা বলবেন, তা নিয়ে আগেভাগে আমি কোনো মন্তব্য করব না।’তবে দিল্লিতে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বিবিসিকে আভাস দিয়েছেন, বাংলাদেশে ‘সুষ্ঠু গণতন্ত্রের স্বার্থে’ আমেরিকা সম্প্রতি যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে দিল্লি তাদের মনোভাব অবশ্যই ওয়াশিংটনের কাছে তুলে ধরবে।

ভারত ও আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এজেন্ডায় দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক রাজনীতি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে উপেক্ষা করা দুই দেশের কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।

বিবিসি আরও জানতে পেরেছে, নরেন্দ্র মোদির সম্মানে বাইডেন দম্পতি হোয়াইট হাউসের সাউথ লনে যে নৈশভোজ এবং আলাদা করে যে সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন, তার দুটিতেই ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মুহাম্মদ ইমরান এর আগে দিল্লিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর-সহ মোদি সরকারের বহু কর্মকর্তা ও নীতি-নির্ধারকের সঙ্গেই তার ঘনিষ্ঠ পরিচয় রয়েছে।

কূটনৈতিক মহলের অভিমত বাংলাদেশকে হোয়াইট হাউসের অনুষ্ঠানগুলোতে (এবং সেই সঙ্গে ইউএস কংগ্রেসের অধিবেশনে) আমন্ত্রণ জানানোর মধ্যে দিয়ে এটা স্পষ্ট যে ‘ভারত-মার্কিন’ আলোচনায় বাংলাদেশের ছায়া পড়বেই।গত সপ্তাহে দিল্লিতে ভারত ও আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের মধ্যে বৈঠকেও বাংলাদেশে আমেরিকান ভিসা-নীতির প্রসঙ্গ উঠেছিল বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম রিপোর্ট করেছে।ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল না কি সেই বৈঠকে বলেছিলেন, ‘আমেরিকার এমন কিছু করা উচিত হবে না যা এই (দক্ষিণ এশিয়া) অঞ্চলে ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করে’ … তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছিল ভারতের একটি প্রথম সারির দৈনিক।

আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সেই রিপোর্ট স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করেনি তবে বাংলাদেশে আমেরিকার সাম্প্রতিক ‘অতি-সক্রিয়তা’ যে দিল্লি খুব সহজভাবে নিচ্ছে না সেই ইঙ্গিত নানা ভাবেই পাওয়া যাচ্ছে। এই সপ্তাহে নরেন্দ্র মোদি ও জো বাইডেনের মধ্যে পর পর বৈঠকগুলোতে সে প্রসঙ্গের অবতারণা হওয়াটা তাই শুধু প্রত্যাশিত নয়, একরকম অবধারিত।

নাসরিন /হককথা