ওআইসি : একটি নিস্ফল সম্মেলন ও দুর্ভাগা কয়েকজন

- প্রকাশের সময় : ০১:০০:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৩০ বার পঠিত
ছবিতে (বা থেকে ক্লক ওয়াইজ) আনোয়ার সাদাত, জুলফিকার আলী ভুট্টো, শেখ মুজিবুর রহমান, মুয়াম্মার গাদ্দাফি, সুহার্তো, হাফিজ আল আসাদ, জায়েদ আল-নাহিয়ান, ইয়াসির আরাফাত
আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু: বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং সবচেয়ে অকর্মা আন্তর্জাতিক সংস্থার নাম ‘অরগানাইজেশন অফ ইসলামিক কনফারেন্স (ওআইসি), যার বাংলা ‘ইসলামী সম্মেলন সংস্থা।’ ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ওআইসি’র বর্তমান সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ৫৭টি। এই সংস্থাটি ধারেও কাটে না, ভারেও কাটে না। এটির সাথে নামেই কেবল ‘ইসলাম’ শব্দটি যুক্ত আছে। সংস্থাটির অধিকাংশ দেশ আমেরিকার কৃপার ভৃত্য। শুধু ইরান ছাড়া অন্য দেশগুলোর সরকারি নেতাদের আমেরিকা দাঁড়াতে বললে নতমস্তকে খাড়া হয়। বসতে না বললে দাঁড়িয়েই থাকে। এদের নিজেদের ক্ষুরের ধার নেই। আমেরিকার হুকুম ছাড়া তারা বোধহয় ক্ষৌরকর্মও করতে পারে না এবং তাদের অবাঞ্ছিত কেশদাম ছুন্নত তরক করে বৃদ্ধি পায়।
ওআইসি’র গুণাগুণ আলোচনা এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। একটি ভিডিও দেখে ও কিছু লেখা পাঠ করে একটি দুর্ভাগ্যজনক বিষয় ফেসবুক বন্ধুদের জানাতেই সংক্ষিপ্ত শানে নজুলের অবতারণা:
১৯৭৪ সালে ওআইসি’র দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক ছিল পাকিস্তান। সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল লাহোর নগরীতে। এ সম্মেলনে ৩৮টি দেশের বেশ কিছু সংখ্যক রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সল, আলজিরিয়ার হুয়েরি বুমেদিন, মুয়াম্মার গাদ্দাফি সম্মেলনে যাবেন জানার পর ইরানের রেজা শাহ পাহলভী শেষ মুহূর্তে সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মিশরের আনোয়ার সাদাত, পাকিস্তানের জুলফিকার আলী ভূট্টো, বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমান, লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফি, ইন্দোনেয়শিয়ার সুহার্তো, সিরিয়ার হাফিজ আল আসাদ, ইউএই’র জায়েদ আল-নাহিয়ান এবং প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাজেশনের (পিএলও) ইয়াসির আরাফাত। ৩২ বছর ধরে কঠোরভাবে দেশ শাসনকারী সামরিক জেনারেল সুহার্তোর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগে দেশব্যাপী প্রচন্ড আন্দোলনে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন। দুর্ভাগ্যজনক বিষয়টি সম্ভবত বহুল আলোচিত, তবুও তথ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। লাহোর ওআইসি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ১০ জন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের মধ্যে ৬ জনকেই পরবর্তী সময়ে বিদ্রোহীদের হত্যাকাÐের শিকার, বিচারে দÐিত হয়ে ও বিষপ্রয়োগে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়েছে। ওআইসি সম্মেলনের পরের বছর ১৯৭৫ সালের ফেব্রæয়ারীতে বাদশাহ ফয়সল তার ভাতিজার গুলিতে প্রাসাদেই নিহত হন; আগস্ট মাসে বিদ্রোহী সেনা অফিসারদের গুলিতে নিহত হন শেখ মুজিবুর রহমান, ১৯৭৯ সালে ভূট্টোর ফাঁসি হয়, ১৯৮১ সালে জাতীয় দিবসের প্যারেড চলাকালে গুলিতে নিহত হন আনোয়ার সাদাত, ২০০৪ সালে মারা যান ইয়াসির আরাফাত, সন্দেহ করা হয় ইসরায়েলী গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তাকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করেছে। ২০১১ সালে বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হন কর্নেল গাদ্দাফি।
লাহোর সম্মেলনের আট বছরের মধ্যে খোদ আয়োজকসহ চারজনের হত্যাকাÐ ঘটে। একটু বেশি সময় নিয়ে নিহত হন আরো দুজন। ইসলামী বিশ্ব ছাড়া বিশ্বের আর কোথায় এমন ঘটনা ঘটতে পারে? আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য যে কোরআন নাজিল করেছেন, তাতে আছে:
“হে আল্লাহ, তুমি সাম্রাজ্যের মালিক। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করো, যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজত্ব ছিনিয়ে নাও এবং তুমি যাকে ইচ্ছা সম্মনিত করো, যাকে ইচ্ছা অপমানিত করো। তোমার হাতেই সব কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। (আল ইমরান ২৬)
লেখকের ফেসবুক থেকে নেয়া।