ইমরানের বাসা ঘিরে পুলিশ, গ্রেপ্তার আতঙ্ক

- প্রকাশের সময় : ১২:০৪:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩
- / ১১৫ বার পঠিত
ইমরান খানের বাসভবনের চারদিকে পুলিশ। সব রাস্তা বন্ধ। তাকে ফের গ্রেপ্তার করা হবে- এমন আতঙ্ক চারদিকে। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও আতঙ্কিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত ভাষণে গতরাতে তিনি বলেন, পুলিশ আমার বাসা ঘিরে রেখেছে। এ কথা জানিয়ে টুইট করেন ইমরান। তাতে বলেন, আরও একবার গ্রেপ্তারের আগে এটা হতে পারে আমার শেষ টুইট। তিনি আরও বলেন, আমার ভয় হচ্ছে পাকিস্তান ধ্বংসের পথে রয়েছে। ওদিকে অনলাইন ডন বলছে, পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করতে তার জামান পার্কের বাসার বাইরে অবস্থান করছে পাঞ্জাব পুলিশ। সেখানে ইমরান খানের বাসা চারদিক থেকে ঘেরাও করে রেখেছে পুলিশ কর্মকর্তারা।
ওদিকে সেনাবাহিনীকে নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে ইমরান খান বলেন, আমি আমার সন্তানদের যেভাবে সমালোচনা করি, তেমনিভাবে সেনাবাহিনীর সমালোচনা করি। তাদের সঙ্গে পিটিআইয়ের সংঘাত বাধিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন জোট পিডিএম। কিন্তু এ লড়াইয়ে জিতবে কে? তিনি আরও বলেন, পিটিআইকে নিষিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র হিসেবে ৯ই মে দাঙ্গা করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য তিনি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, জামান পার্কে দলীয় যেসব নেতাকর্মী অবস্থান করছেন, তাদেরকে প্রশাসনের কাছে তুলে দিতে ২৪ ঘণ্টা সময় দেয়া হয়। পুলিশ তাদেরকেই গ্রেপ্তার করতে গিয়েছে, নাকি ইমরান খানকে- বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যায়নি। গত রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইমরান খানের বাসভবন চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছিল পুলিশ।
সামরিক আইনে বিচার রাজা রাব্বানির বিরোধিতা
পাকিস্তানে আর্মি অ্যাক্ট এবং অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের অধীনে পিটিআই’র ‘দাঙ্গাকারীদের’ বিচার হবে। সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে গৃহীত এই সিদ্ধান্তকে অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। এর ফলে গত ৯ই মে পাকিস্তানজুড়ে যে সহিংসতা শুরু হয়েছিল, তার সঙ্গে জড়িতদের এখন সামরিক আইনে বিচার করা হবে। সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরও এবিষয়ে প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। ওদিকে আবার গ্রেপ্তার আতঙ্কে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত ভাষণে গতকাল তিনি বলেন, পুলিশ আমার বাসা ঘিরে রেখেছে। এ কথা জানিয়ে একটি টুইট করেন। তাতে বলেন, আরও একবার গ্রেপ্তারের আগে এটা হতে পারে আমার শেষ টুইট। আমার ভয় হচ্ছে পাকিস্তান ধ্বংসের পথে রয়েছে। বেসামরিক লোকজনকে সামরিক আইনে বিচার করার বিরোধিতা করেছেন রাজনীতিক, মানবাধিকার কর্মী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো। ক্ষমতাসীন জোট সরকারের অন্যতম সঙ্গী পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) বর্ষীয়ান সিনেটর রাজা রাব্বানি এমন বিচারের বিরোধিতা করেছেন।
আরোও পড়ুন। এবার জামিন পেলেন ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি
তিনি বলেছেন, হামলাকারী বেসামরিক লোকজনের বিচার করতে হবে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার অধীনে। তাদের বিচার সেনা আইনে করা হলে এর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। সন্ত্রাসবাদবিরোধী বিশেষ আইন ও আদালতেই এ অপরাধের বিচার করার ব্যবস্থা আছে। তিনি আরও বলেছেন, বেসামরিক ব্যক্তিদের সামরিক আইনে বিচার করলে তা হবে তাদের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থি। এ অবস্থায় ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই)’র অন্যতম নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আমির কায়ানি রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বুধবার ইসলামাবাদ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৯ই মে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে হামলার পর তিনি পিটিআই থেকে দূরত্ব বজায় রাখছেন।
ওদিকে লাহোরে ইমরান খানের জামান পার্কের বাসভবনে যারা অবস্থান নিয়েছেন, তাদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশের কাছে সোপর্দ করার ডেডলাইন বেঁধে দিয়েছে পাঞ্জাবের অন্তর্বর্তী সরকার। তারা বলেছে, ওই বাড়িতে ‘৩০ থেকে ৪০ জন সন্ত্রাসী আশ্রয় নিয়েছে’। প্রদেশটির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তথ্যমন্ত্রী আমির মীর বলেছেন, এসব সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দেয়া উচিত পিটিআই’র। না হলে, আইনের গতিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে তথ্য আছে এসব সন্ত্রাসীর বিষয়ে। এ খবর দিয়েছে ডন ও অনলাইন জিও টিভি।
পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি (এনএসসি) সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সকল দাঙ্গাকারীকে গ্রেপ্তার করা হবে। এই কমিটির চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। যারা সহিংস আক্রমণের সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং তাদেরকে যারা সহায়তা করেছে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে। যেসব নেতা এই দাঙ্গায় উৎসাহ এবং নির্দেশ দিয়েছে তাদেরকেও সামরিক আইনে বিচার করা হবে।
পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অভিযোগ, ৯ই মে যেসব হামলা চালানো হয়েছিল সবই পূর্ব-পরিকল্পিত। এ অভিযোগ স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছে তেহরিক-ই-ইনসাফ। ইমরান খানের সময়কার তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী ওই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ মঙ্গলবার বলেন, পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্ট এবং অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের আওতায় দাঙ্গাবাজদের বিচার হবে। বিক্ষোভ-সহিংসতায় উস্কানিদাতারাও কোনো ছাড় পাবেন না। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সংঘাতের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে। সেটা সামরিক আইনের আওতায় হবে। যেন দেশে পুনরায় অরাজকতা সৃষ্টি না হয়। সাজা কার্যকরের মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে দেশের সুনাম অক্ষুণœ রাখতে হবে। কেউ যাতে পাকিস্তানের ব্যাপারে কটূক্তি করতে না পারে- সেটাই কাম্য। নিরপরাধ ব্যক্তিদের স্পর্শও করা হবে না বলে জানান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।
অন্যদিকে সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির জানিয়েছিলেন, সহিংসতার সঙ্গে জড়িত সব পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা ও জড়িতদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা হবে। আসিম মুনির বলেন, ৯ই মে’র কালো দিনে যারা সহিংসতা ছড়িয়েছে সবাইকে পাকড়াও করে শাস্তির আওতায় আনা হবে। পেশোয়ারে এক ভাষণে এমন বক্তব্য দেন পাক সেনাপ্রধান। তিনি আরও সতর্কতা দেন। বলেন, এ রকম সহিংসতা আর সহ্য করা হবে না।
যদিও দাঙ্গাকারীদের সামরিক আইনের অধীনে বিচারের সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা শুরু হয়েছে। নিন্দা জানাচ্ছে মানবাধিকার সংস্থাগুলোও। তারা সরকারকে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে। বেসামরিকদের ওপর এ আইনগুলো প্রয়োগের কঠোর নিন্দা-সমালোচনা করেছে পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন এইচআরসিপি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও উদ্বেগ জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, বেসামরিক নাগরিকদের সামরিক আইনের অধীনে বিচার করা যাবে না। কারণ, সামরিক আদালত আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি।
যে বৈঠকে বেসামরিক ওই লোকজনের বিচার সামরিক আদালতে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাতে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ, আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার, তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. তৌকির শাহ প্রমুখ। সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা এবং বিমান ও নৌবাহিনী প্রধানরাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
সুমি/হককথা