ইউক্রেন যুদ্ধের আগে থেকেই তৈরি হচ্ছিল রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো
- প্রকাশের সময় : ১২:০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ এপ্রিল ২০২৩
- / ৬৮ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেনে রুশ সেনাবাহিনীর চেয়েও বেশি সাফল্য অর্জন করেছে রাশিয়ার নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বিভাগ-বলছে ব্রিটেনের একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা প্রতিষ্ঠান। রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউট (রুসি) তার একটি প্রতিবেদনে বলছে, ইউক্রেনে অভিযান শুরু অনেক আগে থেকেই এর জন্য তৈরি হতে শুরু করেছিল নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। রুশ গুপ্তচর সংস্থাগুলি ২০২১ সালের জুন মাস থেকেই ইউক্রেনের ওপর আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল, বলছে রুসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুশ ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি) ইউক্রেনের অধিকৃত এলাকায় জনসংখ্যার ওপর দ্রুতগতিতে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছিল। বিভিন্ন সূত্র এবং আটক করা নথিপত্র ব্যবহার করে ঐ রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটি বলছে। ইউক্রেনের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বক্তব্য, রুশ যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর নজরদারি করে পাওয়া তথ্য এবং মাঠ পর্যায়ে চালানো তদন্তও ঐ প্রতিবেদন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে।
‘অভিযান পেছানোর অনুরোধ’ প্রত্যাখ্যান করেন পুতিন
গবেষকরা বলছেন, কিয়েভ সমর্থকদের গ্রেপ্তার এবং জিজ্ঞাসাবাদ করার লক্ষ্যে এফএসবি ইউক্রেনের সরকারি কম্পিউটারগুলোর হার্ড ড্রাইভ ডাউনলোড করেছিল। রুসি বলছে, ইউক্রেনের দখলকৃত অংশগুলিকে বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করতে এবং তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করতে রাশিয়া তার ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার ইউনিটগুলিকেও ব্যবহার করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের মতে, রাশিয়ার বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা এসভিআর-এর প্রধান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বলেছিলেন যে তাদের প্রস্তুতির জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন এবং তিনি ইউক্রেনের ওপর হামলার তারিখ পিছিয়ে দিতে বলেছিলেন।
কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট তার ঐ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
রুসির ঐ ৩৯-পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটিতে কোন দেশকে ধ্বংস করার জন্য রাশিয়ার গোপন অভিযানের বিস্তার সম্পর্কে পশ্চিমা দেশের সরকারগুলিকে সতর্ক করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। অন্তত ৮০০ ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাকে রুশ গুপ্তচর সংস্থা এফএসবির পক্ষে কাজ করার জন্য নিয়োগ করা হয়।
রিপোর্টটির প্রধান লেখক জ্যাক ওয়াটলিং মস্কোর হাতে খুবই গোপন তথ্য তুলে দেয়ার অভিযোগে সম্প্রতি একজন সিনিয়র জার্মান গোয়েন্দা কর্মকর্তার গ্রেপ্তারের ঘটনাটির দিকে ইংগিত করছেন। রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে, ‘এটি স্পষ্ট যে রাশিয়ার গোয়েন্দা বিভাগগুলো আক্রমণ শুরু হওয়ার আগে ইউক্রেনে বড় মাপের একটি এজেন্ট নেটওয়ার্ক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল এবং আক্রমণ হয়ে যাওয়ার পরও ঐ চক্রটি কার্যকর ছিল। এদের কাজ ছিল রুশ বাহিনীর কাছে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করা।’ রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ গুপ্তচর সংস্থা এফএসবি হচ্ছে সোভিয়েত সময়কার গুপ্তচর সংস্থা কেজিবি’র আধুনিক উত্তরসূরি। এফএসবির গুপ্তচরেরা অস্থায়ী অপারেশনাল গ্রুপ গঠন করে মেলিটোপোলের মতো শহরকে টার্গেট করেছিল।
রুশ বাহিনী অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এফএসবি কর্মকর্তারা ইউক্রেনের শহরগুলোর স্থানীয় প্রশাসনের দফতর থেকে সরকারি দলিলপত্র বাজেয়াপ্ত করেছিল, কম্পিউটার হার্ড ড্রাইভগুলি ডাউনলোড করেছিল-যা থেকে তারা জানতে পেরেছিল কে কে ইউক্রেনের পক্ষে কাজ করছে এবং তারা কোথায় থাকে। এসব তথ্য দিয়ে তারা তালিকা তৈরি করেছিল। এরপর তালিকা ধরে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানো হয় এবং বহু ব্যক্তিকে আটক করে বেসমেন্টে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মি. ওয়াটলিং বলছেন, কখনো কখনো এদের ওপর অত্যাচার চালানো হতো, তবে যতটা না তাদের কাছ থেকে খবর বের করার জন্য, তার চেয়েও বেশি ভয়-ভীতি দেখানোর জন্য। এসব করা হতো যাতে মানুষ রুশ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারে। তবে ইউক্রেনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের একাধিক অভিযোগ রাশিয়া বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
‘সেনাবাহিনীর চেয়েও সফল’ রুশ নিরাপত্তা সংস্থাগুলো
রুসির প্রতিবেদনটি থেকে জানা যাচ্ছে, অন্তত ৮০০ ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাকে এফএসবির পক্ষে কাজ করার জন্য নিয়োগ করা হয়। এদের মধ্যে কেউ কেউ স্বেচ্ছায়, কাউকে কাউকে বল প্রয়োগ করে বাধ্য করা হয়। একই সময়ে রুশ ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার ইউনিটগুলি ইউক্রেনীয় টিভি, রেডিও এবং ইন্টারনেটের সংযোগ বন্ধ করার জন্য কাজ করেছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল, দখলকৃত এলাকার জনগণকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। এফএসবি হিসেব করে দেখেছে যে ইউক্রেনে কোন একটি এলাকাকে বশীভূত করতে হলে তাদের শুধুমাত্র সেই জনসংখ্যার শতকরা আট ভাগ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, মি. ওয়াটলিং বলছেন। সামগ্রিকভাবে রুশ গোয়েন্দা এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলি ইউক্রেনে অসংখ্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন তার সামরিক বাহিনীর তুলনায় অনেক বেশি সাফল্য অর্জন করেছে।
ইউক্রেনে অনেক ভুলও করেছে গুপ্তচর সংস্থাগুলো
কিন্তু ইউক্রেন প্রশ্নে রুশ গুপ্তচরদেরও ব্যর্থতা ছিল অনেক। অভিযান শুরু হওয়ার আগে পরিস্থিতি সম্পর্কে যে গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রেসিডেন্ট পুতিনকে দেওয়া হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল যে ইউক্রেনে দু’হাত বাড়িয়ে রুশ বাহিনীকে স্বাগত জানানো হবে এবং রুশ অভিযান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিয়েভ সরকারের দ্রুত পতন ঘটবে। কিন্তু এই মূল্যায়ন পরে বিপর্যয়করভাবে ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছিল। রুসির ঐ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘রাশিয়ান গোয়েন্দা বিভাগগুলিতে তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সঠিকভাবে রিপোর্ট ক্ষেত্রে সততার অভাব রয়েছে। উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে নিজেদের সাফল্যকে বহু গুণ বাড়িয়ে দেখানো এবং নিজেদের দুর্বলতাগুলিকে গোপন করে যাওয়া একটি বড় সমস্যা বলে দৃশ্যত মনে হচ্ছে।’
আরোও পড়ুন । ইসরায়েল সরকার পিছু হটলেও থামছে না বিক্ষোভ
জ্যাক ওয়াটলিং এখানে উল্লেখ করেছে রুশ সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ জিআরইউ’র একজন জেনারেলের কথা। ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডের সলসবারিতে কেজিবির একজন পক্ষত্যাগকারী কর্মকর্তা সার্গেই স্ক্রিপালের ওপর নভিচক নার্ভ এজেন্ট ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সেই হত্যা প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ঐ জেনারেল এই হত্যা প্রচেষ্টার সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন। এই ব্যর্থ হত্যা প্রচেষ্টার খবর এবং অভিযুক্তদের পরিচয় জানাজানি হওয়ার পরও ঐ জেনারেলকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়নি। বরং তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। সূত্র : বিবিসি
বেলী / হককথা