আন্তর্জাতিক সংবাদ শিরোনামে সাহেদ-সাবরিনার জালিয়াতি : বিপাকে প্রবাসীরা
- প্রকাশের সময় : ১০:১৩:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জুলাই ২০২০
- / ৪০ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: ইন্দোনেশিয়া থেকে ইতালি, আমেরিকা থেকে আফ্রিকা- সারা বিশ্বের গণমাধ্যমে এ সপ্তাহে বাংলাদেশের একটি খবরই বড় সংবাদ শিরোনাম হয়েছে- ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মোঃ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের নাটকীয় গ্রেফতারের ঘটনা। করোনা ভাইরাস মহামারি শুরুর পর বাংলাদেশ থেকে যত খবর এপর্যন্ত আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে এসেছে, তার কোনটিই সম্ভবত এত বেশি গুরুত্ব পায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস এ নিয়ে যে খবরটি প্রকাশ করে তার শিরোনাম, ‘বিগ বিজনেস ইন বাংলাদেশ : সেলিং ফেইক করোনা ভাইরাস সার্টিফিকেটস।’ অর্থাৎ বাংলাদেশে জাল করোনা ভাইরাস সার্টিফিকেট নিয়ে বিরাট ব্যবসা ফাঁদা হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের এই খবরে বলা হয়, বাংলাদেশে এই ধরণের সার্টিফিকেটের একটা বড় বাজার আছে। কারণ ইউরোপে কাজ করে যেসব বাংলাদেশী, তারা সেখানে ফিরে যেতে উদগ্রীব। এই অভিবাসী বাংলাদেশীরা সেখানে মুদির দোকান, রেস্তোরাঁয় কাজ করে বা রাস্তায় পানির বোতল বিক্রি করে। যেসব বাংলাদেশী ইতালিতে কাজ করেন, তাদের চাকুরিস্থলে মালিকরা তাদের কাজে ফিরিয়ে নেয়ার আগে এরকম সার্টিফিকেট চাইছেন।
কাতার ভিত্তিক আল জাজিরা টেলিভশনে এবং তাদের ইংরেজী ওয়েবসাইটেও এই খবরটি বড় করে প্রচার করা হয়েছে। আল জাজিরার খবরের শিরোনাম ছিল, “বাংলাদেশ অ্যারেস্টস হসপিটাল ওনার ওভার ফেইক করোনা ভাইরাস রেজাল্টস।”
ইতালিয়ান সংবাদপত্রের শিরোনাম : ‘জাল টেস্ট দিয়ে বাংলাদেশ থেকে’
এই খবরটির ব্যাপারে ইতালির সংবাদ মাধ্যমের ছিল বাড়তি আগ্রহ। ইতালির একটি পত্রিকায় বড় করে কয়েক কলামে প্রকাশিত শিরোনামটির অনুবাদ অনেকটা এরকম: “জাল সার্টিফিকেটের কল্যাণে ইতালিতে করোনা ভাইরাস পজিটিভ বাংলাদেশী। চাঞ্চল্যকর গ্রেফতার: হ্যান্ডকাফ পরে জেলখানায়।”
বাংলাদেশ থেকে করোনা ভাইরাস নিয়ে ইতালিতে যাওয়া বাংলাদেশীদের নিয়ে সেখানকার সংবাদ মাধ্যমে আগে থেকেই বেশ আলোচনা ছিল। এর মধ্যে ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতাল থেকে জাল করোনা ভাইরাস সার্টিফিকেট ইস্যু করা এবং এই হাসপাতালের মালিক মোহাম্মদ সাহেদকে গ্রেফতারের খবর স্বাভাবিকভাবেই ইতালির গণমাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
ইন্দোনেশিয়ার একটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের শিরোনাম ছিল, “বাংলাদেশে হাসপাতাল মালিকরা হাজার হাজার ভুয়া কোভিড-১৯ টেস্ট করেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।”
শুধু মোহাম্মদ সাহেদের খবর নয়, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস টেস্ট কেলেংকারির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার জেকেজি গ্রæপের চেয়ারম্যান সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে গ্রেফতারের খবরও আছে অনেক সংবাদপত্রে।
স্প্যানিশ ভাষায় প্রকাশিত একটি নিউজ পোর্টাল নটিমেরিকার শিরোনাম : “হাজার হাজার ভুয়া করোনাভাইরাস টেস্ট করার দায়ে হাসপাতাল মালিক গ্রেফতার।” এই শিরোনামের নিচের ছবিটি অবশ্য জেকেজি গ্রæপের চেয়ারম্যান সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর।
স্প্যানিশ ভাষায় এক নিউজ সাইটে সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে গ্রেফতারের খবর
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় বাংলাদেশে ভুয়া করোনা ভাইরাস টেস্টের জের ধরে হাসপাতাল মালিকের গ্রেফতারের খবর।
একটি ভারতীয় সংবাদ চ্যানেল উইয়নে এই খবরে বলা হয়, নয়দিন ধরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর মোহাম্মদ সাহেদকে বাংলাদেশের পুলিশ ধরতে সক্ষম হয়। রোগীদের পরীক্ষা না করেই তাদেরকে করোনা ভাইরাসমুক্ত সার্টিফিকেট দিয়া দেয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ
বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে দুর্নীতির খবর যেরকম ফলাও প্রচার পেয়েছে, তাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ এসব দেশে।
ইতালিতে বসবাসরত একজন বাংলাদেশী ইমিগ্রেশন কনসালট্যান্ট এ কে জামান বলেন, ইতালীর সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরাখবরে বাংলাদেশীদের দায়ী করা হচ্ছে ইতালীতে নতুন করে করোনাভাইরাস নিয়ে আসার জন্য। “বলা হচ্ছে, প্রবাসী বাংলাদেশী যারা ফেরত এসেছে, তারাই ইতালিতে করোনা ভাইরাস নিয়ে এসেছে।”
“আমরা বাংলাদেশীরা যখন চলাফেরা করি, বেশিরভাগ সময় দেখা যায় যে, অন্যরা আমাদের দেখে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। এমনকি আগে যেসব বার বা রেস্তোরাঁয় আমরা যেতাম, সেখানে লোকে যেন আমাদের দেখে ইতস্তত বোধ করে।”
ইতালীর ফ্রিউলি ভেনেজিয়ে জুলিয়া প্রদেশের ত্রিয়েস্ত শহরে থাকেন আইরিন পারভীন খান। তিনি জানান, ইতালিতে করোনা ভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভের জন্য বাংলাদেশীদের দায়ী করা হচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়ার সংবাদপত্রে মো: সাহেদের গ্রেফতারের খবর
“ইতালীতে যখন প্রথম করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছিল, তখন চীনাদের সঙ্গে যেরকম ব্যবহার করা হতো, এখন বাংলাদেশীরা সেই একই ধরণের ব্যবহারের শিকার হচ্ছে।”
আইরিন পারভিন খান জানান, তার শহরের কাছাকাছি এক শহরে ৩৬ জনের করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছে, এদের প্রায় সবাই বাংলাদেশী। এরপর এখন বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠানোর দাবি পর্যন্ত তুলছে অনেকে।
করোনা ভাইরাস নিয়ে কেলেংকারীর খবর ইতালীর পত্রিকায় ফলাও প্রচার পাওয়ার পর বাংলাদেশীদের ওপর হামলা এবং দুর্ব্যবহারের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করলেন তিনি।
“মিলানে এক বাংলাদেশী ফুল বিক্রেতাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দেয়া হয়েছে। এটা যদি কোন ইতালীয়ানের সঙ্গে করা হতো, এতক্ষণে পুলিশ অনেক কিছুই করতো। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছুই করা হয়নি। আমার পরিচিত এক বাংলাদেশী মহিলা সুপারশপে গিয়েছিলেন কেনাকাটা করতে। সেখানে তিনি সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং এর নিয়মকানুন মেনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও সেই মহিলা দুর্ব্যবহারের শিকার হন।”
আইরিন পারভীন খান বলেন, “ইতালিয়ান সংবাদপত্রগুলোর ওয়েবসাইটে খবরের নিচে যেসব কমেন্ট বা মন্তব্য থাকে, সেগুলো পড়লেই বোঝা যায়, বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষ কতটা বেড়েছে।” -বিবিসি।