নিউইয়র্ক ০৩:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

অস্তিত্ব সংকটের মুহূর্তে সাংবাদিকতা : নোবেল বিজয়ী মারিয়া রেসা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:২৯:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২
  • / ৫৪ বার পঠিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নোবেল বিজয়ী সাংবাদিক মারিয়া রেসার মতে মিথ্যা এবং ঘৃণা সত্যের চেয়েও দ্রুত ছড়ায়৷ জার্মানির বনে গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ফ্যাসিবাদের উত্থান মোকাবিলায় সত্যের প্রতি আস্থা পুননির্মাণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷”
সোমবার ডয়চে ভেলে গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামের উদ্বোধনী দিনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ফিলিপাইন্সের সাংবাদিক মারিয়া রেসা৷ ২০২১ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এই সাংবাদিক বলেন, ‘‘আপনার কাছে যদি তথ্য না থাকে তাহলে সত্যটাও নেই, আর যদি সত্য না থাকে তাহলে আস্থাও নেই৷” বক্তৃতায় তিনি ভুয়া সংবাদ এবং গুজব ছড়ানোর জন্য বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অভিযোগ করেছেন৷ তার মতে গুজব আসলে মিথ্যারই নামান্তর, যা বাস্তবতার বোধকে নষ্ট করছে এবং পুঁজিবাদী নরজরদারিকে উস্কে দিচ্ছে৷ গণমাধ্যমগুলো যাতে সেই ফাঁদে পা না দেয় সে বিষয় সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি৷
রেসা বলেন, ‘‘আমরা যাতে নিজেদের গন্তব্য নির্ধারণ করতে পারি, সেজন্য অবশ্যই আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে৷..ভার্চুয়াল দুনিয়াতে যদি আইনের শাসন না থাকে তাহলে বাস্তব পৃথিবীতেও আপনি আইনের শাসন পাবেন না৷” এই পরিস্থিতি কিভাবে গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলছে সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘তথ্যের সত্যতা যদি না থাকে, তাহলে নির্বাচনী ব্যবস্থার স্বচ্ছতাই বা কিভাবে থাকবে?”
খ্যাতনামা এই সাংবাদিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণে নীতিমালার পাশাপাশি গণমাধ্যমগুলোর জন্য আরো অর্থ বরাদ্দের দাবি জানান৷ গণতান্ত্রিক সরকারগুলো যাতে তাদের বিদেশি উন্নয়ন সহায়তার মধ্যে সাংবাদিকতার উন্নয়নে ব্যয় করা তহবিল অন্তত দশমিক তিন শতাংশ বাড়ায় সেই আহ্বান জানান তিনি৷
রেসা এমন এক সময় এই বক্তৃতা দিলেন যার কয়েক দিন পরই সাবেক সৈরশ্বাসকের পুত্র ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র ফিলিপাইন্সের রাষ্ট্রপতির আসনে বসতে যাচ্ছেন৷ রোববার উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন তার নির্বাচনী সঙ্গী বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের কন্যা সারা দুতার্তে৷ দুইজনই তাদের বাবার শাসনামলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করেননি৷ বরং মার্কোস জুনিয়র তার বাবার নীতি ধরেই এগোনোর ইঙ্গিতই দিয়ে রেখেছেন৷
বিশ্লেষকদের মতে এই দুই রাজনৈতিক পরিবারই সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে বিকল্প একটি তথ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন, যা বিস্তৃত জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছেছে৷
অন্যদিকে রেসার প্রতিষ্ঠিত র‌্যাপলার গণমাধ্যমটি ২০১২ সাল থেকে ভুয়া সংবাদ ও গুজবের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে৷ সাংবাদিক, আইনজীবী, আন্দোলনকর্মীদের একসাথ করে তারা সত্যতা যাচাই ও গুজব উন্মোচনের কাজ করে চলেছে৷ বিশেষ করে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতার্তের ছয় বছরের শাসনামলে ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার খবর দিয়ে গেছে র্যাপলার৷ এজন্য বিভিন্ন সময়ে ফিলিপাইন্সের সরকারের রোষাণলে পড়লেও এবং তার বিরুদ্ধে দেশটির বিতর্কিত সাইবার আইনে ব্যবস্থা নেয়া হলেও রেসা জানান, তিনি এতে হাল ছেড়ে দিবেন না৷
র্যাপলারের পাশাপাশি ফেসবুককে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে রেসা রিয়্যাল ফেসবুক ওভারসাইট বোর্ড নামের একটি উদ্যোগ গঠন করেছেন৷ গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে রেসা বলেন, ফেসবুক সাংবাদিকদের স্থানটিতে ‘ইনফ্লুয়েন্সারদের’ বসিয়েছে৷ তিনি অভিযোগ করেন সামাজিক মাধ্যমটি বেশ কিছু দেশে গণতন্ত্রকে পেছনে নিয়ে গেছে৷
বাক স্বাধীনতা রক্ষায় অবদানের জন্য ২০২১ সালের অক্টোবরে রেসা রুশ সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভের সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন৷
হককথা/এমউএ

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

অস্তিত্ব সংকটের মুহূর্তে সাংবাদিকতা : নোবেল বিজয়ী মারিয়া রেসা

প্রকাশের সময় : ১২:২৯:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০২২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নোবেল বিজয়ী সাংবাদিক মারিয়া রেসার মতে মিথ্যা এবং ঘৃণা সত্যের চেয়েও দ্রুত ছড়ায়৷ জার্মানির বনে গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ফ্যাসিবাদের উত্থান মোকাবিলায় সত্যের প্রতি আস্থা পুননির্মাণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷”
সোমবার ডয়চে ভেলে গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামের উদ্বোধনী দিনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ফিলিপাইন্সের সাংবাদিক মারিয়া রেসা৷ ২০২১ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এই সাংবাদিক বলেন, ‘‘আপনার কাছে যদি তথ্য না থাকে তাহলে সত্যটাও নেই, আর যদি সত্য না থাকে তাহলে আস্থাও নেই৷” বক্তৃতায় তিনি ভুয়া সংবাদ এবং গুজব ছড়ানোর জন্য বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অভিযোগ করেছেন৷ তার মতে গুজব আসলে মিথ্যারই নামান্তর, যা বাস্তবতার বোধকে নষ্ট করছে এবং পুঁজিবাদী নরজরদারিকে উস্কে দিচ্ছে৷ গণমাধ্যমগুলো যাতে সেই ফাঁদে পা না দেয় সে বিষয় সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি৷
রেসা বলেন, ‘‘আমরা যাতে নিজেদের গন্তব্য নির্ধারণ করতে পারি, সেজন্য অবশ্যই আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে৷..ভার্চুয়াল দুনিয়াতে যদি আইনের শাসন না থাকে তাহলে বাস্তব পৃথিবীতেও আপনি আইনের শাসন পাবেন না৷” এই পরিস্থিতি কিভাবে গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলছে সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘তথ্যের সত্যতা যদি না থাকে, তাহলে নির্বাচনী ব্যবস্থার স্বচ্ছতাই বা কিভাবে থাকবে?”
খ্যাতনামা এই সাংবাদিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণে নীতিমালার পাশাপাশি গণমাধ্যমগুলোর জন্য আরো অর্থ বরাদ্দের দাবি জানান৷ গণতান্ত্রিক সরকারগুলো যাতে তাদের বিদেশি উন্নয়ন সহায়তার মধ্যে সাংবাদিকতার উন্নয়নে ব্যয় করা তহবিল অন্তত দশমিক তিন শতাংশ বাড়ায় সেই আহ্বান জানান তিনি৷
রেসা এমন এক সময় এই বক্তৃতা দিলেন যার কয়েক দিন পরই সাবেক সৈরশ্বাসকের পুত্র ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র ফিলিপাইন্সের রাষ্ট্রপতির আসনে বসতে যাচ্ছেন৷ রোববার উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন তার নির্বাচনী সঙ্গী বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের কন্যা সারা দুতার্তে৷ দুইজনই তাদের বাবার শাসনামলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করেননি৷ বরং মার্কোস জুনিয়র তার বাবার নীতি ধরেই এগোনোর ইঙ্গিতই দিয়ে রেখেছেন৷
বিশ্লেষকদের মতে এই দুই রাজনৈতিক পরিবারই সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে বিকল্প একটি তথ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন, যা বিস্তৃত জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছেছে৷
অন্যদিকে রেসার প্রতিষ্ঠিত র‌্যাপলার গণমাধ্যমটি ২০১২ সাল থেকে ভুয়া সংবাদ ও গুজবের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে৷ সাংবাদিক, আইনজীবী, আন্দোলনকর্মীদের একসাথ করে তারা সত্যতা যাচাই ও গুজব উন্মোচনের কাজ করে চলেছে৷ বিশেষ করে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতার্তের ছয় বছরের শাসনামলে ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার খবর দিয়ে গেছে র্যাপলার৷ এজন্য বিভিন্ন সময়ে ফিলিপাইন্সের সরকারের রোষাণলে পড়লেও এবং তার বিরুদ্ধে দেশটির বিতর্কিত সাইবার আইনে ব্যবস্থা নেয়া হলেও রেসা জানান, তিনি এতে হাল ছেড়ে দিবেন না৷
র্যাপলারের পাশাপাশি ফেসবুককে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে রেসা রিয়্যাল ফেসবুক ওভারসাইট বোর্ড নামের একটি উদ্যোগ গঠন করেছেন৷ গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে রেসা বলেন, ফেসবুক সাংবাদিকদের স্থানটিতে ‘ইনফ্লুয়েন্সারদের’ বসিয়েছে৷ তিনি অভিযোগ করেন সামাজিক মাধ্যমটি বেশ কিছু দেশে গণতন্ত্রকে পেছনে নিয়ে গেছে৷
বাক স্বাধীনতা রক্ষায় অবদানের জন্য ২০২১ সালের অক্টোবরে রেসা রুশ সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভের সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন৷
হককথা/এমউএ