নিউইয়র্ক ০৭:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

অবশেষে বাংলাদেশের মহাকাশ জয় : বিকট শব্দে উর্দ্ধাকাশে ছুটে গেলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:২৯:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ মে ২০১৮
  • / ১১৩৪ বার পঠিত

সালাহউদ্দিন আহমেদ, ফ্লোরিডা থেকে: অবশেষে বাংলাদেশের মহাকাশ জয় হলো। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপন হলো। ১১ মে শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ১৪ মিনিটে বিকট শব্দে উর্দ্ধাকাশে ছুটে গেলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোর ‘কেনেডী স্পেস সেন্টার’-এর কেপ কেনাভেরাল থেকে থেকে সম্পূর্ণ নতুন একটি ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে এটি উৎক্ষেপণ করে মহাকাশ অনুসন্ধান ও মহাকাশ যান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্পেস এক্স। এ এক ঐতিহাসিক মূহুর্ত, ঐতিহাসিক মহেন্দ্রক্ষ। আনন্দ-উদ্বেগ আর উচ্ছাসে উদ্বেলিত হলো দেশ ও প্রবাসের কোটি কোটি মানুষ।
গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এমপি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক সহ বাংলাদেশ সরকারের প্রায় ৪২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আর শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশী উৎক্ষেপণ উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের অরল্যান্ডোর কেনেডী স্পেস সেন্টারে তথা স্পেস এক্সের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপনের দৃশ্য স্বচক্ষে অবলোকন করে কালের স্বাক্ষী হয়ে রইলেন। আনন্দে কেউ কেউ চোখের জলও ফেললেন। তুলে ধরলেন ‘সবুজে ঘেরা লাল’ রংয়ের জাতীয় পতাকা, শ্লোগান তুললেন ‘জয় বাংলা’। এদিকে মহাকাশে লাল-সবুজ পতাকাখচিত উপগ্রহটি স্থাপনের মাধ্যমে স্যাটেলাইট ক্ষমতাধর ৫৭তম দেশের তালিকায় যুক্ত হলো বাংলাদেশ।
এছাড়াও সজিব ওয়াজেদ জয়ের স্ত্রী-কন্যা ছাড়াও বাংলাদেশ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ, সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ ও নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান সহ অন্যান্য সরকারী কর্মকর্তা এসময় ‘কেনেডী স্পেস সেন্টার’-এর কেপ কেনাভেরাল-এ উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, দুই শতাধিক ব্যক্তির স্পেস এক্স-এর কেনেডি স্পেস সেন্টারে প্রবেশাধিকার থাকলেও অন্যান্যরা বিভিন্ন স্থান থেকে উৎক্ষেপণ পর্যবেক্ষণ করেছেন।
এদিকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের দৃষ্টি ছিলো ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোর ‘কেনেডী স্পেস সেন্টার’। নিউইয়র্ক আর ফ্লোরিডা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বিশেষ করে ওয়াশিংটন ডিসি, ভার্জেনিয়া, জর্জিয়া প্রভৃতি রাজ্য থেকে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী অরল্যান্ডোতে সমবেত হন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ-এর নেতৃত্বে দলের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী ‘কেনেডী স্পেস সেন্টার’-এ উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি এম. ফজলুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইরিন পারভীন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ ও মহিউদ্দিন দেওয়ান, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মিসবাহ আহমেদ, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক ফরিদ আলম, প্রবাস বিষয়ক সম্পাদক সোলায়মান আলী, উপ প্রচার সম্পাদক তৈয়বুর রহমান টনি, কার্যকরী সদস্য শাহানারা রহমান, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহনাজ মমতাজ, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শেখ জামাল হোসেন, সেবুল মিয়া, কেন্দ্রীয় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি দরুদ মিয়া রনেল প্রমুখ।
জানা গেছে, বাংলাদেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে বীজ রোপণ করেছিল মহাকাশ জয়ের প্রথম স্বপ্ন। কিন্তু ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে থেমে যায় সে স্বপ্নযাত্রা।
১৯৯৬ সালে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম দফায় ক্ষমতায় এসে এ-সংক্রান্ত উদ্যোগ নেয়। পরে ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে সে উদ্যোগ বাতিল করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। এমনকি তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারও এ প্রকল্পটি চালু করেনি। অবশেষে বর্তমান সরকার পরপর দুই দফার ক্ষমতায় থেকে দীর্ঘ ৪৩ বছর পর মহাকাশে স্থাপন করতে যাচ্ছে দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। বাবার হাতে সূচিত স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন করছেন তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এই স্বপ্ন জয়ের মধ্য দিয়ে কেবল বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলই নয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের রয়েছে নানা সম্ভাবনা, বাণিজ্যিক দিকও। সবকিছু ঠিক থাকলে এই স্যাটেলাইট থেকে নানামুখী সুফল পাবে দেশের মানুষ। একদিকে যেমন স্যাটেলাইটের সক্ষমতা বিক্রি করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে ও এ খাতের ব্যয় সাশ্রয় করা যাবে এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবার সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে; তেমনি দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনায় দারুণ কার্যকর ভূমিকা রাখবে এই স্যাটেলাইট। এ ছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজেও এ স্যাটেলাইটকে কাজে লাগানো সম্ভব।
তবে এই সম্ভাবনার জন্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের পরও বাংলাদেশকে অন্তত দুই মাস অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করছে বিটিআরসি। সংস্থাটির মতে, দুটি পর্যায়ে উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথম পর্যায়টি সম্পন্ন হতে সময় লাগবে ১০ দিন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে লাগবে ২০ দিনের মতো। মহাকাশে পৌঁছার পর বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে লাগবে প্রায় এক মাস। এরপর কারিগরি বিভিন্ন বিষয় শেষ করে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে আসতে আরও এক মাস সময় লাগবে বলে ধারণা বিটিআরসির। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুরে এবং রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় নির্মিত হয়েছে গ্রাউন্ড স্টেশন। স্যাটেলাইট মহাকাশে উন্মুক্ত হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশনে চলে যাবে। স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর সেটির নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর হবে।
প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, স্যাটেলাইটের এসব সুবিধা নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। বেসরকারি খাতকেও দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে। উৎক্ষেপণের পর মুহূর্ত থেকে এ স্যাটেলাইটের মেয়াদ থাকবে ১৫ বছর। সে জন্য সময়ক্ষেপণ না করে স্যাটেলাইটের উদ্দেশ্য পূরণে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যেতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার (১০ মে) রাতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সব প্রস্তুতিই ছিল। বাংলাদেশ সময় ভোররাত ৩টা ৪৭ মিনিটে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহটির যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে মহাকাশ পানে যাত্রা শুরুর কথা ছিল। সব প্রস্তুতি সেরে উৎক্ষেপণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল, কিন্তু মিনিট খানেক আগে সমস্যা দেখা দেওয়ায় স্যাটেলাইটটি আর উড়েনি লঞ্চ প্যাড থেকে। বলতে গেলে এক সেকেন্ড আগে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপন বন্ধ হয়ে যায়। উল্লেখ্য, ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য থেকে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ স্থগিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। উৎক্ষেপণের মোক্ষম সময়ের জন্য অপেক্ষা করা খুবই সাধারণ বিষয় এবং এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই বলে তিনি জানিয়েছেন ওই পোস্টে।
পোস্টে সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেছেন, ‘উৎক্ষেপণের শেষ মুহূর্তগুলো কম্পিউটার দ্বারা সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। হিসেবে যদি একটুও এদিক সেদিক পাওয়া যায়, তাহলে কম্পিউটার উৎক্ষেপণ থেকে বিরত থাকে। আজ যেমন নির্ধারিত সময়ের ঠিক ৪২ সেকেন্ড আগে নিয়ন্ত্রণকারী কম্পিউটার উৎক্ষেপণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। স্পেসএক্স সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগামীকাল একই সময়ে আবারও আমাদের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বহনকারী রকেটটি উৎক্ষেপণের চেষ্টা চালাবে।’ রকেট উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ঝুঁকি নেওয়া হয় না, তাই এ রকম হওয়াটা ‘খুবই স্বাভাবিক’ বলেও মন্তব্য করেন জয়।
স্পেসএক্স এক টুইট বার্তায় উৎক্ষেপণ স্থগিতের কারণ জানিয়ে বলেছিল যে, শেষ মিনিটে কিছু কারিগরি সমস্যার কারণে উৎক্ষেপণ স্থগিত রাখা হয়েছে। রকেট ও স্যাটেলাইট ভালো অবস্থায় আছে। তবে স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট থেকে ৬টার মধ্যে যেকোন সময় আবারও উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি ফের শুরু হবে বলেও জানানো হয়।
এদিকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের বিষয়টি বারবার বাতিল বা বিলম্বিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ-এর দৃষ্টি আকষর্ণ করা হলে বুধবার রাতে তিনি হিলটন হোটেলের লবিতে বলেন, স্যাটালাইট উৎক্ষেপন বাতিল বা তারিখ পরিবতন হওয়ার বহু ঘটনা আছে, যেখানে কাউন্ট ডাউনের একেবারে শেষ পর্যায়ে গিয়েও উৎক্ষেপণ স্থগিত করতে হয়েছে। এমনকি এর আগে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে পরপর ছয়বার স্থগিত করার ঘটনাও রয়েছে বলে তিনি জানান।
ফরাসী প্রতিষ্ঠান তালিস এলিনিয়া স্পেসের তৈরি বাংলাদেশের ‘জাতির জনক’বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামাঙ্কিত এই স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের মাধ্যমে। কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড ৩৯-এ থেকে এটি উৎক্ষেপণ হচ্ছে, এই প্যাড থেকেই মানুষকে নিয়ে চাঁদে রওনা হয়েছিল চন্দ্রযান এ্যাপোলো-১১।
বিটিআরসির তথ্যমতে, এ স্যাটেলাইট নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকা। মাত্র তিন থেকে ছয় বছরেই এই স্যাটেলাইট পাঠানোর সব খরচ উঠে আসবে। বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ যে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার ব্যয় হচ্ছে, এ উপগ্রহ উৎক্ষেপণের ফলে সেই অর্থ সাশ্রয় হবে। এই স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে নেপাল, মিয়ানমার ও ভুটানের কাছে স্যাটেলাইট সেবা দিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অবস্থান হবে ইন্দোনেশিয়ার একদম ওপরে। ফলে ইন্দোনেশিয়া থেকে সামনের দিকে যত দেশ আছে যেমন মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর সবই এই স্যাটেলাইটের অধীনে থাকবে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে চাকরির নতুন ক্ষেত্র ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলেও মনে করেন প্রযুক্তিবিদরা। তাদের মতে, ডাইরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) পদ্ধতিতে স্যাটেলাইট থেকে সিগন্যাল গ্রহণের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলেও সরাসরি টেলিভিশন সম্প্রচার করা সম্ভব হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের বিদ্যমান টেরেস্ট্রিয়াল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যোগাযোগব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করা যাবে।
বিশেষ করে সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-উই ৪ এবং সি-মি-উই ৫ যদি কোনো কারণে কাজ না করে তখন বিকল্প যোগাযোগে এই স্যাটেলাইট কাজে আসবে। এমনকি কৃষি, বন, মৎস্য, ভূতত্ত্ব, মানচিত্র তৈরি, পানি সম্পদ, ভূমি ব্যবহার, আবহাওয়া, পরিবেশ, ভূগোল, সমুদ্র, বিজ্ঞান, শিক্ষা এবং জ্ঞান ও বিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রে মহাকাশ ও দূর অনুধাবন প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা এবং প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহারিক প্রয়োগের জন্য গবেষণায়ও তথ্য-উপাত্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এই স্যাটেলাইটের সহায়তা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

অবশেষে বাংলাদেশের মহাকাশ জয় : বিকট শব্দে উর্দ্ধাকাশে ছুটে গেলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১

প্রকাশের সময় : ০৮:২৯:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ মে ২০১৮

সালাহউদ্দিন আহমেদ, ফ্লোরিডা থেকে: অবশেষে বাংলাদেশের মহাকাশ জয় হলো। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপন হলো। ১১ মে শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ১৪ মিনিটে বিকট শব্দে উর্দ্ধাকাশে ছুটে গেলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোর ‘কেনেডী স্পেস সেন্টার’-এর কেপ কেনাভেরাল থেকে থেকে সম্পূর্ণ নতুন একটি ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে এটি উৎক্ষেপণ করে মহাকাশ অনুসন্ধান ও মহাকাশ যান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্পেস এক্স। এ এক ঐতিহাসিক মূহুর্ত, ঐতিহাসিক মহেন্দ্রক্ষ। আনন্দ-উদ্বেগ আর উচ্ছাসে উদ্বেলিত হলো দেশ ও প্রবাসের কোটি কোটি মানুষ।
গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এমপি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক সহ বাংলাদেশ সরকারের প্রায় ৪২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আর শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশী উৎক্ষেপণ উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের অরল্যান্ডোর কেনেডী স্পেস সেন্টারে তথা স্পেস এক্সের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপনের দৃশ্য স্বচক্ষে অবলোকন করে কালের স্বাক্ষী হয়ে রইলেন। আনন্দে কেউ কেউ চোখের জলও ফেললেন। তুলে ধরলেন ‘সবুজে ঘেরা লাল’ রংয়ের জাতীয় পতাকা, শ্লোগান তুললেন ‘জয় বাংলা’। এদিকে মহাকাশে লাল-সবুজ পতাকাখচিত উপগ্রহটি স্থাপনের মাধ্যমে স্যাটেলাইট ক্ষমতাধর ৫৭তম দেশের তালিকায় যুক্ত হলো বাংলাদেশ।
এছাড়াও সজিব ওয়াজেদ জয়ের স্ত্রী-কন্যা ছাড়াও বাংলাদেশ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ, সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ ও নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান সহ অন্যান্য সরকারী কর্মকর্তা এসময় ‘কেনেডী স্পেস সেন্টার’-এর কেপ কেনাভেরাল-এ উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, দুই শতাধিক ব্যক্তির স্পেস এক্স-এর কেনেডি স্পেস সেন্টারে প্রবেশাধিকার থাকলেও অন্যান্যরা বিভিন্ন স্থান থেকে উৎক্ষেপণ পর্যবেক্ষণ করেছেন।
এদিকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের দৃষ্টি ছিলো ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোর ‘কেনেডী স্পেস সেন্টার’। নিউইয়র্ক আর ফ্লোরিডা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বিশেষ করে ওয়াশিংটন ডিসি, ভার্জেনিয়া, জর্জিয়া প্রভৃতি রাজ্য থেকে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী অরল্যান্ডোতে সমবেত হন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ-এর নেতৃত্বে দলের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী ‘কেনেডী স্পেস সেন্টার’-এ উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি এম. ফজলুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইরিন পারভীন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ ও মহিউদ্দিন দেওয়ান, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মিসবাহ আহমেদ, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক ফরিদ আলম, প্রবাস বিষয়ক সম্পাদক সোলায়মান আলী, উপ প্রচার সম্পাদক তৈয়বুর রহমান টনি, কার্যকরী সদস্য শাহানারা রহমান, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহনাজ মমতাজ, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শেখ জামাল হোসেন, সেবুল মিয়া, কেন্দ্রীয় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি দরুদ মিয়া রনেল প্রমুখ।
জানা গেছে, বাংলাদেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে বীজ রোপণ করেছিল মহাকাশ জয়ের প্রথম স্বপ্ন। কিন্তু ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে থেমে যায় সে স্বপ্নযাত্রা।
১৯৯৬ সালে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম দফায় ক্ষমতায় এসে এ-সংক্রান্ত উদ্যোগ নেয়। পরে ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে সে উদ্যোগ বাতিল করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। এমনকি তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারও এ প্রকল্পটি চালু করেনি। অবশেষে বর্তমান সরকার পরপর দুই দফার ক্ষমতায় থেকে দীর্ঘ ৪৩ বছর পর মহাকাশে স্থাপন করতে যাচ্ছে দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। বাবার হাতে সূচিত স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন করছেন তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এই স্বপ্ন জয়ের মধ্য দিয়ে কেবল বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলই নয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের রয়েছে নানা সম্ভাবনা, বাণিজ্যিক দিকও। সবকিছু ঠিক থাকলে এই স্যাটেলাইট থেকে নানামুখী সুফল পাবে দেশের মানুষ। একদিকে যেমন স্যাটেলাইটের সক্ষমতা বিক্রি করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে ও এ খাতের ব্যয় সাশ্রয় করা যাবে এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবার সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে; তেমনি দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনায় দারুণ কার্যকর ভূমিকা রাখবে এই স্যাটেলাইট। এ ছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজেও এ স্যাটেলাইটকে কাজে লাগানো সম্ভব।
তবে এই সম্ভাবনার জন্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের পরও বাংলাদেশকে অন্তত দুই মাস অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করছে বিটিআরসি। সংস্থাটির মতে, দুটি পর্যায়ে উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। প্রথম পর্যায়টি সম্পন্ন হতে সময় লাগবে ১০ দিন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে লাগবে ২০ দিনের মতো। মহাকাশে পৌঁছার পর বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে লাগবে প্রায় এক মাস। এরপর কারিগরি বিভিন্ন বিষয় শেষ করে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে আসতে আরও এক মাস সময় লাগবে বলে ধারণা বিটিআরসির। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুরে এবং রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় নির্মিত হয়েছে গ্রাউন্ড স্টেশন। স্যাটেলাইট মহাকাশে উন্মুক্ত হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশনে চলে যাবে। স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর সেটির নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর হবে।
প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, স্যাটেলাইটের এসব সুবিধা নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। বেসরকারি খাতকেও দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে। উৎক্ষেপণের পর মুহূর্ত থেকে এ স্যাটেলাইটের মেয়াদ থাকবে ১৫ বছর। সে জন্য সময়ক্ষেপণ না করে স্যাটেলাইটের উদ্দেশ্য পূরণে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যেতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার (১০ মে) রাতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সব প্রস্তুতিই ছিল। বাংলাদেশ সময় ভোররাত ৩টা ৪৭ মিনিটে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহটির যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে মহাকাশ পানে যাত্রা শুরুর কথা ছিল। সব প্রস্তুতি সেরে উৎক্ষেপণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল, কিন্তু মিনিট খানেক আগে সমস্যা দেখা দেওয়ায় স্যাটেলাইটটি আর উড়েনি লঞ্চ প্যাড থেকে। বলতে গেলে এক সেকেন্ড আগে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপন বন্ধ হয়ে যায়। উল্লেখ্য, ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য থেকে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ স্থগিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। উৎক্ষেপণের মোক্ষম সময়ের জন্য অপেক্ষা করা খুবই সাধারণ বিষয় এবং এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই বলে তিনি জানিয়েছেন ওই পোস্টে।
পোস্টে সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেছেন, ‘উৎক্ষেপণের শেষ মুহূর্তগুলো কম্পিউটার দ্বারা সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। হিসেবে যদি একটুও এদিক সেদিক পাওয়া যায়, তাহলে কম্পিউটার উৎক্ষেপণ থেকে বিরত থাকে। আজ যেমন নির্ধারিত সময়ের ঠিক ৪২ সেকেন্ড আগে নিয়ন্ত্রণকারী কম্পিউটার উৎক্ষেপণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। স্পেসএক্স সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগামীকাল একই সময়ে আবারও আমাদের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বহনকারী রকেটটি উৎক্ষেপণের চেষ্টা চালাবে।’ রকেট উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ঝুঁকি নেওয়া হয় না, তাই এ রকম হওয়াটা ‘খুবই স্বাভাবিক’ বলেও মন্তব্য করেন জয়।
স্পেসএক্স এক টুইট বার্তায় উৎক্ষেপণ স্থগিতের কারণ জানিয়ে বলেছিল যে, শেষ মিনিটে কিছু কারিগরি সমস্যার কারণে উৎক্ষেপণ স্থগিত রাখা হয়েছে। রকেট ও স্যাটেলাইট ভালো অবস্থায় আছে। তবে স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট থেকে ৬টার মধ্যে যেকোন সময় আবারও উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি ফের শুরু হবে বলেও জানানো হয়।
এদিকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের বিষয়টি বারবার বাতিল বা বিলম্বিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ-এর দৃষ্টি আকষর্ণ করা হলে বুধবার রাতে তিনি হিলটন হোটেলের লবিতে বলেন, স্যাটালাইট উৎক্ষেপন বাতিল বা তারিখ পরিবতন হওয়ার বহু ঘটনা আছে, যেখানে কাউন্ট ডাউনের একেবারে শেষ পর্যায়ে গিয়েও উৎক্ষেপণ স্থগিত করতে হয়েছে। এমনকি এর আগে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে পরপর ছয়বার স্থগিত করার ঘটনাও রয়েছে বলে তিনি জানান।
ফরাসী প্রতিষ্ঠান তালিস এলিনিয়া স্পেসের তৈরি বাংলাদেশের ‘জাতির জনক’বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামাঙ্কিত এই স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের মাধ্যমে। কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড ৩৯-এ থেকে এটি উৎক্ষেপণ হচ্ছে, এই প্যাড থেকেই মানুষকে নিয়ে চাঁদে রওনা হয়েছিল চন্দ্রযান এ্যাপোলো-১১।
বিটিআরসির তথ্যমতে, এ স্যাটেলাইট নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকা। মাত্র তিন থেকে ছয় বছরেই এই স্যাটেলাইট পাঠানোর সব খরচ উঠে আসবে। বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ যে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার ব্যয় হচ্ছে, এ উপগ্রহ উৎক্ষেপণের ফলে সেই অর্থ সাশ্রয় হবে। এই স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে নেপাল, মিয়ানমার ও ভুটানের কাছে স্যাটেলাইট সেবা দিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অবস্থান হবে ইন্দোনেশিয়ার একদম ওপরে। ফলে ইন্দোনেশিয়া থেকে সামনের দিকে যত দেশ আছে যেমন মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর সবই এই স্যাটেলাইটের অধীনে থাকবে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে চাকরির নতুন ক্ষেত্র ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলেও মনে করেন প্রযুক্তিবিদরা। তাদের মতে, ডাইরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) পদ্ধতিতে স্যাটেলাইট থেকে সিগন্যাল গ্রহণের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলেও সরাসরি টেলিভিশন সম্প্রচার করা সম্ভব হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের বিদ্যমান টেরেস্ট্রিয়াল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যোগাযোগব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করা যাবে।
বিশেষ করে সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-উই ৪ এবং সি-মি-উই ৫ যদি কোনো কারণে কাজ না করে তখন বিকল্প যোগাযোগে এই স্যাটেলাইট কাজে আসবে। এমনকি কৃষি, বন, মৎস্য, ভূতত্ত্ব, মানচিত্র তৈরি, পানি সম্পদ, ভূমি ব্যবহার, আবহাওয়া, পরিবেশ, ভূগোল, সমুদ্র, বিজ্ঞান, শিক্ষা এবং জ্ঞান ও বিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রে মহাকাশ ও দূর অনুধাবন প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা এবং প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহারিক প্রয়োগের জন্য গবেষণায়ও তথ্য-উপাত্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এই স্যাটেলাইটের সহায়তা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।