অবশেষে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি হামাসের

- প্রকাশের সময় : ০৩:৩৮:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৭৬ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: অবশেষে ইসরাইলের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। হাসি ফুটেছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজাবাসীর মুখে। বুধবার (১৫ জানুয়ারী) তারা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের দ্বারা প্রস্তাবিত ইসরায়েলের সঙ্গে গাজা যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে সম্মত দিয়েছে ফিলিস্তিনী স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, হামাস আল-জাজিরা আরবিকে জানিয়েছে যে তাদেও প্রতিনিধিদল মধ্যস্থতাকারীদের কাছে যুদ্ধবিরতি এবং বন্দী বিনিময় চুক্তির অনুমোদন পৌঁছে দিয়েছে। ইসরাইল এখনো এই প্রস্তাবের প্রতি কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ইসরাইল ও হামাস গাজা যুদ্ধের জন্য একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছেছে। এই চুক্তিতে ছয় সপ্তাহের প্রাথমিক যুদ্ধবিরতির কথা রয়েছে। এছাড়া গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনী ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করে ইসরাইলের হাতে আটক ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেয়ার কথা রয়েছে। এর বিনিময়ে হামাসের হাতে আটক পণবন্দীদের মুক্তির বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ফিলিস্তিনি এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, হামাস কাতারে আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি এবং ‘জিম্মি’ প্রত্যাবর্তনের প্রস্তাবে মৌখিক অনুমোদন দিয়েছে। তবে চূড়ান্ত লিখিত অনুমোদনের জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে।
এর আগে, ইসরায়েলী সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল যে, হামাসের সম্মতি পাওয়ার পরই চুক্তিটি বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে এবং রোববার থেকে এটি কার্যকর হবে। সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোববারই প্রথম দফায় বন্দিদের মুক্তির মাধ্যমে চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। এর আগে এক ইসরায়েলী কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল যে, হামাস গাজার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে এবং শীঘ্রই চুক্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হতে পারে।
চুক্তির শর্ত নিয়ে এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে
এখনো পর্যন্ত দু’পক্ষের মধ্যে যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তার মধ্যে প্রধান কয়েকটি বিষয়ে উভয়পক্ষ একমত হয়েছে বলে আলোচকরা জানিয়েছেন। তবে এগুলোর বিস্তারিত নিয়ে এখন ‘দরকষাকষি’ চলছে। জানা যাচ্ছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য গাজা ভূখÐ থেকে ইসরাইলি সৈন্য সরিয়ে নেয়ার যে শর্ত ছিল হামাসের, সেটি তারা প্রত্যাহার করেছে।
জানা গেছে, উভয়পক্ষ একমত হয়েছে যে প্রথম দিন হামাস তিনজন পণবন্দীকে মুক্তি দেবে। অন্য দিকে জনবহুল এলাকাগুলো থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে শুরু করবে ইসরাইল। সাত দিন পরে হামাস আরো চারজন পণবন্দীকে মুক্তি দেবে।
অন্যদিকে গাজার দক্ষিণ এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষজনকে উত্তরের এলাকায় ফেরার সুযোগ দেবে ইসরাইল। তবে তাদের উপকূলীয় সড়ক ধরে পায়ে হেঁটে ফিরতে হবে। সালাহ-আল-দিন সড়ক দিয়ে গাড়ি, পশুচালিত যানবাহন ও ট্রাক চলাচল করতে দেয়া হবে। তবে কাতার ও মিসরের কারিগরি নিরাপত্তা বাহিনী পরিচালিত একটি এক্সরে মেশিনের মধ্য দিয়ে এগুলোকে যেতে হবে।
চুক্তিতে বলা হয়েছে, প্রথম দফায় ৪২ দিনের জন্য ফিলাডেলফি করিডোরে ইসরাইলি সৈন্যরা অবস্থান করে উত্তর আর দক্ষিণ সীমান্তের মধ্যে ৮০০ মিটার লম্বা একটি বাফার জোন নিয়ন্ত্রণ করবে।
একইসাথে ইসরাইল এক হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে কারাগার থেকে ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৯০ জন রয়েছে, যারা ১৫ বছর বা তার বেশি সময় ধরে কারাভোগ করেছেন। বিনিময়ে হামাস ৩৪ জন পণবন্দীকে মুক্তি দেবে। চুক্তির দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায় নিয়ে আলোচনা করতে যুদ্ধবিরতির ১৬তম দিনে আবার বৈঠকে বসবেন আলোচকরা।
উল্লেখ্য, কয়েক দিন আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ২০ জানুয়ারীর মধ্যে (তার শপথ গ্রহণের দিন) যুদ্ধবিরতি না হলে দোজখ নেমে আসবে। গত ১২ জানুয়ারী রোববার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পরদিন সোমবার কাতারের আতিন শেইখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির সাথে তিনি কথা বলেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালায় হামাস। সেই হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয় আর ২৫১ জনকে পণবন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা ভূখÐে ইসরাইল আক্রমণ শুরু করে।
এদিকে যুদ্ধ বিততির সংবাদটি এমন এক সময়ে এলো, যখন গাজা অঞ্চলে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। সেই সঙ্গে সেখানে মানবিক সংকট গভীরতর হচ্ছে। উপত্যকাটিতে অব্যাহত ইসরায়েলী হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬২ জন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। এতে গত ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনী প্রাণ হারিয়েছে। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। যদিও ল্যানসেট জানিয়েছে এই সংখ্যা ৪০ শতাংশ কম। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৬০০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া প্রায় ২৩ লাখ গাজাবাসী বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কাতার এবং অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যস্থতায় এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি এর আগে বেশ কয়েকবার দেওয়া হলেও ইসরায়েল বারবার এটি এড়িয়ে যাচ্ছিল। যা ফলে হামাসের সঙ্গে তাদের শান্তি আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছিল। সূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা, সিএনএন