২০২৫ সাল
ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছুঁতে চলেছে এয়ারলাইনস শিল্প
- প্রকাশের সময় : ০১:০৫:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ২৫ বার পঠিত
কয়েক বছরের স্থবিরতার পর বৈশ্বিক এয়ারলাইনস খাতে প্রবৃদ্ধির গতি পুনরুদ্ধার হয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালে খাতটির আয় ইতিহাসে প্রথমবার ১ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ওই বছর ৬ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড ৫০০ কোটি যাত্রী আকাশপথে পরিষেবা নেবে। ফ্লাইট চলাচল বেড়ে দাঁড়াবে ৪ কোটিতে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এসব পূর্বাভাস দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ)। খবর সিএনএন ও দ্য ন্যাশনাল।
আন্তর্জাতিক সংস্থাটি বলছে, আগামী বছর এয়ারলাইনস খাত ৪ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। এ সময় যাত্রীপ্রতি কোম্পানিগুলো ৭ ডলার মুনাফা করবে, যা ১৮ মাস আগে ছিল ২ ডলার ২৫ সেন্ট। চলতি বছর যাত্রীপ্রতি মুনাফা দাঁড়াতে পারে ৬ ডলার ৪০ সেন্ট।
অঞ্চলভেদে মুনাফার হার ভিন্ন হবে। যেমন ২০২৪ সালে যাত্রীপ্রতি ২৩ ডলার ১০ সেন্ট মুনাফা নিয়ে এগিয়ে থাকবে মধ্যপ্রাচ্যের কোম্পানিগুলো। এর কারণ অঞ্চলটির শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামোয় বড় বিনিয়োগ এবং ইউরোপীয় ও মার্কিন বিমান সংস্থাগুলোর জন্য রাশিয়ার আকাশসীমায় বিধিনিষেধ।
আইএটিএ পূর্বাভাসে বলেছে, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলো ৫৩০ কোটি ডলার নিট মুনাফা অর্জন করবে, যা জুনে দেয়া পূর্বাভাস ৩৮০ কোটি ডলারের তুলনায় অনেক বেশি। গত বছর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক কোম্পানিগুলো মুনাফা করেছিল ৩১০ কোটি ডলার।
মধ্যপ্রাচ্যের কোম্পানিগুলো যাত্রীপ্রতি ২৪ ডলার মুনাফা নিয়ে আগামী বছর এগিয়ে থাকবে। যাত্রীপ্রতি ১২ ও ৯ ডলার নিয়ে পরবর্তী দুটি অবস্থানে থাকতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোম্পানিগুলো। তবে আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের কোম্পানিগুলো গড়ের চেয়ে কম মুনাফা অর্জন করবে।
২০২০ সালের শুরুতে কভিড-১৯ মহামারীর ধাক্কা এভিয়েশন খাতকে দীর্ঘ মন্দার দিকে নিয়ে যায়। ২০২২ সাল পর্যন্ত তিন বছর এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলো বড় ধরনের লোকসানের মুখোমুখি হয়েছিল। ওই সময় লোকসানের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৮ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। ২০২৪ সাল ও আগামী বছরের পূর্বাভাস থেকে অনুমান করা যাচ্ছে খাতটিতে সুদিন ফিরে আসছে।
মহামারী-পরবর্তী সময়ে বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হলে এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলো দ্রুত মুনাফা অর্জন করতে থাকে। চাহিদা ও মুনাফা বিবেচনায় নিয়ে কিছু কোম্পানি তখন টিকিটের দাম বাড়িয়ে দেয়।
আইএটিএর মহাপরিচালক উইলি ওয়ালশ ১ লাখ কোটি ডলার আয়ের পূর্বাভাসকে ‘দারুণ খবর’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে কিছু সতর্ক বার্তাও রয়েছে তার। উইলি ওয়ালশ বলেন, ‘খাতটির সামগ্রিক মুনাফা খুব একটা বেশি হবে না। পূর্বাভাস অনুসারে মুনাফা হতে পারে ৩ হাজার ৬৬০ কোটি ডলার।’
২০২৫ সালে এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলোর প্রান্তীয় মুনাফা দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এ সময় খরচ করবে ৯৪ হাজার কোটি ডলার। সরবরাহ চেইন সমস্যা ও ক্রমবর্ধমান করের মতো বাহ্যিক চাপ তাদের ব্যয়ের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
কম মুনাফার পেছনে সরবরাহ চেইনের সংকটকে প্রধান হিসেবে দেখছেন উইলি ওয়ালশ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মাঝ আকাশে প্যানেল খুলে যাওয়ার পর ধারাবাহিক বিপত্তির মাঝে রয়েছে জায়ান্ট কোম্পানি বোয়িং। সুরক্ষা মানের পাশাপাশি কয়েক বছরের আগের দুর্ঘটনায় আইনি সমঝোতায় ব্যর্থতা ও কর্মীদের আন্দোলন কোম্পানিটিকে দুর্বল করে দিয়েছে। এয়ারবাসের সরবরাহ সংকটও পুরো খাতের প্রবৃদ্ধিকে কিছুটা হলেও টেনে ধরেছে।
উইলি ওয়ালশ আরো বলেন, ‘সরবরাহ চেইনের সমস্যার কারণে আমাদের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে এবং এখনো এ সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি।’ সরবরাহ চেইন সমস্যার কারণে উড়োজাহাজের দীর্ঘমেয়াদি ঘাটতি তৈরি হয়েছে। যার চাপ পড়ছে পুরনো উড়োজাহাজের ওপর। এসব আকাশযান অতিরিক্ত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বড় এলাকাসহ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ভূরাজনৈতিক এভিয়েশন খাতকে প্রভাবিত করছে। এ বিষয়ে আইএটিএর মহাপরিচালক বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় সংঘাত ছড়িয়ে পড়ায় আকাশপথের বড় একটি অংশ বাণিজ্যিক ফ্লাইটের জন্য বন্ধ রয়েছে। এতে এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলোর খরচ আরো বেড়ে গেছে। কারণ গন্তব্যে পৌঁছতে দীর্ঘ দূরত্বের রুট বেছে নিতে হচ্ছে তাদের।’
আগামী বছর এয়ারলাইনস আয়ের বড় একটি অংশ হবে পরিচালন ব্যয়ে। উইলি ওয়ালশ বলেন, ‘মুনাফার যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে তা অর্জনে এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলোকে কঠোরভাবে খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং পুরো সরবরাহ চেইন কার্যকরভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। এর মধ্যে একচেটিয়া অবকাঠামো সরবরাহকারীদেরও জবাবদিহির মধ্যে রাখা জরুরি। কারণ তারা প্রায়ই সক্ষমতা ও দক্ষতা প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়।’
এয়ারলাইনস খাতের এ প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান ও জ্বালানি খাতসহ অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে। এয়ারলাইনস শিল্পের অবদানের মধ্যে রয়েছে ৮ কোটি ৬৫ লাখ নিয়োগ ও ৪ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, বৈশ্বিক জিডিপিতে এর হিস্যা ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
আগামী বছর যাত্রী ও কার্গো উভয় পরিষেবার অব্যাহত বৃদ্ধি প্রত্যাশা করছে আইএটিএ। কার্গোর সংখ্যা বাড়তে পারে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। আনুষঙ্গিক পরিষেবাসহ গড় উড়োজাহাজ ভাড়া ১ দশমিক ৮ শতাংশ কমে ৩৮০ ডলারে দাঁড়াতে পারে।