রেমিট্যান্সের খরচ কমাতে কার্যকর উদ্যোগের তাগিদ
- প্রকাশের সময় : ১১:০৫:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৬৩ বার পঠিত
রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ কমাতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) চলমান ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে একটি কার্যকর সিদ্ধান্ত চেয়ে যৌথ প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। মঙ্গলবার এ প্রস্তাব বাস্তবায়নে একটি কর্মসূচি গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি ভারত প্রাথমিকভাবে ডব্লিউটিওতে একটি প্রস্তাব দেয়। বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ভারতের উদ্যোগে সমর্থন জানিয়েছে এবং চারটি দেশ যৌথভাবে মন্ত্রী পর্যায়ের সিদ্ধান্তে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে আবুধাবির ন্যাশনাল এক্সিবিশন সেন্টারে শুরু হওয়া চার দিনের উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন বৃহস্পতিবার শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, আগামী মার্চ মাসে রেমিট্যান্সের খরচের ওপর একটি বিষয়ভিত্তিক অধিবেশন আয়োজন করবে ডব্লিউটিওর ট্রেড ইন ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস কমিটি। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে চারটি দেশ ডব্লিউটিও সম্মেলনে তাদের প্রস্তাব জমা দিয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটিকে রেমিট্যান্সের খরচ কমাতে ছয়টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে একটি কর্মসূচি হাতে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এগুলো হচ্ছে– সার্বিক উন্নয়নে আন্তঃসীমান্ত রেমিট্যান্সের প্রভাব পর্যালোচনা; রেমিটেন্সের খরচ ও এর প্রভাব পর্যালোচনা, প্রযুক্তি ব্যবহার, নতুন বাজারের উত্থান, বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্রদান ও এ ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ এবং রেমিট্যান্স পরিষেবা কীভাবে ভোক্তাদের প্রভাবিত করছে তা বিবেচনা করা; রেমিট্যান্সের খরচ কমানোর প্রভাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা; ডিজিটালাইজেশন এবং নতুন প্রযুক্তির উদ্ভবসহ রেমিট্যান্সের খরচ কমানোর জন্য সুযোগ চিহ্নিত করা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার উপায় অন্বেষণ ও রেমিট্যান্স পরিষেবার খরচ কমানো সম্পর্কিত সুযোগের প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
চারটি দেশ আরও বলেছে, মন্ত্রী পর্যায়ের ১৩তম সম্মেলন তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করে এ-সংক্রান্ত কর্মসূচির ফলাফল সাধারণ পরিষদকে পর্যালোচনার নির্দেশ দেবে। যাতে যৌক্তিক পর্যালোচনার ভিত্তিতে ১৪তম সম্মেলনে কর্মসূচি কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া সহজ হয়। প্রস্তাবে আরও উল্লেখ করা হয়, রেমিট্যান্স পরিবার এবং সম্প্রদায়ের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক অবদান রাখছে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, গত বছরে মোট ৮৬০ বিলিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের ডলার রেমিট্যান্সের মধ্যে প্রায় ৭৮ শতাংশ বা যুক্তরাষ্ট্রের ডলার ৬৬৯ বিলিয়ন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে গেছে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, রেমিট্যান্স প্রেরণে বিশ্বব্যাপী গড় ব্যয় কমে ৬ দশমিক ১৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তার পরও এ ব্যয় উচ্চ পর্যায়ে রয়ে গেছে। এ হার জাতিসংঘের এসডিজি লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণেরও বেশি। জাতিসংঘের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, রেমিট্যান্সের লেনদেন খরচ ৩ শতাংশেরও কম হওয়া উচিত। তাই রেমিট্যান্সের খরচ কমানোর বিষয়টিকে ডব্লিউটিওর উন্নয়ন এজেন্ডায় সংযুক্ত করার প্রস্তাবও করা হয়।
কম খরচে রেমিট্যান্সসহ দ্রুত, আরও স্বচ্ছ এবং সহজে আন্তঃসীমান্ত লেনদেনকে যৌথ প্রস্তাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে দ্রুত পেমেন্ট সিস্টেমসহ ডিজিটাল পেমেন্ট অবকাঠামোর আন্তঃকার্যকারিতার ওপর জোর দেওয়া হয়। উল্লেখ করা হয়, ডিজিটাল রেমিট্যান্সের বৈশ্বিক গড় খরচ ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ, যা নন-ডিজিটাল রেমিট্যান্সের খরচের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
এ প্রসঙ্গে জেনেভার স্থায়ী মিশনের মিনিস্টার কমার্শিয়াল ও সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য দেবব্রত চক্রবর্তী বলেন, ভারত রেমিট্যান্স খরচ কমানোসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবটি গৃহীত হলে তাহলে গেটওয়ে পর্যায়ে খরচ কমবে। এতে বাংলাদেশও উপকৃত হবে। কারণ বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স গ্রহণকারী দেশগুলোর অন্যতম। তাই বাংলাদেশ নৈতিক ভিত্তিতে প্রস্তাবটিকে সমর্থন করছে।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডব্লিউটিওর আওতায় প্রয়োগযোগ্যভাবে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত আশার সম্ভাবনা কম। এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও বাজার সুবিধাসহ অন্যান্য উদ্যোগ কার্যকরে বাংলাদেশও সাইড লাইনে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করছে। পরেও যা অব্যাহত রখাতে হবে। সূত্র : সমকাল।