বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৬২.৬৭ শতাংশ
- প্রকাশের সময় : ০৮:০৮:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৯৩ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক : ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে দেশের বৈদেশিক লেনদেনের ঘাটতি ধীরে ধীরে কমে আসছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৫৯ কোটি ডলারে, যা আগের অর্থবছরের এই সময়ের তুলনায় ৬২.৬৭ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল এক হাজার ২৩১ কোটি ডলার।
অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ৭৭২ কোটি ডলারের বাণিজ্যে ঘাটতি কমেছে। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪৭৬ কোটি ডলার। নভেম্বরের চেয়েও ঘাটতি ১৭ কোটি ডলার কমেছে। গত সোমবার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশ দুই হাজার ৫৯৮ কোটি ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানি করেছে।
তার বিপরীতে আমদানি করেছে তিন হাজার ৫৮ কোটি ডলারের পণ্য ও সেবা। সব মিলিয়ে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে, যার পরিমাণ ৫০ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। জানা যায়, ২০২২ সালে দেশে ডলার সংকট প্রকট হয়। এরপরে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে।
এতে ধারাবাহিকভাবে এলসি খোলার হার কমে যায়। এসব উদ্যোগের ফলে এখন সংকট মোকাবেলা সহজ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাণিজ্যে ঘাটতি পুরোপুরি কমে আসবে বলে মনে করেন নীতিনির্ধারকরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের আলোচ্য এই সময়ে চলতি হিসাবে কোনো ঘাটতি তৈরি হয়নি। উল্টো এই সূচক ইতিবাচক ধারায় থাকায় ১৯২ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত আছে।
আগের অর্থবছরের একই সময়ে চলতি হিসাব ঘাটতিতে ছিল। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৪৯২ কোটি ডলার। চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো।
এদিকে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে জুলাই-ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ যেখানে ২৫২ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে ১৮১ কোটি ডলারে নেমেছে। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ২৭.৩৫ শতাংশ। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে। এ সূচকটি আগের বছরের চেয়ে ১৫.৫৫ শতাংশ কমে ৭৫ কোটি ডলার হয়েছে। আগের অর্থবছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৮৯ কোটি ডলার।
আর্থিক হিসাবের ঘাটতিও কমল
গত ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশের আর্থিক হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৩৯ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস শেষে উদ্বৃত্ত ছিল ১৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে অনেক পিছিয়ে থাকলেও ঘাটতি কমতে শুরু করেছে। নভেম্বরে যেখানে ঘাটতি ছিল ৫৪৭ কোটি ডলার। ডিসেম্বরে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি আট কোটি ডলার কমেছে।
এই সময়ে সার্বিক ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালেন্স) ঘাটতিও কিছুটা কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-ডিসেম্বরে এ হিসাবে ঘাটতি দেখা গেছে ৩৬৭ কোটি ডলার। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ঘাটতি ছিল ৬৪৫ বিলিয়ন ডলার। এক বছরের ব্যবধানে সার্বিক ভারসাম্যের ঘাটতি কমেছে ২৭৮ কোটি ডলার বা ৪৩ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২.৯১ শতাংশ বা ৩০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত জুলাই-ডিসেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৭৯ কোটি ডলার আর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল এক হাজার ৪৯ কোটি ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ হয়েছে ৯৫ কোটি ১০ লাখ ডলার, আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৭৯ কোটি ২০ লাখ ডলার। এবার বৈদেশিক দায় পরিশোধ বেড়েছে ২০ শতাংশ বেশি বা ১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সূত্র : কালের কণ্ঠ
হককথা/নাছরিন