নিউইয়র্ক ০৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

কনটেইনার সংকট নেই, পরিবহন জটিলতায় বাড়ছে আমদানি-রপ্তানি খরচ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৩:১৪:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৫৪ বার পঠিত

লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে একের পরে এক হামলা হচ্ছে। হামলা এড়াতে বাংলাদেশ ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে চলাচলকারী জাহাজগুলো চলছে ভিন্ন রুটে। এতে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে সময় লাগছে বেশি। ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোতে বাংলাদেশি রপ্তানিপণ্য পৌঁছাতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় বেশি লাগছে।

একসময় কনটেইনার সংকটের কারণে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে দেরি হলেও এখন তা কেটেছে। তবে লোহিত সাগরে অস্থিরতার কারণে রপ্তানিপণ্য গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগছে বেশি। এতে পণ্যের লিড টাইম (ক্রয় আদেশ দেওয়ার তারিখ থেকে গুদামে পণ্য পৌঁছাতে যে সময় লাগে) ও খরচ উভয়ই বেড়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন রপ্তানিকারকরা। একই সঙ্গে আমদানিতেও পড়েছে বিরূপ প্রভাব। এমন তথ্য জানান ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স ও ব্যবসায়ীরা।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, লোহিত সাগরে যুদ্ধাবস্থার কারণে মাদার ভেসেলে দীর্ঘদিন আটকে থাকছে পণ্য। এ কারণে পণ্য পরিবহনে খরচও বেড়ে যাচ্ছে। বিদেশি শিপিং কোম্পানি রপ্তানিকারকদের জানিয়েছে, চলমান বৈশ্বিক এ সংকটের আপাতত সমাধান নেই। বিকল্প প্রক্রিয়ায় চলছে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা। তবে কেটে গেছে কনটেইনার সংকট।

যেভাবে সংকটের শুরু
বাংলাদেশের বন্দরগুলো থেকে ইউরোপ, আমেরিকাগামী রপ্তানি পণ্যের বেশিরভাগ বিভিন্ন ফিডার জাহাজে প্রথমে সিঙ্গাপুর, কলম্বো, পোর্ট ক্লাংয়ের মতো ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সেখান থেকে তুলে দেওয়া হয় বিভিন্ন মাদার ভেসেলে। এসব মাদার ভেসেল এতদিন এডেন উপসাগর ও লোহিত সাগরের ভেতর দিয়ে সুয়েজ খাল হয়ে গন্তব্যে পৌঁছে যেত।

তবে সম্প্রতি লোহিত সাগরে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় চলাচলকারী জাহাজের ওপর হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের ওপর হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। হামলার পর এই পথ বাদ দিয়ে মাদার ভেসেলগুলোকে যেতে হচ্ছে উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে জিব্রাল্টার প্রণালি হয়ে। এই পথে সব জাহাজেরই বাড়তি সময় লাগছে প্রায় দুই সপ্তাহ। ফলে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোতে তৈরি হয়েছে মাদার ভেসেলের শিডিউল বিপর্যয় ও সংকট। যথাসময়ে পণ্য পরিবহন নিয়ে তৈরি হয়েছে গভীর সংকট।

এ বিষয়ে বি কে ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজওয়ানুল হক সিরাজী বলেন, ‘যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণে রেগুলার চ্যানেলটা আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। সেক্ষেত্রে আমাদের শিপমেন্ট শিডিউলটা ১৫ দিন দেরি হচ্ছে। আগে যে পণ্য পৌঁছাতো ৩০ দিনে, সেটা এখন লাগছে ৪৫ দিন। পণ্য রাউটিং করে অনেক দূর থেকে ঘুরে যাচ্ছে। ফলে জাহাজ ভাড়া বেড়ে গেছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। আমাদের খরচও বেড়ে গেছে।’

লোহিত সাগরে এখনো হামলা চলছে
বাংলাদেশ ফ্রাইট ফরোয়ার্ডস অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অমিয় শংকর বর্মণ বলেন, ‘খবর পাচ্ছি সেখানে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। আমাদের হাতে কিছুই নেই, এটা বৈশ্বিক সমস্যা। এ কারণে জাহাজগুলো অন্য রুটে যাতায়াত করছে।’

তকে কোনো রকম কনটেইনার সংকট নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত কনটেইনার আছে। প্রতিবেশী দেশ থেকে পণ্য আমদানি বা রপ্তানিতে সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু ইউরোপ ও আমেরিকায় পণ্য আমদানি-রপ্তানি বিঘ্নিত হচ্ছে।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদার ভেসেল সংকটের দ্রুত সমাধান না হলে ইউরোপ-আমেরিকায় আমদানি-রপ্তানি হুমকির মুখে পড়বে। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ৬৩ শতাংশ যায় এসব দেশে। তবে এসব দেশ থেকে আসে আমদানি পণ্যের আট শতাংশ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কনটেইনার পরিবহনের ফ্রেইট চার্জ অন্তত ৪০ শতাংশ বেড়েছে। আরও ২৫ শতাংশ বাড়তে পারে ফ্রেইট চার্জ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান মো. রিয়াজ উদ্দিন খান বলেন, ‘পণ্য পরিবহনে ১০ থেকে ১২ দিন সময় বেশি লাগছে। ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশ থেকে প্রতি কনটেইনারের ভাড়া এক থেকে দেড় হাজার ডলার পর্যন্ত বেড়েছে।’ ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘লোহিত সাগর হয়ে ইউরোপ থেকে পণ্য আনতে সমস্যা হচ্ছে। বিকল্প রুটে জাহাজ চলাচলের কারণে বেড়েছে বিমা ও জ্বালানি খরচ। এর প্রভাবে শিপিং কোম্পানিগুলো কনটেইনার ও জাহাজে পণ্য পরিবহনের চার্জ বাড়িয়েছে। সমস্যা সমাধানের কোনো আশা এখনো দেখছি না। শিপিং কোম্পানিগুলো আমাদের অপেক্ষা করতে বলছে।’ বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম বলেন, ‘এ রুটে সমস্যার কারণে পোশাক খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সমস্যা দীর্ঘায়িত থাকলে এ খাতে নতুন সংকট তৈরি করবে।’ সূত্র : জাগোনিউজ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

কনটেইনার সংকট নেই, পরিবহন জটিলতায় বাড়ছে আমদানি-রপ্তানি খরচ

প্রকাশের সময় : ০৩:১৪:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৪

লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে একের পরে এক হামলা হচ্ছে। হামলা এড়াতে বাংলাদেশ ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে চলাচলকারী জাহাজগুলো চলছে ভিন্ন রুটে। এতে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে সময় লাগছে বেশি। ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোতে বাংলাদেশি রপ্তানিপণ্য পৌঁছাতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় বেশি লাগছে।

একসময় কনটেইনার সংকটের কারণে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে দেরি হলেও এখন তা কেটেছে। তবে লোহিত সাগরে অস্থিরতার কারণে রপ্তানিপণ্য গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগছে বেশি। এতে পণ্যের লিড টাইম (ক্রয় আদেশ দেওয়ার তারিখ থেকে গুদামে পণ্য পৌঁছাতে যে সময় লাগে) ও খরচ উভয়ই বেড়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন রপ্তানিকারকরা। একই সঙ্গে আমদানিতেও পড়েছে বিরূপ প্রভাব। এমন তথ্য জানান ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স ও ব্যবসায়ীরা।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, লোহিত সাগরে যুদ্ধাবস্থার কারণে মাদার ভেসেলে দীর্ঘদিন আটকে থাকছে পণ্য। এ কারণে পণ্য পরিবহনে খরচও বেড়ে যাচ্ছে। বিদেশি শিপিং কোম্পানি রপ্তানিকারকদের জানিয়েছে, চলমান বৈশ্বিক এ সংকটের আপাতত সমাধান নেই। বিকল্প প্রক্রিয়ায় চলছে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা। তবে কেটে গেছে কনটেইনার সংকট।

যেভাবে সংকটের শুরু
বাংলাদেশের বন্দরগুলো থেকে ইউরোপ, আমেরিকাগামী রপ্তানি পণ্যের বেশিরভাগ বিভিন্ন ফিডার জাহাজে প্রথমে সিঙ্গাপুর, কলম্বো, পোর্ট ক্লাংয়ের মতো ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সেখান থেকে তুলে দেওয়া হয় বিভিন্ন মাদার ভেসেলে। এসব মাদার ভেসেল এতদিন এডেন উপসাগর ও লোহিত সাগরের ভেতর দিয়ে সুয়েজ খাল হয়ে গন্তব্যে পৌঁছে যেত।

তবে সম্প্রতি লোহিত সাগরে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় চলাচলকারী জাহাজের ওপর হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের ওপর হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। হামলার পর এই পথ বাদ দিয়ে মাদার ভেসেলগুলোকে যেতে হচ্ছে উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে জিব্রাল্টার প্রণালি হয়ে। এই পথে সব জাহাজেরই বাড়তি সময় লাগছে প্রায় দুই সপ্তাহ। ফলে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোতে তৈরি হয়েছে মাদার ভেসেলের শিডিউল বিপর্যয় ও সংকট। যথাসময়ে পণ্য পরিবহন নিয়ে তৈরি হয়েছে গভীর সংকট।

এ বিষয়ে বি কে ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজওয়ানুল হক সিরাজী বলেন, ‘যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণে রেগুলার চ্যানেলটা আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। সেক্ষেত্রে আমাদের শিপমেন্ট শিডিউলটা ১৫ দিন দেরি হচ্ছে। আগে যে পণ্য পৌঁছাতো ৩০ দিনে, সেটা এখন লাগছে ৪৫ দিন। পণ্য রাউটিং করে অনেক দূর থেকে ঘুরে যাচ্ছে। ফলে জাহাজ ভাড়া বেড়ে গেছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। আমাদের খরচও বেড়ে গেছে।’

লোহিত সাগরে এখনো হামলা চলছে
বাংলাদেশ ফ্রাইট ফরোয়ার্ডস অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অমিয় শংকর বর্মণ বলেন, ‘খবর পাচ্ছি সেখানে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। আমাদের হাতে কিছুই নেই, এটা বৈশ্বিক সমস্যা। এ কারণে জাহাজগুলো অন্য রুটে যাতায়াত করছে।’

তকে কোনো রকম কনটেইনার সংকট নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত কনটেইনার আছে। প্রতিবেশী দেশ থেকে পণ্য আমদানি বা রপ্তানিতে সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু ইউরোপ ও আমেরিকায় পণ্য আমদানি-রপ্তানি বিঘ্নিত হচ্ছে।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদার ভেসেল সংকটের দ্রুত সমাধান না হলে ইউরোপ-আমেরিকায় আমদানি-রপ্তানি হুমকির মুখে পড়বে। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ৬৩ শতাংশ যায় এসব দেশে। তবে এসব দেশ থেকে আসে আমদানি পণ্যের আট শতাংশ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কনটেইনার পরিবহনের ফ্রেইট চার্জ অন্তত ৪০ শতাংশ বেড়েছে। আরও ২৫ শতাংশ বাড়তে পারে ফ্রেইট চার্জ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান মো. রিয়াজ উদ্দিন খান বলেন, ‘পণ্য পরিবহনে ১০ থেকে ১২ দিন সময় বেশি লাগছে। ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশ থেকে প্রতি কনটেইনারের ভাড়া এক থেকে দেড় হাজার ডলার পর্যন্ত বেড়েছে।’ ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘লোহিত সাগর হয়ে ইউরোপ থেকে পণ্য আনতে সমস্যা হচ্ছে। বিকল্প রুটে জাহাজ চলাচলের কারণে বেড়েছে বিমা ও জ্বালানি খরচ। এর প্রভাবে শিপিং কোম্পানিগুলো কনটেইনার ও জাহাজে পণ্য পরিবহনের চার্জ বাড়িয়েছে। সমস্যা সমাধানের কোনো আশা এখনো দেখছি না। শিপিং কোম্পানিগুলো আমাদের অপেক্ষা করতে বলছে।’ বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম বলেন, ‘এ রুটে সমস্যার কারণে পোশাক খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সমস্যা দীর্ঘায়িত থাকলে এ খাতে নতুন সংকট তৈরি করবে।’ সূত্র : জাগোনিউজ।