নিউইয়র্ক ০২:২৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বাণিজ্য মেলার আসল উদ্দেশ্যই ‘নিরুদ্দেশ’

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৭১ বার পঠিত

ছবি-সমকাল

বাংলাদেশ ডেস্ক : দেশি পণ্যকে বিদেশির সামনে পরিচিতি করা, আবার বিদেশি পণ্যের সঙ্গে স্থানীয় ক্রেতার যোগসূত্র ঘটানোর অভিপ্রায় নিয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (ডিআইটিএফ) আবির্ভাব। তবে আন্তর্জাতিক এ মেলার বাস্তবিক হাল সবাইকে পোড়াচ্ছে।

‘দেইখা লন বাইছা লন, একদাম দেড়শ’– এভাবে ছন্দময় সুরে কোরাস করে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ফুটপাতের পণ্যের বিকিকিনি চলছে জম্পেশ। অস্বাস্থ্যকর খাবারের পসরা সাজিয়ে নাকের ডগায় ধুন্ধুমার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ভুঁইফোঁড় রেস্তোরাঁ। চাটনির দোকানেরও আছে তর্জন-গর্জন। কদম ফেললে কোট-টাইয়ের বিরাট মূল্যহ্রাসের দোকানও ভূরি ভূরি। মেলার ভেতরে এসব দোকানের আধিক্যের কারণে জৌলুস হারাচ্ছে আন্তর্জাতিক এই মেলা। পণ্যের মান ও অস্বাভাবিক দরের অভিযোগ যেন পিছু ছাড়ছে না। প্রতিবছর পাওয়া রপ্তানি আদেশের তথ্য নিয়েও আছে লুকোচুরি। এর ফলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) আসল উদ্দেশ্যই হয়ে গেছে ‘নিরুদ্দেশ’। দেশের সবচেয়ে বড় এ মেলার নামের সঙ্গে ‘আন্তর্জাতিক’ শব্দটি জুড়ে দেওয়া হলেও গেল তিন দশকে সেই মানে পৌঁছাতে পারেনি। উদ্বেগজনক খবর হলো, এ বছর মেলায় বিদেশি স্টলের সংখ্যা আরও কমেছে। গেলবার ১২টি থাকলেও এবার নেমেছে ৯টিতে।

এদিকে, বাণিজ্য মেলা ঘিরে অনুযোগের লম্বা তালিকা থাকলেও এটিকে ‘আন্তর্জাতিক’ রূপ দেওয়ার সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি বলে মনে করেন ব্যবসায়ী নেতারা। তাদের মতে, রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে এ ধরনের মেলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পাশাপাশি ঢাকাবাসীর বিনোদনের জন্যও এটির ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশ্বকাতারে মেলাকে নিয়ে যেতে অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকা দরকার। তবে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে বিদেশি স্টল বাড়ানোর দিকে। কারণ, বিদেশি ব্যবসায়ী এলে তারা শুধু বিক্রি করবেন না, কিছু পণ্যের ক্রয়াদেশও দেবেন।

ইপিবির কর্মকর্তারা বলছেন, মাসব্যাপী মেলা আন্তর্জাতিক মানের করা একটু কঠিন। কারণ, এত বড় আয়োজনে ব্যবস্থাপনায় কিছু ত্রুটি থাকবে। তবু এ মেলার মাধ্যমে কিছু ক্রয়াদেশ পাওয়া যায়। স্থানীয় উৎপাদকরা তাদের পণ্য ব্র্যান্ডিং করতে পারে। তবে কিছু সমস্যা থাকলেও সেগুলো সমাধান করে বিশ্বমানের মেলা উপহার দেওয়াই হবে আগামীর লক্ষ্য।

এবার স্টল ৩৫০

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর আয়োজনে ১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু করে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। আগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বসলেও এবার তৃতীয়বারের মতো পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু-চায়না ফ্রেন্ডশিপ ইন্টারন্যাশনাল এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) চলছে ২৮তম বাণিজ্য মেলা। এ বছর মেলায় অংশ নিয়েছে দেশি-বিদেশি মোট ৩৫০টি স্টল। এর মধ্যে সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, হংকং, ইরান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান– এই সাতটি দেশের ৯টি প্রতিষ্ঠান মেলায় যুক্ত হয়েছে।

২০২৩ সালে বাণিজ্য মেলায় প্রায় তিন কোটি ডলারের রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছিল ইপিবি। এ ছাড়া নগদ কেনাবেচা হয় প্রায় ১০০ কোটি টাকার। আর ২০২২ সালে এক কোটি ৬০ লাখ ডলারের রপ্তানি আদেশ মিলেছিল।

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক। মেলায় এ খাতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রতিবছরই অংশ নেয়। ফলে এ খাতে রপ্তানি আদেশ বেশি আসার কথা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, এটাকে এখন আর আন্তর্জাতিক মেলা বলা হয় না। বলা হয় বাণিজ্য মেলা। কারণ, এখানে স্থানীয় পণ্যের সমাহারই বেশি। ফলে এটি পোশাক রপ্তানিকারকদের কাছে খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে না। তবে দেশে ডেনিম মেলাসহ বস্ত্র খাতের যে কয়েকটি মেলা হয়, সেসব মেলায় উল্লেখযোগ্য আকারে রপ্তানি আদেশ পাওয়া যায়।
তাঁর মতে, এ মেলা থেকে রপ্তানি আদেশ পাওয়া না গেলেও মেলা চলমান রাখা দরকার। কারণ, ঢাকার মানুষের ঘোরাফেরা কিংবা বিনোদনের জন্য দর্শনীয় স্থান কম। বছরে একবার অন্তত এ মেলায় ঘোরাও যায়, দরকারি কিছু পণ্যও কেনা যায়।

আসলে কী বিক্রি হচ্ছে

ইপিবি প্রতিবছর বিভিন্ন দেশে ৩০ থেকে ৩৫টি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশ নেয়। তাদের মাধ্যমে দেশের ব্যবসায়ীরা বিদেশি সেসব মেলায় অংশ নেন। বিশ্বমানের অনেক মেলায় অংশ নিলেও নিজের দেশের মেলাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিতে পারেনি ইপিবি; বরং বছর বছর বিশাল এ আয়োজন তার লক্ষ্যচ্যুত হয়ে পরিণত হয়েছে এক ‘বিশৃঙ্খল’ মেলায়।

এবার মেলায় বিদেশি ক্রেতার আনাগোনা কেমন? বিদেশি পণ্যের স্টলের সংখ্যা কত? মেলায় ব্যবসার সার্বিক পরিবেশ কেমন? গেল দু’দিন মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে কয়েকজন ক্রেতা-দর্শনার্থী ও ব্যবসায়ীকে এসব প্রশ্ন করা হয়। তারা দিয়েছেন হতাশাজনক সব তথ্য। তাদের ভাষ্য, দেশের নানা স্থানে ওরস উপলক্ষে যে ধরনের হাট বসে, যেন তেমনই হাট বসেছে পূর্বাচলে। ঢাকার গুলিস্তান, চকবাজার, ফার্মগেট, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটপাতে যেসব পণ্য বিক্রি হয়, সেসব পণ্যে ভরে গেছে মেলা।

মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে ক্রেতা-দর্শনার্থীর তথ্যের মিলও পাওয়া গেছে। দেখা যায়, স্টলের বেশির ভাগই সাধারণ মানের। আসবাব, ইলেকট্রনিকসহ হাতেগোনা কয়েকটি ব্র্যান্ডের স্টল চোখে পড়ে। ১৬ থেকে ১৭টি অস্বাস্থ্যকর খাবারের, সাত-আটটি প্লাস্টিকের এবং ৮-১০টি চাটনির স্টলও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ দেশি স্টলে রপ্তানিযোগ্য পণ্য নেই। তবে রপ্তানির জন্য উৎপাদন পণ্যের যেগুলোর গুণগত মান ভালো নয়, অর্থাৎ রপ্তানি করা যাবে না, সেগুলো মেলায় প্রদর্শন করা হচ্ছে। তবে ভালো মানের পণ্য রপ্তানি করে থাকে এমন প্রতিষ্ঠানও অংশ নিয়েছে। যদিও সংখ্যায় তা অনেক কম।

কয়েকটি দেশি স্টলে পোস্টার টাঙিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে বিদেশি পণ্য। আবার বিদেশি স্টলেও দেশি পণ্য বিক্রি হতে দেখা গেছে। কেউ কেউ হাতমাইকে হাঁকছেন– ‘এক দাম ১৩০, যেটা নেন ১৩০, বাইছা নেন ১৩০’। কেউ কেউ স্টলে পোস্টারে লিখে রেখেছেন– ‘দুইটা কিনলে একটা ফ্রি’, ‘কলপকে না বলুন, শ্যাম্পু করলেই চুল কালো’।

তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে প্লাস্টিকের পণ্য। এ ছাড়া ইলেকট্রনিকস ও গৃহস্থালি ব্যবহার্য পণ্য, কসমেটিকস, নারীদের পোশাক, আইসক্রিমসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীও বেচাকেনা চলছে।

সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মূল উদ্দেশ্য থাকে–বিদেশি ক্রেতা-বিক্রেতা অংশ নেবেন এবং পণ্যের গুণগত মান যাচাই করবেন। পছন্দ হলে নিজ দেশে ফেরার আগে কিছু পণ্যের ক্রয়াদেশ দেবেন। বিপরীত সুবিধা হচ্ছে, দেশীয় আমদানিকারকরা আমদানি পণ্য খুঁজতে বিদেশ না গিয়ে মেলার মাধ্যমে সেই সুযোগ লুফে নেবেন। তবে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় এ দুটি উদ্দেশ্যের কোনোটির যথাযথ প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।

যদিও প্রতিবছর হাতে গোনা কয়েকটি বিদেশি স্টলের অংশগ্রহণ দেখিয়ে ইপিবি দাবি করে, এ মেলার মাধ্যমে দেশি-বিদেশি পণ্য প্রদর্শন, রপ্তানি বাজার খোঁজা, রপ্তানি আদেশ পাওয়া এবং দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে সহজ সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব।

এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি মাহবুবুল আলম সমকালকে বলেন, এ মেলায় বিদেশি ব্যবসায়ীরা সব সময় অংশ নিচ্ছে। আরও বেশি বিদেশি স্টল যাতে অংশ নিতে পারে, সে উদ্যোগ নিতে হবে। তাতে মেলার মান বাড়বে। তিনি বলেন, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমইএ প্রতিবছর মেশিনারিজ মেলার আয়োজন করে। সেখানে অনেক দেশের উদ্যোক্তা তাদের পণ্য প্রদর্শন করে। সেটি পুরোপুরি একটি আন্তর্জাতিক মেলা। বাণিজ্য মেলায় নানা পণ্যের সমাহার থাকে বিধায় সেটিকে আন্তর্জাতিক রূপ দেওয়া কিছুটা কঠিন।

ক্রেতারা ক্ষুব্ধ

নরসিংদী থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছেন একটি তৈরি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা সেলিম আহমেদ। সমকালকে তিনি বলেন, ‘‍‍‌‌‌বিভিন্ন স্থানে মাজারকেন্দ্রিক যে ওরস হয়, এ মেলাও প্রায় সে রকম। ১৫০ টাকায় প্লাস্টিকের হরেক রকমের জিনিস কেনা যায়। ফুটপাতের চাটনি থেকে শুরু করে সবকিছুই পাওয়া।’
ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে মেলায় আসা ব্যাংকার কামরুল হাসান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুধু মুখে মুখে। এখানে বিদেশি কোনো ক্রেতা দেখা যাচ্ছে না। কয়েকটি বিদেশি স্টল আছে। তবে তারা বিদেশি পণ্যের নামে যা বিক্রি করছে, সেগুলোর মান যাচাই করা দরকার। দামও নেওয়া হচ্ছে অস্বাভাবিক।’

ব্যবসায়ীদেরও আছে অভিযোগ

লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের যেসব প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে, মানহীন পণ্যের কারণে তারা সেভাবে ব্র্যান্ডিং করতে পারছে না বলে অভিযোগ কিছু ব্যবসায়ীর। নাম না প্রকাশ করে মেলায় অংশ নেওয়া এক ব্যবসায়ী বলেন, রপ্তানি আদেশ নিয়ে ইপিবি যা-ই বলুক না কেন, এখানে কিছু বেচাকেনা হয়। তবে উল্লেখযোগ্য রপ্তানি আদেশ পাওয়া যায় না। হোম টেক্সটাইলের বিক্রয়কর্মী নাকিবুল ইসলাম বলেন, বিদেশি ক্রেতা তেমন নেই; দেশি ক্রেতাই মূল ভরসা। মেলায় মূল্যছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। তাতে দেশি ক্রেতার ভালো সাড়া মিলছে।

অন্দরে-বাহিরে দামের বিশাল ফারাক

মেলা প্রাঙ্গণের বাইরে উত্তর পাশে ‘চায়না বাজার’ নামে একটি প্যাভিলিয়নে পণ্য লেখা রয়েছে চায়না অফার ও গোল্ডেন অফার। এখানে রকমারি খাবার, পোশাক, খেলনাসহ সব ধরনের পণ্য বেচাকেনা হচ্ছে। তবে ভেতরের চেয়ে বাইরে দাম কম। মেলাসংলগ্ন মূল সড়কের পাশে এক পিস কাশ্মীরি শাল পাওয়া যাচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। মেলার ভেতরে তা কিনতে গুনতে হচ্ছে দুই হাজার টাকার মতো। মেলার ভেতরে মিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল প্যাভিলিয়নে ছোট ছোট কয়েকটি বিদেশি স্টল কাশ্মীরি শাল, পোশাক, ব্যাগসহ নানা পণ্য বিক্রি করছে। দামের ফারাক নিয়ে জানতে চাইলে নিজের নাম প্রকাশ না করে জানান, তারা সরাসরি কাশ্মীর থেকে পণ্য নিয়ে এসেছেন। পণ্যের গুণগত মান অনুযায়ী বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। মেলার মূল অবকাঠামোর পূর্ব পাশের দিকে নামবিহীন একটি স্টলে পাকিস্তানি থ্রিপিস বিক্রি করছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। একটি স্টলের বিক্রয়কর্মী খালেদ রহমান বলেন, তাদের স্টলে তিন হাজার থেকে শুরু করে ৮-১০ হাজার টাকা দামের থ্রিপিস রয়েছে। তিনি বলেন, একটি থ্রিপিস পাকিস্তান থেকে আনতে প্রায় দেড় হাজার টাকা শুল্ককর দিতে হয়, যা বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করতে হচ্ছে।

ইপিবি যা বলছে

মেলার পরিচালক ও ইপিবির সচিব বিবেক সরকার বলেন, ৩০ দিনের মেলাকে আন্তর্জাতিক রূপ দেওয়া কঠিন। পাঁচ থেকে সাত দিনের হলে সেটাকে আন্তর্জাতিক মেলা বলা যায়। বিদেশি অংশগ্রহণকারী আনার ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন– তাদের ভিসা প্রসেসিং, পণ্য আনার ক্ষেত্রে কাস্টমস জটিলতা, যানজটমুক্ত পরিবহন সেবা, আবাসনসহ সব বিষয়ে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে জটিলতা থাকে। তবু আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

বিদেশি ক্রেতা দেখা না গেলেও প্রতিবছর মেলাশেষে যে রপ্তানি আদেশের তথ্য দেওয়া হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন স্টল কত টাকার ক্রয়াদেশ পাচ্ছে, তা প্রতিদিনই সংগ্রহ করা হয়। মাসজুড়ে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতেই রপ্তানি আদেশের তথ্য জানানো হয়। তারপরও এটি খতিয়ে দেখা হবে। সূত্র : সমকাল

হককথা/নাছরিন

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

বাণিজ্য মেলার আসল উদ্দেশ্যই ‘নিরুদ্দেশ’

প্রকাশের সময় : ০৪:০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

বাংলাদেশ ডেস্ক : দেশি পণ্যকে বিদেশির সামনে পরিচিতি করা, আবার বিদেশি পণ্যের সঙ্গে স্থানীয় ক্রেতার যোগসূত্র ঘটানোর অভিপ্রায় নিয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (ডিআইটিএফ) আবির্ভাব। তবে আন্তর্জাতিক এ মেলার বাস্তবিক হাল সবাইকে পোড়াচ্ছে।

‘দেইখা লন বাইছা লন, একদাম দেড়শ’– এভাবে ছন্দময় সুরে কোরাস করে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ফুটপাতের পণ্যের বিকিকিনি চলছে জম্পেশ। অস্বাস্থ্যকর খাবারের পসরা সাজিয়ে নাকের ডগায় ধুন্ধুমার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ভুঁইফোঁড় রেস্তোরাঁ। চাটনির দোকানেরও আছে তর্জন-গর্জন। কদম ফেললে কোট-টাইয়ের বিরাট মূল্যহ্রাসের দোকানও ভূরি ভূরি। মেলার ভেতরে এসব দোকানের আধিক্যের কারণে জৌলুস হারাচ্ছে আন্তর্জাতিক এই মেলা। পণ্যের মান ও অস্বাভাবিক দরের অভিযোগ যেন পিছু ছাড়ছে না। প্রতিবছর পাওয়া রপ্তানি আদেশের তথ্য নিয়েও আছে লুকোচুরি। এর ফলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) আসল উদ্দেশ্যই হয়ে গেছে ‘নিরুদ্দেশ’। দেশের সবচেয়ে বড় এ মেলার নামের সঙ্গে ‘আন্তর্জাতিক’ শব্দটি জুড়ে দেওয়া হলেও গেল তিন দশকে সেই মানে পৌঁছাতে পারেনি। উদ্বেগজনক খবর হলো, এ বছর মেলায় বিদেশি স্টলের সংখ্যা আরও কমেছে। গেলবার ১২টি থাকলেও এবার নেমেছে ৯টিতে।

এদিকে, বাণিজ্য মেলা ঘিরে অনুযোগের লম্বা তালিকা থাকলেও এটিকে ‘আন্তর্জাতিক’ রূপ দেওয়ার সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি বলে মনে করেন ব্যবসায়ী নেতারা। তাদের মতে, রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে এ ধরনের মেলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পাশাপাশি ঢাকাবাসীর বিনোদনের জন্যও এটির ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশ্বকাতারে মেলাকে নিয়ে যেতে অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকা দরকার। তবে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে বিদেশি স্টল বাড়ানোর দিকে। কারণ, বিদেশি ব্যবসায়ী এলে তারা শুধু বিক্রি করবেন না, কিছু পণ্যের ক্রয়াদেশও দেবেন।

ইপিবির কর্মকর্তারা বলছেন, মাসব্যাপী মেলা আন্তর্জাতিক মানের করা একটু কঠিন। কারণ, এত বড় আয়োজনে ব্যবস্থাপনায় কিছু ত্রুটি থাকবে। তবু এ মেলার মাধ্যমে কিছু ক্রয়াদেশ পাওয়া যায়। স্থানীয় উৎপাদকরা তাদের পণ্য ব্র্যান্ডিং করতে পারে। তবে কিছু সমস্যা থাকলেও সেগুলো সমাধান করে বিশ্বমানের মেলা উপহার দেওয়াই হবে আগামীর লক্ষ্য।

এবার স্টল ৩৫০

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর আয়োজনে ১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু করে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। আগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বসলেও এবার তৃতীয়বারের মতো পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু-চায়না ফ্রেন্ডশিপ ইন্টারন্যাশনাল এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) চলছে ২৮তম বাণিজ্য মেলা। এ বছর মেলায় অংশ নিয়েছে দেশি-বিদেশি মোট ৩৫০টি স্টল। এর মধ্যে সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, হংকং, ইরান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান– এই সাতটি দেশের ৯টি প্রতিষ্ঠান মেলায় যুক্ত হয়েছে।

২০২৩ সালে বাণিজ্য মেলায় প্রায় তিন কোটি ডলারের রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছিল ইপিবি। এ ছাড়া নগদ কেনাবেচা হয় প্রায় ১০০ কোটি টাকার। আর ২০২২ সালে এক কোটি ৬০ লাখ ডলারের রপ্তানি আদেশ মিলেছিল।

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক। মেলায় এ খাতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রতিবছরই অংশ নেয়। ফলে এ খাতে রপ্তানি আদেশ বেশি আসার কথা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, এটাকে এখন আর আন্তর্জাতিক মেলা বলা হয় না। বলা হয় বাণিজ্য মেলা। কারণ, এখানে স্থানীয় পণ্যের সমাহারই বেশি। ফলে এটি পোশাক রপ্তানিকারকদের কাছে খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে না। তবে দেশে ডেনিম মেলাসহ বস্ত্র খাতের যে কয়েকটি মেলা হয়, সেসব মেলায় উল্লেখযোগ্য আকারে রপ্তানি আদেশ পাওয়া যায়।
তাঁর মতে, এ মেলা থেকে রপ্তানি আদেশ পাওয়া না গেলেও মেলা চলমান রাখা দরকার। কারণ, ঢাকার মানুষের ঘোরাফেরা কিংবা বিনোদনের জন্য দর্শনীয় স্থান কম। বছরে একবার অন্তত এ মেলায় ঘোরাও যায়, দরকারি কিছু পণ্যও কেনা যায়।

আসলে কী বিক্রি হচ্ছে

ইপিবি প্রতিবছর বিভিন্ন দেশে ৩০ থেকে ৩৫টি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশ নেয়। তাদের মাধ্যমে দেশের ব্যবসায়ীরা বিদেশি সেসব মেলায় অংশ নেন। বিশ্বমানের অনেক মেলায় অংশ নিলেও নিজের দেশের মেলাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিতে পারেনি ইপিবি; বরং বছর বছর বিশাল এ আয়োজন তার লক্ষ্যচ্যুত হয়ে পরিণত হয়েছে এক ‘বিশৃঙ্খল’ মেলায়।

এবার মেলায় বিদেশি ক্রেতার আনাগোনা কেমন? বিদেশি পণ্যের স্টলের সংখ্যা কত? মেলায় ব্যবসার সার্বিক পরিবেশ কেমন? গেল দু’দিন মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে কয়েকজন ক্রেতা-দর্শনার্থী ও ব্যবসায়ীকে এসব প্রশ্ন করা হয়। তারা দিয়েছেন হতাশাজনক সব তথ্য। তাদের ভাষ্য, দেশের নানা স্থানে ওরস উপলক্ষে যে ধরনের হাট বসে, যেন তেমনই হাট বসেছে পূর্বাচলে। ঢাকার গুলিস্তান, চকবাজার, ফার্মগেট, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটপাতে যেসব পণ্য বিক্রি হয়, সেসব পণ্যে ভরে গেছে মেলা।

মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে ক্রেতা-দর্শনার্থীর তথ্যের মিলও পাওয়া গেছে। দেখা যায়, স্টলের বেশির ভাগই সাধারণ মানের। আসবাব, ইলেকট্রনিকসহ হাতেগোনা কয়েকটি ব্র্যান্ডের স্টল চোখে পড়ে। ১৬ থেকে ১৭টি অস্বাস্থ্যকর খাবারের, সাত-আটটি প্লাস্টিকের এবং ৮-১০টি চাটনির স্টলও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ দেশি স্টলে রপ্তানিযোগ্য পণ্য নেই। তবে রপ্তানির জন্য উৎপাদন পণ্যের যেগুলোর গুণগত মান ভালো নয়, অর্থাৎ রপ্তানি করা যাবে না, সেগুলো মেলায় প্রদর্শন করা হচ্ছে। তবে ভালো মানের পণ্য রপ্তানি করে থাকে এমন প্রতিষ্ঠানও অংশ নিয়েছে। যদিও সংখ্যায় তা অনেক কম।

কয়েকটি দেশি স্টলে পোস্টার টাঙিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে বিদেশি পণ্য। আবার বিদেশি স্টলেও দেশি পণ্য বিক্রি হতে দেখা গেছে। কেউ কেউ হাতমাইকে হাঁকছেন– ‘এক দাম ১৩০, যেটা নেন ১৩০, বাইছা নেন ১৩০’। কেউ কেউ স্টলে পোস্টারে লিখে রেখেছেন– ‘দুইটা কিনলে একটা ফ্রি’, ‘কলপকে না বলুন, শ্যাম্পু করলেই চুল কালো’।

তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে প্লাস্টিকের পণ্য। এ ছাড়া ইলেকট্রনিকস ও গৃহস্থালি ব্যবহার্য পণ্য, কসমেটিকস, নারীদের পোশাক, আইসক্রিমসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীও বেচাকেনা চলছে।

সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মূল উদ্দেশ্য থাকে–বিদেশি ক্রেতা-বিক্রেতা অংশ নেবেন এবং পণ্যের গুণগত মান যাচাই করবেন। পছন্দ হলে নিজ দেশে ফেরার আগে কিছু পণ্যের ক্রয়াদেশ দেবেন। বিপরীত সুবিধা হচ্ছে, দেশীয় আমদানিকারকরা আমদানি পণ্য খুঁজতে বিদেশ না গিয়ে মেলার মাধ্যমে সেই সুযোগ লুফে নেবেন। তবে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় এ দুটি উদ্দেশ্যের কোনোটির যথাযথ প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।

যদিও প্রতিবছর হাতে গোনা কয়েকটি বিদেশি স্টলের অংশগ্রহণ দেখিয়ে ইপিবি দাবি করে, এ মেলার মাধ্যমে দেশি-বিদেশি পণ্য প্রদর্শন, রপ্তানি বাজার খোঁজা, রপ্তানি আদেশ পাওয়া এবং দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে সহজ সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব।

এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি মাহবুবুল আলম সমকালকে বলেন, এ মেলায় বিদেশি ব্যবসায়ীরা সব সময় অংশ নিচ্ছে। আরও বেশি বিদেশি স্টল যাতে অংশ নিতে পারে, সে উদ্যোগ নিতে হবে। তাতে মেলার মান বাড়বে। তিনি বলেন, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমইএ প্রতিবছর মেশিনারিজ মেলার আয়োজন করে। সেখানে অনেক দেশের উদ্যোক্তা তাদের পণ্য প্রদর্শন করে। সেটি পুরোপুরি একটি আন্তর্জাতিক মেলা। বাণিজ্য মেলায় নানা পণ্যের সমাহার থাকে বিধায় সেটিকে আন্তর্জাতিক রূপ দেওয়া কিছুটা কঠিন।

ক্রেতারা ক্ষুব্ধ

নরসিংদী থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছেন একটি তৈরি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা সেলিম আহমেদ। সমকালকে তিনি বলেন, ‘‍‍‌‌‌বিভিন্ন স্থানে মাজারকেন্দ্রিক যে ওরস হয়, এ মেলাও প্রায় সে রকম। ১৫০ টাকায় প্লাস্টিকের হরেক রকমের জিনিস কেনা যায়। ফুটপাতের চাটনি থেকে শুরু করে সবকিছুই পাওয়া।’
ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে মেলায় আসা ব্যাংকার কামরুল হাসান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুধু মুখে মুখে। এখানে বিদেশি কোনো ক্রেতা দেখা যাচ্ছে না। কয়েকটি বিদেশি স্টল আছে। তবে তারা বিদেশি পণ্যের নামে যা বিক্রি করছে, সেগুলোর মান যাচাই করা দরকার। দামও নেওয়া হচ্ছে অস্বাভাবিক।’

ব্যবসায়ীদেরও আছে অভিযোগ

লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের যেসব প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে, মানহীন পণ্যের কারণে তারা সেভাবে ব্র্যান্ডিং করতে পারছে না বলে অভিযোগ কিছু ব্যবসায়ীর। নাম না প্রকাশ করে মেলায় অংশ নেওয়া এক ব্যবসায়ী বলেন, রপ্তানি আদেশ নিয়ে ইপিবি যা-ই বলুক না কেন, এখানে কিছু বেচাকেনা হয়। তবে উল্লেখযোগ্য রপ্তানি আদেশ পাওয়া যায় না। হোম টেক্সটাইলের বিক্রয়কর্মী নাকিবুল ইসলাম বলেন, বিদেশি ক্রেতা তেমন নেই; দেশি ক্রেতাই মূল ভরসা। মেলায় মূল্যছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। তাতে দেশি ক্রেতার ভালো সাড়া মিলছে।

অন্দরে-বাহিরে দামের বিশাল ফারাক

মেলা প্রাঙ্গণের বাইরে উত্তর পাশে ‘চায়না বাজার’ নামে একটি প্যাভিলিয়নে পণ্য লেখা রয়েছে চায়না অফার ও গোল্ডেন অফার। এখানে রকমারি খাবার, পোশাক, খেলনাসহ সব ধরনের পণ্য বেচাকেনা হচ্ছে। তবে ভেতরের চেয়ে বাইরে দাম কম। মেলাসংলগ্ন মূল সড়কের পাশে এক পিস কাশ্মীরি শাল পাওয়া যাচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। মেলার ভেতরে তা কিনতে গুনতে হচ্ছে দুই হাজার টাকার মতো। মেলার ভেতরে মিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল প্যাভিলিয়নে ছোট ছোট কয়েকটি বিদেশি স্টল কাশ্মীরি শাল, পোশাক, ব্যাগসহ নানা পণ্য বিক্রি করছে। দামের ফারাক নিয়ে জানতে চাইলে নিজের নাম প্রকাশ না করে জানান, তারা সরাসরি কাশ্মীর থেকে পণ্য নিয়ে এসেছেন। পণ্যের গুণগত মান অনুযায়ী বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। মেলার মূল অবকাঠামোর পূর্ব পাশের দিকে নামবিহীন একটি স্টলে পাকিস্তানি থ্রিপিস বিক্রি করছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। একটি স্টলের বিক্রয়কর্মী খালেদ রহমান বলেন, তাদের স্টলে তিন হাজার থেকে শুরু করে ৮-১০ হাজার টাকা দামের থ্রিপিস রয়েছে। তিনি বলেন, একটি থ্রিপিস পাকিস্তান থেকে আনতে প্রায় দেড় হাজার টাকা শুল্ককর দিতে হয়, যা বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করতে হচ্ছে।

ইপিবি যা বলছে

মেলার পরিচালক ও ইপিবির সচিব বিবেক সরকার বলেন, ৩০ দিনের মেলাকে আন্তর্জাতিক রূপ দেওয়া কঠিন। পাঁচ থেকে সাত দিনের হলে সেটাকে আন্তর্জাতিক মেলা বলা যায়। বিদেশি অংশগ্রহণকারী আনার ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন– তাদের ভিসা প্রসেসিং, পণ্য আনার ক্ষেত্রে কাস্টমস জটিলতা, যানজটমুক্ত পরিবহন সেবা, আবাসনসহ সব বিষয়ে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে জটিলতা থাকে। তবু আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

বিদেশি ক্রেতা দেখা না গেলেও প্রতিবছর মেলাশেষে যে রপ্তানি আদেশের তথ্য দেওয়া হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন স্টল কত টাকার ক্রয়াদেশ পাচ্ছে, তা প্রতিদিনই সংগ্রহ করা হয়। মাসজুড়ে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতেই রপ্তানি আদেশের তথ্য জানানো হয়। তারপরও এটি খতিয়ে দেখা হবে। সূত্র : সমকাল

হককথা/নাছরিন