নিউইয়র্ক ০৩:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

এক বছরে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ৬ হাজার ৯৬২

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৩:২৮:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪
  • / ১২০ বার পঠিত

দেশে অর্থনৈতিক সংকট থাকা সত্ত্বেও ২০২৩ সালে ব্যাংকে কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা বেড়েছে। যদিও এ বছর কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে দেশে কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা বেড়েছে ৬ হাজার ৯৬২টি।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টিতে। হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে কোটিপাতি অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৩৩ শতাংশ। তবে ২০২২ সালে এ হার ছিল ৭.৮০ শতাংশ।

ব্যাংকাররা বলছেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনেকেই ব্যবসায় লোকসান করেছেন। বাধ্য হয়ে ব্যবসা ছোট অথবা কেউ কেউ ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে নানা সংকট আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জাঁতাকলে পিষ্ট নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। সাধারণ মানুষ সংসারের ব্যয় মেটাতে পারছেন না। ছোট ছোট অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে পারছে না। ব্যাংকে টাকা জমানো তো দূরের কথা, অনেকে উল্টো সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন। ব্যাংকাররা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতেও সমাজের একশ্রেণির মানুষের আয় বেড়েছে, যা সমাজে বৈষম্যের প্রতিফলন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে মোট ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১৫.৩৫ কোটি। এসব অ্যাকাউন্টে মোট আমানতের পরিমাণ ১৭.৪৯ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টি অ্যাকাউন্টে ১ কোটি টাকার বেশি জমা রয়েছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে কোটিপতি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৫টি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ডিস্টিঙ্গুইশড ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশের সংকটের সময় বেশিরভাগ মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছে। কিন্তু একটা শ্রেণি তার সুযোগ নিচ্ছে। ‘আমরা বেশি দামে পণ্য কিনছি মানে কেউ না কেউ সেটা বেশি দামে বিক্রি করছে। তাই তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্পদের সুষম বণ্টন হচ্ছে না। দেশের সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়ে যাচ্ছে,’ বলেন তিনি।

কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার কমার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃদ্ধির হার কমার সঙ্গে আয় বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই। একটা শ্রেণি সম্পদ কেন্দ্রীভূত করছে। আবার তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিদেশে পাচারও করছে।

তিনি বলেন, সর্বোপরি আমাদের দেশে দারিদ্র্য নিরসন হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বৈষম্য বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। এসব সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) একত্রে ডিজিটালি কাজ করতে হবে। কোটিপতি বাড়লেও আমাদের রাজস্ব বাড়ছে না কেন? এখানে দুর্বলতা রয়েছে।

দুই সংস্থা একসঙ্গে কাজ করলে দেশের রাজস্ব বাড়বে বলে মনে করেন মোস্তাফিজুর রহমান। সবচেয়ে বেশি টাকা রয়েছে দুই ধরনের অ্যাকাউন্টে। সেগুলোর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষে ১-৫ কোটি টাকা ধারণকারী কোটিপতি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৯২ হাজার ৫১৬টি। এসব অ্যাকাউন্টে মোট জমা ছিল ১.৯৪ লাখ কোটি টাকা। এছাড়া ৫-১০ কোটি টাকা আছে এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৬৫২টি। এসব অ্যাকাউন্টে মোট অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৯ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে ব্যাংকে কোটিপতি হিসাব ছিল মাত্র ৫টি। ১৯৭৫ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৭টিতে। এরপর তা পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৮ সালে ১৯ হাজার ১৬৩টিতে উন্নীত হয়।

গত মাসে এনবিআরের সঙ্গে প্রাক-বাজেট বৈঠকে অর্থনীতি সমিতি জানায়, দেশে মাত্র ১৮ লাখ মানুষ কর দেন। তাদের মধ্যে ১০ লাখ সরকারি চাকরিজীবী এবং অন্যান্য চাকরিতে নিয়োজিত আছেন। অর্থনীতি সমিতির হিসাবে, দেশে ধনী ও উচ্চমধ্যবিত্তদের মধ্যে আয়কর দেওয়া লোকের সংখ্যা ৯-১০ লাখ হবে। কিন্তু এই সংখ্যা হওয়ার কথা ৭৮ লাখ। এর মানে ধনী ও উচ্চমধ্যবিত্তদের ৮৭ শতাংশই কোনো ধরনের আয়কর দেন না।

অর্থনীতি সমিতি আরো জানায়, এনবিআর কখনোই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। আইএমফের ঋণের শর্তের মধ্যে অন্যতম হলো রাজস্ব আদায় বাড়ানো এবং কর প্রশাসনের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি। কিন্তু চলতি অর্থবছরেও এনবিআর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা কমানোয় এখন তা ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। সূত্র : ডেইলি-বাংলাদেশ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

এক বছরে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ৬ হাজার ৯৬২

প্রকাশের সময় : ০৩:২৮:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪

দেশে অর্থনৈতিক সংকট থাকা সত্ত্বেও ২০২৩ সালে ব্যাংকে কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা বেড়েছে। যদিও এ বছর কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে দেশে কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা বেড়েছে ৬ হাজার ৯৬২টি।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টিতে। হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে কোটিপাতি অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৩৩ শতাংশ। তবে ২০২২ সালে এ হার ছিল ৭.৮০ শতাংশ।

ব্যাংকাররা বলছেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনেকেই ব্যবসায় লোকসান করেছেন। বাধ্য হয়ে ব্যবসা ছোট অথবা কেউ কেউ ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে নানা সংকট আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জাঁতাকলে পিষ্ট নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। সাধারণ মানুষ সংসারের ব্যয় মেটাতে পারছেন না। ছোট ছোট অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে পারছে না। ব্যাংকে টাকা জমানো তো দূরের কথা, অনেকে উল্টো সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন। ব্যাংকাররা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতেও সমাজের একশ্রেণির মানুষের আয় বেড়েছে, যা সমাজে বৈষম্যের প্রতিফলন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে মোট ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১৫.৩৫ কোটি। এসব অ্যাকাউন্টে মোট আমানতের পরিমাণ ১৭.৪৯ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টি অ্যাকাউন্টে ১ কোটি টাকার বেশি জমা রয়েছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে কোটিপতি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৫টি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ডিস্টিঙ্গুইশড ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশের সংকটের সময় বেশিরভাগ মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছে। কিন্তু একটা শ্রেণি তার সুযোগ নিচ্ছে। ‘আমরা বেশি দামে পণ্য কিনছি মানে কেউ না কেউ সেটা বেশি দামে বিক্রি করছে। তাই তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্পদের সুষম বণ্টন হচ্ছে না। দেশের সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়ে যাচ্ছে,’ বলেন তিনি।

কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার কমার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃদ্ধির হার কমার সঙ্গে আয় বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই। একটা শ্রেণি সম্পদ কেন্দ্রীভূত করছে। আবার তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিদেশে পাচারও করছে।

তিনি বলেন, সর্বোপরি আমাদের দেশে দারিদ্র্য নিরসন হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বৈষম্য বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। এসব সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) একত্রে ডিজিটালি কাজ করতে হবে। কোটিপতি বাড়লেও আমাদের রাজস্ব বাড়ছে না কেন? এখানে দুর্বলতা রয়েছে।

দুই সংস্থা একসঙ্গে কাজ করলে দেশের রাজস্ব বাড়বে বলে মনে করেন মোস্তাফিজুর রহমান। সবচেয়ে বেশি টাকা রয়েছে দুই ধরনের অ্যাকাউন্টে। সেগুলোর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষে ১-৫ কোটি টাকা ধারণকারী কোটিপতি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৯২ হাজার ৫১৬টি। এসব অ্যাকাউন্টে মোট জমা ছিল ১.৯৪ লাখ কোটি টাকা। এছাড়া ৫-১০ কোটি টাকা আছে এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৬৫২টি। এসব অ্যাকাউন্টে মোট অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৯ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে ব্যাংকে কোটিপতি হিসাব ছিল মাত্র ৫টি। ১৯৭৫ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৭টিতে। এরপর তা পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৮ সালে ১৯ হাজার ১৬৩টিতে উন্নীত হয়।

গত মাসে এনবিআরের সঙ্গে প্রাক-বাজেট বৈঠকে অর্থনীতি সমিতি জানায়, দেশে মাত্র ১৮ লাখ মানুষ কর দেন। তাদের মধ্যে ১০ লাখ সরকারি চাকরিজীবী এবং অন্যান্য চাকরিতে নিয়োজিত আছেন। অর্থনীতি সমিতির হিসাবে, দেশে ধনী ও উচ্চমধ্যবিত্তদের মধ্যে আয়কর দেওয়া লোকের সংখ্যা ৯-১০ লাখ হবে। কিন্তু এই সংখ্যা হওয়ার কথা ৭৮ লাখ। এর মানে ধনী ও উচ্চমধ্যবিত্তদের ৮৭ শতাংশই কোনো ধরনের আয়কর দেন না।

অর্থনীতি সমিতি আরো জানায়, এনবিআর কখনোই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। আইএমফের ঋণের শর্তের মধ্যে অন্যতম হলো রাজস্ব আদায় বাড়ানো এবং কর প্রশাসনের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি। কিন্তু চলতি অর্থবছরেও এনবিআর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা কমানোয় এখন তা ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। সূত্র : ডেইলি-বাংলাদেশ।