মূল্যস্ফীতি কমাতে আরও ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করল আইএমএফ
- প্রকাশের সময় : ০৩:২১:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৭৪ বার পঠিত
আউটলুক প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের লক্ষ্য ও শর্ত বাস্তবায়নের পথেই রয়েছে বাংলাদেশ। মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক করা হয়েছে। ফলে কমে আসছে সার্বিক মূল্যস্ফীতি। তবে মূল্যস্ফীতি আরও কমাতে নানা ব্যবস্থা নিতে হবে। যত দ্রুত মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা যাবে, বাংলাদেশের জন্য তা ততই ভালো হবে।
সংস্থাটির এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বুধবার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক আউটলুক প্রকাশনা উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। জাপানের টোকিও থেকে বাংলাদেশ সময় সকাল আটটায় অনলাইনে এ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের ৪৭০ কোটি যুক্তরাষ্ট্রের ডলার ঋণের চুক্তি হয় গত বছরের ৩০ জানুয়ারি। সাত কিস্তিতে সাড়ে তিন বছরে ঋণের এ অর্থ দেবে আইএমএফ। এর মধ্যে দুই কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ। দুই কিস্তির অর্থ পেতে আইএমএফের কিছু শর্ত পূরণও করা হয়েছে। ব্রিফিংয়ে শ্রীনিবাসনের কাছে প্রশ্ন ছিল, ঋণ লক্ষ্য ও শর্ত পরিপালনের ঠিক পথে বাংলাদেশ আছে কি না।
জবাবে শ্রীনিবাসন বলেন, দুই মাস আগে ঋণ কর্মসূচি নিয়ে আইএমএফের একটা পর্যালোচনা বৈঠক হয়। তা সন্তোষজনক ছিল। সেই ভিত্তিতে এ কথা বলা যায় যে বাংলাদেশ এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ঠিক পথেই আছে। যদিও কিছু বিষয়ে বাংলাদেশ ভালো করতে পারেনি। যেমন নির্বাচনের কারণে আর্থিক হিসাব এখনো নেতিবাচক বা ঋণাত্মক। তবে চলতি হিসাব ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছে। নির্বাচন শেষ হয়ে যাওয়ায় অনিশ্চয়তাও কেটে যাবে। তাতে আর্থিক হিসাব টেকসই অবস্থায় ফিরে আসবে বলে আশা করা যায়।
আইএমএফের এ পরিচালক আরও বলেন, কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও সংকটে পড়ে। আর এ কারণেই দরকারি হয়ে ওঠে আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচির। কর্মসূচিতে বাংলাদেশকে অনেক শর্ত (পিলার) দেওয়া হয়, যার অন্যতম হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা। আরেক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে রাজস্ব আদায়ে টেকসই ব্যবস্থা তৈরি করা, যাতে ঝুঁকিতে থাকা ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করা যায়।
এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির গড় ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে একটু কমেছে মূল্যস্ফীতি। রাজস্ব আয় সংগ্রহ একটা বড় বিষয়—এমন মন্তব্য করে শ্রীনিবাসন বলেন, বাংলাদেশের রাজস্ব আয় তেমন বাড়ছে না, আবার ব্যয়ও করা হচ্ছে বেছে বেছে। এ দুইয়ের সমন্বয়টা জরুরি। তিনি বলেন, সুদের হার বাড়ছে। প্রয়োজনে মুদ্রানীতি আরও কঠোর করতে হবে। নিকট ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে—এমন প্রশ্ন করা হলেও আইএমএফের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন কোনো জবাব দেননি।
বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে
আইএমএফের আউটলুকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কিছুটা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে সংস্থাটি বলেছিল, চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ১ শতাংশ। তিন মাসের মাথায় জানুয়ারিতে এসে বলছে, এ হার আগের পূর্বাভাসের চেয়ে বাড়বে। আউটলুকে আরও বলা হয়েছে, উন্নত ও উদীয়মান দেশগুলোর মধ্যে চলতি অর্থবছরে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে ভারতে। চীনের প্রবৃদ্ধি কমে হবে ৪ দশমিক ১ শতাংশ। এবারের আউটলুকে বাংলাদেশবিষয়ক তথ্য প্রকাশ করা না হলেও অক্টোবরে আইএমএফ বলেছিল, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ শতাংশ।
এ ছাড়া চলতি বছর বিশ্বে মূল্যস্ফীতির হার কমবে বলেও আউটলুকে বলা হয়েছে। আইএমএফ বলেছে, মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুতগতিতে কমছে। মূল্যস্ফীতি হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে বাজার প্রত্যাশা করছে, ভবিষ্যতে নীতি সুদহারও কমবে। আইএমএফের মতে, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির হার প্রাক্-মহামারি পর্যায়ের কাছাকাছি চলে আসছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরতে ২০২৩ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। তাতে ঋণের প্রাপ্যতা কমে যাওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য দুর্বল হয়েছে। চাপের মধ্যে আছে আবাসন খাত।
উন্নত ও উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতি উভয় ক্ষেত্রেই দীর্ঘমেয়াদি ঋণের খরচ বেশি, যার কারণ সরকারি ঋণ বৃদ্ধি বলে মনে করছে আইএমএফ। তবে সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে নীতি সুদহারের বিষয়ে একই রকম সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা নয়। যেসব দেশ একদম শুরুতে নীতি সুদহার বাড়িয়েছিল, তারা ২০২৩ সালের দ্বিতীয় ভাগ থেকে সুদহার কমাতে শুরু করেছে। চীনের মূল্যস্ফীতির হার প্রায় শূন্যের কাছাকাছি, সে জন্য দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির রাশ আলগা করেছে। ব্যাংক অব জাপান স্বল্পমেয়াদি সুদহার প্রায় শূন্যের কাছাকাছি রেখেছে।
আইএমএফের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনীতির আকাশ থেকে মেঘ কেটে যেতে শুরু করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন কারণে যা ধারণা করা হয়েছিল, অর্থাৎ বৈশ্বিক অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে, সেটি হয়নি; বরং বিশ্ব অর্থনীতিকে যদি উড়ন্ত বিমানের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাহলে বলা যায়, নিরাপদ অবতরণের লক্ষ্যে বিমানটির উচ্চতা কমতে শুরু করেছে। এক বছরে মূল্যস্ফীতির হার ধারাবাহিকভাবে কমেছে। তারপরও বলা যায় না, অর্থনীতির পথ পুরোপুরি মসৃণ। প্রবৃদ্ধির হার কম, সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে যে ঝঞ্ঝা আসবে না, তা-ও হলফ করে বলা যায় না বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি। সূত্র : প্রথম আলো।