নিউইয়র্ক ০১:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

আইএমএফের চাপে করছাড় কমতে পারে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:৫২:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ মার্চ ২০২৪
  • / ৯২ বার পঠিত

এবারও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে পড়ছে রাজস্ব বাজেট। আইএমএফের চাপেই রাজস্ব ক্ষতি কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আসছে বাজেটে ব্যাপক করছাড় তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এরই মধ্যে ব্যক্তিগত কর, ক্ষুদ্রঋণ, রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়), জ্বালানি, অর্থনৈতিক অঞ্চল, আইসিটি, পোশাক খাতসহ বেশ কিছু খাত চিহ্নিত করে এনবিআর একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, এসব খাতে বছরে অন্তত ১ লাখ ২৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়। এর বাইরেও আর কোন কোন খাতে কীভাবে ছাড় তুলে দেওয়া হবে, সেটি নিয়ে এখন কাজ করছে সংস্থাটি। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, করছাড়ের কারণে চলতি অর্থবছরেও অন্তত ১ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে বলে এনবিআরের ধারণা। আসছে বাজেটে রেমিট্যান্স ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ভাতায় কর বসানো এবং ব্যক্তির বিভিন্ন কর রেয়াত বাতিল করতে আইএমএফ বেশি চাপ দিচ্ছে।

জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজস্ব বাজেট তৈরির কাজ গুছিয়ে আনছে এনবিআর। কয়েক মাসে ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দফায় দফায় প্রাক্‌-বাজেট আলোচনা শেষ করেছে। বেশির ভাগ বৈঠকেই প্রতিনিধিরা নিজ নিজ খাতের পক্ষে আরও করছাড় চেয়েছেন। তবে মূলত আইএমএফের শর্তের কারণেই করছাড় তোলার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।

আইএমএফ চায়, সামনের অর্থবছরেই ব্যক্তি করদাতা, করপোরেট করদাতাসহ যেসব খাতে বছরের পর বছর ধরে বিপুল অঙ্কের করছাড় দেওয়া হচ্ছে, সেসব তুলে দেওয়া হোক। এনবিআরও তাই হিসাব করে দেখছে, ছাড়ের ফলে কত রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। এনবিআর এরই মধ্যে জানতে পেরেছে, বিভিন্ন কর রেয়াতের ফলে ব্যক্তিগত করদাতা পর্যায়েই বছরে অন্তত ৪০ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়। আর করপোরেট আয়কর খাতে রাজস্ব ক্ষতি হয় ৮৫ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। ব্যক্তি করদাতা ও করপোরেট আয়করের উল্লেখযোগ্য রাজস্ব ক্ষতির মধ্যে রেমিট্যান্সেই করছাড় ১১ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। ক্ষুদ্রঋণে ছাড় ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ-জ্বালানি প্রতিষ্ঠানকে করছাড় দেওয়া হয় ৮ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। রপ্তানিমুখী পোশাক ও বস্ত্র খাতে করছাড় ৩ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা।

কর বিভাগের হিসাবমতে, ছাড়ের কারণে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৪১ কোটি টাকায়। জানা যায়, এনবিআরের সদস্য ইকবাল হোসেনের তত্ত্বাবধানে আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা করছাড়ের ফলে সৃষ্ট রাজস্ব ক্ষতির হিসাব খতিয়ে দেখছেন। তাঁরা এনবিআরকে একটি প্রতিবেদনও দিয়েছেন। এ নিয়ে আরও কাজ হচ্ছে।

কর অব্যাহতি বিভাগের সদস্য ইকবাল হোসেন অবশ্য বলেন, ‘করছাড় কোন খাতে কতটুকু তুলে দেওয়া হবে, কারা ছাড় পাবে আর কারা পাবে না–এসব ঠিক করা এ বিভাগের কাজ নয়। আইএমএফের চাওয়ার বিষয়ে কী পলিসি নেওয়া হচ্ছে, এটাও আমার এখতিয়ার নয়। এটা দেখে আয়কর নীতি শাখা। করছাড় কী হবে না হবে, এটা ঠিক করবে নীতি শাখা।’ তিনি বলেন, ‘আমরা একটা নির্দিষ্ট বছরে কত ছাড় হয়েছে, তাকে বেঞ্চমার্ক ধরে হিসাব করছি। তবে আমি মনে করি, যেখানে করছাড় দরকার, সেখানে দিতে হবে। আর যেখানে দরকার নেই, সেখানে দেওয়া হবে না। আমরা স্টাডি করে দিচ্ছি। পুরো স্টাডি এখনো শেষ হয়নি।’

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, আমদানি কড়াকড়ির কারণে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বাণিজ্য উদারীকরণ নীতির ফলে সরকার চাইলেই শুল্ক থেকে বেশি রাজস্ব আয় করতে পারবে না। তাই সামনে নজর দেওয়া হবে আয়কর খাতে। এ জন্য আইএমএফের পরামর্শে এনবিআর খতিয়ে দেখতে চাইছে, কোন খাতে কত রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে আর এসব ক্ষতি কমিয়ে আনতে কোন খাতে কেমন করছাড় দিতে হবে।

সূত্রমতে, শিল্প খাতকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর অব্যাহতি বা প্রণোদনা দেওয়া হবে না। সেটির সময়সীমা হতে পারে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজের আয়ের ওপরও কর বসানো হতে পারে।

একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আইএমএফ চাইলেও কিছু স্পর্শকাতর খাতে করছাড় রাতারাতি তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। এর মধ্যে আছে রেমিট্যান্স, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্প, আইসিটি ইত্যাদি। তবে আসছে বাজেটে ব্যক্তি করদাতার বিভিন্ন কর রেয়াত কমানো হতে পারে। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-বোনাসের বাইরেও বিভিন্ন ভাতার ওপর কর আরোপ করা হতে পারে। এ ছাড়া ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক করদাতারা বিভিন্ন খাতে দানের পরিপ্রেক্ষিতে যে পরিমাণ করছাড় পেয়ে থাকেন, সেগুলোও পুনর্বিন্যাস করার উদ্যোগ থাকছে।

আয়কর বিশেষজ্ঞ ও এনবিআরের সাবেক আয়কর নীতির সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিম বলেন, ‘রেমিট্যান্সের ওপর কর রেয়াত তুলে দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এটা হলে আত্মঘাতী হবে। এমনিতেই হুন্ডিতে টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এর মধ্যে যদি কর বসানো হয়, তাহলে এটা কোনোভাবেই ভালো হবে না। তবে পোশাকশিল্পসহ অন্য কিছু খাত রয়েছে, যেগুলোর ওপর অল্প অল্প করে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য কর বসানো যেতে পারে।’ সূত্র : আজকের পত্রিকা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আইএমএফের চাপে করছাড় কমতে পারে

প্রকাশের সময় : ০২:৫২:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ মার্চ ২০২৪

এবারও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে পড়ছে রাজস্ব বাজেট। আইএমএফের চাপেই রাজস্ব ক্ষতি কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আসছে বাজেটে ব্যাপক করছাড় তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এরই মধ্যে ব্যক্তিগত কর, ক্ষুদ্রঋণ, রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়), জ্বালানি, অর্থনৈতিক অঞ্চল, আইসিটি, পোশাক খাতসহ বেশ কিছু খাত চিহ্নিত করে এনবিআর একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, এসব খাতে বছরে অন্তত ১ লাখ ২৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়। এর বাইরেও আর কোন কোন খাতে কীভাবে ছাড় তুলে দেওয়া হবে, সেটি নিয়ে এখন কাজ করছে সংস্থাটি। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, করছাড়ের কারণে চলতি অর্থবছরেও অন্তত ১ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে বলে এনবিআরের ধারণা। আসছে বাজেটে রেমিট্যান্স ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ভাতায় কর বসানো এবং ব্যক্তির বিভিন্ন কর রেয়াত বাতিল করতে আইএমএফ বেশি চাপ দিচ্ছে।

জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজস্ব বাজেট তৈরির কাজ গুছিয়ে আনছে এনবিআর। কয়েক মাসে ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দফায় দফায় প্রাক্‌-বাজেট আলোচনা শেষ করেছে। বেশির ভাগ বৈঠকেই প্রতিনিধিরা নিজ নিজ খাতের পক্ষে আরও করছাড় চেয়েছেন। তবে মূলত আইএমএফের শর্তের কারণেই করছাড় তোলার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।

আইএমএফ চায়, সামনের অর্থবছরেই ব্যক্তি করদাতা, করপোরেট করদাতাসহ যেসব খাতে বছরের পর বছর ধরে বিপুল অঙ্কের করছাড় দেওয়া হচ্ছে, সেসব তুলে দেওয়া হোক। এনবিআরও তাই হিসাব করে দেখছে, ছাড়ের ফলে কত রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। এনবিআর এরই মধ্যে জানতে পেরেছে, বিভিন্ন কর রেয়াতের ফলে ব্যক্তিগত করদাতা পর্যায়েই বছরে অন্তত ৪০ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়। আর করপোরেট আয়কর খাতে রাজস্ব ক্ষতি হয় ৮৫ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। ব্যক্তি করদাতা ও করপোরেট আয়করের উল্লেখযোগ্য রাজস্ব ক্ষতির মধ্যে রেমিট্যান্সেই করছাড় ১১ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। ক্ষুদ্রঋণে ছাড় ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ-জ্বালানি প্রতিষ্ঠানকে করছাড় দেওয়া হয় ৮ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। রপ্তানিমুখী পোশাক ও বস্ত্র খাতে করছাড় ৩ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা।

কর বিভাগের হিসাবমতে, ছাড়ের কারণে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৪১ কোটি টাকায়। জানা যায়, এনবিআরের সদস্য ইকবাল হোসেনের তত্ত্বাবধানে আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা করছাড়ের ফলে সৃষ্ট রাজস্ব ক্ষতির হিসাব খতিয়ে দেখছেন। তাঁরা এনবিআরকে একটি প্রতিবেদনও দিয়েছেন। এ নিয়ে আরও কাজ হচ্ছে।

কর অব্যাহতি বিভাগের সদস্য ইকবাল হোসেন অবশ্য বলেন, ‘করছাড় কোন খাতে কতটুকু তুলে দেওয়া হবে, কারা ছাড় পাবে আর কারা পাবে না–এসব ঠিক করা এ বিভাগের কাজ নয়। আইএমএফের চাওয়ার বিষয়ে কী পলিসি নেওয়া হচ্ছে, এটাও আমার এখতিয়ার নয়। এটা দেখে আয়কর নীতি শাখা। করছাড় কী হবে না হবে, এটা ঠিক করবে নীতি শাখা।’ তিনি বলেন, ‘আমরা একটা নির্দিষ্ট বছরে কত ছাড় হয়েছে, তাকে বেঞ্চমার্ক ধরে হিসাব করছি। তবে আমি মনে করি, যেখানে করছাড় দরকার, সেখানে দিতে হবে। আর যেখানে দরকার নেই, সেখানে দেওয়া হবে না। আমরা স্টাডি করে দিচ্ছি। পুরো স্টাডি এখনো শেষ হয়নি।’

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, আমদানি কড়াকড়ির কারণে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বাণিজ্য উদারীকরণ নীতির ফলে সরকার চাইলেই শুল্ক থেকে বেশি রাজস্ব আয় করতে পারবে না। তাই সামনে নজর দেওয়া হবে আয়কর খাতে। এ জন্য আইএমএফের পরামর্শে এনবিআর খতিয়ে দেখতে চাইছে, কোন খাতে কত রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে আর এসব ক্ষতি কমিয়ে আনতে কোন খাতে কেমন করছাড় দিতে হবে।

সূত্রমতে, শিল্প খাতকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর অব্যাহতি বা প্রণোদনা দেওয়া হবে না। সেটির সময়সীমা হতে পারে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজের আয়ের ওপরও কর বসানো হতে পারে।

একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আইএমএফ চাইলেও কিছু স্পর্শকাতর খাতে করছাড় রাতারাতি তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। এর মধ্যে আছে রেমিট্যান্স, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্প, আইসিটি ইত্যাদি। তবে আসছে বাজেটে ব্যক্তি করদাতার বিভিন্ন কর রেয়াত কমানো হতে পারে। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-বোনাসের বাইরেও বিভিন্ন ভাতার ওপর কর আরোপ করা হতে পারে। এ ছাড়া ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক করদাতারা বিভিন্ন খাতে দানের পরিপ্রেক্ষিতে যে পরিমাণ করছাড় পেয়ে থাকেন, সেগুলোও পুনর্বিন্যাস করার উদ্যোগ থাকছে।

আয়কর বিশেষজ্ঞ ও এনবিআরের সাবেক আয়কর নীতির সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিম বলেন, ‘রেমিট্যান্সের ওপর কর রেয়াত তুলে দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এটা হলে আত্মঘাতী হবে। এমনিতেই হুন্ডিতে টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এর মধ্যে যদি কর বসানো হয়, তাহলে এটা কোনোভাবেই ভালো হবে না। তবে পোশাকশিল্পসহ অন্য কিছু খাত রয়েছে, যেগুলোর ওপর অল্প অল্প করে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য কর বসানো যেতে পারে।’ সূত্র : আজকের পত্রিকা।