নিউইয়র্ক ০৭:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

অর্থনীতি চাঙ্গা করতে বয়স্কদের জন্য ‘সিলভার ট্রেন’ চীনে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:৫৮:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৫১ বার পঠিত

বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় চীনে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এ জনগোষ্ঠীকে সামনে রেখে কিছু কৌশলগত পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশটি, যাতে তাদের সঞ্চিত অর্থ ও ক্রয়ক্ষমতা অর্থনীতিতে যুক্ত করা যায়। এর অংশ হিসেবে চীনা প্রবীণ পর্যটকদের জন্য বিশেষায়িত রেল পরিষেবা চালু হচ্ছে, যা ‘সিলভার ট্রেন’ নামে পরিচিত। খবর এফটি। চীনের পর্যটন ও বেসামরিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ একাধিক সরকারি সংস্থা সম্প্রতি সিলভার ট্রেন নিয়ে বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। এতে চিকিৎসা ও প্রবীণ সেবার সুবিধাসংবলিত বিশেষ ট্রেনটির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৭ সালের মধ্যে এ রেল নেটওয়ার্ক পুরো দেশে বিস্তৃত হবে। কয়েক দশক ধরে এক সন্তান নীতি বাস্তবায়ন করছে চীন। এতে বয়স্ক জনসংখ্যার হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে, যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। চীনের বেসামরিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালের শেষ নাগাদ প্রতি পাঁচজনের একজন নাগরিকের বয়স ৬০ বছরের বেশি ছিল। আগামী বছরগুলোয় এ অনুপাত আরো বাড়বে।

সাম্প্রতিক সময়ে চীনের নীতিনির্ধারকরা দুর্বল ভোক্তা চাহিদা, প্রপার্টি বাজারের মন্দা ও মহামারীপূর্ব সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধির নিম্ন হার সামাল দিতে চেষ্টা করছেন। জনসংখ্যাগত সংকট এ পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়, সেবা খাতের ভোগ ব্যয় বাড়াতে ‘সিলভার ট্রেন’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ প্রকল্প চীনের বৃহত্তর”‘সিলভার ইকোনমি’ বা প্রবীণ অর্থনীতি উন্নয়নের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার অংশ। চীনে দীর্ঘদিন ধরে জনসংখ্যা কমছে। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে দেশটি জনসংখ্যার দিক থেকে ভারতের কাছে শীর্ষস্থান হারায়। চীন সরকার জানিয়েছে, ২০২৩ সালে প্রবীণ অর্থনীতির বাজারমূল্য ছিল ৭ লাখ কোটি ইউয়ান বা ৯৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার, যা ২০৩৫ সালের মধ্যে চার গুণ বা ৩০ লাখ কোটি ইউয়ানে পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিস্থিতি উন্নয়নে চীনা সরকার সন্তান জন্মদানে নাগরিকদের উৎসাহিত করছে। তবে দেশটিতে বিয়ে করার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। টানা তৃতীয় বছর ধরে নিম্নমুখী থাকা চীনের জনসংখ্যা গত বছর ১৪০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালে চীনে জন্মহার ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়। তবে ২০২৪ সালে তা প্রথমবারের মতো বেড়েছে। গত বছর প্রতি এক হাজার জনে জন্মহার ছিল ৬ দশমিক ৭৭। একই সময়ে যুক্তরাজ্যে এ হার ছিল ১১ দশমিক ১৭।চীনে চাকরি থেকে অবসরের বয়স বিশ্বের অন্যতম সর্বনিম্ন। তবে নীতিনির্ধারকরা গত কয়েক বছর ধীরে ধীরে চাকরির বয়স বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন। কারণ দেশটির অর্থনীতি ক্রমে কম বয়সী কর্মীসংখ্যার অভাবের মুখোমুখি হচ্ছে। পুরুষদের অবসরের বয়স ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৩ এবং করপোরেট চাকরিতে নিয়োজিত নারীদের ক্ষেত্রে এটি ৫৫ থেকে ৫৮ বছর করা হবে। উৎপাদন খাতের কর্মীদের অবসরের বয়স ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ বছর নির্ধারণ করা হবে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্প্রচার সংস্থা সিসিটিভি সম্প্রতি বিশেষ ট্রেনের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রচার করেছে।

এতে প্রবীণ যাত্রীদের নাচতে ও ঐতিহ্যবাহী খেলায় মেতে উঠতে দেখা গেছে। ট্রেনে একটি লাল ব্যানারে লেখা ছিল ‘বিশেষ সিলভার ট্রেনের উদ্বোধন।’চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ‘শি জিনপিং থট’ দৃষ্টিভঙ্গিকে চীনের উন্নয়ন পরিকল্পনার ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তিনি গত বছর চীনে ভোগ ব্যয় বাড়াতে জোরালো প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় চীনের অর্থনীতিতে মূল্য সংকোচন প্রবণতা বিরাজ করছে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। সূত্র : বণিক বার্তা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি চাঙ্গা করতে বয়স্কদের জন্য ‘সিলভার ট্রেন’ চীনে

প্রকাশের সময় : ১২:৫৮:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় চীনে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এ জনগোষ্ঠীকে সামনে রেখে কিছু কৌশলগত পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশটি, যাতে তাদের সঞ্চিত অর্থ ও ক্রয়ক্ষমতা অর্থনীতিতে যুক্ত করা যায়। এর অংশ হিসেবে চীনা প্রবীণ পর্যটকদের জন্য বিশেষায়িত রেল পরিষেবা চালু হচ্ছে, যা ‘সিলভার ট্রেন’ নামে পরিচিত। খবর এফটি। চীনের পর্যটন ও বেসামরিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ একাধিক সরকারি সংস্থা সম্প্রতি সিলভার ট্রেন নিয়ে বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। এতে চিকিৎসা ও প্রবীণ সেবার সুবিধাসংবলিত বিশেষ ট্রেনটির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৭ সালের মধ্যে এ রেল নেটওয়ার্ক পুরো দেশে বিস্তৃত হবে। কয়েক দশক ধরে এক সন্তান নীতি বাস্তবায়ন করছে চীন। এতে বয়স্ক জনসংখ্যার হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে, যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। চীনের বেসামরিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালের শেষ নাগাদ প্রতি পাঁচজনের একজন নাগরিকের বয়স ৬০ বছরের বেশি ছিল। আগামী বছরগুলোয় এ অনুপাত আরো বাড়বে।

সাম্প্রতিক সময়ে চীনের নীতিনির্ধারকরা দুর্বল ভোক্তা চাহিদা, প্রপার্টি বাজারের মন্দা ও মহামারীপূর্ব সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধির নিম্ন হার সামাল দিতে চেষ্টা করছেন। জনসংখ্যাগত সংকট এ পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়, সেবা খাতের ভোগ ব্যয় বাড়াতে ‘সিলভার ট্রেন’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ প্রকল্প চীনের বৃহত্তর”‘সিলভার ইকোনমি’ বা প্রবীণ অর্থনীতি উন্নয়নের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার অংশ। চীনে দীর্ঘদিন ধরে জনসংখ্যা কমছে। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে দেশটি জনসংখ্যার দিক থেকে ভারতের কাছে শীর্ষস্থান হারায়। চীন সরকার জানিয়েছে, ২০২৩ সালে প্রবীণ অর্থনীতির বাজারমূল্য ছিল ৭ লাখ কোটি ইউয়ান বা ৯৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার, যা ২০৩৫ সালের মধ্যে চার গুণ বা ৩০ লাখ কোটি ইউয়ানে পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিস্থিতি উন্নয়নে চীনা সরকার সন্তান জন্মদানে নাগরিকদের উৎসাহিত করছে। তবে দেশটিতে বিয়ে করার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। টানা তৃতীয় বছর ধরে নিম্নমুখী থাকা চীনের জনসংখ্যা গত বছর ১৪০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালে চীনে জন্মহার ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়। তবে ২০২৪ সালে তা প্রথমবারের মতো বেড়েছে। গত বছর প্রতি এক হাজার জনে জন্মহার ছিল ৬ দশমিক ৭৭। একই সময়ে যুক্তরাজ্যে এ হার ছিল ১১ দশমিক ১৭।চীনে চাকরি থেকে অবসরের বয়স বিশ্বের অন্যতম সর্বনিম্ন। তবে নীতিনির্ধারকরা গত কয়েক বছর ধীরে ধীরে চাকরির বয়স বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন। কারণ দেশটির অর্থনীতি ক্রমে কম বয়সী কর্মীসংখ্যার অভাবের মুখোমুখি হচ্ছে। পুরুষদের অবসরের বয়স ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৩ এবং করপোরেট চাকরিতে নিয়োজিত নারীদের ক্ষেত্রে এটি ৫৫ থেকে ৫৮ বছর করা হবে। উৎপাদন খাতের কর্মীদের অবসরের বয়স ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ বছর নির্ধারণ করা হবে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্প্রচার সংস্থা সিসিটিভি সম্প্রতি বিশেষ ট্রেনের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রচার করেছে।

এতে প্রবীণ যাত্রীদের নাচতে ও ঐতিহ্যবাহী খেলায় মেতে উঠতে দেখা গেছে। ট্রেনে একটি লাল ব্যানারে লেখা ছিল ‘বিশেষ সিলভার ট্রেনের উদ্বোধন।’চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ‘শি জিনপিং থট’ দৃষ্টিভঙ্গিকে চীনের উন্নয়ন পরিকল্পনার ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তিনি গত বছর চীনে ভোগ ব্যয় বাড়াতে জোরালো প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় চীনের অর্থনীতিতে মূল্য সংকোচন প্রবণতা বিরাজ করছে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। সূত্র : বণিক বার্তা।