এইচআরআইয়ের গবেষণা
ইতিহাসের দীর্ঘতম মন্দার মুখে জার্মানি
- প্রকাশের সময় : ০৩:৩৬:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৫ বার পঠিত
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী সবচেয়ে দীর্ঘ মন্দার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে জার্মান অর্থনীতি। গবেষণা প্রতিষ্ঠান হ্যান্ডেলসব্ল্যাট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচআরআই) প্রতিবেদনে ২০২৫ সালে টানা তৃতীয় বছরের মতো জার্মান অর্থনীতিতে সংকোচনের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। খবর আরটি ইন্টারন্যাশনাল।
এইচআরআই ২০২৫ সালে জার্মান অর্থনীতি দশমিক ১ শতাংশ সংকোচনের পূর্বাভাস দিয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালে দেশটির অর্থনীতি দশমিক ৩ ও ২০২৪ সালে দশমিক ২ শতাংশ সংকোচন হয়েছিল। সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক মন্দা ২০০০-এর দশকের শুরুর দুই বছরের সংকটকে ছাড়িয়ে গেছে। এ মন্দাকে জ্বালানি সংকট, অব্যাহত মূল্যস্ফীতি ও কভিড-১৯ মহামারীর যৌথ প্রভাবের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জার্মানিতে জনমিতিক চ্যালেঞ্জ, যেমন বার্ধক্যপীডিত জনসংখ্যা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। এইচআরআই ধারণা করছে, জার্মানির বার্ষিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা মাত্র দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। ১৫ জানুয়ারি প্রকাশিত হতে যাওয়া ফেডারেল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিসের প্রতিবেদনে ২০২৪ সালের অর্থনৈতিক সংকোচনকে নিশ্চিত করা হবে বলে জানা গেছে।
জার্মান অর্থনীতি এ বছর সংকুচিত হলেও ২০২৬ সালে সামান্য পুনরুদ্ধারের পূর্বাভাস দিয়েছে এইচআরআই। তবে প্রবৃদ্ধি দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছতে পারে, যা সংকট-পূর্ব স্তরের অনেক নিচে। জার্মান কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ২০২৫ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করে ডিসেম্বরে ১ দশমিক ১ থেকে দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে আনে। সাশ্রয়ী রুশ গ্যাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেশি দামের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে (এলএনজি) স্থানান্তর জার্মানির জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি করেছে। এতে প্রক্রিয়াজাত শিল্প ও ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। ব্যয় বৃদ্ধির কারণে শিল্পকারখানা বন্ধ ও দেউলিয়া হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এর মধ্যে ভক্সওয়াগনের মতো বড় প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
২০২২ সালে ইউক্রেন সংঘাত তীব্র হওয়ার আগে জার্মানি তার জ্বালানি চাহিদার অর্ধেকের বেশির জন্য রুশ গ্যাসের ওপর নির্ভর করত। মস্কোর ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিষেধাজ্ঞার পরে গ্যাস সরবরাহ নাটকীয়ভাবে কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে পুরোপুরি বন্ধও হয়ে যায়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনগুলো বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়। এসব পাইপলাইন রুশ গ্যাস জার্মানিতে পরিবহন করত। ১ জানুয়ারিতে রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনের মাধ্যমে ইইউতে গ্যাস সরবরাহ স্থগিত করতে বাধ্য হয়। উচ্চ মূল্যের উৎপাদনের মতো জার্মানির রফতানি খাত দেশটির অর্থনীতির কয়েকটি শক্তিশালী ক্ষেত্রের মধ্যে অন্যতম হিসেবে রয়ে গেছে। তবে এ খাতও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা ও উচ্চ জ্বালানি মূল্যের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
সাশ্রয়ী রুশ জ্বালানি হারানো এবং ব্যয় বৃদ্ধির ফলে দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কঠিন হয়ে পড়েছে। সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল সম্প্রতি রুশ গ্যাস পরিত্যাগের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ফ্রান্স ২ টিভিতে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি রুশ গ্যাস আমদানিকে ‘উইন-উইন পরিস্থিতি’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছিলেন, রাশিয়া জার্মানিকে কম খরচে জ্বালানি সরবরাহ করত, যেখানে এখন দাম ‘অস্বাভাবিকভাবে’ বেড়েছে।
অর্থনৈতিক সংকট জার্মান নাগরিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। গত ডিসেম্বর পাবলিক ব্রডকাস্টার এআরডি পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, অর্থনীতিই এখন দেশটির ভোটারদের উদ্বেগের শীর্ষে। নভেম্বরে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের মধ্য-বাম জোট ভেঙে যাওয়ার পর আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি পূর্বনির্ধারিত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।