রেকর্ড নগদ প্রবাহ
এশিয়ায় একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ বাড়ছে

- প্রকাশের সময় : ০১:০৯:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৪৬ বার পঠিত
এশিয়ার বাজারে সাম্প্রতিক প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে নিম্ন সুদহার, ব্যবসায় শিথিল নিয়ন্ত্রণ, সহজ করনীতি এবং বিনিয়োগের জন্য রেকর্ড পরিমাণ নগদ সম্পদ। সব মিলিয়ে অঞ্চলটির ব্যবসায়িক চুক্তিতে ইতিবাচক তরঙ্গ লক্ষ করা যাচ্ছে, যা আগামী মাসগুলোয়ও অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে বিদেশী কোম্পানিগুলো এশিয়ার উদীয়মান বাজারে জ্বালানি ও প্রযুক্তিসহ প্রধান খাতে সম্ভাব্য একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের (এমঅ্যান্ডএ) দিকে নজর দিচ্ছে। খবর দ্য স্ট্রেইটস টাইমস।
আইনি পরিষেবাদাতা নর্টন রোজ ফুলব্রাইট (এনআরএফ) এমঅ্যান্ডএ বিষয়ক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২৪ সালের শেষ কয়েক মাসে এশিয়ায় ব্যবসায়িক চুক্তিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যা চলতি বছরও অব্যাহত থাকতে পারে। সংস্থাটি বলছে, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও মূল্যস্ফীতি হ্রাস, কম খরচে অর্থায়ন এবং প্রধান প্রধান খাতে বিনিয়োগের চাহিদা থাকায় সামনের দিনে চুক্তির প্রবণতা বাড়বে। কভিড-পরবর্তী পুনরুদ্ধারে বৈশ্বিক অর্থনীতি মূল্যস্ফীতিকে অন্যতম সমস্যা হিসেবে পেয়েছে। তবে গত বছর এশিয়াজুড়ে মূল্যস্ফীতি কমেছে এবং বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার কমিয়েছে। এর ফলে ঋণ বাবদ খরচ কমে যাওয়ায় সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে লেনদেন এখন আরো আকর্ষণীয় ও সুবিধাজনক হয়েছে।
এনআরএফ জানিয়েছে, ২০২২ সাল থেকে বাজারে মন্থরগতি বিরাজ করায় এমঅ্যান্ডএ চুক্তি কম হয়েছে। এ কারণে বিনিয়োগ ও চুক্তির সুপ্ত চাহিদা ছিল, পরিস্থিতির উন্নতি এখন নতুন চাপ তৈরি করেছে। বিশেষ করে বিকাশমান প্রযুক্তি ও জ্বালানি খাতে চুক্তির চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। চুক্তির অনুকূলে থাকা অন্য প্রভাবক হলো এশিয়ার কিছু দেশে ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়েছে। বিষয়টি প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের (এফডিআই) জন্য ইতিবাচক। এখন স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রবেশ করছেন অনেক বিদেশী বিনিয়োগকারী, যা তাদের জন্য নিয়ন্ত্রণ জটিলতা কমিয়েছে এবং স্থানীয় অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ দিচ্ছে। এশিয়ায় জ্বালানি খাতে একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে। কারণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০৩০ সালের মধ্যে ৭০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর নির্ভরশীল হতে চায় কম্বোডিয়া। আবার ফিলিপাইন নবায়নযোগ্য প্রকল্পে শতভাগ বিদেশী মালিকানার অনুমতি দিয়েছে। ভিয়েতনাম-তাইওয়ানে সামুদ্রিক বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ দেখা যাচ্ছে, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য দেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের বৈশ্বিক প্রচেষ্টা এশিয়ায়ও দৃশ্যমান। বিশেষ করে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির (ইভি) সরবরাহ চেইনে বিনিয়োগ দিন দিন আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইভি ব্যাটারির জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হওয়ায় ইন্দোনেশিয়ার নিকেল খনিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করা হচ্ছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এশিয়ায় ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষুধা বাড়ছে। এ কারণে প্রযুক্তি খাতে নতুন পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা তৈরি হওয়ায় এমঅ্যান্ডএ চুক্তি আগামীতে আরো বাড়বে। এছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিকাশে ইতিবাচক ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল এআই স্ট্র্যাটেজি ২.০, আসিয়ানের আঞ্চলিক এআই নিয়ন্ত্রণ উদ্যোগ ও চীনের নতুন খসড়া এআই নীতি উল্লেখযোগ্য।
এশিয়ার অনেক দেশ শক্তিশালী ডিজিটাল অবকাঠামো তৈরি করছে, যা উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে বলে জানিয়েছে নর্টন রোজ ফুলব্রাইট। এছাড়া অঞ্চলটিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সম্প্রসারণ স্বাস্থ্য ও বীমা প্রযুক্তি কোম্পানির কাছে লোভনীয় হয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বেইন অ্যান্ড কোম্পানির পূর্বাভাস অনুসারে, চলতি বছরে বৈশ্বিক এমঅ্যান্ডএ বাজার পুনরুদ্ধার হবে। কারণ বাজারের প্রধান দুই বাধা সুদহার ও নিয়ন্ত্রক চ্যালেঞ্জ কমে আসবে। এ সময় আগ্রহী ব্যবসায়ীরা স্বল্পমেয়াদের পরিবর্তে সঠিক চুক্তি খুঁজবে, যাতে প্রতিযোগিতামূলক, লাভজনক ও দীর্ঘমেয়াদে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়। জেনারেটিভ এআই, অটোমেশন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এমন কিছু প্রধান প্রযুক্তি যা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে কোম্পানিগুলোর বিকাশ বা কিনতে হবে।
বেইনের গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ১২টি শিল্প খাত ও ১০টি অঞ্চলের বেশির ভাগ খাতই ২০২২ সালের মন্দা থেকে পুনরুদ্ধার করেছে। এ প্রবৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে জ্বালানি ও প্রাকৃতিক সম্পদ। খাত দুটিতে ২০২৪ সালের প্রথম ১১ মাসে ১০টিরও বেশি বড় একীভূত চুক্তি সম্পন্ন করেছে, যার প্রতিটির মূল্য ৫০০ কোটি ডলারের বেশি। ২০২৪ সালে আর্থিক পরিষেবা খাতে এমঅ্যান্ডএ প্রবণতা পুনরুদ্ধার হয়েছে। এতে প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে প্রযুক্তি, নিয়ন্ত্রণ ও পরিবর্তিত গ্রাহক চাহিদা। সামনে মিডিয়া ও বিনোদন খাতে আরো একীভূকরণ চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ ঐতিহ্যবাহী কোম্পানিগুলো প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পাচ্ছে বড় প্রযুক্তি সংস্থাকে।
বেইন জানিয়েছে, ২০২৫ সালেও খুচরা খাতে একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। গত বছর এমঅ্যান্ডএ চুক্তি ৩ লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এমঅ্যান্ডএ চুক্তিমূল্য ২০২৪ সালে ৭ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি।