নিউইয়র্ক ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

হুন্ডিতেই রমরমা খোলা বাজারের ডলার ব্যবসা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৭:৫১:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৮৩ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক : এখনো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে খোলা বাজারের ডলার। ডলার সংকটের অজুহাত এবং ব্যাংকে ডলারের উচ্চমূল্যের প্রভাবকে দায়ী করলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হুন্ডির কারণেই বাড়ছে খোলা বাজারের ডলারের দর।

তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন এলেই হুন্ডি বেড়ে যায়। এবারের নির্বাচন কেন্দ্র করেও অর্থ পাচার বেড়েছে। খোলা বাজারে ডলারের দর এখন বেশি বলেই যে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স হুন্ডির মাধ্যমে আসছে তা নয়, বরং অর্থ পাচার বাড়ছে বলেই হুন্ডি বেড়েছে। দেশে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী গোষ্ঠী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার করলেও সরকারি কর্মকর্তা, আমলাসহ যারা ঘুষ-দুর্নীতি, কর ফাঁকি, চোরাচালান বা অন্য কোনো উপায়ে অর্থ উপার্জন করেছেন, তারা অর্থ পাচারের জন্য হুন্ডিকেই বেছে নেন।

এই প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের অন্যতম সমস্যা অর্থ পাচার। পাচারকারীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন না করে অবৈধভোবে অর্থাৎ খোলাবাজারেই লেনদেন করে। নির্বাচনী বছরে এর পরিমাণ সব সময়ই বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আর অর্থ পাচারকারীদের কাছে ডলারের দর কোনো বিষয় নয়। দর যাই হোক, তারা অর্থ পাচার করবেই। চাহিদা অনুযায়ী হুন্ডিওয়ালারাও ডলারের দর নির্ধারণ করে থাকে। আর এ কারণেই খোলা বাজারে ডলারের দর কমছে না। এই বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপও নিচ্ছে না সরকার।

গত বৃহস্পতিবার খোলা বাজারে সর্বোচ্চ ১২৫ টাকায় ডলার বিক্রি হয়েছে। গত নভেম্বরে ছিল ১২২ টাকা। এর আগে দীর্ঘদিন ১১৯ থেকে ১২০ টাকায় খোলাবাজারে ডলারের দর স্থিতিশীল থাকলেও নভেম্বরের শুরুতে ডলার সংকটের অজুহাতে এই দর ১২৭ টাকায় ওঠে। এর দু-এক দিন পর দর কিছুটা কমে ১২৫ টাকায় চলে আসে, যা এখনো বহাল রয়েছে। অর্থাৎ উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে ডলারের দর।

ব্যাংকগুলোতে ডলার বেশি টাকায় বিক্রি হওয়ায় খোলা বাজারে তা বাড়ছে। বর্তমানে সেখানে বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১২৬ টাকায়। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী, এখন খোলা বাজারে প্রতি ডলারের দাম ১১৫ টাকা ৫০ পয়সার মধ্যে থাকার কথা।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। এই হিসাবে প্রতি বছর গড়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। মূলত আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের মাধ্যমে মূল্য কমবেশি দেখিয়ে অর্থ পাচারের কাজটি করা হয়।

এদিকে দেশের ব্যাংকগুলোতে এখন নগদ ডলারের সংকট রয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ ব্যাংকে গিয়ে প্রয়োজনীয় ডলার পাচ্ছে না। বাধ্য হয়েই তারা ডলারের প্রয়োজনে খোলা বাজারে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, হুন্ডি ব্যবসায়ীরা কখনোই ব্যাংকে লেনদেন করে না। তাই তাদের অন্যতম ভরসার জায়গা খোলা বাজার। আর এ সুযোগে ইচ্ছামতো দাম নিচ্ছে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে দেশের খোলা বাজারে ডলারের দাম কমছে না।

খোলা বাজার বা কার্ব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় সংকট রয়েছে। প্রবাসীদের দেশে আসা কমেছে, বিদেশি পর্যটকও কম আসছেন। এ ছাড়া বিদেশ থেকে আসার সময় এখন ১০ হাজারের বেশি ডলার সঙ্গে আনতে পারেন না। এসব কারণে ডলারের সরবরাহ অনেক কম। অন্যদিকে, চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি ভারতসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যান। প্রচুর শিক্ষার্থীও বিদেশে পড়াশোনার জন্য যান। আর পর্যটনের জন্যও ভ্রমণপিপাসুরা এখন বিশ্বের নানা প্রান্তে ছুটছেন। এসব গ্রাহক খোলা বাজার থেকে ডলার কিনে থাকেন। এ ছাড়া খোলা বাজার থেকে যে কেউ ডলার কিনতে পারেন। ব্যাংক থেকে কিনতে পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্ট করতে হয়। যে কারণে অনেকে এখন খোলা বাজার থেকে ডলার কিনতে আসেন। ফলে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। তাই আমাদের বেশি দরে কিনতে হচ্ছে বলেই বেশি দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

একটি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্ণধার কালবেলাকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আমরা সর্বোচ্চ ১২৩ টাকায় ডলার কিনেছি। আর বিক্রি করেছি সর্বোচ্চ ১২৫ টাকায়।’

এ প্রসঙ্গে মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এস জামান কালবেলাকে বলেন, আমাদের বাজারের গতি নিম্নমুখী। বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে আমাদের ডলারের দরের সামঞ্জস্য না থাকায় নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। সরবরাহের দিক ঠিক না করে তো চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আর ডলারের দরে সামঞ্জস্যতা না থাকলে তো কেউ কষ্টার্জিত অর্থ কম দরে দেবে না, এটিই স্বাভাবিক। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে তো কোনো কিছুই ঢেকে রাখার সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যে দর চলে, সেই দরের নিচে তো কেউ দেয় না। এজন্য ডলারের দরকে বাজারে ছেড়ে দেওয়া উচিত।

খোলা বাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খোলা বাজার বলতে আসলে কী বোঝায়, সেটা আমি জানি না। ওদের লেনদেনের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা মূলত কাজ করি মানি এক্সচেঞ্জ নিয়ে। আর লেনদেনের শুরু থেকেই হুন্ডি প্রথা চলে আসছে। হুন্ডি মানে হচ্ছে বিনিময় প্রথা। হুন্ডির আধুনিক ভার্সনই হচ্ছে ব্যাংক।

অন্য একটি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোতে এলসি খোলার দর ১১১ টাকা হলেও ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত ১৫ টাকা আলাদাভাবে দিতে হয়। ফলে ব্যাংকে ডলারের আনুষ্ঠানিক দর ১১১ টাকা হলেও প্রকৃত দর ১২৬ টাকা। ব্যাংকের এই আনুষ্ঠানিক দর লোক দেখানো ছাড়া কিছু নয়। অন্যদিকে, রেমিট্যান্সের ডলারের দরও ব্যাংকে প্রায় ১১৬ টাকা। আর আমাদের বলা হয়েছে ১১৩ টাকা ৫০ পয়সায় কিনতে। যেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, ডলারের এই দর উন্মুক্ত করে দিলে এই সমস্যা আর থাকবে না। কারণ, বিশ্বের কোনো দেশেই ডলারের এই দর ধরে রাখে না। অন্যান্য দেশে যে দরে ডলার কেনাবেচা হবে, সেই দর রূপান্তরিত হয়েই প্রতিটি দেশে ডলারের দর নির্ধারণ করা হয়। আমাদের দেশেও তাই হওয়া উচিত। কিন্তু হচ্ছে উল্টো।

খোলা বাজারে ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ ও খোলা বাজারে ডলার কেনাবেচা বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, খোলা বাজারে দাম বেড়ে গেলে অবৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা বেড়ে যায়। আবার অবৈধ পথে আয় আসা বেড়ে গেলে অর্থ পাচারও বেড়ে যায়। তাই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করে কেউ সুযোগ নিচ্ছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

ব্যাংকগুলোতে এখন পর্যাপ্ত ডলার থাকার পরও কেন খোলা বাজারে ডলারের দর বাড়ছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেসবাউল হক কালবেলাকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে যে পর্যাপ্ত ডলার রয়েছে, সেটা মূলত নস্ট্রো অ্যাকাউন্টে (দেশীয় ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট)। ফলে ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ ডলারের চাহিদা থাকলেও সেটা দিতে পারবে না ব্যাংক। আর ব্যাংকের নগদ ডলারের খুব বেশি প্রয়োজনও নেই। এলসিসহ তাদের লেনদেন হয় নস্ট্রো অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই। আর কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বাড়ায় নগদ ডলারের চাহিদাও অনেক কমে গেছে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের সঙ্গে খোলা বাজারের ডলারের কোনো সম্পর্ক নেই। খোলা বাজারে মূলত অননুমোদিত লেনদেন হয়। ফলে ব্যাংকের সঙ্গে তো তাদের দাম এক হবে না। তবে এটা যেন কাছাকাছি থাকে, বাংলাদেশ ব্যাংক সেই নির্দেশনা দিয়ে থাকে। সূত্র : কালবেলা

হককথা/নাছরিন

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

হুন্ডিতেই রমরমা খোলা বাজারের ডলার ব্যবসা

প্রকাশের সময় : ০৭:৫১:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

হককথা ডেস্ক : এখনো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে খোলা বাজারের ডলার। ডলার সংকটের অজুহাত এবং ব্যাংকে ডলারের উচ্চমূল্যের প্রভাবকে দায়ী করলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হুন্ডির কারণেই বাড়ছে খোলা বাজারের ডলারের দর।

তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন এলেই হুন্ডি বেড়ে যায়। এবারের নির্বাচন কেন্দ্র করেও অর্থ পাচার বেড়েছে। খোলা বাজারে ডলারের দর এখন বেশি বলেই যে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স হুন্ডির মাধ্যমে আসছে তা নয়, বরং অর্থ পাচার বাড়ছে বলেই হুন্ডি বেড়েছে। দেশে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী গোষ্ঠী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার করলেও সরকারি কর্মকর্তা, আমলাসহ যারা ঘুষ-দুর্নীতি, কর ফাঁকি, চোরাচালান বা অন্য কোনো উপায়ে অর্থ উপার্জন করেছেন, তারা অর্থ পাচারের জন্য হুন্ডিকেই বেছে নেন।

এই প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের অন্যতম সমস্যা অর্থ পাচার। পাচারকারীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন না করে অবৈধভোবে অর্থাৎ খোলাবাজারেই লেনদেন করে। নির্বাচনী বছরে এর পরিমাণ সব সময়ই বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আর অর্থ পাচারকারীদের কাছে ডলারের দর কোনো বিষয় নয়। দর যাই হোক, তারা অর্থ পাচার করবেই। চাহিদা অনুযায়ী হুন্ডিওয়ালারাও ডলারের দর নির্ধারণ করে থাকে। আর এ কারণেই খোলা বাজারে ডলারের দর কমছে না। এই বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপও নিচ্ছে না সরকার।

গত বৃহস্পতিবার খোলা বাজারে সর্বোচ্চ ১২৫ টাকায় ডলার বিক্রি হয়েছে। গত নভেম্বরে ছিল ১২২ টাকা। এর আগে দীর্ঘদিন ১১৯ থেকে ১২০ টাকায় খোলাবাজারে ডলারের দর স্থিতিশীল থাকলেও নভেম্বরের শুরুতে ডলার সংকটের অজুহাতে এই দর ১২৭ টাকায় ওঠে। এর দু-এক দিন পর দর কিছুটা কমে ১২৫ টাকায় চলে আসে, যা এখনো বহাল রয়েছে। অর্থাৎ উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে ডলারের দর।

ব্যাংকগুলোতে ডলার বেশি টাকায় বিক্রি হওয়ায় খোলা বাজারে তা বাড়ছে। বর্তমানে সেখানে বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১২৬ টাকায়। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী, এখন খোলা বাজারে প্রতি ডলারের দাম ১১৫ টাকা ৫০ পয়সার মধ্যে থাকার কথা।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। এই হিসাবে প্রতি বছর গড়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। মূলত আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের মাধ্যমে মূল্য কমবেশি দেখিয়ে অর্থ পাচারের কাজটি করা হয়।

এদিকে দেশের ব্যাংকগুলোতে এখন নগদ ডলারের সংকট রয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ ব্যাংকে গিয়ে প্রয়োজনীয় ডলার পাচ্ছে না। বাধ্য হয়েই তারা ডলারের প্রয়োজনে খোলা বাজারে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, হুন্ডি ব্যবসায়ীরা কখনোই ব্যাংকে লেনদেন করে না। তাই তাদের অন্যতম ভরসার জায়গা খোলা বাজার। আর এ সুযোগে ইচ্ছামতো দাম নিচ্ছে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে দেশের খোলা বাজারে ডলারের দাম কমছে না।

খোলা বাজার বা কার্ব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় সংকট রয়েছে। প্রবাসীদের দেশে আসা কমেছে, বিদেশি পর্যটকও কম আসছেন। এ ছাড়া বিদেশ থেকে আসার সময় এখন ১০ হাজারের বেশি ডলার সঙ্গে আনতে পারেন না। এসব কারণে ডলারের সরবরাহ অনেক কম। অন্যদিকে, চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি ভারতসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যান। প্রচুর শিক্ষার্থীও বিদেশে পড়াশোনার জন্য যান। আর পর্যটনের জন্যও ভ্রমণপিপাসুরা এখন বিশ্বের নানা প্রান্তে ছুটছেন। এসব গ্রাহক খোলা বাজার থেকে ডলার কিনে থাকেন। এ ছাড়া খোলা বাজার থেকে যে কেউ ডলার কিনতে পারেন। ব্যাংক থেকে কিনতে পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্ট করতে হয়। যে কারণে অনেকে এখন খোলা বাজার থেকে ডলার কিনতে আসেন। ফলে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। তাই আমাদের বেশি দরে কিনতে হচ্ছে বলেই বেশি দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

একটি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্ণধার কালবেলাকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আমরা সর্বোচ্চ ১২৩ টাকায় ডলার কিনেছি। আর বিক্রি করেছি সর্বোচ্চ ১২৫ টাকায়।’

এ প্রসঙ্গে মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এস জামান কালবেলাকে বলেন, আমাদের বাজারের গতি নিম্নমুখী। বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে আমাদের ডলারের দরের সামঞ্জস্য না থাকায় নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। সরবরাহের দিক ঠিক না করে তো চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আর ডলারের দরে সামঞ্জস্যতা না থাকলে তো কেউ কষ্টার্জিত অর্থ কম দরে দেবে না, এটিই স্বাভাবিক। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে তো কোনো কিছুই ঢেকে রাখার সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যে দর চলে, সেই দরের নিচে তো কেউ দেয় না। এজন্য ডলারের দরকে বাজারে ছেড়ে দেওয়া উচিত।

খোলা বাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খোলা বাজার বলতে আসলে কী বোঝায়, সেটা আমি জানি না। ওদের লেনদেনের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা মূলত কাজ করি মানি এক্সচেঞ্জ নিয়ে। আর লেনদেনের শুরু থেকেই হুন্ডি প্রথা চলে আসছে। হুন্ডি মানে হচ্ছে বিনিময় প্রথা। হুন্ডির আধুনিক ভার্সনই হচ্ছে ব্যাংক।

অন্য একটি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোতে এলসি খোলার দর ১১১ টাকা হলেও ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত ১৫ টাকা আলাদাভাবে দিতে হয়। ফলে ব্যাংকে ডলারের আনুষ্ঠানিক দর ১১১ টাকা হলেও প্রকৃত দর ১২৬ টাকা। ব্যাংকের এই আনুষ্ঠানিক দর লোক দেখানো ছাড়া কিছু নয়। অন্যদিকে, রেমিট্যান্সের ডলারের দরও ব্যাংকে প্রায় ১১৬ টাকা। আর আমাদের বলা হয়েছে ১১৩ টাকা ৫০ পয়সায় কিনতে। যেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, ডলারের এই দর উন্মুক্ত করে দিলে এই সমস্যা আর থাকবে না। কারণ, বিশ্বের কোনো দেশেই ডলারের এই দর ধরে রাখে না। অন্যান্য দেশে যে দরে ডলার কেনাবেচা হবে, সেই দর রূপান্তরিত হয়েই প্রতিটি দেশে ডলারের দর নির্ধারণ করা হয়। আমাদের দেশেও তাই হওয়া উচিত। কিন্তু হচ্ছে উল্টো।

খোলা বাজারে ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ ও খোলা বাজারে ডলার কেনাবেচা বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, খোলা বাজারে দাম বেড়ে গেলে অবৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা বেড়ে যায়। আবার অবৈধ পথে আয় আসা বেড়ে গেলে অর্থ পাচারও বেড়ে যায়। তাই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করে কেউ সুযোগ নিচ্ছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

ব্যাংকগুলোতে এখন পর্যাপ্ত ডলার থাকার পরও কেন খোলা বাজারে ডলারের দর বাড়ছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেসবাউল হক কালবেলাকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে যে পর্যাপ্ত ডলার রয়েছে, সেটা মূলত নস্ট্রো অ্যাকাউন্টে (দেশীয় ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট)। ফলে ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ ডলারের চাহিদা থাকলেও সেটা দিতে পারবে না ব্যাংক। আর ব্যাংকের নগদ ডলারের খুব বেশি প্রয়োজনও নেই। এলসিসহ তাদের লেনদেন হয় নস্ট্রো অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই। আর কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বাড়ায় নগদ ডলারের চাহিদাও অনেক কমে গেছে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের সঙ্গে খোলা বাজারের ডলারের কোনো সম্পর্ক নেই। খোলা বাজারে মূলত অননুমোদিত লেনদেন হয়। ফলে ব্যাংকের সঙ্গে তো তাদের দাম এক হবে না। তবে এটা যেন কাছাকাছি থাকে, বাংলাদেশ ব্যাংক সেই নির্দেশনা দিয়ে থাকে। সূত্র : কালবেলা

হককথা/নাছরিন