নিউইয়র্ক ০৮:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

লাগামহীন খেলাপি ঋণে আস্থার সংকটে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান

হককথা ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০৫:৪৫:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪
  • / ২১ বার পঠিত

উচ্চ খেলাপির চাপে রীতিমতো ধুঁকছে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ (এনবিএফআই); যার ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের অর্থ সময়মতো ফেরত দিতে পারছে না। এতে দিনে দিনে অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। গ্রাহকের আস্থাও তলানিতে পৌঁছেছে। এতে নতুন করে এসব প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখতে চাইছেন না গ্রাহকেরা, যা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাড়তি সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পরিস্থিতি সামলাতে গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে অ-ব্যাংক পরিশোধ সেবাদানকারীদের আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এমনকি মঙ্গলবার ‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা বিল, ২০২৪’ সংসদে পাস হয়েছে। কিন্তু যাঁরা নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে খেলাপির নামে বিপুল টাকা লুট করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এনবিএফআইগুলো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, দেশে ৩৫টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের স্থিতি ছিল ৭২ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা। খেলাপির হার ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর ২০২৩ সালে ৩৫টি এনবিএফআইয়ের ১৪টি রেড জোনে ছিল; যা ২০২১ সালে ছিল ১২টি। গত বছর এসব প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকসংখ্যা কমেছে ১৭ শতাংশ। আয় কমেছে ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। পরিচালন ও নিট মুনাফা কমেছে যথাক্রমে ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ ও ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা কাহিল হওয়ার পেছনে রয়েছে বড় লুটেরা গোষ্ঠী। তারা সরকারের উচ্চমহলের ব্যক্তিদের নাম ভাঙিয়ে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিয়ম না মেনে ঋণ ছাড় করে। আর বিশেষ খুঁটির জোরে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করে না। তাদের কাছে সুদের হার যত বেশিই হোক না কেন, টাকা ফিরিয়ে দেয় না বলে পুরোটাই লাভ। এ ক্ষেত্রে পিপলস লিজিংয়ের কেলেঙ্কারির সঙ্গে বহুজনের নাম জড়িত। তাঁরা কীভাবে হাজার কোটি টাকা লুট করেছেন, তা অনেকের জানা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের খেলাপি ঋণের হার ৯৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ; বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের খেলাপির হার ৯৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ; ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ৯৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৯৪ দশমিক ৪১ শতাংশ; জিএসপি ফাইন্যান্সের ৯২ দশমিক ৩৭ শতাংশ; এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ৮৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ; প্রিমিয়ার লিজিংয়ের ৬৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ; মেরিডিয়ান ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণের হার ৫৯ দশমিক ১৭ শতাংশ, আইআইডিএফসি ৫৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ ও হজ ফাইন্যান্সের ৫৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এ ছাড়া ন্যাশনাল ফাইন্যান্সের ৫৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ফনিক্স ফাইন্যান্স ৫৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ, উত্তরা ফাইন্যান্স ৫০ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ৪৩ দশমিক ১২ শতাংশ খেলাপি হয়ে গেছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া বলেন, কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এসব রাতারাতি পরিবর্তন ঘটবে না। তবে খারাপ প্রতিষ্ঠানের অবস্থার উন্নতি করে পিপলস লিজিং, উত্তরা ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক বসানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের স্থিতি ছিল ৭২ হাজার ৮০৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। তবে গত জুন শেষে বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে ৬৫৬ কোটি টাকা।

প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল হামিদ মিয়া বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল নিয়ম না মেনে সরকারি মহলের নাম ব্যবহার করে ঋণ ছাড় করে তা পরিশোধ করে না। এতে খেলাপি বেড়ে যায়। সংকট থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে খারাপ গ্রাহককে ঋণ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। সূত্র: আজকের পত্রিকা।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

লাগামহীন খেলাপি ঋণে আস্থার সংকটে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান

প্রকাশের সময় : ০৫:৪৫:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪

উচ্চ খেলাপির চাপে রীতিমতো ধুঁকছে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ (এনবিএফআই); যার ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের অর্থ সময়মতো ফেরত দিতে পারছে না। এতে দিনে দিনে অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। গ্রাহকের আস্থাও তলানিতে পৌঁছেছে। এতে নতুন করে এসব প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখতে চাইছেন না গ্রাহকেরা, যা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাড়তি সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পরিস্থিতি সামলাতে গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে অ-ব্যাংক পরিশোধ সেবাদানকারীদের আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এমনকি মঙ্গলবার ‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা বিল, ২০২৪’ সংসদে পাস হয়েছে। কিন্তু যাঁরা নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে খেলাপির নামে বিপুল টাকা লুট করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এনবিএফআইগুলো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, দেশে ৩৫টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের স্থিতি ছিল ৭২ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা। খেলাপির হার ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর ২০২৩ সালে ৩৫টি এনবিএফআইয়ের ১৪টি রেড জোনে ছিল; যা ২০২১ সালে ছিল ১২টি। গত বছর এসব প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকসংখ্যা কমেছে ১৭ শতাংশ। আয় কমেছে ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। পরিচালন ও নিট মুনাফা কমেছে যথাক্রমে ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ ও ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা কাহিল হওয়ার পেছনে রয়েছে বড় লুটেরা গোষ্ঠী। তারা সরকারের উচ্চমহলের ব্যক্তিদের নাম ভাঙিয়ে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিয়ম না মেনে ঋণ ছাড় করে। আর বিশেষ খুঁটির জোরে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করে না। তাদের কাছে সুদের হার যত বেশিই হোক না কেন, টাকা ফিরিয়ে দেয় না বলে পুরোটাই লাভ। এ ক্ষেত্রে পিপলস লিজিংয়ের কেলেঙ্কারির সঙ্গে বহুজনের নাম জড়িত। তাঁরা কীভাবে হাজার কোটি টাকা লুট করেছেন, তা অনেকের জানা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের খেলাপি ঋণের হার ৯৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ; বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের খেলাপির হার ৯৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ; ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ৯৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৯৪ দশমিক ৪১ শতাংশ; জিএসপি ফাইন্যান্সের ৯২ দশমিক ৩৭ শতাংশ; এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ৮৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ; প্রিমিয়ার লিজিংয়ের ৬৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ; মেরিডিয়ান ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণের হার ৫৯ দশমিক ১৭ শতাংশ, আইআইডিএফসি ৫৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ ও হজ ফাইন্যান্সের ৫৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এ ছাড়া ন্যাশনাল ফাইন্যান্সের ৫৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ফনিক্স ফাইন্যান্স ৫৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ, উত্তরা ফাইন্যান্স ৫০ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ৪৩ দশমিক ১২ শতাংশ খেলাপি হয়ে গেছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া বলেন, কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এসব রাতারাতি পরিবর্তন ঘটবে না। তবে খারাপ প্রতিষ্ঠানের অবস্থার উন্নতি করে পিপলস লিজিং, উত্তরা ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক বসানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের স্থিতি ছিল ৭২ হাজার ৮০৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। তবে গত জুন শেষে বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে ৬৫৬ কোটি টাকা।

প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল হামিদ মিয়া বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল নিয়ম না মেনে সরকারি মহলের নাম ব্যবহার করে ঋণ ছাড় করে তা পরিশোধ করে না। এতে খেলাপি বেড়ে যায়। সংকট থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে খারাপ গ্রাহককে ঋণ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। সূত্র: আজকের পত্রিকা।