প্রাইভেট ইকুইটি কোম্পানির আগ্রহ বাড়ায় পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত যুক্তরাষ্ট্রের আইপিও বাজারে

- প্রকাশের সময় : ০৪:১০:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৪৯ বার পঠিত
ধারাবাহিক ঊর্ধ্বগতির পর ২০২১ সালে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখে যুক্তরাষ্ট্রের আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) বাজার। অবশ্য পরের বছরই আসে পতন। তবে চলতি বছর বিশ্লেষকরা আইপিওর বাজার পুনরুদ্ধারে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন। এফটির এক প্রতিবেদন অনুসারে, ওয়াল স্ট্রিটের ব্যাংকাররা শেয়ারবাজারে নতুন উদ্যোগ নিতে প্রস্তুত হচ্ছে। কারণ প্রাইভেট ইকুইটি (পিই) গ্রুপগুলো যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারের ঊর্ধ্বমুখী অবস্থাকে কাজে লাগাতে চাইছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, এরই মধ্যে মেডিকেল ডিভাইস নির্মাতা মেডলাইন ও সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী জেনেসিসের মতো বেশ কয়েকটি পিই-সমর্থিত প্রতিষ্ঠান সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রকদের কাছে আইপিওর জন্য নথিপত্র জমা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকার ও বিশ্লেষকরা চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) আইপিও ঘোষণার বড় একটি তরঙ্গের প্রত্যাশা করছেন। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে চমকে দেয়া উত্থান এবং নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর ও নীতি শিথিলের প্রতিশ্রুতির কারণে বাজারে এ প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালের ১০টি বৃহত্তম আইপিওর মধ্যে নয়টি শেয়ারের দাম বছর শেষে ফেস ভ্যালুর ওপরে ছিল। অর্থাৎ এ শেয়ারগুলো ক্রেতাদের জন্য লাভজনক প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেক কোম্পানি তিন অংকের প্রবৃদ্ধি দেখেছে, যাতে শীর্ষে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ রেডিট।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান মরগান স্ট্যানলির গ্লোবাল ইকুইটি ক্যাপিটাল মার্কেটসের কো-হেড এডি মলয়ের মতে, আইপিও বাজারে আশাবাদের মূল বিষয় হলো এতে ক্রমাগত উন্নতি ও কার্যকলাপ বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। এছাড়া অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট কিছুটা স্থিতিশীল এবং ব্যবসাবান্ধব নিয়ন্ত্রক নীতির কারণে এ খাত সামনে আরো ব্যস্ত সময় দেখতে পারে।যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে কভিড মহামারী-পরবর্তী পুনরুদ্ধারের স্থবিরতা নিয়ে আসে মূল্যস্ফীতি ও সুদহার নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে জটিলতা। ২০২২ সালে ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার বাড়িয়ে রেকর্ড পর্যায়ে নিয়ে যায়, যা লম্বা সময় ধরে স্থির অবস্থায় ছিল। এতে ব্যবসায়িক খাতগুলো তীব্রভাবে প্রভাবিত হয়। যার কারণে তিন বছর ধরে পুঁজিবাজারে আইপিওর খরা দেখা যায়। তবে এবার প্রত্যাশিত বড় একটি প্রবাহ আসতে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চ সুদহার সাধারণত ঝুঁকিপূর্ণ, যা ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধির ওপর নির্ভরশীল সম্পদের চাহিদা কমিয়ে দেয়। অথচ এ ধরনের নির্ভরতা নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানির সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তবে ফেডের সাম্প্রতিক তিন দফা সুদহার হ্রাস এবং ভবিষ্যতে আরো কাটছাঁটের প্রত্যাশা বাজার চাহিদাকে পুনরুজ্জীবিত করছে।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি। তবে এটি এখনো ২০২১ সালের শীর্ষ ১৫ হাজার কোটি ডলারের অনেক নিচে। ব্যাংকাররা আশা করছেন, চলতি বছর বাজারের কার্যকলাপ ২০২০ সালের আগের গড় ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারকে অতিক্রম করবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রাইভেট ইকুইটি ফার্মগুলো দীর্ঘস্থায়ী চুক্তি খরার কারণে বিনিয়োগকারীদের নগদ ফেরত দেয়ার চাপের মধ্যে রয়েছে। এখন বিনিয়োগকারীদের মনোভাবেও পরিবর্তন এসেছে। অনেকেই মহামারীর সময় লোকসান দেয়া স্টার্টআপে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এখন তারা বড় মুনাফাযোগ্য কোম্পানিতে ভাগ্য পরীক্ষা করতে আগ্রহী।
আরভিং ইনভেস্টরসের প্রতিষ্ঠাতা জেরেমি অ্যাবেলসন বলেন, ‘২০২১ সালের তুলনায় এখন বিনিয়োগকারীরা মাঝারি মানের ব্যবসার প্রতি কম আগ্রহী।’ সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সম্পদ অর্জনে ব্যবসায়িক খাতগুলোর নজর অনেকটাই নতুন প্রবণতার দিকে ঝুঁকেছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে ফিনটেক সেক্টর নজর কাড়বে। সুইডেনের ‘বাই নাউ, পে লেটার’ কোম্পানি ক্লার্না শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানি চাইম দুই বছরেরও বেশি সময় পর তালিকাভুক্তির পরিকল্পনা পুনরুজ্জীবিত করেছে। প্রাথমিক পদক্ষেপের সময় দেড় হাজার কোটি থেকে ২ হাজার কোটি ডলারের মধ্যে সম্পাদের মূল্যায়নের কথা বলেছিল কোম্পানিটি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পর প্রযুক্তি ও আর্থিক শেয়ারের বৃদ্ধি এ মূল্যায়নকে আরো উঁচুতে নিয়ে যেতে পারে।
কিছু পর্যবেক্ষক বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, গত দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার শক্তিশালী হয়েছে। কিন্তু আইপিওর বাজারে সে প্রভাব দেখা যায়নি। বিশেষ করে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ২০২২ সালের নিম্নমুখী অবস্থান থেকে প্রায় ৭০ শতাংশ বেড়েছে। তবু আইপিওর বাজার বা নতুন কোম্পানির শেয়ার তালিকাভুক্তি তুলনামূলকভাবে স্থির ছিল। এ সময় বড় কোম্পানিগুলোর শেয়ারমূল্য অনেক বেড়েছে, যা বাজারের উত্থানকে কাজে লাগিয়েছে। সাধারণত আইপিওতে ছোট ও মাঝারি আকারের কোম্পানিগুলো বেশি থাকে। কিন্তু এ বৃদ্ধি তাদের তেমন প্রভাবিত করেনি, তাই তারা শেয়ারবাজারে আসার জন্য আগ্রহ দেখায়নি। তবে এবার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকসের রায়ান নোলান বলেন, ‘২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বাজারে আরো বৈচিত্র্য আসার ফলে আত্মবিশ্বাস বাড়ছে।’ ২০২১ সালের উচ্চ মূল্যায়নের কারণে অনেক কোম্পানি নতুন বিনিয়োগ গ্রহণে অনিচ্ছুক ছিল। কিন্তু এখন তারা আরো প্রয়োগিক মনোভাব দেখাচ্ছে। অ্যালায়েন্সবার্নস্টাইনের সামান্থা লাউ বলেন, ‘২০২১ সালের পর পর্যাপ্ত সময় পেরিয়ে গেছে, তাই আইপিও বাজার ধীরে ধীরে আবার সক্রিয় হবে।’ সূত্র : বণিক বার্তা