নিম্নমুখী দামের সুবাদে আরো বাড়তে পারে এলএনজির বৈশ্বিক চাহিদা
- প্রকাশের সময় : ০৬:১৫:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪
- / ৬৩ বার পঠিত
বিশ্ববাজারে গত নয় মাসের ব্যবধানে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। দামের সুবিধার কারণে ক্রেতাদের কাছে জ্বালানিটি আরো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। ফলে জ্বালানিটির চাহিদা আরো ব্যাপক মাত্রায় বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নিকট ভবিষ্যতে সংকোচনের মুখে পড়তে পারে এলএনজির বাজার। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত সেরাউইক এনার্জি কনফারেন্সে বিশ্বের শীর্ষ জ্বালানি কোম্পানিগুলোর নির্বাহীরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। খবর রয়টার্স।
বাজারে সরবরাহ বাড়তে থাকায় এলএনজির দামে নিম্নমুখী প্রবণতা তৈরি হয়েছে। জ্বালানিটির বড় বাজার উত্তরপূর্ব এশিয়া। এ অঞ্চলে এপ্রিলে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির মূল্য গত সপ্তাহে ৮ ডলার ৬০ সেন্টে নেমে যায়, যা ২০২১ সালের এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন।
শেভরন ও ট্রাফিগুরাসহ বিভিন্ন কোম্পানির নির্বাহীদের প্রাক্কলন অনুযায়ী, বাজারদরে এমন নিম্নমুখিতা নিশ্চিতভাবে এলএনজির চাহিদা বাড়াবে। অন্যদিকে শেল এনার্জির সিইও ওয়ায়েল সাভান বলেন, ‘দাম কমার কারণে এরই মধ্যে চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে।’
ট্রাফিগুরার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিভাগের বৈশ্বিক প্রধান রিচার্ড হটাম বলেন, ‘এটি অর্থনীতির একেবারেই গতানুগতিক একটি নিয়ম। দাম কমলে স্বাভাবিকভাবেই পণ্যের চাহিদা ও ব্যবহার বাড়বে। বর্তমানে বাজারে গ্যাসের দাম অনেক কম, যা বাজার অংশীজনদের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দিচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি ও নিম্নমুখী দামের কারণে অনেক কোম্পানি নতুন রফতানি প্লান্ট চালু অনুমোদন চেয়ে দেশটির সরকারের কাছে আবেদন করেছে। বিপুল পরিমাণ আবেদন জমা পড়ায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার সরকার নতুন রফতানি প্লান্ট অনুমোদন স্থগিত করে দেয়। অতিমাত্রায় প্লান্ট চালু হলে দেশটির প্রাকৃতিক গ্যাস খাতে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কাই মূলত এর পেছনে প্রধান কারণ।
আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট মাইক সমারস বলেন, ‘অনুমোদন বন্ধ করে দেয়ার ফলে এলএনজি রফতানিতে আন্তর্জাতিক বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য কমে যেতে পারে। আমরা অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের কাছে বাজার হিস্যা হারাচ্ছি।’
মার্কিন সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা আমোস হচস্টেইন এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘২০১৬ সালের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি রফতানি ব্যাপক হারে বাড়ছে। গত বছরের ডিসেম্বরে রেকর্ড ৮৬ লাখ টন এলএনজি রফতানি করা হয়, জানুয়ারিতে যা দাঁড়িয়েছে ৮৩ লাখ টনে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাঁচ বছরের মধ্যে এলএনজির বৈশ্বিক সরবরাহ এক-তৃতীয়াংশ বাড়বে। বর্তমানে বাজারে সরবরাহজনিত কোনো সংকোচন নেই। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় আগামী দিনগুলোয়ও জ্বালানিটির দাম নিম্নমুখী থাকবে।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি ফোরাম (আইইএফ) গত বছরের ডিসেম্বরে এক প্রতিবেদনে জানায়, এলএনজি বৈশ্বিক বাণিজ্য ২০২২ সালে রেকর্ড স্পর্শ করেছিল। পাঁচ বছরের মধ্যে জ্বালানিটির বাণিজ্য আরো ২৫ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিমাণের দিক থেকে জ্বালানিটির বার্ষিক বাণিজ্য দাঁড়াতে পারে প্রায় ৫০ কোটি টনে।
এলএনজি সবচেয়ে শীতল প্রাকৃতিক গ্যাস, যেটি বিশেষ ধরনের ট্যাংকারে জাহাজীকরণ করা হয়। বিশ্বজুড়ে সরবরাহকৃত গ্যাসের ১৫ শতাংশই এলএনজি। পাইপলাইন গ্যাসের তুলনায় এলএনজি পরিবহন অনেক বেশি সহজ। প্রাকৃতিক গ্যাসকে এলএনজিতে রূপান্তর করে অনেক দূর পর্যন্ত পরিবহন করা যায়। এটি অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে সরবরাহযোগ্য, পাইপলাইনের মাধ্যমে যা সম্ভব নয়। এলএনজির আরেকটি বড় সুবিধা এটি মুক্তবাজারে সহজেই বিপণন করা যায়। এসব সুবিধার কারণেও পাইপলাইন গ্যাসের বিপরীতে এলএনজির চাহিদা বাড়ছে।
হককথা/নাছরিন