নিউইয়র্ক ০২:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

আতঙ্ক কাটছে না, আস্থার সংকটে শেয়ারবাজার

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৩:১৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ১০৫ বার পঠিত

দীর্ঘদিন অনাস্থায় থাকা শেয়ারবাজারে আপাতত কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। বেশিরভাগ কোম্পানি থেকে ফ্লোর প্রাইস (নিুসীমা) উঠে যাওয়ার পর লেনদেন, মূল্যসূচক ও বাজারমূলধন বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের (অংশীজন) মধ্যেও ফুরফুরে ভাব। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) নিজেদের সফলতা হিসাবে বিবেচনা করছে। তবে এতকিছুর পরও বিনিয়োগকারীরা পুরোপুরি আস্থা ফিরে পাচ্ছে না।

এসব বিষয় নিয়ে বেশকিছু বিনিয়োগকারী এবং বাজারের ব্যাপারে সচেতন লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের মতে, ১৫ দিনে বাজারে লেনদেন ও দাম বৃদ্ধির তালিকায় যেসব কোম্পানি এগিয়ে রয়েছে সবই গ্যাম্বলারদের (কারসাজি) আইটেম হিসাবে পরিচিত। ফলে এই ঊর্ধ্বগতি পরিকল্পিত। কতদিন টেকসই হয়, সেটি সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

আর বাজারের সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা, অংশীজন, এমনকি অর্থনীতিবিদদের মধ্যে যারা কথা বলছেন, সবাই এই বাজার থেকে সুবিধাভোগী। দিনশেষে লক্ষ্য বিনিয়োগকারীদের পকেট। ফলে ওনাদের কথা বা সিদ্ধান্তে আস্থা রাখা কঠিন। সবকিছু মিলে আস্থা-অনাস্থার দোলাচলে শেয়ারবাজার। তবে আশার দিক হলো, এখনও এই বাজারে বেশকিছু শেয়ারের দাম বৃদ্ধির সুযোগ আছে। যা মূল্যসূচককে এগিয়ে নিতে পারে।

বিশ্লেষকরাও আস্থার কথা বলছেন। জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজারে মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। এই সংকট কাটাতে উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। না হলে দীর্ঘমেয়াদে বাজার টেকসই হওয়া কঠিন।

তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, ভিন্নকথা। জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম শুক্রবার বলেন, বাজার ইতিবাচক। মূল্যসূচক ও লেনদেন সবকিছু বেড়েছে। এর মানে হলো বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। তবে কেউ কারসাজি করে পার পাবে না। তিনি বলেন, কারসাজির মাধ্যমে কেউ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে কমিশন সচেতন আছে।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে বাজার কিছুটা নেতিবাচক ছিল। তবে আগের সপ্তাহ মিলিয়ে ১৫ দিনের হিসাব করলে ভিন্ন চিত্র মিলবে। সর্বশেষ ১৫ দিনের সঙ্গে তুলনা করলে ২ বছরের মধ্যে অন্য যে কোনো ১৫ দিনের তুলনায় আলোচ্য সময়ে বাজার ছিল সর্বোচ্চ। লেনদেন, মূল্যসূচক ও বাজার মূলধন সবকিছুতেই বাজার এগিয়ে ছিল। দুই সপ্তাহে ডিএসইতে ১৫ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এ হিসাবে ১০ কার্যদিবসে প্রতিদিনের গড় লেনদেন ১ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। একই অবস্থা মূল্যসূচকেও। তবে বৃদ্ধির তালিকায় যেসব কোম্পানি রয়েছে, তা দেখলে সচেতন বিনিয়োগকারীরা কিছুটা নিঃশ্বাস ফেলবেন।

একক কোম্পানি হিসাবে গত সপ্তাহে সিকদার ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশ, তৌফিকা ফুড অ্যান্ড লেভেলো আইসক্রিমের দাম বেড়েছে ২৮ শতাংশ, বেস্ট হোল্ডিংস ২৮ শতাংশ, মন্নু সিরামিক ২০ শতাংশ এবং খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ১৭ শতাংশ। গত সপ্তাহে ডিএসইতে শীর্ষ দশের তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলোতে ১ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। যা বাজারের মোট লেনদেনের ২৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এরমধ্যে প্রথম অবস্থানে থাকা বেস্ট হোল্ডিংসের লেনদেন ২৯৪ কোটি টাকা, ওরিয়ন ইনফিউশন ২৭৬ কোটি, ওরিয়ন ফার্মা ২২৬ কোটি এবং ফরচুন সুজ ১৯৬ কোটি টাকা। বাজারে এর সবগুলোর কারসাজির আইটেম হিসাবে পরিচিত। অর্থাৎ ইতিবাচক বাজারও বিনিয়োগকারীদের পুরোপুরি স্বস্তি দিতে পারছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হলে প্রথম সপ্তাহে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিএসইসি, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজ, প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরাম এবং ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের এক ধরনের প্রস্তুতি ছিল। তারা বাজারে সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে দ্বিতীয় সপ্তাহে ঘুরে দাঁড়ায় বাজার। তৃতীয় সপ্তাহেও ছিল মোটামুটি ইতিবাচক। তবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা না ফিরলে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বেশিদিন টিকিয়ে রাখা কঠিন।

এদিকে সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে শেয়ারবাজার খুব বেশি ইতিবাচক জায়গায় নেই। সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে যাদের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই, তাদের কাছে শেয়ারবাজার বিরক্তির বিষয়। তাদের ভাবনা এ রকম, শেয়ারবাজার না থাকলে দেশের কোনো সমস্যা হবে না। এ কারণে যতদিন ফ্লোর প্রাইস দিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল, ততদিন তারা স্বস্তিতেই ছিলেন।

বর্তমানে অলিখিতভাবেই চিহ্নিত কয়েকটি সিন্ডিকেট বাজার উঠানো-নামানোর দায়িত্ব পালন করছে। অর্থনীতিবিদ ও বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, মোটা দাগে বাজারে দুটি সংকট। চাহিদার দিক থেকে সংকট হলো এই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। সরবরাহের দিক থেকে সংকট হলো ভালো কোম্পানির সংখ্যা কম। ফলে কারসাজি ও সিন্ডিকেটের জয়জয়কার অবস্থা। সবকিছু মিলে দীর্ঘদিন থেকে দুর্বল অস্তিত্বে টিকে আছে শেয়ারবাজার।

আর ক্রমেই অবস্থা আরও দুর্বল হচ্ছে। এখান থেকে দীর্ঘমেয়াদে উত্তরণ একেবারেই কঠিন। এ ব্যাপারে মির্জ্জা আজিজ মনে করেন, সবার আগে আস্থা সংকট দূর করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আস্থা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ কারসাজির মাধ্যমে কেউ তার টাকা হাতিয়ে নিলে বিচার হবে এই মর্মে বিনিয়োগকারীদের নিশ্চয়তা দিতে হবে। পাশাপাশি ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। এই দুই পদক্ষেপের মাধ্যমে বাজারের সমস্যা দূর করা সম্ভব। তবে বর্তমান বাস্তবতায় এটি খুব সহজ নয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে তারল্য বাড়াতে দুই বছর আগে ৬০টি নতুন ট্রেক (ব্রোকারেজ হাউজ) অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতিটি হাউজ থেকে ৫ কোটি টাকা বাজারে এলেও ৩০০ কোটি টাকা তারল্য বৃদ্ধির কথা। কিন্তু দু-একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অধিকাংশ লেনদেন শুরুই করতে পারেনি। ফলে যে উদ্দেশ্যে ট্রেকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, তা সফল হয়নি।

তাদের মতে, ২০১০ সালের সঙ্গে বর্তমান বাজারের বেশ কয়েকটি জায়গার মিল রয়েছে। সে সময় বাজারে মার্জিন ঋণ (শেয়ার কেনায় ঋণ) ছিল সীমাহীন। ভালো কোম্পানির সংখ্যা ছিল কম। কোম্পানির মৌলভিত্তি নয়, বিনিয়োগ ছিল গুজবনির্ভর। সূচকের অস্বাভাবিক ওঠানামা ছিল। দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছিল। অর্থনীতির অন্যান্য সূচকের সঙ্গে পুঁজিবাজারের উত্থানের মিল ছিল না। বর্তমানে এর সবই বাজারে রয়েছে। উলটো করোনা, বিশ্ব পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক নেতিবাচক অবস্থায় বর্তমানে বেশকিছু কোম্পানির আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে পারছে না।

গত সপ্তাহে ৫ দিনে ডিএসইতে ৭ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে ৫ দিনে ৮ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। এ হিসাবে গত সপ্তাহে লেনদেন কমেছে ১ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন কমেছে ২০৭ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে যা ১২ দশমিক ২১ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ডিএসই ব্রড সূচক ৩৭ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৭৩টি কোম্পানির শেয়ারের, কমেছে ৩০৯টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। তবে ১১টি কোম্পানির কোনো শেয়ার লেনদেন হয়নি। গত সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর বাজারমূলধন ছিল ৭ লাখ ৭২ হাজার কোটি টাকা। সপ্তাহ শেষে তা কমে ৭ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এ হিসাবে বাজারমূলধন ৬ হাজার কোটি টাকা কমেছে। সূত্র : যুগান্তর।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আতঙ্ক কাটছে না, আস্থার সংকটে শেয়ারবাজার

প্রকাশের সময় : ০৩:১৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

দীর্ঘদিন অনাস্থায় থাকা শেয়ারবাজারে আপাতত কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। বেশিরভাগ কোম্পানি থেকে ফ্লোর প্রাইস (নিুসীমা) উঠে যাওয়ার পর লেনদেন, মূল্যসূচক ও বাজারমূলধন বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের (অংশীজন) মধ্যেও ফুরফুরে ভাব। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) নিজেদের সফলতা হিসাবে বিবেচনা করছে। তবে এতকিছুর পরও বিনিয়োগকারীরা পুরোপুরি আস্থা ফিরে পাচ্ছে না।

এসব বিষয় নিয়ে বেশকিছু বিনিয়োগকারী এবং বাজারের ব্যাপারে সচেতন লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের মতে, ১৫ দিনে বাজারে লেনদেন ও দাম বৃদ্ধির তালিকায় যেসব কোম্পানি এগিয়ে রয়েছে সবই গ্যাম্বলারদের (কারসাজি) আইটেম হিসাবে পরিচিত। ফলে এই ঊর্ধ্বগতি পরিকল্পিত। কতদিন টেকসই হয়, সেটি সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

আর বাজারের সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা, অংশীজন, এমনকি অর্থনীতিবিদদের মধ্যে যারা কথা বলছেন, সবাই এই বাজার থেকে সুবিধাভোগী। দিনশেষে লক্ষ্য বিনিয়োগকারীদের পকেট। ফলে ওনাদের কথা বা সিদ্ধান্তে আস্থা রাখা কঠিন। সবকিছু মিলে আস্থা-অনাস্থার দোলাচলে শেয়ারবাজার। তবে আশার দিক হলো, এখনও এই বাজারে বেশকিছু শেয়ারের দাম বৃদ্ধির সুযোগ আছে। যা মূল্যসূচককে এগিয়ে নিতে পারে।

বিশ্লেষকরাও আস্থার কথা বলছেন। জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজারে মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। এই সংকট কাটাতে উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। না হলে দীর্ঘমেয়াদে বাজার টেকসই হওয়া কঠিন।

তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, ভিন্নকথা। জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম শুক্রবার বলেন, বাজার ইতিবাচক। মূল্যসূচক ও লেনদেন সবকিছু বেড়েছে। এর মানে হলো বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। তবে কেউ কারসাজি করে পার পাবে না। তিনি বলেন, কারসাজির মাধ্যমে কেউ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে কমিশন সচেতন আছে।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে বাজার কিছুটা নেতিবাচক ছিল। তবে আগের সপ্তাহ মিলিয়ে ১৫ দিনের হিসাব করলে ভিন্ন চিত্র মিলবে। সর্বশেষ ১৫ দিনের সঙ্গে তুলনা করলে ২ বছরের মধ্যে অন্য যে কোনো ১৫ দিনের তুলনায় আলোচ্য সময়ে বাজার ছিল সর্বোচ্চ। লেনদেন, মূল্যসূচক ও বাজার মূলধন সবকিছুতেই বাজার এগিয়ে ছিল। দুই সপ্তাহে ডিএসইতে ১৫ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এ হিসাবে ১০ কার্যদিবসে প্রতিদিনের গড় লেনদেন ১ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। একই অবস্থা মূল্যসূচকেও। তবে বৃদ্ধির তালিকায় যেসব কোম্পানি রয়েছে, তা দেখলে সচেতন বিনিয়োগকারীরা কিছুটা নিঃশ্বাস ফেলবেন।

একক কোম্পানি হিসাবে গত সপ্তাহে সিকদার ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশ, তৌফিকা ফুড অ্যান্ড লেভেলো আইসক্রিমের দাম বেড়েছে ২৮ শতাংশ, বেস্ট হোল্ডিংস ২৮ শতাংশ, মন্নু সিরামিক ২০ শতাংশ এবং খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ১৭ শতাংশ। গত সপ্তাহে ডিএসইতে শীর্ষ দশের তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলোতে ১ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। যা বাজারের মোট লেনদেনের ২৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এরমধ্যে প্রথম অবস্থানে থাকা বেস্ট হোল্ডিংসের লেনদেন ২৯৪ কোটি টাকা, ওরিয়ন ইনফিউশন ২৭৬ কোটি, ওরিয়ন ফার্মা ২২৬ কোটি এবং ফরচুন সুজ ১৯৬ কোটি টাকা। বাজারে এর সবগুলোর কারসাজির আইটেম হিসাবে পরিচিত। অর্থাৎ ইতিবাচক বাজারও বিনিয়োগকারীদের পুরোপুরি স্বস্তি দিতে পারছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হলে প্রথম সপ্তাহে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিএসইসি, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজ, প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরাম এবং ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের এক ধরনের প্রস্তুতি ছিল। তারা বাজারে সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে দ্বিতীয় সপ্তাহে ঘুরে দাঁড়ায় বাজার। তৃতীয় সপ্তাহেও ছিল মোটামুটি ইতিবাচক। তবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা না ফিরলে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বেশিদিন টিকিয়ে রাখা কঠিন।

এদিকে সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে শেয়ারবাজার খুব বেশি ইতিবাচক জায়গায় নেই। সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে যাদের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই, তাদের কাছে শেয়ারবাজার বিরক্তির বিষয়। তাদের ভাবনা এ রকম, শেয়ারবাজার না থাকলে দেশের কোনো সমস্যা হবে না। এ কারণে যতদিন ফ্লোর প্রাইস দিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল, ততদিন তারা স্বস্তিতেই ছিলেন।

বর্তমানে অলিখিতভাবেই চিহ্নিত কয়েকটি সিন্ডিকেট বাজার উঠানো-নামানোর দায়িত্ব পালন করছে। অর্থনীতিবিদ ও বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, মোটা দাগে বাজারে দুটি সংকট। চাহিদার দিক থেকে সংকট হলো এই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। সরবরাহের দিক থেকে সংকট হলো ভালো কোম্পানির সংখ্যা কম। ফলে কারসাজি ও সিন্ডিকেটের জয়জয়কার অবস্থা। সবকিছু মিলে দীর্ঘদিন থেকে দুর্বল অস্তিত্বে টিকে আছে শেয়ারবাজার।

আর ক্রমেই অবস্থা আরও দুর্বল হচ্ছে। এখান থেকে দীর্ঘমেয়াদে উত্তরণ একেবারেই কঠিন। এ ব্যাপারে মির্জ্জা আজিজ মনে করেন, সবার আগে আস্থা সংকট দূর করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আস্থা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ কারসাজির মাধ্যমে কেউ তার টাকা হাতিয়ে নিলে বিচার হবে এই মর্মে বিনিয়োগকারীদের নিশ্চয়তা দিতে হবে। পাশাপাশি ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। এই দুই পদক্ষেপের মাধ্যমে বাজারের সমস্যা দূর করা সম্ভব। তবে বর্তমান বাস্তবতায় এটি খুব সহজ নয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে তারল্য বাড়াতে দুই বছর আগে ৬০টি নতুন ট্রেক (ব্রোকারেজ হাউজ) অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতিটি হাউজ থেকে ৫ কোটি টাকা বাজারে এলেও ৩০০ কোটি টাকা তারল্য বৃদ্ধির কথা। কিন্তু দু-একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অধিকাংশ লেনদেন শুরুই করতে পারেনি। ফলে যে উদ্দেশ্যে ট্রেকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, তা সফল হয়নি।

তাদের মতে, ২০১০ সালের সঙ্গে বর্তমান বাজারের বেশ কয়েকটি জায়গার মিল রয়েছে। সে সময় বাজারে মার্জিন ঋণ (শেয়ার কেনায় ঋণ) ছিল সীমাহীন। ভালো কোম্পানির সংখ্যা ছিল কম। কোম্পানির মৌলভিত্তি নয়, বিনিয়োগ ছিল গুজবনির্ভর। সূচকের অস্বাভাবিক ওঠানামা ছিল। দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছিল। অর্থনীতির অন্যান্য সূচকের সঙ্গে পুঁজিবাজারের উত্থানের মিল ছিল না। বর্তমানে এর সবই বাজারে রয়েছে। উলটো করোনা, বিশ্ব পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক নেতিবাচক অবস্থায় বর্তমানে বেশকিছু কোম্পানির আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে পারছে না।

গত সপ্তাহে ৫ দিনে ডিএসইতে ৭ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে ৫ দিনে ৮ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। এ হিসাবে গত সপ্তাহে লেনদেন কমেছে ১ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন কমেছে ২০৭ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে যা ১২ দশমিক ২১ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ডিএসই ব্রড সূচক ৩৭ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৭৩টি কোম্পানির শেয়ারের, কমেছে ৩০৯টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। তবে ১১টি কোম্পানির কোনো শেয়ার লেনদেন হয়নি। গত সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর বাজারমূলধন ছিল ৭ লাখ ৭২ হাজার কোটি টাকা। সপ্তাহ শেষে তা কমে ৭ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এ হিসাবে বাজারমূলধন ৬ হাজার কোটি টাকা কমেছে। সূত্র : যুগান্তর।