নিউইয়র্ক ০৭:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

প্রচলিত বাজারে রপ্তানি নির্ভরতা আরও বেড়েছে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:৩৯:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৫৩ বার পঠিত

বিশ্বের মোট ১৯৫টি দেশের প্রায় সবক’টিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় এখন। তবে ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ২৭ জাতির জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) নিরঙ্কুশ নির্ভরতা কমছে না; বরং বাড়ছেই। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত গত সাত মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ইউরোপ আর আমেরিকা-নির্ভরতা আরও বেড়েছে। অপ্রচলিত বা নতুন বাজারগুলো মাঝে কিছুটা সম্ভাবনা জাগিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তা সম্ভাবনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। গত সাত মাসে এসব বাজারে রপ্তানির হিস্যা আরও কমে এসেছে।

রপ্তানি পণ্য হিসেবে তৈরি পোশাক এবং বাজার হিসেবেও এরকম নির্ভরতা ইউরোপ-আমেরিকার প্রতি অতিনির্ভরতা বড় ধরনের ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন বাণিজ্য বিশ্লেষকরা। টেরিটাওয়েল, হোমটেক্সটাইলসহ সমজাতীয় পণ্য আমলে নিলে মোট রপ্তানিতে তৈরি পোশাকের হিস্যা এখন ৮৭ শতাংশ। অর্থাৎ বাকি সব পণ্য রপ্তানি থেকে আয় আসে মোট রপ্তানির মাত্র ১৩ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পণ্যের শ্রেণি চিহ্নিতকরণে ব্যবহৃত হারমোনাইজ সিস্টেম (এইচএস) ৬ ডিজিট বিশিষ্ট পণ্যের কোডিং অনুযায়ী ২০০ ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। প্রচলিত বাজার হিসেবে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ২০২০ সালে ব্রেক্সিটের মাধ্যমে ইইউ থেকে আলাদা হওয়ার পর যুক্তরাজ্যকেও প্রচলতি বাজার হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এর বাইরের সব দেশকে অপ্রচলিত বা নতুন বাজার হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের (বিএফটিইউ) সাবেক পরিচালক এবং বাণিজ্য বিশ্লেষক ড. মোস্তফা আবিদ খান বলেন, বাংলাদেশ বেশি উৎপাদন করে, এমন পণ্যের চাহিদা যেসব দেশে বেশি, সেখানে রপ্তানি বাড়ছে। ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানি বেড়ে চলার এটা প্রধান কারণ। এ ছাড়া সাম্প্রতিক চীনের শুল্ক বিরোধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির রপ্তানি কমছে। নতুন প্রশাসন চীনা পণ্যে শুল্কারোপের ঘোষণা আগেই দিয়েছে। এর পর থেকেই চীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের আগ্রহ কমতে শুরু করে, যার বড় সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, গত সাত মাসে ২৭ জাতির জোট ইইউতে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে পােশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। রপ্তানির মোট পরিমাণ দাঁড়াল ১ হাজার ১৮১ কোটি ডলারেরও বেশি। এতে বিশ্ববাজারে দেশের রপ্তানি আয়ে ইইউর হিস্যা দাঁড়ায় ৫০ দশমিক ১৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। একইভাবে একক দেশ হিসেবে প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে গত সাত মাসে রপ্তানি বেড়েছে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এই বৃদ্ধির ফলে বিশ্ববাজারে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের হিস্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। ৪৪৭ কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের তৈরি পোশাক গেছে দেশটিতে। প্রচলিত আরেক বাজার কানাডায় রপ্তানি বেড়েছে ১৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। রপ্তানি বাজার হিসেবে কানাডার হিস্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক ১০ শতাংশ। যুক্তরাজ্যে অবশ্য রপ্তানি কিছুটা কমে এসেছে। গত সাত মাসের হিসাবে হিস্যা দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল।

প্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়ার বিপরীতে অপ্রচিলত শ্রেণির বাজারে রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৪২ শতাংশ। এতে মোট রপ্তানিতে এসব দেশের হিস্যা কমে দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে একই সময়ে যা ছিল ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। গত সাত মাসে তৈরি পোশাকের রপ্তানির পরিমাণ ৩৯৭ কোটি ডলারের কিছু কম। বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক এবং ডেনিম এক্সপার্টের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানি বাড়তে পারে। ভূরাজনৈতিক কারণে সেখানে রপ্তানির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এটি কাজে লাগাতে পশ্চাৎসংযোগ শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার।সূত্র : সমকাল।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

প্রচলিত বাজারে রপ্তানি নির্ভরতা আরও বেড়েছে

প্রকাশের সময় : ১০:৩৯:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বিশ্বের মোট ১৯৫টি দেশের প্রায় সবক’টিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় এখন। তবে ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ২৭ জাতির জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) নিরঙ্কুশ নির্ভরতা কমছে না; বরং বাড়ছেই। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত গত সাত মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ইউরোপ আর আমেরিকা-নির্ভরতা আরও বেড়েছে। অপ্রচলিত বা নতুন বাজারগুলো মাঝে কিছুটা সম্ভাবনা জাগিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তা সম্ভাবনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। গত সাত মাসে এসব বাজারে রপ্তানির হিস্যা আরও কমে এসেছে।

রপ্তানি পণ্য হিসেবে তৈরি পোশাক এবং বাজার হিসেবেও এরকম নির্ভরতা ইউরোপ-আমেরিকার প্রতি অতিনির্ভরতা বড় ধরনের ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন বাণিজ্য বিশ্লেষকরা। টেরিটাওয়েল, হোমটেক্সটাইলসহ সমজাতীয় পণ্য আমলে নিলে মোট রপ্তানিতে তৈরি পোশাকের হিস্যা এখন ৮৭ শতাংশ। অর্থাৎ বাকি সব পণ্য রপ্তানি থেকে আয় আসে মোট রপ্তানির মাত্র ১৩ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পণ্যের শ্রেণি চিহ্নিতকরণে ব্যবহৃত হারমোনাইজ সিস্টেম (এইচএস) ৬ ডিজিট বিশিষ্ট পণ্যের কোডিং অনুযায়ী ২০০ ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। প্রচলিত বাজার হিসেবে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ২০২০ সালে ব্রেক্সিটের মাধ্যমে ইইউ থেকে আলাদা হওয়ার পর যুক্তরাজ্যকেও প্রচলতি বাজার হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এর বাইরের সব দেশকে অপ্রচলিত বা নতুন বাজার হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের (বিএফটিইউ) সাবেক পরিচালক এবং বাণিজ্য বিশ্লেষক ড. মোস্তফা আবিদ খান বলেন, বাংলাদেশ বেশি উৎপাদন করে, এমন পণ্যের চাহিদা যেসব দেশে বেশি, সেখানে রপ্তানি বাড়ছে। ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানি বেড়ে চলার এটা প্রধান কারণ। এ ছাড়া সাম্প্রতিক চীনের শুল্ক বিরোধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির রপ্তানি কমছে। নতুন প্রশাসন চীনা পণ্যে শুল্কারোপের ঘোষণা আগেই দিয়েছে। এর পর থেকেই চীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের আগ্রহ কমতে শুরু করে, যার বড় সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, গত সাত মাসে ২৭ জাতির জোট ইইউতে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে পােশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। রপ্তানির মোট পরিমাণ দাঁড়াল ১ হাজার ১৮১ কোটি ডলারেরও বেশি। এতে বিশ্ববাজারে দেশের রপ্তানি আয়ে ইইউর হিস্যা দাঁড়ায় ৫০ দশমিক ১৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। একইভাবে একক দেশ হিসেবে প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে গত সাত মাসে রপ্তানি বেড়েছে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এই বৃদ্ধির ফলে বিশ্ববাজারে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের হিস্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। ৪৪৭ কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের তৈরি পোশাক গেছে দেশটিতে। প্রচলিত আরেক বাজার কানাডায় রপ্তানি বেড়েছে ১৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। রপ্তানি বাজার হিসেবে কানাডার হিস্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক ১০ শতাংশ। যুক্তরাজ্যে অবশ্য রপ্তানি কিছুটা কমে এসেছে। গত সাত মাসের হিসাবে হিস্যা দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল।

প্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়ার বিপরীতে অপ্রচিলত শ্রেণির বাজারে রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৪২ শতাংশ। এতে মোট রপ্তানিতে এসব দেশের হিস্যা কমে দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে একই সময়ে যা ছিল ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। গত সাত মাসে তৈরি পোশাকের রপ্তানির পরিমাণ ৩৯৭ কোটি ডলারের কিছু কম। বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক এবং ডেনিম এক্সপার্টের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানি বাড়তে পারে। ভূরাজনৈতিক কারণে সেখানে রপ্তানির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এটি কাজে লাগাতে পশ্চাৎসংযোগ শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার।সূত্র : সমকাল।