বিমানবন্দর থেকেই পাচার হয়ে যাচ্ছে ডলার, জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তারা
- প্রকাশের সময় : ০৪:১১:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৫৫ বার পঠিত
দেশে ফেরা প্রবাসী শ্রমিকদের কাছে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা অবৈধভাবে সংগ্রহ করে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করছে একটি চক্র। এই অনিয়মে বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তা ও কিছু মানি এক্সচেঞ্জার জড়িত বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সচিব মো. মাহবুব হোসেন। সচিব জানিয়েছেন, এই অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে প্রতিদিন শত কোটি টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে ব্যাংকিং খাত বঞ্চিত হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান দুদক সচিব। তিনি বলেন, সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এয়ারপোর্টে দুদকের এনফোর্সমেন্ট অভিযানে সংগঠিত চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রবাসী শ্রমিকেরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মূল্যবান যে রেমিট্যান্স নগদ ও বৈদেশিক মুদ্রায় আনেন, তা ব্যাংকিং চ্যানেলে রাষ্ট্রীয় রিজার্ভে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু অসাধু ব্যাংকারেরা ব্যাংকের টাকা ব্যবহার করে তা ব্যাংকিং চ্যানেলে সংগৃহীত না দেখিয়ে নিজেরাই কিনে বাজারজাত করেন। এটি পরবর্তীতে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আবার বিদেশে পাচার হয়ে যায়। এভাবে দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হয়ে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্রে তথ্য পেয়ে এবং সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ওই অভিযান পরিচালনা শেষে বিদেশি মুদ্রার কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জারদের একটি সংগঠিত চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে।
দুদক সচিব জানান, প্রতিদিন হাজার হাজার প্রবাসী কর্মজীবী ও বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ভ্রমণকারী বিমানবন্দর হয়ে বাংলাদেশে আসেন। তাঁদের সঙ্গে আনা বিদেশি মুদ্রা বিমানবন্দরে থাকা ব্যাংকের বুথ ও মানি এক্সচেঞ্জারে টাকায় পরিবর্তন করেন। আইন, বিধি ও নিয়ম অনুযায়ী ‘ফরেন কারেন্সি এনকেশমেন্ট ভাউচার’ দিতে হয়। কিন্তু ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জারেরা ভাউচার না দিয়ে বা জাল ভাউচার দিয়ে সরাসরি বিদেশি মুদ্রা গ্রহণ করে বিনিময়ে টাকা দিয়ে দেন।
এ ছাড়া তাঁরা স্বাক্ষরবিহীন, ভুয়া ভাউচার বা এনকেশমেন্ট স্লিপ দেন। এই বিদেশি মুদ্রার ক্রয়কারীরা ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানে মূল হিসাবে বা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত অ্যাকাউন্টে তা অন্তর্ভুক্ত করেন না। দুদকের অভিযানে বিমানবন্দরে অবৈধভাবে বিদেশি মুদ্রায় ক্রয়-বিক্রয় ও মানি লন্ডারিংয়ে জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক এবং এভিয়া মানি এক্সচেঞ্জার ও ইম্পিরিয়াল মানি এক্সচেঞ্জার জড়িত থাকার বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
দুদক সচিব বলেন, এই অনিয়মের কারণে প্রতিদিন আনুমানিক ১০০ কোটি টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে ব্যাংকিং খাত বঞ্চিত হচ্ছে। অপরাধে জড়িতরা অবৈধভাবে ক্রয়কৃত ডলার, ইউরো, রিয়াল, রিঙ্গিত, পাউন্ড, দিনার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ করে বিদেশি মুদ্রা পাচারকারী, বিদেশি মুদ্রার কালোবাজারি ও মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারকারী দুর্নীতিবাজদের অবৈধভাবে সরবরাহ করে। সূত্র : আজকের পত্রিকা।