নিউইয়র্ক ০২:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় এবার ১৪তম বাংলাদেশ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:৩৯:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৩১ বার পঠিত

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বিচারে দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের আরো অবনমন হয়েছে গত এক বছরে। ২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪তম। ২০২৩ সালে দুর্নীতিগ্রস্ত এই তালিকায় বাংলাদেশ ছিল ১০তম। দুর্নীতিতে আগের বছরের তুলনায় বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের অবনমন ঘটেছে দুই ধাপ।

২০২৩ সালে ১৪৯তম অবস্থানে থাকলেও বিদায়ি বছরে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫১তম। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে শুধু আফগানিস্তান। মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০২৪’ প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক এবং বাংলাদেশের দুর্নীতির পরিস্থিতি তুলে ধরেন। ২০২৪ সালে দুর্নীতির ধারণা সূচকে ১৮০টি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জার্মানির বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) প্রতিবছর সিপিআই (করাপশন পারসেপশনস ইনডেক্স বা দুর্নীতির ধারণা সূচক) প্রকাশের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে।

সিপিআই অনুযায়ী, দুর্নীতির ধারণার মাত্রার সূচকের স্কেল শূন্য থেকে ১০০ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এই স্কেলে শূন্য স্কোরকে সবচেয়ে ব্যাপক দুর্নীতি ধরা হয়। স্কোর যত বেশি হবে, দুর্নীতির ব্যাপকতাও তত কম হবে। ১০০ স্কোর হবে সবচেয়ে কম মাত্রার দুর্নীতি। তবে ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এই সূচকের স্কেল ছিল শূন্য থেকে ১০। ২০১২ সাল থেকে নতুন স্কেল (০-১০০) ব্যবহার শুরু করে টিআই। সিপিআই অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ২৩, যা গত বছরের তুলনায় ১ পয়েন্ট কম।

গত ১৩ বছরের মধ্যে এটিই বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর। নিচের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪তম, যা দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে পঞ্চম সর্বনিম্ন অবস্থান। অন্যদিকে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দুর্নীতির ধারণাসূচকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান। ২০২৪ সালে দুর্নীতির ধারণা সূচকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হয়েছে ডেনমার্ক। দুর্নীতির ব্যাপকতা সবচেয়ে বেশি, অর্থাৎ দুর্নীতিতে প্রথম হয়েছে দক্ষিণ সুদান। প্রতিবেদন প্রকাশের সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা গভীর উদ্বেগজনক। দুর্নীতিতে দেশের অবস্থানের অবনমন প্রমাণ করে, গত ১৩ বছর কর্তৃত্ববাদী সরকার মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেও বাস্তবে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে, লালন করেছে। এমনকি দুর্নীতি সংঘটনে সহায়তা ও অংশগ্রহণ করেছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের স্কোর কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর তুলনায় কম। এই সূচকে শুধু কর্তৃত্ববাদীর মেয়াদ বলা যাবে না, এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারেরও কিছুটা মেয়াদ চলে এসেছে। ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পরও দেশে ‘চাঁদাবাজি, দখলবাজি’ চলছে বলে মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে, চেয়ারের পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু চলাচল পরিবর্তন হয়নি।

দক্ষিণ এশিয়া ও বাংলাদেশের দুর্নীতির তুলনামূলক চিত্র : 
২০২৪ সালের সিপিআই অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র ভুটানের স্কোর ২০২৩ সালের তুলনায় ৪ পয়েন্ট উন্নতি হয়েছে। অবশিষ্ট সাতটি দেশের স্কোরই ১ থেকে ৩ পয়েন্ট অবনমন হয়েছে। এর মধ্যে আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ ৩ পয়েন্ট, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ২ পয়েন্ট এবং বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও মালদ্বীপের স্কোর ১ পয়েন্ট করে অবনতি হয়েছে। ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী এ বছর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু ভুটান ও নেপালের অবস্থানের যথাক্রমে ৮ ধাপ ও ১ ধাপ উন্নতি হয়েছে এবং অবশিষ্ট ছয়টি দেশের অবস্থানের ২ থেকে ৬ ধাপ পর্যন্ত অবনতি হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার ৬ ধাপ, আফগানিস্তান, ভারত ও মালদ্বীপের ৩ ধাপ এবং বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের অবস্থানের ২ ধাপ অবনমন হয়েছে।

বৈশ্বিক চিত্র : সবচেয়ে বেশি ও সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ সিপিআই অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বৈশ্বিকভাবে ৫৬টি দেশের স্কোর ২০২৩ সালের তুলনায় বেড়েছে। কমেছে ৯৩টি দেশের স্কোর এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩১টি দেশের স্কোর। সূচকের ০ থেকে ১০০ স্কেলে কোনো দেশই শতভাগ স্কোর অর্জন করেনি। বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি দেশ এ বছর ৫০-এর কম স্কোর পেয়েছে, আর ৫৬ শতাংশ দেশের স্কোর বৈশ্বিক গড় স্কোর ৪৩-এর চেয়ে কম। সূচকে ২০২৪ সালে ৯০ স্কোর পেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে ডেনমার্ক, ৮৮ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ফিনল্যান্ড ও ৮৪ স্কোর পেয়ে তৃতীয় স্থানে সিঙ্গাপুর। অন্যদিকে ৮ স্কোর নিয়ে তালিকার সর্বনিম্নে অবস্থান করছে দক্ষিণ সুদান। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা সোমালিয়া ও ভেনেজুয়েলার স্কোর যথাক্রমে ৯ ও ১০।

বাংলাদেশের মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত নয়, ভুক্তভোগী মাত্র : 
সিপিআই ২০২৪ অনুযায়ী, ১০০-এর মধ্যে বৈশ্বিক গড় স্কোর ৪৩, যেখানে বাংলাদেশের স্কোর ২৩, যা বৈশ্বিক গড়ে স্কোরের প্রায় অর্ধেক। টিআইবি বলছে, এতে দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা গভীর উদ্বেগজনক বলে প্রতীয়মান হয়। তবে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতার কারণে ‘বাংলাদেশ দুর্নীতিগ্রস্ত বা বাংলাদেশের অধিবাসীরা সবাই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত’—এ ধরনের ব্যাখ্যা ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছে টিআইবি। টিআইবি বলেছে, দুর্নীতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য দূরীকরণ সর্বোপরি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে কঠিনতম অন্তরায়। কিন্তু দেশের আপামর জনগণ দুর্নীতিগ্রস্ত নয়, দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী মাত্র। ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি ও তা প্রতিরোধে ব্যর্থতার কারণে দেশ বা জনগণকে কোনোভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত বলা যাবে না।

টিআইয়ের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের দুর্নীতির ২৪ বছর : 
১৯৯৫ সাল থেকে টিআই বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ করে আসছে। তবে বাংলাদেশ প্রথম তালিকাভুক্ত হয় ২০০১ সালে। সূচকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।

সিপিআই সূচকের বিশ্লেষণ বলছে, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিম্নমুখী যাত্রা সুস্পষ্ট। ২০১২ থেকে সূচকে ব্যবহৃত ১০০ স্কেলে বাংলাদেশের স্কোর ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৫ থেকে ২৮-এর মধ্যে ছিল। ২০২৩-এ এক পয়েন্ট অবনমন হয়ে ২৪ এবং ২০২৪-এ আরো এক পয়েন্ট অবনমন হয়ে ২৩ হয়েছে। সূত্র : কালের কণ্ঠ।

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় এবার ১৪তম বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ১২:৩৯:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বিচারে দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের আরো অবনমন হয়েছে গত এক বছরে। ২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪তম। ২০২৩ সালে দুর্নীতিগ্রস্ত এই তালিকায় বাংলাদেশ ছিল ১০তম। দুর্নীতিতে আগের বছরের তুলনায় বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের অবনমন ঘটেছে দুই ধাপ।

২০২৩ সালে ১৪৯তম অবস্থানে থাকলেও বিদায়ি বছরে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫১তম। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে শুধু আফগানিস্তান। মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০২৪’ প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক এবং বাংলাদেশের দুর্নীতির পরিস্থিতি তুলে ধরেন। ২০২৪ সালে দুর্নীতির ধারণা সূচকে ১৮০টি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জার্মানির বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) প্রতিবছর সিপিআই (করাপশন পারসেপশনস ইনডেক্স বা দুর্নীতির ধারণা সূচক) প্রকাশের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে।

সিপিআই অনুযায়ী, দুর্নীতির ধারণার মাত্রার সূচকের স্কেল শূন্য থেকে ১০০ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এই স্কেলে শূন্য স্কোরকে সবচেয়ে ব্যাপক দুর্নীতি ধরা হয়। স্কোর যত বেশি হবে, দুর্নীতির ব্যাপকতাও তত কম হবে। ১০০ স্কোর হবে সবচেয়ে কম মাত্রার দুর্নীতি। তবে ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এই সূচকের স্কেল ছিল শূন্য থেকে ১০। ২০১২ সাল থেকে নতুন স্কেল (০-১০০) ব্যবহার শুরু করে টিআই। সিপিআই অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ২৩, যা গত বছরের তুলনায় ১ পয়েন্ট কম।

গত ১৩ বছরের মধ্যে এটিই বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর। নিচের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪তম, যা দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে পঞ্চম সর্বনিম্ন অবস্থান। অন্যদিকে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দুর্নীতির ধারণাসূচকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান। ২০২৪ সালে দুর্নীতির ধারণা সূচকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হয়েছে ডেনমার্ক। দুর্নীতির ব্যাপকতা সবচেয়ে বেশি, অর্থাৎ দুর্নীতিতে প্রথম হয়েছে দক্ষিণ সুদান। প্রতিবেদন প্রকাশের সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা গভীর উদ্বেগজনক। দুর্নীতিতে দেশের অবস্থানের অবনমন প্রমাণ করে, গত ১৩ বছর কর্তৃত্ববাদী সরকার মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেও বাস্তবে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে, লালন করেছে। এমনকি দুর্নীতি সংঘটনে সহায়তা ও অংশগ্রহণ করেছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের স্কোর কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর তুলনায় কম। এই সূচকে শুধু কর্তৃত্ববাদীর মেয়াদ বলা যাবে না, এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারেরও কিছুটা মেয়াদ চলে এসেছে। ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পরও দেশে ‘চাঁদাবাজি, দখলবাজি’ চলছে বলে মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে, চেয়ারের পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু চলাচল পরিবর্তন হয়নি।

দক্ষিণ এশিয়া ও বাংলাদেশের দুর্নীতির তুলনামূলক চিত্র : 
২০২৪ সালের সিপিআই অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র ভুটানের স্কোর ২০২৩ সালের তুলনায় ৪ পয়েন্ট উন্নতি হয়েছে। অবশিষ্ট সাতটি দেশের স্কোরই ১ থেকে ৩ পয়েন্ট অবনমন হয়েছে। এর মধ্যে আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ ৩ পয়েন্ট, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ২ পয়েন্ট এবং বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও মালদ্বীপের স্কোর ১ পয়েন্ট করে অবনতি হয়েছে। ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী এ বছর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু ভুটান ও নেপালের অবস্থানের যথাক্রমে ৮ ধাপ ও ১ ধাপ উন্নতি হয়েছে এবং অবশিষ্ট ছয়টি দেশের অবস্থানের ২ থেকে ৬ ধাপ পর্যন্ত অবনতি হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার ৬ ধাপ, আফগানিস্তান, ভারত ও মালদ্বীপের ৩ ধাপ এবং বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের অবস্থানের ২ ধাপ অবনমন হয়েছে।

বৈশ্বিক চিত্র : সবচেয়ে বেশি ও সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ সিপিআই অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বৈশ্বিকভাবে ৫৬টি দেশের স্কোর ২০২৩ সালের তুলনায় বেড়েছে। কমেছে ৯৩টি দেশের স্কোর এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩১টি দেশের স্কোর। সূচকের ০ থেকে ১০০ স্কেলে কোনো দেশই শতভাগ স্কোর অর্জন করেনি। বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি দেশ এ বছর ৫০-এর কম স্কোর পেয়েছে, আর ৫৬ শতাংশ দেশের স্কোর বৈশ্বিক গড় স্কোর ৪৩-এর চেয়ে কম। সূচকে ২০২৪ সালে ৯০ স্কোর পেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে ডেনমার্ক, ৮৮ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ফিনল্যান্ড ও ৮৪ স্কোর পেয়ে তৃতীয় স্থানে সিঙ্গাপুর। অন্যদিকে ৮ স্কোর নিয়ে তালিকার সর্বনিম্নে অবস্থান করছে দক্ষিণ সুদান। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা সোমালিয়া ও ভেনেজুয়েলার স্কোর যথাক্রমে ৯ ও ১০।

বাংলাদেশের মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত নয়, ভুক্তভোগী মাত্র : 
সিপিআই ২০২৪ অনুযায়ী, ১০০-এর মধ্যে বৈশ্বিক গড় স্কোর ৪৩, যেখানে বাংলাদেশের স্কোর ২৩, যা বৈশ্বিক গড়ে স্কোরের প্রায় অর্ধেক। টিআইবি বলছে, এতে দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা গভীর উদ্বেগজনক বলে প্রতীয়মান হয়। তবে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতার কারণে ‘বাংলাদেশ দুর্নীতিগ্রস্ত বা বাংলাদেশের অধিবাসীরা সবাই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত’—এ ধরনের ব্যাখ্যা ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছে টিআইবি। টিআইবি বলেছে, দুর্নীতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য দূরীকরণ সর্বোপরি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে কঠিনতম অন্তরায়। কিন্তু দেশের আপামর জনগণ দুর্নীতিগ্রস্ত নয়, দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী মাত্র। ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি ও তা প্রতিরোধে ব্যর্থতার কারণে দেশ বা জনগণকে কোনোভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত বলা যাবে না।

টিআইয়ের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের দুর্নীতির ২৪ বছর : 
১৯৯৫ সাল থেকে টিআই বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ করে আসছে। তবে বাংলাদেশ প্রথম তালিকাভুক্ত হয় ২০০১ সালে। সূচকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।

সিপিআই সূচকের বিশ্লেষণ বলছে, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিম্নমুখী যাত্রা সুস্পষ্ট। ২০১২ থেকে সূচকে ব্যবহৃত ১০০ স্কেলে বাংলাদেশের স্কোর ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৫ থেকে ২৮-এর মধ্যে ছিল। ২০২৩-এ এক পয়েন্ট অবনমন হয়ে ২৪ এবং ২০২৪-এ আরো এক পয়েন্ট অবনমন হয়ে ২৩ হয়েছে। সূত্র : কালের কণ্ঠ।