১৯ দেশে ২৭ খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা
- প্রকাশের সময় : ০৬:৫৬:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৩
- / ৬৮ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক : অভ্যন্তরীণ বাজারে স্থিতিশীলতা রক্ষায় অনেক উৎপাদক দেশই পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এটি মাঝে মাধ্যে ঘটলেও ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ প্রবণতা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। খাদ্যপণ্যের বড় উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশগুলো রপ্তানিতে বাড়তি কর আরোপ, ন্যূনতম মূল্য বেঁধে দেওয়া বা রপ্তানি নিষিদ্ধকরণের মতো পদক্ষেপগুলো ব্যাপকভাবে নিতে শুরু করে। এতে সরবরাহ উদ্বেগে বিশ্ববাজারে বেড়ে যায় পণ্যের দাম।
সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের হালানাগাদ খাদ্য নিরাপত্তা প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের বাজারে স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে বাণিজ্যনীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যনীতির কারণে খাদ্যপণ্য, জ্বালানি ও সারের দাম বেড়েছে।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের ১৯টি দেশ ২৭টি খাদ্যপণ্যে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। আরো ১৮টি পণ্যে রপ্তানি সীমিতকরণ পদক্ষেপ নিয়েছে ৯টি দেশ।
ফলে চাল, গম, ভুট্টা, আটা, পেঁয়াজ, চিনি, ভোজ্য তেল, লবণ, ফল, সবজি, মাংসসহ প্রায় সব আবশ্যকীয় পণ্যেই কোনো না কোনো দেশ রপ্তানি নিষিদ্ধ করে রেখেছে।
কোন দেশ কী রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করে। এই দুটি দেশ বিশ্বের দুই বৃহৎ খাদ্যপণ্য রপ্তানিকারক দেশ হওয়ায় যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে সরবরাহ উদ্বেগ বেড়ে যায়। ফলে বিভিন্ন দেশ অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত রাখার তাগিদে বা স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করার মতো বাণিজ্যনীতি আরোপ করতে থাকে।
বিভিন্ন দেশ যেসব পণ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তা হচ্ছে, আফগানিস্তান রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে গম। আলজেরিয়া নিষিদ্ধ করেছে চিনি, পাস্তা, উদ্ভিজ্জ তেল ও গম থেকে উৎপাদিত পণ্য। বাংলাদেশ চাল রপ্তানি বন্ধ রেখেছে। বারকিনো ফাসো মিলেট, ময়দা ও ভুট্টার আটা রপ্তানি বন্ধ রেখেছে। ক্যামেরন বন্ধ রেখেছে খাদ্যশস্য ও উদ্ভিজ্জ তেল।
চীন রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে ভুট্টার ময়দা। ভারত রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে ভাঙা চাল, গম, চিনি, নন বাসমতি চাল, আটা, ময়দা ও গমের গুঁড়ো। কসোভো রপ্তানি বন্ধ রেখেছে গম, ভুট্টা, আটা, উদ্ভিজ্জ তেল, লবণ ও চিনি। কুয়েত রপ্তানি বন্ধ রেখেছে খাদ্যশস্য, উদ্ভিজ্জ তেল ও মুরগির মাংস। লেবানন রপ্তানি বন্ধ রেখেছে প্রক্রিয়াজাত ফল, সবজি, কারখানায় উৎপাদিত শস্যপণ্য, চিনি ও ব্রেড।
মরক্কো নিষিদ্ধ রেখেছে টমেটো, পেঁয়াজ ও আলু। পাকিস্তান রপ্তানি বন্ধ রেখেছে চিনি। রাশিয়া বন্ধ রেখেছে চাল ও চাল ভাঙানো শস্যদানা। সার্বিয়া রপ্তানি বন্ধ রেখেছে ভুট্টা ও সূর্যমুখী তেল। তিউনেশিয়া রপ্তানি বন্ধ রেখেছে ফল ও সবজি। তুরস্ক রপ্তানি বন্ধ রেখেছে রান্নার তেল, মটরশুঁটি, মসুর ডাল, গরুর মাংস, ভেড়ার মাংস ও ছাগলের মাংস। আর্জেন্টিনা বন্ধ রেখেছে গরুর মাংস। আজারবাইজান বন্ধ রেখেছে পেঁয়াজ। বেলারুশ বন্ধ রেখেছে আপেল, বাঁধাকপি ও পেঁয়াজ।
চালের বাজারে প্রভাব
বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী ভারত একাই এক ডজনের বেশি পণ্যে রপ্তানি সীমিতকরণ বা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। বিশ্বের শীর্ষ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত। দেশটি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ভাঙা চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করে, আবার ২০২৩ সালের জুলাইতে নন বাসমতি চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করে।
বিশ্ববাজারে এর কী প্রভাব পড়েছে এ নিয়ে আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চালের বিশ্ববাজারে ভারতের অংশগ্রহণ প্রায় ৪০ শতাংশ। ২০২২ সালে দেশটি বিশ্বের ১৪০টি দেশে দুই কোটি ২০ লাখ টন চাল রপ্তানি করে। কিন্তু গত জুলাইতে দেশটি চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর বিশ্ববাজারে চালের দাম বেড়ে যায় ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ। এমনকি চাল সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগে পড়ে আমদানিকারক দেশগুলো। কারণ বিশ্বের কয়েক ডজন দেশ, বিশেষ করে এশিয়া ও সাব-সাহারা আফ্রিকার দেশগুলো ভারতীয় চালের ওপর নির্ভরশীল। যদিও ভারত বলেছে, অভ্যন্তরীণ বাজারে স্থিতিশীল রাখতে তারা বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নিয়েছে।
পণ্য বাজারে প্রভাব
বিশ্বব্যাংকের এক ব্লগ পোস্টে বলা হয়, ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বিশ্বে ৩৪টি দেশ খাদ্য ও সারে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বা সীমিতকরণ পদক্ষেপ নেয়। এতে এ সময় চাল, গম ও সয়াবিনের দাম ৯ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়। এতে বলা হয়, ২০০৮ থেকে ২০১২ সালে খাদ্যসংকটের সময় ৩৬টি দেশ রপ্তানি নিষিদ্ধ বা সীমিত করে। এতে চাল ও গমের দাম ৩০ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়। ওইসিডির এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে বাণিজ্য যদি ১ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ওই পণ্যের দাম ০.৪ শতাংশ থেকে ১.২ শতাংশ বেড়ে যায়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়েরে-ওলিভার গৌরিনকাস বলেন, ‘খাদ্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার ক্ষেত্রে এসব বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা বড় ভূমিকা রাখে। তা ছাড়া একটি দেশ নিষেধাজ্ঞা দিলে আরেকটি দেশও তার প্রক্রিয়ায় আরেকটি পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। তাই আমরা রপ্তানি সীমিতকরণ বা নিষেধাজ্ঞাকে নিরুৎসাহ করি। কারণ এসব বিশ্ববাজারের জন্য ক্ষতিকর।’ সত্র : কালের কণ্ঠ
হককথা/নাছরিন