নিউইয়র্ক ০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

১০০ ট্রিলিয়নের অর্থনীতি, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের ফারাক কতটুকু?

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৭:২৫:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৫২ বার পঠিত

চলতি বছরের শেষ নাগাদ ১০৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাতে পারে বিশ্ব অর্থনীতি। ছবি: সংগৃহীত

হককথা ডেস্ক : করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা অর্থনৈতিক বাধা পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অনুমান, চলতি বছরে শেষ নাগাদ ১০৫ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলারে পৌঁছাবে বিশ্ব অর্থনীতি। এ তালিকায় প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিশ্বের দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।

সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট। এতে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি বছর শেষে বাংলাদেশের জিডিপির পরিমাণ ৪২১ বিলিয়ন আমেরিকান ডলারে পৌঁছাবে। কয়েক দশক আগেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল ১০০ বিলিয়ন ডলারের কম। সেখান থেকে প্রায় অর্ধ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এখন। এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের লক্ষ্য ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির মাইলফলক ছোঁয়া।

ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে বিশ্বের গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট (জিডিপি) পৌঁছাবে ১০৫ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলারে। যা গত বছরের তুলনায় ৫ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলার বেশি। এতে বৈশ্বিক জিডিপি বাড়বে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি সামঞ্জস্যপূর্ণ শর্তে, বাড়বে ২ দশমিক ৮ শতাংশ।

২০২৩ সালেও বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষস্থান ধরে রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। বছর শেষে দেশটির জিডিপি ২৬ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। যা তালিকার ১৭তম দেশ ইন্দোনেশিয়া থেকে ১৯১তম দেশ টুভালু পর্যন্ত ১৭৪টি দেশের মোট জিডিপির চেয়ে বেশি।

২০২৩ সালে বৈশ্বিক জিডিপি বাড়বে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। ছবি: ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট

বিশ্ব অর্থনীতির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা চীন অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে পিঁছিয়ে আছে প্রায় সাড়ে ৭ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলার। ২০২৩ সালে দেশটির সাম্ভাব্য জিডিপির পরিমাণ ধরা হয়েছে ১৯ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার।

চলতি বছর জিডিপিতে চীনের সাম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ১ শতাংশ, যেখানে মার্কিন প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এর ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালের মধ্যে চীনের জিডিপি আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছে আইএমএফ।

আর ২০২৩ সালে ৩ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে ভারতের জিডিপি। যা যুক্তরাজ্যকে ছাপিয়ে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত করবে ভারতকে। এছাড়া রাশিয়া, কানাডা এবং সৌদি আরবের মতো দেশের জিডিপি চলতি বছর শেষে কমবে বলে আশঙ্কা করছে আইএমএফ।

চলতি বছর চরম অস্থিরতা এবং দুর্যোগের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে আকাশচুম্বী, সুদের হার বৃদ্ধিতে ভেঙেছে একের পর এক রেকর্ড। এতো কিছুর পরেও এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছর এর আকার চলতি বছরকে আনায়াসে ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হবে।

এদিকে চলতি বছর শেষে বাংলাদেশের জিডিপির পরিমাণ ৪২১ বিলিয়ন আমেরিকান ডলারে পৌঁছাবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৭তম। কয়েক দশক আগেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল ১০০ বিলিয়ন ডলারের কম। সেখান থেকে প্রায় অর্ধ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এখন। এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের লক্ষ্য ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির মাইলফলক ছোঁয়া।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের রাজনীতি জটিল অবস্থা ধারণ করায় অনেকেই ভেবেছিলেন দক্ষিণ এশিয়ায় একটি নতুন দেশের জন্ম হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মাজাভাঙা অবস্থায় এ দেশ বেশিদূর যেতে পারবে না। তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে শুরু করে নানা কিসিমের নেতিবাচক তকমা লেগেছিল বাংলাদেশের গায়ে।

কিন্তু বিগত এক দশকে বাংলাদেশ দেখিয়েছে, কীভাবে এগিয়ে যেতে হয়। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্র এই ব-দ্বীপ এগিয়ে গেছে অন্যান্য শক্তিশালী অনেক দেশকে পেছনে ফেলে। দেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব থেকে দেখা যায়, ১৯৭২-৮০ সালে বাংলাদেশের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ, ১৯৮১-৯০ সালে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ১৯৯১-২০০০ সালে জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। শুধু ২০১৯ সালে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ।

বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬-২১ সালে বৈশ্বিক জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৯ শতাংশ। অন্যদিকে এ সময়ে বাংলাদেশের জিডিপির হার ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ যা ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির তুলনায় বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালে দেশের মোট জিডিপি ছিল ৪৬০ বিলিয়ন ডলার, মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৮৭ ডলার। তবে বিশ্বমানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সমীক্ষাগুলো শুধু জিডিপি ও মাথাপিছু মানের হিসাবে একটি দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে পরিমাপ করে না। এসব উপাত্তের পাশাপাশি একটি দেশের লিঙ্গবৈষম্য, মাতৃ মৃত্যুহার, শিশু মৃত্যুহার, সামাজিক নিরাপত্তা সূচক ও শিক্ষার হারের ঊর্ধ্বমুখী আচরণ জরুরি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক ম্যানেজমেন্ট কনসালটিং ফার্ম বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের (বিসিজি) এক প্রতিবেদনে উদ্ধৃতি দিয়ে গত বছরের শেষ দিকে ব্লুমবার্গ জানায়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ভোক্তা বাজার বিশ্বের নবম বৃহত্তম বাজার হতে চলেছে। এছাড়া ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে একটি দ্রুত সম্প্রসারিত মধ্যম এবং ধনিক শ্রেণি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনীতির মজবুত ভিতের পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে তরুণ একটি কর্মী বাহিনী গড়ে উঠবে, যাদের গড় বয়স হবে ২৮ বছর। বিসিজির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশটি (বাংলাদেশ) তার প্রতিবেশী চীন কিংবা ভারতের কারণে দৃষ্টির আড়ালে থাকতে পারে। তবে অর্থনীতির দিক থেকে এ অঞ্চলে বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থান সমুন্নতই থাকবে।

বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে ২০১৫ সালে। এই অর্জন ভারতের চেয়ে পাঁচ বছর পর এলেও বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি এরই মধ্যে দিল্লির চেয়ে বেশি। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে বাংলাদেশ।

তবে সেই লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশকে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বলে মত বিশ্লেষকদের। বিসিজির তথ্যানুসারে, তারল্য সংকটের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপ স্বল্প মেয়াদে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে। বিসিজির সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৫৭ শতাংশ বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের চেয়ে ভালো জীবন পাবে। কারণ, দেশটি এখন দক্ষতাভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।’

সবশেষে বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অর্থনীতিতে স্বল্পমেয়াদি কিছু অস্থিরতা দেখা দিলেও এটি নিশ্চিত যে, বাংলাদেশের স্থিতিশীল অর্থনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদে প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত থাকবে।’ সূত্র : সময় সংবাদ

হককথা/নাছরিন

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

১০০ ট্রিলিয়নের অর্থনীতি, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের ফারাক কতটুকু?

প্রকাশের সময় : ০৭:২৫:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৩

হককথা ডেস্ক : করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা অর্থনৈতিক বাধা পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অনুমান, চলতি বছরে শেষ নাগাদ ১০৫ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলারে পৌঁছাবে বিশ্ব অর্থনীতি। এ তালিকায় প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিশ্বের দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।

সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট। এতে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি বছর শেষে বাংলাদেশের জিডিপির পরিমাণ ৪২১ বিলিয়ন আমেরিকান ডলারে পৌঁছাবে। কয়েক দশক আগেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল ১০০ বিলিয়ন ডলারের কম। সেখান থেকে প্রায় অর্ধ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এখন। এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের লক্ষ্য ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির মাইলফলক ছোঁয়া।

ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে বিশ্বের গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট (জিডিপি) পৌঁছাবে ১০৫ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলারে। যা গত বছরের তুলনায় ৫ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলার বেশি। এতে বৈশ্বিক জিডিপি বাড়বে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি সামঞ্জস্যপূর্ণ শর্তে, বাড়বে ২ দশমিক ৮ শতাংশ।

২০২৩ সালেও বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষস্থান ধরে রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। বছর শেষে দেশটির জিডিপি ২৬ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। যা তালিকার ১৭তম দেশ ইন্দোনেশিয়া থেকে ১৯১তম দেশ টুভালু পর্যন্ত ১৭৪টি দেশের মোট জিডিপির চেয়ে বেশি।

২০২৩ সালে বৈশ্বিক জিডিপি বাড়বে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। ছবি: ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট

বিশ্ব অর্থনীতির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা চীন অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে পিঁছিয়ে আছে প্রায় সাড়ে ৭ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলার। ২০২৩ সালে দেশটির সাম্ভাব্য জিডিপির পরিমাণ ধরা হয়েছে ১৯ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার।

চলতি বছর জিডিপিতে চীনের সাম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ১ শতাংশ, যেখানে মার্কিন প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এর ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালের মধ্যে চীনের জিডিপি আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছে আইএমএফ।

আর ২০২৩ সালে ৩ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে ভারতের জিডিপি। যা যুক্তরাজ্যকে ছাপিয়ে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত করবে ভারতকে। এছাড়া রাশিয়া, কানাডা এবং সৌদি আরবের মতো দেশের জিডিপি চলতি বছর শেষে কমবে বলে আশঙ্কা করছে আইএমএফ।

চলতি বছর চরম অস্থিরতা এবং দুর্যোগের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে আকাশচুম্বী, সুদের হার বৃদ্ধিতে ভেঙেছে একের পর এক রেকর্ড। এতো কিছুর পরেও এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছর এর আকার চলতি বছরকে আনায়াসে ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হবে।

এদিকে চলতি বছর শেষে বাংলাদেশের জিডিপির পরিমাণ ৪২১ বিলিয়ন আমেরিকান ডলারে পৌঁছাবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৭তম। কয়েক দশক আগেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল ১০০ বিলিয়ন ডলারের কম। সেখান থেকে প্রায় অর্ধ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এখন। এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের লক্ষ্য ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির মাইলফলক ছোঁয়া।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের রাজনীতি জটিল অবস্থা ধারণ করায় অনেকেই ভেবেছিলেন দক্ষিণ এশিয়ায় একটি নতুন দেশের জন্ম হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মাজাভাঙা অবস্থায় এ দেশ বেশিদূর যেতে পারবে না। তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে শুরু করে নানা কিসিমের নেতিবাচক তকমা লেগেছিল বাংলাদেশের গায়ে।

কিন্তু বিগত এক দশকে বাংলাদেশ দেখিয়েছে, কীভাবে এগিয়ে যেতে হয়। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্র এই ব-দ্বীপ এগিয়ে গেছে অন্যান্য শক্তিশালী অনেক দেশকে পেছনে ফেলে। দেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব থেকে দেখা যায়, ১৯৭২-৮০ সালে বাংলাদেশের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ, ১৯৮১-৯০ সালে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ১৯৯১-২০০০ সালে জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। শুধু ২০১৯ সালে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ।

বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬-২১ সালে বৈশ্বিক জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৯ শতাংশ। অন্যদিকে এ সময়ে বাংলাদেশের জিডিপির হার ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ যা ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির তুলনায় বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালে দেশের মোট জিডিপি ছিল ৪৬০ বিলিয়ন ডলার, মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৮৭ ডলার। তবে বিশ্বমানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সমীক্ষাগুলো শুধু জিডিপি ও মাথাপিছু মানের হিসাবে একটি দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে পরিমাপ করে না। এসব উপাত্তের পাশাপাশি একটি দেশের লিঙ্গবৈষম্য, মাতৃ মৃত্যুহার, শিশু মৃত্যুহার, সামাজিক নিরাপত্তা সূচক ও শিক্ষার হারের ঊর্ধ্বমুখী আচরণ জরুরি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক ম্যানেজমেন্ট কনসালটিং ফার্ম বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের (বিসিজি) এক প্রতিবেদনে উদ্ধৃতি দিয়ে গত বছরের শেষ দিকে ব্লুমবার্গ জানায়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ভোক্তা বাজার বিশ্বের নবম বৃহত্তম বাজার হতে চলেছে। এছাড়া ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে একটি দ্রুত সম্প্রসারিত মধ্যম এবং ধনিক শ্রেণি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনীতির মজবুত ভিতের পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে তরুণ একটি কর্মী বাহিনী গড়ে উঠবে, যাদের গড় বয়স হবে ২৮ বছর। বিসিজির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশটি (বাংলাদেশ) তার প্রতিবেশী চীন কিংবা ভারতের কারণে দৃষ্টির আড়ালে থাকতে পারে। তবে অর্থনীতির দিক থেকে এ অঞ্চলে বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থান সমুন্নতই থাকবে।

বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে ২০১৫ সালে। এই অর্জন ভারতের চেয়ে পাঁচ বছর পর এলেও বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি এরই মধ্যে দিল্লির চেয়ে বেশি। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে বাংলাদেশ।

তবে সেই লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশকে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বলে মত বিশ্লেষকদের। বিসিজির তথ্যানুসারে, তারল্য সংকটের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপ স্বল্প মেয়াদে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে। বিসিজির সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৫৭ শতাংশ বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের চেয়ে ভালো জীবন পাবে। কারণ, দেশটি এখন দক্ষতাভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।’

সবশেষে বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অর্থনীতিতে স্বল্পমেয়াদি কিছু অস্থিরতা দেখা দিলেও এটি নিশ্চিত যে, বাংলাদেশের স্থিতিশীল অর্থনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদে প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত থাকবে।’ সূত্র : সময় সংবাদ

হককথা/নাছরিন