রেমিট্যান্সে বড় ধাক্কা, ৪১ মাসে সর্বনিম্ন
- প্রকাশের সময় : ০৬:০২:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ অক্টোবর ২০২৩
- / ১৯ বার পঠিত
অর্থনীতি ডেস্ক : চলমান ডলার সংকটকালে প্রবাস আয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে। সদ্যোবিদায়ি সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাস আয় এসেছে ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (এক টাকা সমান ১০৯.৫০ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ১৪ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। এটি গত প্রায় সাড়ে তিন বছর বা ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স।
এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এসেছিল ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে এসেছে ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। এই অঙ্ক আগের বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ১৯ কোটি ৫৯ লাখ বা ১২.৭২ শতাংশ কম। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত মাসে দেশে যে প্রবাস আয় এসেছে, তা গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ কম এবং গত আগস্টের তুলনায় এই আয় প্রায় ১৬ শতাংশ কম। আর ২০২০ সালের জুলাইয়ে আসা সবচেয়ে বেশি প্রবাস আয়ের হিসাব বিবেচনায় নিলে গত মাসে আয় কমেছে ৪৮ শতাংশের বেশি। ডলার সংকটের এই সময়ে প্রবাস আয়ের এই পতনকে চলমান সংকটে বড় দুঃসংবাদ বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
কেন কমল
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলাবাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি থাকলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়।
আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে, তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজারে ডলারের দাম ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
তাই ব্যাংকিং চ্যানেলের বদলে হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর প্রবণতায় রেমিট্যান্স কমছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁরা বলছেন, গত দুই বছরে প্রবাসে কর্মসংস্থান হয়েছে ২০ লাখ কর্মীর।
দেশের বাইরে যখন প্রবাসী বাড়ছে, তখন রেমিট্যান্সের নিম্নমুখী প্রবণতাকে উদ্বেগজনক মনে করছেন তাঁরা।
অর্থনীতিবিদরা যা বলছেন
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ সালেহউদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা বাড়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমে গেছে। তা ছাড়া যারা অবস্থাসম্পন্ন প্রবাসী তাঁরা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন, কেউ কেউ কম পাঠাচ্ছেন। বিনিময় হার নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘন ঘন নীতি পরিবর্তনও রেমিট্যান্সকে প্রভাবিত করছে।’
জানতে চাইলে পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘খোলাবাজার ও ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দামের পার্থক্য আবার বেড়ে ৮ থেকে ১০ টাকা হয়ে গেছে। এ কারণে হুন্ডির প্রবণতা বাড়ছে। বাজারে টাকার প্রতি আস্থা বাড়ছে না। কেউ পরে আরো বেশি টাকা পাওয়ার আশায় রেমিট্যান্স কম পাঠাচ্ছে।’
সাত ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, বিদায়ি সেপ্টেম্বর মাসে ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার এসেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১ কোটি ৮৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১৮ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫০ লাখ ৬০ হাজার ডলার। তবে আলোচিত সময়ে সাত ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক; বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
এর আগে গত জুলাই মাসে ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলারের (১.৯৭ বিলিয়ন ডলার) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগস্টে এসেছিল ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের প্রবাস আয়। গত জুন মাসে রেকর্ড ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার (২.১৯ বিলিয়ন ডলার) প্রবাস আয় বা রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। একক মাস হিসেবে যেটি ছিল প্রায় তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেকর্ড প্রবাস আয় এসেছিল।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, ২০২০ সালে হুন্ডি বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে সর্বোচ্চসংখ্যক রেমিট্যান্স এসেছিল। বিদায়ি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন দুই হাজার ১৬১ কোটি আমেরিকান
ডলারের রেমিট্যান্স। এটি এযাবৎকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে করোনাকালে ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। সূত্র : কালেরকণ্ঠ