নিউইয়র্ক ১২:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়লে অর্থনীতিতে ধস নামার শঙ্কা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:০১:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৪৯ বার পঠিত

ফাইল ছবি

হককথা ডেস্ক :  বৈশ্বিক মন্দা এবং দেশে ডলারের তীব্র সংকটে অর্থনীতি এমনিতেই নাজুক। ইতোমধ্যে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পড়েছে দেশ। এ অবস্থায় অস্থিরতা আরও বাড়লে অর্থনীতিতে ধস নামার আশঙ্কা করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা।

তারা বলেছেন, অর্থনীতির এ দুঃসময়ে রাজনৈতিক সমঝোতা যেখানে জরুরি, সেখানে অস্থিরতা বাড়লে অর্থনীতিতে শুধু ধসই নামবে না, আরও অনেক কিছু হতে পারে। কারণ, পরপর তিনটি একই ধরনের নির্বাচন বিদেশিরা মানবে না। এটি ইতোমধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এতে দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি বৈদেশিক ও সামাজিক খাতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

তারা আরও বলেছেন, দেশের স্বার্থে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের কোনো বিকল্প নেই। তা না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। এজন্য দ্রুত রাজনৈতিক সমঝোতা জরুরি।

এদিকে অর্থনীতির কথা চিন্তা করে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংস কর্মসূচি পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা। তাদের মতে, অর্থনীতি ও রাজনীতি একে অন্যের পরিপূরক। তাই সংহিস কর্মসূচি দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করলে পুরো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যার বোঝা দেশের সব মানুষকে বহন করতে হবে। তফশিল ঘোষণার পর অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে এসব পরিহারের আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, বুধবার রাতে নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেছে। এ তফশিল অনুযায়ী আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে একতরফা তফশিল ঘোষণা করা হলে তারা লাগাতার হরতাল-অবরোধসহ আরও কঠোর কর্মসূচি দেবেন। এ ধরনের কর্মসূচিতে অর্থনীতি আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মনে করেন, করোনার সময়ে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুনরুদ্ধার করার আগেই রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে শুরু হয় বৈশ্বিক সংকট। এর প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়ে যায়। দেশের আমদানি ব্যয় বেড়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে। দেশেও সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে মূল্যস্ফীতির হার। একই সঙ্গে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এতে দেশের প্রায় সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়লে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা সতর্ক করে বলেছেন, এতে পুরো দেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, বৈশ্বিক ও দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতির অবস্থা এমনিতেই খারাপ। এর মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই সহিংস হয়ে উঠছে। সব ধরনের পরিবহণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে মানুষ ও পণ্যের বিপণন ব্যাহত হচ্ছে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও বাধাগ্রস্ত হবে। ফলে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার আরও হ্রাস পাবে।

তিনি আরও বলেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে বিনিয়োগ ব্যাহত হবে। করোনা, বৈশ্বিক মন্দা ও ডলার সংকটের কারণে এমনিতেই বিনিয়োগ কমে গেছে। অস্থিরতা চলতে থাকলে বিনিয়োগ আরও কমবে। দেশে বিনিয়োগের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ব্যাংক। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে গেছে। এর মানে হচ্ছে, বিনিয়োগও কম হচ্ছে। বিনিয়োগ বাড়লে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহও বাড়ে। বিনিয়োগ কমার কারণে বেসরকারি খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। এতে কর্মসংস্থানের হার কমবে। সব মিলে প্রবৃদ্ধির হার কমে যাবে।

তিনি আরও বলেন, কোনো দেশে বিনিয়োগ বাড়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, সন্তোষজনক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এসব না থাকলে বিনিয়োগ বাড়বে না। বিনিয়োগ না বাড়লে গতিশীল হবে না অর্থনীতি। আর অর্থনীতি গতিশীল না হলে বেকারদের ভালো কর্মসংস্থান হবে না। উন্নতি হবে না মানুষের জীবনমানের।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম বলেছেন, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা লাগামহীনভাবে বাড়লে অর্থনীতিতে ধস নেমে যাবে। বৈশ্বিক মন্দা ও দেশে ডলারের তীব্র সংকটের কারণে অর্থনীতি এমনিতেই কঠিন সংকটের মধ্যে দিয়ে চলছে। করোনার কারণে অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েনি। এ অবস্থায় জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়েছে। চলমান অস্থিরতা আরও বাড়লে দেশের অর্থনীতি ধসে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন একতরফা হলে বা অংশগ্রহণমূলক না হলে শুধু অর্থনীতিতে নয়, আরও বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব আসতে পারে দেশের ওপর। বিদেশিরা একতরফা নির্বাচনকে মেনে নেবে না। তখন অর্থনীতিতে নানা জটিলতা দেখা দেবে।

তিনি আরও বলেন, দেশে বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সমঝোতার কোনো বিকল্প নেই। সমঝোতার মাধ্যমে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এমনিতেই অর্থনৈতিক চাপ চলছে, তার ওপর বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটা বলার জন্য অর্থনীতিবিদ হওয়ার প্রয়োজন নেই। এ অবস্থায় চলমান ডলার সংকট, মূল্যস্ফীতি, ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরের সমস্যা এবং খেলাপি ঋণসহ জটিল সংকটগুলো মোকাবিলায় কতটা মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হবে, সেটিও বড় প্রশ্ন। এখন বিষয়টি হলো বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কতটা সংঘাতময়, কতটা ব্যাপক, গভীর ও কতটা স্থায়ী হয়, তার ওপরই নির্ভর করবে আর্থিক ক্ষতি কতটা হবে। তবে স্বাভাবিকভাবেই দেখা যাচ্ছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সব পক্ষের আন্তরিকতা দরকার। কেননা ২০১৪ সালের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সংস্থা থেকে বলা হয়েছিল, সে সময়ে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছিল।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, রাজনীতি ও অর্থনীতি একে অন্যের পরিপূরক। তাই তফশিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলোর এমন কোনো কর্মসূচি দেওয়া উচিত হবে না, যাতে রপ্তানিমুখী শিল্প তথা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এমনিতে বৈশ্বিক কারণে তৈরি পোশাকশিল্প একটি কঠিন সময় পার করছে, মূল্যস্ফীতির কারণে রপ্তানির অর্ডার কমে যাচ্ছে। গত কয়েকদিনের শ্রমিক অসন্তোষের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে অর্ডার হারানোর আশঙ্কা তৈরি হবে। কর্মসূচি দেওয়ার আগে রাজনীতিবিদরা দেশের অর্থনীতির কথা ভাববেন বলে আশা করেন এ ব্যবসায়ী নেতা।

তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা এমন কোনো কর্মসূচি প্রত্যাশা করে না, যাতে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কখনোই কোনো সংহিস কর্মসূচি প্রত্যাশিত নয়, হোক সেটা নির্বাচনকেন্দ্রিক বা অন্য কোনো কারণে। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি দেওয়ার আগে অর্থনীতির কথা ভাবা উচিত। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদেশি ক্রেতারা আগের দেওয়া অর্ডার সময়মতো ডেলিভারি পাবে কি না, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন, নতুন অর্ডার তো দিচ্ছেই না। তাই আগামী তিন মাসে রপ্তানিমুখী শিল্প কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। সার্বিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থনীতির বিষয় মাথায় রেখে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক বলেন, সত্যি বলতে ব্যবসায়ীরা অতল সমুদ্রে আছে, কেউ ভালো নেই। সব খাতেই একই অবস্থা। দেশ এখন ক্রান্তিলগ্ন সময় পার করছে। তাই বৃহত্তর স্বার্থে দলমতনির্বিশেষে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে একসঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিয়ে দেশকে বাঁচানো উচিত। কারও সঙ্গে কারও মতানৈক্য থাকলে সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। যে কোনো দলেরই কর্মসূচি দেওয়ার আগে দেশের অর্থনীতির কথা চিন্তা করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। সূত্র : যুগান্তর

হককথা/নাছরিন

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়লে অর্থনীতিতে ধস নামার শঙ্কা

প্রকাশের সময় : ০৮:০১:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩

হককথা ডেস্ক :  বৈশ্বিক মন্দা এবং দেশে ডলারের তীব্র সংকটে অর্থনীতি এমনিতেই নাজুক। ইতোমধ্যে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পড়েছে দেশ। এ অবস্থায় অস্থিরতা আরও বাড়লে অর্থনীতিতে ধস নামার আশঙ্কা করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা।

তারা বলেছেন, অর্থনীতির এ দুঃসময়ে রাজনৈতিক সমঝোতা যেখানে জরুরি, সেখানে অস্থিরতা বাড়লে অর্থনীতিতে শুধু ধসই নামবে না, আরও অনেক কিছু হতে পারে। কারণ, পরপর তিনটি একই ধরনের নির্বাচন বিদেশিরা মানবে না। এটি ইতোমধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এতে দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি বৈদেশিক ও সামাজিক খাতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

তারা আরও বলেছেন, দেশের স্বার্থে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের কোনো বিকল্প নেই। তা না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। এজন্য দ্রুত রাজনৈতিক সমঝোতা জরুরি।

এদিকে অর্থনীতির কথা চিন্তা করে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংস কর্মসূচি পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা। তাদের মতে, অর্থনীতি ও রাজনীতি একে অন্যের পরিপূরক। তাই সংহিস কর্মসূচি দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করলে পুরো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যার বোঝা দেশের সব মানুষকে বহন করতে হবে। তফশিল ঘোষণার পর অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে এসব পরিহারের আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, বুধবার রাতে নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেছে। এ তফশিল অনুযায়ী আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে একতরফা তফশিল ঘোষণা করা হলে তারা লাগাতার হরতাল-অবরোধসহ আরও কঠোর কর্মসূচি দেবেন। এ ধরনের কর্মসূচিতে অর্থনীতি আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মনে করেন, করোনার সময়ে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুনরুদ্ধার করার আগেই রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে শুরু হয় বৈশ্বিক সংকট। এর প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়ে যায়। দেশের আমদানি ব্যয় বেড়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে। দেশেও সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে মূল্যস্ফীতির হার। একই সঙ্গে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এতে দেশের প্রায় সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়লে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা সতর্ক করে বলেছেন, এতে পুরো দেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, বৈশ্বিক ও দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতির অবস্থা এমনিতেই খারাপ। এর মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই সহিংস হয়ে উঠছে। সব ধরনের পরিবহণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে মানুষ ও পণ্যের বিপণন ব্যাহত হচ্ছে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও বাধাগ্রস্ত হবে। ফলে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার আরও হ্রাস পাবে।

তিনি আরও বলেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে বিনিয়োগ ব্যাহত হবে। করোনা, বৈশ্বিক মন্দা ও ডলার সংকটের কারণে এমনিতেই বিনিয়োগ কমে গেছে। অস্থিরতা চলতে থাকলে বিনিয়োগ আরও কমবে। দেশে বিনিয়োগের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ব্যাংক। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে গেছে। এর মানে হচ্ছে, বিনিয়োগও কম হচ্ছে। বিনিয়োগ বাড়লে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহও বাড়ে। বিনিয়োগ কমার কারণে বেসরকারি খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। এতে কর্মসংস্থানের হার কমবে। সব মিলে প্রবৃদ্ধির হার কমে যাবে।

তিনি আরও বলেন, কোনো দেশে বিনিয়োগ বাড়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, সন্তোষজনক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এসব না থাকলে বিনিয়োগ বাড়বে না। বিনিয়োগ না বাড়লে গতিশীল হবে না অর্থনীতি। আর অর্থনীতি গতিশীল না হলে বেকারদের ভালো কর্মসংস্থান হবে না। উন্নতি হবে না মানুষের জীবনমানের।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম বলেছেন, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা লাগামহীনভাবে বাড়লে অর্থনীতিতে ধস নেমে যাবে। বৈশ্বিক মন্দা ও দেশে ডলারের তীব্র সংকটের কারণে অর্থনীতি এমনিতেই কঠিন সংকটের মধ্যে দিয়ে চলছে। করোনার কারণে অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েনি। এ অবস্থায় জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়েছে। চলমান অস্থিরতা আরও বাড়লে দেশের অর্থনীতি ধসে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন একতরফা হলে বা অংশগ্রহণমূলক না হলে শুধু অর্থনীতিতে নয়, আরও বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব আসতে পারে দেশের ওপর। বিদেশিরা একতরফা নির্বাচনকে মেনে নেবে না। তখন অর্থনীতিতে নানা জটিলতা দেখা দেবে।

তিনি আরও বলেন, দেশে বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সমঝোতার কোনো বিকল্প নেই। সমঝোতার মাধ্যমে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এমনিতেই অর্থনৈতিক চাপ চলছে, তার ওপর বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটা বলার জন্য অর্থনীতিবিদ হওয়ার প্রয়োজন নেই। এ অবস্থায় চলমান ডলার সংকট, মূল্যস্ফীতি, ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরের সমস্যা এবং খেলাপি ঋণসহ জটিল সংকটগুলো মোকাবিলায় কতটা মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হবে, সেটিও বড় প্রশ্ন। এখন বিষয়টি হলো বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কতটা সংঘাতময়, কতটা ব্যাপক, গভীর ও কতটা স্থায়ী হয়, তার ওপরই নির্ভর করবে আর্থিক ক্ষতি কতটা হবে। তবে স্বাভাবিকভাবেই দেখা যাচ্ছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সব পক্ষের আন্তরিকতা দরকার। কেননা ২০১৪ সালের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সংস্থা থেকে বলা হয়েছিল, সে সময়ে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছিল।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, রাজনীতি ও অর্থনীতি একে অন্যের পরিপূরক। তাই তফশিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলোর এমন কোনো কর্মসূচি দেওয়া উচিত হবে না, যাতে রপ্তানিমুখী শিল্প তথা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এমনিতে বৈশ্বিক কারণে তৈরি পোশাকশিল্প একটি কঠিন সময় পার করছে, মূল্যস্ফীতির কারণে রপ্তানির অর্ডার কমে যাচ্ছে। গত কয়েকদিনের শ্রমিক অসন্তোষের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে অর্ডার হারানোর আশঙ্কা তৈরি হবে। কর্মসূচি দেওয়ার আগে রাজনীতিবিদরা দেশের অর্থনীতির কথা ভাববেন বলে আশা করেন এ ব্যবসায়ী নেতা।

তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা এমন কোনো কর্মসূচি প্রত্যাশা করে না, যাতে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কখনোই কোনো সংহিস কর্মসূচি প্রত্যাশিত নয়, হোক সেটা নির্বাচনকেন্দ্রিক বা অন্য কোনো কারণে। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি দেওয়ার আগে অর্থনীতির কথা ভাবা উচিত। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদেশি ক্রেতারা আগের দেওয়া অর্ডার সময়মতো ডেলিভারি পাবে কি না, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন, নতুন অর্ডার তো দিচ্ছেই না। তাই আগামী তিন মাসে রপ্তানিমুখী শিল্প কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। সার্বিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থনীতির বিষয় মাথায় রেখে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক বলেন, সত্যি বলতে ব্যবসায়ীরা অতল সমুদ্রে আছে, কেউ ভালো নেই। সব খাতেই একই অবস্থা। দেশ এখন ক্রান্তিলগ্ন সময় পার করছে। তাই বৃহত্তর স্বার্থে দলমতনির্বিশেষে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে একসঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিয়ে দেশকে বাঁচানো উচিত। কারও সঙ্গে কারও মতানৈক্য থাকলে সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। যে কোনো দলেরই কর্মসূচি দেওয়ার আগে দেশের অর্থনীতির কথা চিন্তা করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। সূত্র : যুগান্তর

হককথা/নাছরিন