বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দুর্যোগ ক্ষতি কমাতে হবে

- প্রকাশের সময় : ০৪:৪০:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ জুন ২০২৩
- / ১১২ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক : এ জন্য দেশের ১০৬টি ঝুঁকিপূর্ণ কারখানার উন্নয়ন করতে হবে। বর্তমানে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বছরে প্রায় ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় যেসব তহবিল গঠন করা হয় তার টাকা দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যয় হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।
শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ’ শীর্ষক জাতীয় সিম্পোজিয়ামে এসব কথা উঠে আসে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং সুপার প্রজক্টে কনসোর্টিয়াম যৌথভাবে এটি আয়োজন করে।
সিম্পোজিয়ামে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, দেশের রফতানি বাজার সম্প্রসারণে কারখানাগুলোকে আরও বেশি সক্ষম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। জরিপ চালান ৫ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ কারখানার মধ্যে ১০৬টি কারখানা যদি নিজেদের উন্নয়ন করতে না পারে তা হলে দেশের বাণিজ্যের স্বার্থে তা বন্ধের সুপারিশ করবে এফবিসিসিআই।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ, তাই শুধু ঢাকাতেই নয় বরং সমগ্র বাংলাদেশের ঝুঁকি মোকাবিলায় একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের তৈরি পোশাক খাতে বিশ্বমানের কমপ্লায়েন্স অনুসরণ করা হচ্ছে এবং শিল্পের অন্যান্য খাতেও এ ধরনের কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা জরুরি এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও অধিদফতরের সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর আহ্বান জানান। সরকার গৃহীত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠন ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে সম্পৃক্তকরণের পাশাপাশি জনগণ ও শিল্প মালিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোরারোপ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, শিল্প খাত আমাদের অর্থনীতির প্রাণ, তাই অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের বৃহত্তর স্বার্থে শিল্পের পাশাপাশি জনজীবনে যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় কার্যকর সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও এর বাস্তবায়ন একান্ত অপরিহার্য।
তিনি জানান, আমাদের জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান প্রায় ৩৬ শতাংশ, এমতাবস্থায় সামগ্রিক অর্থনীতিকে সব ধরনের দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। তথ্যপ্রযুক্তির বর্তমান সময়ে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকবিলায় নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণের কোনো বিকল্প নেই এবং এ ধরনের প্রযুক্তি ও অবকাঠমো নির্মাণে বেসরকারি খাতকে উৎসাহীকরণে আর্থিক ও নীতিসহায়তা একান্ত অপরিহার্য।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে প্রায় ৪০০ স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে, যারা যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করবে এবং সিটি করপোরেশনের পক্ষক্ষহতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মোকাবিলায় প্রশিক্ষণ প্রদান ও ড্রিলের ওপর অধিক হারে মনোনিবেশ করা হচ্ছে। তিনি জানান, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমেই দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব। ‘প্রাইভেট সেক্টর ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টারের (পিইওসি)’ ওয়েবসাইটি দুর্যোগ বিষয়ক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে তা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, জনজীবন ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে শিল্প-কারখানা, অফিস-আদালত ও বসত বাড়ি প্রভৃতি ক্ষেত্রে ফায়ার ড্রিল বাস্তবায়ন এবং বিশেষ করে ঢাকা শহরে অনাকাক্সিক্ষত দুর্যোগ প্রতিরোধ বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য সেবা সংযোগের ম্যাপিং খুবই জরুরি।
তিনি বলেন, তৈরি পোশাক খাতের ফ্যাক্টরিগুলোতে কমপ্লায়েন্সের বিষয়টিকে প্রাধান্য প্রদান করা হয়েছে, ফলে আন্তর্জাতিক মানের কারখানা বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে এবং অন্যান্য শিল্প খাতেও এ ধরনের উদাহরণ অনুসরণ করা প্রয়োজন। এ ছাড়াও বেসরকারি খাতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গ্রহণকে উৎসাহীকরণের লক্ষ্যে এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্বল্পসুদে ঋণ প্রদানসহ প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া নিরাপদ ভবন নির্মাণ নিশ্চিতকল্পে বিল্ডিং কোড অনুসরণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জীবনের সঙ্গে ঝুঁকি ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তাই যেকোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার ও বেসরকারি খাতের সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় তথ্যপ্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এবং সব স্তরে এ ধরনের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিতকরণে সরকারের আর্থিক সহযোগিতা ও নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখা জরুরি।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন বলেন, প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। এটি কমিয়ে আনতে হবে। দেশের ইন্স্যুরেন্স খাতকে ডিজিটাল করতে হবে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রীলঙ্কায় এভাবে দেওয়া হয়ে থাকে। তারা মুহূর্তের মধ্যেই টাকা জমা দিতে পারে।- সূত্র : সময়ের আলো
নাসরিন /হককথা