নারীর আইনি সুরক্ষা: দক্ষিণ এশিয়ায় সপ্তম স্থানে বাংলাদেশ
- প্রকাশের সময় : ০৫:১০:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪
- / ৫৫ বার পঠিত
বাংলাদেশে নারীর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও সুযোগ নিশ্চিতে যথেষ্ট আইনি সুরক্ষা নেই। এ সম্পর্কিত আইনকানুন যতটুকু আছে, তার বাস্তবায়নও ভালো নয়। এতে নারীর অর্থনৈতিক সুযোগ নিশ্চিতে আইনকানুন প্রণয়ন এবং এর বাস্তবায়ন দুই ক্ষেত্রেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এ অঞ্চলের আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে সপ্তম স্থানে।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। ‘নারী, ব্যবসা ও আইন-২০২৪’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৯০টি দেশ ও অঞ্চল স্থান পেয়েছে। এ নিয়ে দশমবারের মতো এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করল বিশ্বব্যাংক। তবে এবারের প্রতিবেদনে নারীর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও সুযোগ নিশ্চিতে আইনকানুনের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো এসব আইন বাস্তবায়নের দিকটিও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে নারী, ব্যবসা ও আইন ১.০ সূচকে নারীর অর্থনৈতিক সুযোগ নিশ্চিতে কাগজ-কলমে কতটা আইনি ব্যবস্থা রয়েছে তা দেখা হয়েছে। এ জন্য কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে– নারীর চলাচল, কর্মক্ষেত্র, মজুরি, বিয়ে, মাতৃত্ব, ব্যবসায়িক উদ্যোগ, সম্পদ ও অবসর ভাতা। অন্যদিকে নারী, ব্যবসা ও আইন ২.০ নামের আরেকটি সূচকে দেখা হয়েছে এসব আইনকানুনের বাস্তবায়ন পরিস্থিতি কেমন। বাস্তবায়ন পরিস্থিতির সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় দেখার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের মতামতও নেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, নারী, ব্যবসা ও আইন ১.০ সূচকে ১০০ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৪৯ দশমিক ৪ পয়েন্ট। নারী, ব্যবসা ও আইন ২.০ সূচকে ৩২ দশমিক ৫ পয়েন্ট পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম সূচকটিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপাল ৮০ দশমিক ৬, ভুটান ৭৫, ভারত ৭৪ দশমিক ৪, মালদ্বীপ ৭৩, শ্রীলঙ্কা ৬৫ দশমিক ৬ ও পাকিস্তান ৫৮ দশমিক ৮ পয়েন্ট পেয়েছে। বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে শুধু আফগানিস্তান। এ সূচকে তাদের পয়েন্ট ৩১ দশমিক ৯।
দ্বিতীয় সূচক অর্থাৎ আইনকানুন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পেয়েছে মাত্র ৩২ দশমিক ৫ পয়েন্ট। এর মানে আইনি কাঠামো ও তার বাস্তবায়নের মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। এ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপাল ৬২ দশমিক ৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে। এর পরের অবস্থানে থাকা ভারতের পয়েন্ট ৬০। পরবর্তী অবস্থানগুলোতে থাকা দেশগুলোর পয়েন্ট হচ্ছে ভুটান ও মালদ্বীপ ৫২ দশমিক ৫, শ্রীলঙ্কা ৪৫, পাকিস্তান ৪২ দশমিক ৫। এ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের পেছনে আছে শুধু আফগানিস্তান। দেশটির পয়েন্ট ২০।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, নারীর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও সুযোগ নিশ্চিতে বিশ্বের কোনো দেশে আইনকানুনের শতভাগ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা বেলজিয়াম আইনকানুন থাকার ক্ষেত্রে ১০০ নম্বর পেলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পেয়েছে ৯০। আইনকানুন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শীর্ষ পাঁচে আরও যেসব দেশ রয়েছে সেগুলো হচ্ছে– কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স ও জার্মানি। সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, ইরান, আফগানিস্তান ও সুদান।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য আগে যতটুকু ধারণা করা হয়েছিল, বাস্তব ক্ষেত্রে তার চেয়েও ব্যাপক। বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় অনেক কানুনও হয়েছে। কিন্তু এখনও বিশ্বে পুরুষরা যে আইনি সুরক্ষা পান, তার তিন ভাগের দুই ভাগও পান না নারীরা। যে আইনকানুন ইতোমধ্যে হয়েছে, সেগুলোর জন্য শক্তিশালী বাস্তবায়ন পদ্ধতি প্রয়োজন। নারীদের মজুরি প্রাপ্তিতে বৈষম্য চিহ্নিত করার জন্য শক্তিশালী একটি ব্যবস্থা দরকার। নারীদের প্রতি সহিংসতা ও বিরূপ আচরণ বন্ধে নিতে হবে আরও কার্যকর পদক্ষেপ। সূত্র : সমকাল।