দ্রুত বাড়ছে ইসলামী ব্যাংকিং
- প্রকাশের সময় : ১১:০৫:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুলাই ২০২৩
- / ৩০ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : ধর্মীয় বিশ্বাস ও আস্থায় বাড়ছে গ্রাহক চাহিদা। ফলে বিপুল আমানত সংগ্রহ ও বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো। এই খাতের ব্যাবসায়িক সম্ভাবনায় প্রচলিত ব্যাংকগুলোও এখন ইসলামী ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকছে। ইসলামী ব্যাংকিং নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রান্তিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালের মার্চ মাস শেষে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে মোট আমানত দাঁড়িয়েছে চার লাখ ১১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা।
এর আগের প্রান্তিকের চেয়ে এই আমানত বেড়েছে এক হাজার ৬৮২ কোটি টাকা বা ০.৪১ শতাংশ। এই সময়ে এ খাতের মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে চার লাখ ১২ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। এটি আগের প্রান্তিকের চেয়ে সাত হাজার ১৯৫ কোটি টাকা বা ১.৭৮ শতাংশ বেশি। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ইসলামী ব্যাংক খাতের সাফল্যের ফলে প্রচলিত ধারার অনেক ব্যাংক এখন ইসলামী শাখা ও উইন্ডোর মাধ্যমে সেবা দিচ্ছে।
দেশের বেশির ভাগ মানুষই ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন, সেই মূল্যবোধ তাদের ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রেও প্রতিফলিত হচ্ছে। তাই বিশাল জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতেই ব্যাংকগুলো ইসলামী ব্যাংকিং সেবা চালু করছে। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকিংয়ে বিনিয়োগের একটি বড় অংশ পণ্যের বিপরীতে করা হয়, ফলে ব্যাংকগুলোর আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা কম থাকে।
এ বিষয়ে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং সিইও মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হচ্ছে এই খাতে সুদ বা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বলে কোনো শব্দ নেই।
আমরা কাউকে সরাসরি ক্যাশ টাকা দিতে পারি না, টাকা দিতে হয় কোনো পণ্যের বিপরীতে।’ তিনি বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকিং বাংলাদেশে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। দেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশের বেশি।’ তাঁর মতে, দেশে ইসলামী ধারা টেকসই ব্যাংকিং গড়ে তুলতে সুনির্দিষ্ট ইসলামী ব্যাংকিং আইন প্রয়োজন।
রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রেও ইসলামী ব্যাংকগুলো বড় অবদান রেখে চলেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, জানুয়ারি থেকে মার্চ ২০২৩ এই সময়ে ইসলামী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা, যা আগের প্রান্তিকের চেয়ে চার হাজার ৯১৯ কোটি টাকা বা ১৯.১৫ শতাংশ বেশি। এই সময়ে মোট ব্যাংকগুলোর প্রবাস আয়ের ৫৪.৭৬ শতাংশই ইসলামী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে।
প্রচলিত ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি ইসলামী খাতের ব্যাংকগুলোও বিনিয়োগে ব্যবসা-বাণিজ্যকে প্রাধান্য দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকিং খাতের মোট বিনিয়োগের সর্বোচ্চ ৩৮.২৩ শতাংশ হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগ হয়েছে বৃহৎ শিল্পে ২৮.৩২ শতাংশ। এ ছাড়া দেশের কৃষি খাতে ইসলামী ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা, যা মোট ব্যাংক খাতের বিনিয়োগের ২০.৭৮ শতাংশ।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী বলেন, ‘কিভাবে শরিয়াহ ভিত্তিতে ইসলামী ব্যাংক কাজ করে তা আমরা জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। তৈরি করতে চাই শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে প্রয়োজনীয় জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ মানবসম্পদ। অন্যদিকে ইসলামী ব্যাংকিং যেহেতু শরিয়াহ কমপ্লায়েন্স মেনে অংশীদারি ও মুনাফা ভাগাভাগির ভিত্তিতে ব্যবসা করে থাকে, তাই দেশের সর্বস্তরের জনগণের মাঝে তা ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করছে। সুতরাং বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনা এরই মধ্যে প্রমাণিত এবং তা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮৩ সালে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের হাত ধরে। বর্তমানে দেশে মোট ১০টি ইসলামী ব্যাংক পরিপূর্ণ ইসলামী ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে আসছে। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাবিব হাসনাত বলেন, ‘বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা এরই মধ্যে তার শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ২৭.০২ শতাংশ ইসলামী ব্যাংকগুলো সংরক্ষণ করছে। দেশের বেশির ভাগ রেমিট্যান্সই আসে ইসলামী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তায় বর্তমানে দেশের প্রায় সব ব্যাংকেরই প্রচলিত ব্যাংকিং সেবার পাশাপাশি আলাদা ইসলামী ব্যাংকিং সেবা রয়েছে।’
অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকগুলো প্রফিট শেয়ারিং হিসেবে ইনকাম দেয়। কাজেই তাদের প্রফিট শেয়ারিংটি ধর্মীয় অনুসারে গ্রহণযোগ্য। এ কারণেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বড় অংশই মুসলিম, ধর্মীয় অনুভূতি থেকেই মূলত তাঁরা ইসলামী ব্যাংকগুলোতে যাচ্ছেন। অন্য ব্যাংকগুলোর তুলনায় ইসলামী ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণও কম।’ সূত্র : কালের কণ্ঠ