নিউইয়র্ক ১২:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ডলার সংকট লাগামহীন, ফায়দা নিচ্ছে সিন্ডিকেট

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:০২:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ৬০ বার পঠিত

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ডেস্ক : সর্বত্রই নগদ ডলারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। আগাম বা এলসি ডলারেও একই অবস্থা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় নগদ বা ড্রাফট আকারে ডলার মিলছে না বললেই চলে। এমনকি ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের দেনা শোধ করার মতো ডলার জোগান দিতে পারছে না অনেক ব্যাংকই। মানি চেঞ্জারগুলোয়ও নগদ ডলারের তীব্র সংকট। কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারেও ডলার বেচাকেনা একেবারেই কম। সম্প্রতি মানি চেঞ্জারস ও খোলাবাজারে ডলারের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার কারণে গোয়েন্দা সংস্থা ও বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) অভিযানের পর বেআইনিভাবে ডলার বেচাকেনা বন্ধ রয়েছে। ফলে বেঁধে দেওয়া দরে কেউ ডলার বিক্রি করছেন না। এ অবস্থায় নগদ ডলারের প্রবাহ কমে গেছে। মানি চেঞ্জারস ও কার্ব মার্কেট থেকে কেউ ডলার কিনতে পারছে না। এ কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জরুরি প্রয়োজনে চিকিৎসা, শিক্ষা ও ব্যবসায়িক সফরে যাওয়া লোকজন। সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের বিদেশ প্রশিক্ষণ জরুরি, তারাও বিপাকে পড়ছেন।

এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের পণ্য আমদানিতে চরম ডলার সংকটের মুখোমুখি ব্যবসায়ীরা। সবাই খোলাবাজার বা কালোবাজার থেকে বেশি দামে ডলার কিনে সামাল দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার অভিযানের কারণে এখন কালোবাজারিরা পিছু হটেছে। ধরা পড়ার ভয়ে সবাই ডলার লুকিয়ে রেখেছে। বেশি টাকা দিলে কেউ কেউ গোপনে ডলার বিক্রি করছেন। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। অপরদিকে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে এখনো প্রথম সারির বিনিয়োগকারী শিল্পপতি উদ্যোক্তরা বিপাকে না পড়লেও তাদের সবকিছুতে খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। ডলারের দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচ যে হারে বাড়ছে তাতে লাভ তো দূরের কথা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ব্রেকইভেনে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যে কেবল যারা রপ্তানি করে ডলার আয় করেন, তারই এলসি খুলতে পারছেন। বাণিজ্যিকভাবে বড় ব্যবসায়ীরাও এলসি খুলতে পারছেন না।

আরোও পড়ুন । ফেসবুক রিলস থেকে অর্থ উপার্জনের বিভিন্ন উপায়

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশে ডলারের সংকট চলছে; আগে এটা মেনে নিতে হবে। তারপর ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। তখন দাম বাড়বে বটে, কিন্তু ডলারের প্রবাহ স্বাভাবিক হতে থাকবে। এখন ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করে সুফল পাওয়া যাবে না। আর সংকট কেটে যাচ্ছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যাবে-এমন কথা বলে বাজারকে বিভ্রান্ত করা ঠিক হচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে হঠাৎ করে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। আগে ব্যাংকের কাছাকাছি দামেই কার্ব মার্কেটে ডলার বেচাকেনা হতো। এখন এর ব্যবধান বেড়ে ৭ থেকে ৮ টাকা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবধান আরও বেশি।

রোববার থেকে ব্যাংকে নগদ ডলার ১১১ থেকে ১১৩ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। ড্রাফট আকারে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা করে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফি পরিশোধের জন্য ডলারের দাম এবার সর্বোচ্চ ১১০ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নগদ ছাড়া অন্যান্য খাতেও সর্বোচ্চ ১১০ টাকা করেই ডলার বিক্রি করতে হবে। রোববার বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) সার্কুলারে এমনই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনায় আগস্টের তুলনায় প্রতি ডলারের দাম ৫০ পয়সা থেকে এক টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এরপরও ব্যাংকে ডলার মিলছে না।

গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম হুহু করে বেড়ে যায়। মাসের শুরুতে যে ডলার কার্ব মার্কেটে ১১৩ থেকে ১১৪ টাকায় বিক্রি হতো, এর দাম বেড়ে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায় ওঠে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা করেও ডলার বিক্রির নজির পাওয়া গেছে। এ তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর গত সপ্তাহে মানি চেঞ্জারস ও খোলাবাজারে অভিযান পরিচালনা করে গোয়েন্দা সংস্থা ও বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)। গুরুতর অনিয়ম পেয়ে বিএফআইইউ ৭টি মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করে এবং ১০টি মানি চেঞ্জারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। বেআইনিভাবে মাত্রাতিরিক্ত নগদ ডলার রাখায় ৮টি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেওয়া হয়। এতে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

দেশে যেসব নগদ ডলার আসে, সেগুলো খোলাবাজারেই বেশি বিক্রি হচ্ছে। কারণ, খোলাবাজারে দাম বেশি। ব্যাংকের চেয়ে প্রতি ডলারে ৭ থেকে ৮ টাকা বেশি পাওয়া যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এরও বেশি। এসব কারণে নগদ ডলার কার্ব মার্কেটে চলে আসে। এসব ডলার কার্ব মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও বেশি দামে বিক্রি করেন। অভিযানের পর বাজারে নগদ ডলারের প্রবাহ কমে গেছে। ফলে সংকট প্রকট হয়েছে। সোমবার বিকালে রাসেল আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী জানান, তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্য যাবেন। কিন্তু কোথাও ডলার পাচ্ছেন না। প্রথমে তিনি মতিঝিল, এরপর গুলশান, পরে যাত্রাবাড়ীতে কয়েকটি মানি চেঞ্জারে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু ডলার পাননি। এর আগে ব্যাংকেও যোগাযোগ করে ডলার পাননি।

জানা যায়, একটি সিন্ডিকেট কার্ব মার্কেট থেকে বেশি দামে ডলার কিনে তা দিয়ে বিলাসী পণ্য আমদানির এলসি খুলছেন। যে কারণে বাজারে বিলাসী পণ্যের সরবরাহে তেমন ঘাটতি নেই। তবে দাম অনেক বেশি। এদিকে মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৭৫ পয়সা দরে কেনা এবং সর্বোচ্চ ১১২ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রির সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর চেয়ে বেশি দামে তারা কেনাবেচা করতে পারবে না। কিন্তু নগদ ডলার এই দামে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে মানি চেঞ্জারগুলো নির্ধারিত দামে ডলার বিক্রিও করতে পারছে না। এতে মানি চেঞ্জারগুলোয়ও ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।

সূত্র জানায়, আগে মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোই বেশি দামে অফিসিয়াল রেকর্ডের বাইরে গিয়ে ডলার বেচাকেনা করত। নির্ধারিত দামে গ্রাহকরা ডলার বেচাকেনা করলে মানি চেঞ্জারস থেকে রসিদ দেওয়া হয়। এর চেয়ে বেশি দামে বেচাকেনা করলে রসিদ দেওয়া হয় না। ফলে প্রতিটি মানি চেঞ্জারই বৈধ ও বেআইনি দুভাবে ব্যবসা পরিচালনা করত। বৈধ ব্যবসার চেয়ে অবৈধ ব্যবসাই হতো বেশি। কারণ, যারা নগদ ডলার বিক্রি করতেন, তারা বেশি দামেই করতেন। ফলে মানি চেঞ্জারগুলোও বিক্রির ক্ষেত্রে বেশি দাম নিত। এতে মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈধ ব্যবসা প্রায় চাপা পড়ে যায়। বৈধ লাইসেন্সের আড়ালে তারা অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করে।

অভিযানের কারণে এখন অবৈধ ব্যবসা প্রায় বন্ধ। ফলে মানুষ ডলার পাচ্ছে না। এই সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোও ডলার দিতে পারছে না। এদিকে রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা ও পল্টন এলাকায় অবস্থিত মানি চেঞ্জারগুলোয় গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ অফিসই বন্ধ। কিছু অফিস খোলা থাকলেও লোকজন নেই। বিক্রেতা আসে না বললেই চলে। ক্রেতারা এলে বলে দেওয়া হচ্ছে ডলার নেই। অভিযোগ রয়েছে, মানি চেঞ্জারস ব্যবসায়ীদের অনেকে গোপনে ডলার কেনাবেচা করছেন।

সূত্র জানায়, দেশে নগদ ডলার নিয়ে আসেন সাধারণত প্রবাসী ও বিদেশ থেকে ফিরে আসা যাত্রীরা। নিয়মানুযায়ী তাদের কাছে যেসব ডলার থাকবে, ফেরার সময় বিমানবন্দরে কাস্টমসে ঘোষণা দিতে হবে। এর মধ্যে ১০ হাজার ডলারের বেশি থাকলে তা ফেরত দিতে হবে ব্যাংক বা মানি চেঞ্জারসে। পরে ব্যবহারের জন্য গ্রাহক নিজের কাছে ১০ হাজার ডলার রাখতে পারবেন। কিন্তু অনেকে দেশে ফেরার পর এর চেয়ে অনেক বেশি ডলার নিজের কাছে রেখে দিচ্ছেন। তারা সেটি বাজারেও বিক্রি করছেন না। আবার নিজেরা ব্যবহারও করছেন না। এতে নগদ ডলারের সংকট বাড়ছে। এছাড়া অনেকে ভবিষ্যতে বিশেষ প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে টাকা দিয়ে নগদ ডলার কিনে রাখছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। সূত্র : যুগান্তর পত্রিকা

বেলী/হককথা

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

ডলার সংকট লাগামহীন, ফায়দা নিচ্ছে সিন্ডিকেট

প্রকাশের সময় : ১২:০২:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশ ডেস্ক : সর্বত্রই নগদ ডলারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। আগাম বা এলসি ডলারেও একই অবস্থা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় নগদ বা ড্রাফট আকারে ডলার মিলছে না বললেই চলে। এমনকি ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের দেনা শোধ করার মতো ডলার জোগান দিতে পারছে না অনেক ব্যাংকই। মানি চেঞ্জারগুলোয়ও নগদ ডলারের তীব্র সংকট। কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারেও ডলার বেচাকেনা একেবারেই কম। সম্প্রতি মানি চেঞ্জারস ও খোলাবাজারে ডলারের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার কারণে গোয়েন্দা সংস্থা ও বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) অভিযানের পর বেআইনিভাবে ডলার বেচাকেনা বন্ধ রয়েছে। ফলে বেঁধে দেওয়া দরে কেউ ডলার বিক্রি করছেন না। এ অবস্থায় নগদ ডলারের প্রবাহ কমে গেছে। মানি চেঞ্জারস ও কার্ব মার্কেট থেকে কেউ ডলার কিনতে পারছে না। এ কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জরুরি প্রয়োজনে চিকিৎসা, শিক্ষা ও ব্যবসায়িক সফরে যাওয়া লোকজন। সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের বিদেশ প্রশিক্ষণ জরুরি, তারাও বিপাকে পড়ছেন।

এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের পণ্য আমদানিতে চরম ডলার সংকটের মুখোমুখি ব্যবসায়ীরা। সবাই খোলাবাজার বা কালোবাজার থেকে বেশি দামে ডলার কিনে সামাল দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার অভিযানের কারণে এখন কালোবাজারিরা পিছু হটেছে। ধরা পড়ার ভয়ে সবাই ডলার লুকিয়ে রেখেছে। বেশি টাকা দিলে কেউ কেউ গোপনে ডলার বিক্রি করছেন। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। অপরদিকে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে এখনো প্রথম সারির বিনিয়োগকারী শিল্পপতি উদ্যোক্তরা বিপাকে না পড়লেও তাদের সবকিছুতে খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। ডলারের দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচ যে হারে বাড়ছে তাতে লাভ তো দূরের কথা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ব্রেকইভেনে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যে কেবল যারা রপ্তানি করে ডলার আয় করেন, তারই এলসি খুলতে পারছেন। বাণিজ্যিকভাবে বড় ব্যবসায়ীরাও এলসি খুলতে পারছেন না।

আরোও পড়ুন । ফেসবুক রিলস থেকে অর্থ উপার্জনের বিভিন্ন উপায়

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশে ডলারের সংকট চলছে; আগে এটা মেনে নিতে হবে। তারপর ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। তখন দাম বাড়বে বটে, কিন্তু ডলারের প্রবাহ স্বাভাবিক হতে থাকবে। এখন ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করে সুফল পাওয়া যাবে না। আর সংকট কেটে যাচ্ছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যাবে-এমন কথা বলে বাজারকে বিভ্রান্ত করা ঠিক হচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে হঠাৎ করে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। আগে ব্যাংকের কাছাকাছি দামেই কার্ব মার্কেটে ডলার বেচাকেনা হতো। এখন এর ব্যবধান বেড়ে ৭ থেকে ৮ টাকা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবধান আরও বেশি।

রোববার থেকে ব্যাংকে নগদ ডলার ১১১ থেকে ১১৩ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। ড্রাফট আকারে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা করে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফি পরিশোধের জন্য ডলারের দাম এবার সর্বোচ্চ ১১০ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নগদ ছাড়া অন্যান্য খাতেও সর্বোচ্চ ১১০ টাকা করেই ডলার বিক্রি করতে হবে। রোববার বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) সার্কুলারে এমনই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনায় আগস্টের তুলনায় প্রতি ডলারের দাম ৫০ পয়সা থেকে এক টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এরপরও ব্যাংকে ডলার মিলছে না।

গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম হুহু করে বেড়ে যায়। মাসের শুরুতে যে ডলার কার্ব মার্কেটে ১১৩ থেকে ১১৪ টাকায় বিক্রি হতো, এর দাম বেড়ে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায় ওঠে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা করেও ডলার বিক্রির নজির পাওয়া গেছে। এ তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর গত সপ্তাহে মানি চেঞ্জারস ও খোলাবাজারে অভিযান পরিচালনা করে গোয়েন্দা সংস্থা ও বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)। গুরুতর অনিয়ম পেয়ে বিএফআইইউ ৭টি মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করে এবং ১০টি মানি চেঞ্জারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। বেআইনিভাবে মাত্রাতিরিক্ত নগদ ডলার রাখায় ৮টি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেওয়া হয়। এতে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

দেশে যেসব নগদ ডলার আসে, সেগুলো খোলাবাজারেই বেশি বিক্রি হচ্ছে। কারণ, খোলাবাজারে দাম বেশি। ব্যাংকের চেয়ে প্রতি ডলারে ৭ থেকে ৮ টাকা বেশি পাওয়া যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এরও বেশি। এসব কারণে নগদ ডলার কার্ব মার্কেটে চলে আসে। এসব ডলার কার্ব মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও বেশি দামে বিক্রি করেন। অভিযানের পর বাজারে নগদ ডলারের প্রবাহ কমে গেছে। ফলে সংকট প্রকট হয়েছে। সোমবার বিকালে রাসেল আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থী জানান, তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্য যাবেন। কিন্তু কোথাও ডলার পাচ্ছেন না। প্রথমে তিনি মতিঝিল, এরপর গুলশান, পরে যাত্রাবাড়ীতে কয়েকটি মানি চেঞ্জারে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু ডলার পাননি। এর আগে ব্যাংকেও যোগাযোগ করে ডলার পাননি।

জানা যায়, একটি সিন্ডিকেট কার্ব মার্কেট থেকে বেশি দামে ডলার কিনে তা দিয়ে বিলাসী পণ্য আমদানির এলসি খুলছেন। যে কারণে বাজারে বিলাসী পণ্যের সরবরাহে তেমন ঘাটতি নেই। তবে দাম অনেক বেশি। এদিকে মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৭৫ পয়সা দরে কেনা এবং সর্বোচ্চ ১১২ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রির সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর চেয়ে বেশি দামে তারা কেনাবেচা করতে পারবে না। কিন্তু নগদ ডলার এই দামে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে মানি চেঞ্জারগুলো নির্ধারিত দামে ডলার বিক্রিও করতে পারছে না। এতে মানি চেঞ্জারগুলোয়ও ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।

সূত্র জানায়, আগে মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোই বেশি দামে অফিসিয়াল রেকর্ডের বাইরে গিয়ে ডলার বেচাকেনা করত। নির্ধারিত দামে গ্রাহকরা ডলার বেচাকেনা করলে মানি চেঞ্জারস থেকে রসিদ দেওয়া হয়। এর চেয়ে বেশি দামে বেচাকেনা করলে রসিদ দেওয়া হয় না। ফলে প্রতিটি মানি চেঞ্জারই বৈধ ও বেআইনি দুভাবে ব্যবসা পরিচালনা করত। বৈধ ব্যবসার চেয়ে অবৈধ ব্যবসাই হতো বেশি। কারণ, যারা নগদ ডলার বিক্রি করতেন, তারা বেশি দামেই করতেন। ফলে মানি চেঞ্জারগুলোও বিক্রির ক্ষেত্রে বেশি দাম নিত। এতে মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈধ ব্যবসা প্রায় চাপা পড়ে যায়। বৈধ লাইসেন্সের আড়ালে তারা অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করে।

অভিযানের কারণে এখন অবৈধ ব্যবসা প্রায় বন্ধ। ফলে মানুষ ডলার পাচ্ছে না। এই সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোও ডলার দিতে পারছে না। এদিকে রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা ও পল্টন এলাকায় অবস্থিত মানি চেঞ্জারগুলোয় গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ অফিসই বন্ধ। কিছু অফিস খোলা থাকলেও লোকজন নেই। বিক্রেতা আসে না বললেই চলে। ক্রেতারা এলে বলে দেওয়া হচ্ছে ডলার নেই। অভিযোগ রয়েছে, মানি চেঞ্জারস ব্যবসায়ীদের অনেকে গোপনে ডলার কেনাবেচা করছেন।

সূত্র জানায়, দেশে নগদ ডলার নিয়ে আসেন সাধারণত প্রবাসী ও বিদেশ থেকে ফিরে আসা যাত্রীরা। নিয়মানুযায়ী তাদের কাছে যেসব ডলার থাকবে, ফেরার সময় বিমানবন্দরে কাস্টমসে ঘোষণা দিতে হবে। এর মধ্যে ১০ হাজার ডলারের বেশি থাকলে তা ফেরত দিতে হবে ব্যাংক বা মানি চেঞ্জারসে। পরে ব্যবহারের জন্য গ্রাহক নিজের কাছে ১০ হাজার ডলার রাখতে পারবেন। কিন্তু অনেকে দেশে ফেরার পর এর চেয়ে অনেক বেশি ডলার নিজের কাছে রেখে দিচ্ছেন। তারা সেটি বাজারেও বিক্রি করছেন না। আবার নিজেরা ব্যবহারও করছেন না। এতে নগদ ডলারের সংকট বাড়ছে। এছাড়া অনেকে ভবিষ্যতে বিশেষ প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে টাকা দিয়ে নগদ ডলার কিনে রাখছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। সূত্র : যুগান্তর পত্রিকা

বেলী/হককথা