ডলার সংকটে হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি
- প্রকাশের সময় : ১১:১১:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ মার্চ ২০২৪
- / ৫৫ বার পঠিত
দেশে জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্য হাসপাতালগুলোকে বিদেশ থেকে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই ডলারের সংকট নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এসব জীবন রক্ষাকারী মেডিকেল ডিভাইসের বাজারে। আমদানিনির্ভর চিকিৎসা সরঞ্জামে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে দাম বাড়ছে কয়েকগুণ। এসব পণ্যের ৯০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
বিশেষ করে হৃদরোগ, অর্থোপেডিক, চক্ষু, ক্যান্সার, জেনারেল সার্জারি, স্নায়বিক রোগের চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের প্রায় শতভাগ সরঞ্জামই আমদানি করতে হয়। বর্তমানে এগুলো আনার ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে বিদ্যমান ডলার সংকট। সরঞ্জামের অভাবে দেশের হাসপাতালগুলোয় এখন বড় অস্ত্রোপচারের সংখ্যাও কমার পথে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সবচেয়ে বেশি আশঙ্কা তৈরি হয়েছে হৃদরোগের সার্জারি নিয়ে। ডলার সংকটের কারণে চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানির জন্য ব্যাংকে এলসি (ঋণপত্র) খোলা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল ইনস্ট্রুমেন্টস অ্যান্ড হসপিটাল ইক্যুইপমেন্ট ডিলার অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম ও মেডিকেল ডিভাইসের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। হৃদরোগের চিকিৎসার পাশাপাশি নিউরো সার্জারি, কিডনি সার্জারি, অর্থোপেডিক সার্জারির মতো গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল সার্জারির সরঞ্জামও নিয়মিতভাবে বিদেশ থেকে আনতে হয়।
এছাড়া রোগ নিরীক্ষা ও জীবাণুনাশের যন্ত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জামের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর। দেশে অসংক্রামক রোগে মৃতদের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক হলেন হৃদরোগী। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোয় হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত সরঞ্জামের শতভাগই আমদানি করতে হয়। এসব ডিভাইস ও সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে হৃদযন্ত্রের রিং, ভাল্ভ, পেস মেকার, অক্সিজেনেটর। বাংলাদেশে প্রতিদিন কতসংখ্যক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হৃদযন্ত্রে এসব সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং বাংলাদেশ মেডিকেল ইনস্ট্রুমেন্টস অ্যান্ড হসপিটাল ইক্যুইপমেন্ট ডিলার অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশে হৃদরোগের চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানি করে চারটি প্রতিষ্ঠান।
ডলারের অভাবে আমদানিকারকরা সময়মতো এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারছেন না। ফলে তারা হাসপাতালগুলোতে চাহিদা অনুপাতে পেসমেকার সরবরাহও করতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়ছেন হৃদরোগীরা। আমদানিকারকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি ও জার্মানভিত্তিক একটি কোম্পানির পেসমেকার আমদানি করা হয়। দেশে ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ডলার সমস্যা শুরু হয়। মাঝে কিছুদিন স্বাভাবিক হলেও সাত মাস ধরে সংকট চলছে। আগে লো-মার্জিন অর্থাৎ ২০ শতাংশ মার্জিন দিলেও এলসি খোলা যেত, এখন ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত মার্জিন লাগছে। আগে এলসি খোলার জন্য ব্যাংকে আবেদন করলে দু’-একদিনেই পাওয়া যেত। ডলার সংকটের কারণে এখন দেড় মাসেও হচ্ছে না।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মিরপুর হার্ট ফাউন্ডেশনে ভর্তি হন কুষ্টিয়ার ফাতেমা বেগম (ছদ্মনাম)। বয়স ৫৫ বছর। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাকে পেসমেকার লাগাতে হবে। ফাতেমার স্বজনরা জানান, এক লাখ টাকার পেসমেকার কিনতে হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকায়। জার্মানি থেকে আমদানি করা এই পেসমেকার আমদানিকারক কোম্পানির প্রতিনিধিরা রোগীর স্বজনকে জানান, তাদের হাতে এখন অল্প পেসমেকার রয়েছে। যা চাহিদার চেয়ে কম। চাইলে এলসি খোলা যাচ্ছে না। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে তাদের মজুত শেষ হয়ে যাবে। তখন দাম আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে পরামর্শ দেয় কোম্পানির লোকেরা।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে (ডিজিডিএ) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মেডট্রোনিক, অ্যাবোট, বোস্টন সায়েন্টিফিক এবং জার্মানির বায়োট্রোনিকসহ মোট ৪টি কোম্পানির পেসমেকার ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১৯ সালে এসব পেসমেকারের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দেয় সরকার। সে সময়ে লাখ টাকার নিচে পেসমেকার মিললেও বর্তমানে মডেলভেদে পেসমেকারের দাম দুই লাখ টাকা পর্যন্ত হয়েছে।
ডলারের দামের দোহাই দিয়ে পেসমেকার ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান- হৃদরোগ ইনস্টিটিউিটের পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি বিভাগের একজন চিকিৎসক। তিনি বলেন, হৃদরোগের চিকিৎসায় যে পণ্য ছিল এক লাখ, সেটি হয়ে গেছে দুই লাখ। পেসমেকার নিয়ে মধ্যবিত্ত রোগীদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে প্রতিদিন।
দেশে ডলার সংকটে মেডিকেল ডিভাইস ইনস্ট্রুমেন্ট আমদানিতে কোনো ধরনের প্রভাব পড়ছে কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল ডিভাইস ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যান্ড হসপিটাল ইক্যুইপমেন্ট ডিলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এবং বিএমএ ভবনের দোকান মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি, মেডি ফেয়ারের কর্ণধার হাজী মো. রিয়াজুল ইসলাম (দীপক) বলেন, ১০টি এলসি’র চাহিদা থাকলে খুলতে পারছি ১টি বা ২টি। আগে ব্যাংকে ১০০ টাকার জায়গায় ২০ টাকা জমা দিয়েই এলসি খুলতে পারতাম। এখন ২০০ টাকা জমা রেখেও এলসি খুলতে পারছি না। সূত্র : মানবজমিন।