ডলার সংকটের জন্য বিদেশ যেতে যেসব সমস্যায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা
- প্রকাশের সময় : ০২:০০:১২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ এপ্রিল ২০২৪
- / ৬৬ বার পঠিত
দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে হলে প্রথমেই স্টুডেন্ট ফাইল খুলতে হয়। আর এই ফাইল খুলতেই তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ব্যাংকে ঘুরেছেন আহনাফ আহমেদ। যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। অথছ স্টুডেন্ট ফাইল খুলতে না পারার জন্য সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও বেতনের টাকা জমা দিতে পারছিলেন না এই শিক্ষার্থী।
এই শিক্ষার্থী এ ব্যাপারে বিবিসি বাংলাকে বলেন, এত ঘোরাঘুরির পরও কোনো ব্যাংক আমার স্টুডেন্ট ফাইল খোলার জন্য রাজি হয়নি। শেষ পর্যন্ত একজন প্রভাবশালী আত্মীয়ের সুপারিশে বেসরকারি একটি ব্যাংকে ফাইল খুলতে পেরেছি।
প্রতি বছর উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী দেশের বাইরে পাড়ি জমান। দেশের বাইরে যেতে হলে প্রথমেই তাদের ভর্তি ফি, বেতনসহ পড়ালেখার অন্যান্য খরচের একটি অংশ ডলার হিসাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জমা দিতে হয়। যে কাজটি দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো বিশেষ একটি হিসাব খোলার মাধ্যমে করে থাকে। শিক্ষার্থীদের এসব ফি পরিশোধে ব্যাংকের এই কাজটিকেই বলা হয় স্টুডেন্ট ফাইল।
আর বর্তমানে ডলার সংকটের জেন্য দেশের ব্যাংকগুলো শিক্ষার্থীদের নামে স্টুডেন্ট ফাইল খুলতে তেমন আগ্রহ নয়। এ কারণে অনেকটাই বিপাকে পড়ছেন উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যেতে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা। এ ক্ষেত্রে একাংশের অভিযোগ, কিছু ব্যাংক স্টুডেন ফাইল না খোলার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার দোহাই দিচ্ছে।
হাসিবুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ফাইল খুলতে না চাওয়ার ব্যাপারে কয়েকটি ব্যাংক আমায় বলেছে, ডলারের সংকট থাকার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশেই নতুন ফাইল খুলছে না তার। এছাড়া ভর্তি ফি পাঠানোর পর বিদেশে থাকা-খাওয়ার জন্যও ডলার নেয়ার প্রয়োজন হয়। কেউ কেউ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন। আবার কেউ কেউ পাসপোর্টে এনডোর্সের মাধ্যমে ডলার নিয়ে থাকেন বিদেশে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাপ্তবয়স্ক একজন নাগরিক দেশের বাইরে যাওয়ার সময় বছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার এনডোর্স করতে পারেন। তবে একজন ব্যক্তি একবারে নগদ পাঁচ হাজার ডলারের বেশি সঙ্গে নিতে পারেন না। কিন্তু দেশে ডলার সংকটের জন্য এখন কোনো কোনো ব্যাংক পাঁচশ ডলারের বেশি এনডোর্স করছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ব্যাংকগুলো অবশ্য ডলার সংকটের জন্য স্টুডেন্ট ফাইল খোলায় আগ্রহ কমার বিষয়টি স্বীকার করেছে। দেশের ব্যাংকগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, আগে আবেদন করলেই যেভাবে স্টুডেন্ট ফাইল খুলে দিতাম, এখন সেটি হচ্ছে না। ডলার সংকটের জন্য আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের সবাইকে এখন আমরা স্টুডেন্ট ফাইল খোলার সুবিধা প্রদান করতে পারছি না।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রিয়াজুল করিম বলেন, সবাইকে যেহেতু স্টুডেন্ট ফাইল খুলে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না, এ জন্য আমরা অনেক সময় নতুনদের থেকে পুরনো গ্রাহক বা তাদের সন্তানদের বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছি। আবার অনেক সময় দেখা যায় অনেকেই বিদেশে যাওয়ার পর সেখানে পড়ালেখা বাদ দিয়ে অবৈধভাবে কাজ করছে। আর আমরা যেহেতু ফাইল খুলে দেই, ফলে এ কারণে ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলছেন, ডলার এনডোর্সমেন্ট বা স্টুডেন্ট ফাইল খোলার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বিধি-নিষেধ জারি করা হয়নি। মূলত ব্যাংকগুলো তাদের নিজেদের সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।