ছাত্র ও কর্মকর্তাকে সাজানো হয় কোম্পানির মালিক
- প্রকাশের সময় : ০৩:০৯:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০২৩
- / ৪৪ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : ছাত্র ও নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাকে মালিক সাজিয়ে জালিয়াতি করে বেনামি কোম্পানির মাধ্যমে ৩৫০ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করেন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী হায়দার রতন। কোনো ধরনের জামানত ছাড়াই ব্র্যান্ডশেয়ার ট্রেডিংয়ের নামে ঋণ অনুমোদন করে এবি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। ব্র্যান্ডশেয়ারের ৯০ শতাংশ মালিকানা দেখানো হয় মোহাম্মদ আতাউর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য অনুযায়ী তিনি একজন ছাত্র। কাগজপত্র অনুযায়ী বাকি ১০ শতাংশের মালিকানা মো. মামুন রশিদের নামে, যিনি রতনের মালিকানধীন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
বিভিন্ন ব্যাংকে রতনের মালিকানাধীন ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন ও ব্র্যান্ডউইন গ্রুপ অব কোম্পানির ৫টি ব্যাংকে ৬০৯ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে, যার বেশিরভাগই এখন খেলাপি। বিভিন্ন সরকারি কার্যাদেশের বিপরীতে এ ঋণ নেওয়া হয়। কাজ শেষ হলেও ন্যাশনাল, ইউসিবি, এসআইবিএল, জনতা ও বেসিক ব্যাংক ঋণের টাকা পায়নি। এসব তথ্য আড়াল করে ভিন্ন কৌশলে এবি ব্যাংক থেকে ভুয়া কোম্পানির নামে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করেন রতন। এবি ব্যাংক থেকে ৩৫০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদনও হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাম্প্রতিক পরিদর্শনে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। এর পর ঋণ ছাড় আটকে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য বিএফআইইউ জানার আগেই ইনফ্রাটেকের নামে ১৬ কোটি ১৩ লাখ টাকার গ্যারান্টি ইস্যু করে ব্যাংক। কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ অনুমোদনের বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ব্যাখ্যা চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর এই জালিয়তির বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত ১৮ মে পরিদর্শন প্রতিবেদন পাঠানো হয় দুর্নীতি দমন কমিশনে।
মোহাম্মদ আতাউর রহমানের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য অনুযায়ী তাঁর জন্ম ১৯৯১ সালের ১৫ নভেম্বর। তাঁর পরিচয় উল্লেখ আছে ছাত্র হিসেবে। আর মো. মামুন রশিদের জাতীয় পরিচয়পত্রে বেসরকারি চাকরিজীবী উল্লেখ রয়েছে। ব্র্যান্ডশেয়ারের অফিসের ঠিকানা দেখানো হয় রতনের মালিকানাধীন ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশনের ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে। ঋণ আবেদনের প্যাডে যে ই-মেইল ও ওয়েবসাইটের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে, তা রতনের মালিকানার ব্রান্ডউইন নামের আরেকটি কোম্পানির। অথচ বিপুল অঙ্কের ঋণ অনুমোদনে নানা ইতিবাচক তথ্য তুলে ধরে ব্যাংক।
জানা গেছে, ব্র্যান্ডশেয়ারের নামে বিপুল অঙ্কের ঋণ অনুমোদন করা হলেও প্রতিষ্ঠানটির কোনো ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা নেই। আরজে এসসিতে ২০ হাজার শেয়ারের বিপরীতে ব্র্যান্ডশেয়ারের নিবন্ধন করা হয় গত বছরের জুনে। এর পর ৭ নভেম্বর এই প্রতিষ্ঠানের নামে এবি ব্যাংকের গুলশান শাখায় একটি চলতি হিসাব খোলা হয়। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি ব্যাংকটির গুলশান শাখায় ঋণ আবেদন করে। দ্রুত ছাড় করতে আবেদনের দিনই এবি ব্যাংকের গুলশান শাখা ব্যবস্থাপকসহ তিন কর্মকতা গ্রাহকের ভুয়া ভিজিট রিপোর্ট দেন। সেখানে উল্লেখ করেন– গ্রাহক প্রচুর পরিমাণে জ্বালানি, নির্মাণসামগ্রী, রাসায়নিক পদার্থ, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য আমদানি করেন। তবে এর স্বপক্ষে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। এরকম ত্রুটিপূর্ণ আবেদনের ওপর ভিত্তি করে গত ৯ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকের পর্ষদ সভায় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের জোর চেষ্টায় তা অনুমোদন হয়।
এসব বিষয়ে ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী হায়দার রতন মঙ্গলবার সমকালকে বলেন, ব্র্যান্ডশেয়ার ট্রেডিংয়ে তাঁর কোনো মালিকানা নেই। তবে মালিকানায় যাঁরা আছেন, তাঁরা তাঁর আত্মীয়। গতকাল সমকালে ‘খেলাপির তথ্য লুকিয়ে আরও বড় জালিয়াতি’ শিরোনামে সমকালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। রিপোর্টটি আমলে নিয়ে অন্য ব্যাংকের খেলাপি ঋণের তথ্য আড়াল করে এবি ব্যাংক থেকে নামসর্বস্ব বেনামি কোম্পানিতে ৩৫০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ অনুসন্ধানে বিএফআইইউ, দুদক ও সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া ঋণ অনুমোদনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং জড়িতদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে। সুত্র : সমকাল
সুমি/হককথা