নিউইয়র্ক ০২:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

প্রবাস জীবন : আড়াই বছরে-তিন দিনের সফর!

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:৩৫:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ অক্টোবর ২০১৬
  • / ৯৮১ বার পঠিত

শিবলী চৌধুরী কায়েস: শেষ ঘুমিয়েছি গেল ১ অক্টোবর শনিবার। রোববার কর্মস্থল টাইম টেলিভশনে গেলাম। সাথে ছিল প্রিয় সহকর্মী হাবিব ভাইয়ের দেয়া বেশ ক’টি ট্রাভেল সংক্রান্ত উপহার ও নিজের কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। সেখান থেকেই অফিসের কাজকর্ম শেষ হতেই মধ্যরাত পার। সালাহউদ্দিন (গুড মর্নিং) ভাই ঘরে ফেরার পথে আমাকে লাগোর্ডিয়াতে ফেলে যান। ততক্ষনে ৩ অক্টোবর সোমবার দিনের প্রথম প্রহর কেটে ভোরের আলো ফোটা নতুন সকাল। নিউইয়র্কের লাগোর্ডিয়া এরাপোর্টে দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর গুনে সকাল ৮ঘটিকায় প্রত্যাশিত এয়ারলাইন্সে উঠলাম। এর আগে বহনকারি ল্যাগেজের ‘দৈর্ঘ-প্রস্থে’র মারপ্যাচে বিমান সংশ্লিষ্টদের সাথে খানিক মতোবিরোধের অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। অর্থদন্ড দিয়ে সেই যাত্রা পার হয়ে ফের যাত্রা শুরু করলাম মিশিগানের ডেট্রোয়েট’র উদ্দেশ্যে। সকাল সাড়ে আট ঘটিকায় ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইট/এয়ারটি নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায় সাড়ে দশটায়। এরই মধ্যেই মিশিগানের অভিবাসী ও মুশফিক ভাইয়ের সুহৃদ সেলিম আহমেদ ভাই তার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে হাজির কনক ভাই’সহ চারজন। গাড়ির স্ট্রীয়ারিংয়ে বসা ছিলো…….সেলিম ভাইয়ের চৌকস ভাগিনা। যাই হোক দাঁড়ানোবস্থায় নাস্তা সেরে নিলাম।
এবার যাত্রা শুরু ইলিনিয়স রাজ্যের শিকাগোর উদ্দেশ্য। শনিবারের শেষ ঘুমের পরও ‘ক্লান্তি বাবু’ কোথায় যে হারিয়ে গেছে! এরই মধ্যে প্রিয় মুশফিক ভাইয়ের নানা গল্প………খ্যাত-অখ্যাতদের হুবহু কপি করা কথাবর্তায় সব ক্লান্তি দুর হয়ে গেছে। বিকেলে পৌঁছালাম শিকাগোতে। সেখানে একটি অনুষ্ঠান কাভার করলাম। যদিও এটা ছিল আমার ব্যক্তিগত ভ্রমণ। কিন্তু কথায় আছে না!! ‘ঢেকি স্বর্গে গেলেও নাকি বারা ভানে?’ তার আগে অবশ্যই বিমানবন্দরের ল্যাগেজ’র বিড়ম্বনা দুরিকরণে ‘শিকাগে লেখা’ একটি ট্রাভেল/সাইড ব্যাগ কিনে নিলাম। কারণ রাত পোহালেই ৪ অক্টোবর মঙ্গলবার ‘মিশিগান টু ওয়াশিংটন ডিসি’র ফ্লাইট। তাই পূর্বের বিড়ম্বনায় যাতে না পড়তে হয় সেই ব্যবস্থাও সেরে নিলাম।
শিকাগোর অনুষ্ঠানের সংবাদটির লোভ সামলাতে পারলাম না। নিউজ পাঠাতে ভিডিও আপলোডেই প্রায় মধ্যরাত। খানা-পিনা, কুশলাদি সেরে মিশিগানের সেই ৫জনের যাত্রা শুরু। এর মাঝে আরেক সহকর্মী যিনি বর্তমানে মিশিগানের হামট্রাকের বাসিন্দা। সেই ইকবাল ফেরদৌস ভাইয়ের বাসায় আমাদের দাওয়াত ছিল আগ থেকেই নির্ধারিত। ওয়াদা রক্ষার স্বার্থে আমাদের সাথে ‘মি. ইকবাল ও মিসেস ইকবালের’ও ঘুম হারাম। তাদের প্রতিক্ষার অবসান ঘটলো মঙ্গলবার ভোরের সূর্যদোয়ের ঠিক পূর্ব মুহুর্তে। ‘শিকাগো থেকে মিশিগানে’ যখন আমরা পৌঁছাই; তখন ভোর রাত প্রায় সাড়ে পাঁচটা। যাই হোক ওয়াদা মতো ইকবাল ভাইয়ের বাসায় ভুড়িভোজ সেরে নিলাম। নানা পদের ‘খাওয়া দাওয়া’র তালিকা লিখতে গেলে অনেক দীর্ঘ হবে। তবে, মিসেস ইকবাল ফেরদৌস ভাবীর হাতের ‘মেঙো ফ্লেবার’র ‘টি তথা চা’ ছিল এক কথায় অসাধারণ। ‘খাওয়া-দাওয়া গল্প-গুজব’ শেষে মুশফিক ভাই ও কনক ভাইকে নিয়ে নির্ধারিত হোটেলের দিকে রওয়ানা হলেন সেলিম ভাই। আমি অধম তৈরী হয়ে নিলাম। ৭টার মধ্যে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে যেতে হবে। অবশ্য একটু দেরি হলো। নতুন সংসার, অভিজাত বাড়ী ও দু’দুটো গাড়ির মালিক সহকর্মী ইকবাল ফেরদৌস……….ভোঁ টান দিলেন তার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। ঠিকমতই বিমানে উঠলাম।
kayes-wdc-2এবার একা। গন্তব্য ওয়াশিংটন ডিসি। শরীরের ‘ক্লান্ত বাবু’ এরই মধ্যে মাথা ছাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। সকাল ৯টায় ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইট সোড়া দশটার মধ্যেই অবতরণ করে। বাইরে অপেক্ষমান মুশফিক ভাইয়ের আরেক সুহৃদ কামাল নাজমুল ভাই। আমাকে অভ্যর্থনা জানালেন। কুশল বিনিময়ের মাঝে কামাল ভাইয়ের আবদার, কিছু খেতে হবে। কিন্তু টানা নির্ঘুম রাত-দিন পার করা ও দীর্ঘ জার্নির প্রভাব অনুভব করতে লাগলাম। বললাম, ‘ভাই আমি ঘুম খাবো’। ফোন দিলাম সুহৃদ ও সহকর্মী জাহিদ রহমানকে। তিনি তার বাসায় অভ্যর্থনা জানালেন। পুরো রুম ছেড়ে দিলেন। মাত্র পাঁচ মাস হলো ‘মিসেস জাহিদ’ এক কন্যা সন্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী হলেন। আমাকে ‘নয়েজ ফ্রি’ ঘুমানোর জন্য তাঁরা পুরো ফ্ল্যাট ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলেন। দুপুর ১টা থেকে একটানা ৬টা অবদি ঘুম। এরই মধ্যে অবশ্য আরেকটি ফ্লাইটে মুশফিক ও কনক ভাই ওয়াশিংটন পৌঁছালেন। ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে জাহিদ ভাবীর হাতের অসাধরণ ‘লাঞ্চ কাম ডিনার’ সারলাম। এরপর পুরো প্রাণ ফিরে পেলাম। মনে হলো এবার আরো ২৪ ঘন্টা নির্ঘুম থাকতে পারবো। যাই হোক। কামাল ভাই এসে নিয়ে গেলেন। পরিচয় হলাম……….নাম না জানা অনেকের সাথে। এজিএম হোসেন ভাই, খালিদ তফাদার ভাই, ম্যারিয়ট হোটেলের জাকির ভাই’সহ অনেকে মিলে রেস্টুরেন্টে ফের রাতের খাবার। চলে গেলাম ম্যারিয়টে। রাতের ঘুমটাও ভালো হয়েছে। যদিও ‘নাক ডাকা’ নিয়ে নান হাসি তামাশার অবতারণা ঘটেছে। কিন্তু আমার নাকের অবস্থা ভালো ছিলো বিধায় বেঁচে গেছি।
kayes-wdc-3বুধবার সকালে উঠে ফ্রেস ও উচ্ছ্বসিত মনে খালিদ তফাদার ভাইয়ে গাড়ি করে স্টেট ডিপার্টমেন্টর উদ্দ্যেশে রওনা দিলাম ‘কনক-মুশফিক ও কায়েস’র মিশেলে আমরা ‘তিন রতœ’। চলতি পথে বাংলাদেশী মালিকানার একটু রেস্টুরেন্টে ইলিশ (পদ্মার না) ভোজন। বলা যেতে পারে ‘ব্রেকফাস্ট+লাঞ্চ=ব্রাঞ্চ’ সেরে নিলাম। এক রতœকে রেখেই আমি আর মুশফিক ভাই ব্রিফিংয়ে অংশ নিলাম। অতীতে নিউইয়র্কের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ফরেন প্রেস সেন্টারের বিভিন্ন ব্রিফিংয়ে অংশ নেয়া হলেও. এই প্রথম প্রিয় সহকর্মী মুশফিকুল ফজল আনরসারী ভাইয়ের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট তথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালেয় ব্রিফিংয়ে হাজির ছিলাম। বাংলাদেশী সাংবাদিক মূলত: আমরা দু’জন। ব্রিফিং শেষে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি মুখপাত্র ‘মার্ক টোনার’র সাথে পরিচয় হলাম। কুশল বিনিময় হলো। তিনি সেক্রেটারি অব স্টেট ‘জন কেরি’র বাংলাদেশ সফর’’সহ নানা বিষয়ে আমাদের সাথে তার অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট তথা ‘হ্যারিস এন ট্রুম্যান বিল্ডিং’র সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে ইতিহাসের অংশ হতে চাইলাম। ছবি তোলার জন্য শিকাগো থেকে স্টেট ডিপার্টমেন্টে আসা দু’জন ললনা সুন্দরির সাহায্য চাইলাম। আমি আর মুশফিক ভাই দাঁড়িয়ে ওই দুই শিকাগো ললনার আঙুলের পরসে বন্দি হলাম। এরপর চারজনের যৌথ প্রজোযনায় নিজস্বী/সেলফি………….!!
kayes-wdc-5স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্রিফিং শেষে গেলাম ওয়াশিংটন ন্যাশনাল প্রেসক্লাবে। দুপুরে খাবার হিসেবে ‘পপক্রন’ ও কয়েক চিলতা ‘ফল (ফ্রুটস)’ এবং ‘কপির’ স্বাদ গ্রহণ করলাম। যুক্তরাষ্ট্রের ও মূলধারার সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ওয়াশিংটন ন্যাশনাল প্রেসক্লাব’র সুবিশাল নিজস্ব ভবনে ‘ফরেন প্রেস সেন্টার’ সহ নান ধরণের অফিস ও শপিং মল রয়েছে। এক কথায় একটি স্থায়ী ভবন দিয়েই ‘প্রেসক্লাবটি’ তাদের ব্যয়ের বেশীর ভাগ অর্থ সংগ্রহ করে। শেষে স্থানীয় হোসেন ও নাজমুল ভাইয়ের ভালোবাসার আথিতিয়তায় ‘থাই-স্যুপ’ ডিনার শেষ করলাম।
ডিনার শেষে হোটেলে ম্যারিয়টে। ‘ব্যাগ এন্ড ব্যাগেজ’ নিয়ে বের হলাম বাস স্টেশনের উদ্দেশ্যে। কামাল নাজমুল ভাই নামিয়ে দিলেন। টিকিটও কেটে দিলেন। বুধবার রাত পৌনে বারোটার বাস ওয়াশিংটন ডিসি ছেড়ে নিউইয়র্কে পৌঁছালো বৃহস্পতিবার ভোর চারটায়। কাজিনকে ফোন দিলাম। উনি ‘জিম /ব্যায়াম’ না করেই আমাকে ব্রঙ্কসের বাসায় নামিয়ে দিলেন। ফিরলাম যান্ত্রিক শহর ও বিশ্ব রাজধানী নিউইয়র্ক সিটিতে। খানিকটা ঘুমিয়ে প্রিয় কর্মস্থল টাইম টেলিভিশন অফিসে গেলাম। যথারীতি রাত ১০টার সংবাদ বুলেটিন তৈরী করা। এক প্রকার যুদ্ধ বলা চলে। তবে, কাজটাকে ইনজয় করি বলে……..সমস্যা কম হয়।
বৃহস্পতিবার অফিস শেষে বাসা ফিরলাম। মধ্যরাত তখন দেড়টা। লেখাটি যখন লিখছি; রান্না শুরু করলাম। জ্বলছে গ্যাসের চুলো আর চলছে আমার লেখার হাত। এখন শুক্রবার দিনের প্রথম প্রহর পেরিয়ে ভোররাত সাড়ে চার ঘটিকা। সূর্যের আলোর ফোটার অপেক্ষায়। তবে খানিক ঘুম দেবার প্রস্তুতি চলছে। আল্লাহ চাহে তো, জুমার নামাজ আদায় করে অফিস যাবো।
যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ আড়াই বছরের প্রবাস জীবনে তিন দিনের ঝটিকা সফরে ‘তিন তিন’টি রাজ্য জয় করে ফেললাম। যদিও এর আগে একবার নিউইয়র্কের পাশের রাজ্য নিউজার্সিতে যাওয়া হয়েছে। তাও ‘ডে অফের’ দিন। ভাবলাম ভ্রমণের অভিজ্ঞতা একটু লিখে ফেলি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের প্রবাস জীবনে এই প্রথম ক’দিনের ম্যারাথন’ সফরে একাধিক রাজ্য সফরের অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। এক কথায় মরে যাওয়া রাজ্য মিশিগানের ডেট্রোয়েট ও বাংলাদেশী অধ্যুষিত হ্যামট্রাকের সংক্ষিপ্ত সফরে দেখলাম, কি ভাবে প্রবাসী বাংলাদেশীরা পুরো মিশিগানের সামাজিক ও অর্থনীতির চালিকা শক্তিতে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তবে তিনদিনের সফর হলেও মূলত ছিলাম ‘আড়াই দিন’।
যা বলছিলাম। ওয়াশিংটন ডিসি। ডিস্ট্রিক্ট অব কলোম্বিয়া। ভার্জিনিয়া ও ম্যারিল্যান্ডের মাঝখানে গড়ে উঠা যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী তথা ওয়াশিংটন ডিসি। খুবই অভিভূত হলাম। এত চমৎকার একটি শহর। ৯/১১ ঘটনার পর পুরো শহরটি এক কথায় গোপন ক্যামেরার নজরে বন্দি। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বলয়ে জন সাধারণের মাঝে নেই কোন আতঙ্ক, নেই কোন পুলিশী হয়রাণি। বিশেষ করে ‘হোয়াইট হাউজ ও স্টেট ডিপার্টমেন্ট’ এবং ‘ক্যাপিটল হিল’ এলাকা ঘিরে এমন নিরাপত্তা বেষ্টনি রয়েছে, যা তথ্য না থাকলে কারো বোঝার উপায় নেই।
ভুলে গাড়ি করে কিংবা যে কোন উপায় অস্ত্র তথা গোলাবারুদ বহন করলে স্ক্যানিংয়ে অটো ধরা পড়বে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে যাওয়া পথে অনেক দৃশ্য অবলোকন করলাম। মোবাইল ফোনের ফটো ফ্রেমে বন্দি হলাম। এছাড়াও ‘সেলফি তথা নিজস্বী’ও তোলা হয়েছে গুটি কয়েক। ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসিদের’ গড়া ‘হোয়াইট হাউজের’ পেছনের দিকটায় তথা ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল মলের কাছে শোভা পাচ্ছে দীর্ঘ টাওয়ার ‘ওয়াশিংটন মনোমেন্ট’ যার উপর উঠে পুরো ডিসিকে এক নজরে দেখা সম্ভব। ঠিক পাশেই গড়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম ‘আফ্রিকান-আমেরিকান মিউজিয়াম’ তথা ‘যাদুঘর’। বাইরে থেকে দেখেছি। ভেতরে যাওয়ার সময় সুযোগ হয়ে উঠেনি। সম্প্রতি দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট এই মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা শেষে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। যেখানে আমেরিকার ইতিহাসে কালো মানুষদের ‘দাস-প্রথা’সহ নানা ‘অতীত ইতিহাস’ তুলে ধরা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রর রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির যে অভিজ্ঞতাটি আমি সঞ্চার করি; তাহলো আমি যখন প্রাইভেট গাড়িতে করে ঘুরে বেড়াচ্ছি, শুভাকাঙ্খি কামাল নাজমুল ভাইকে প্রশ্ন করলাম, ‘ভাইজান, ক্যালিফোর্নিয়া এভিনিউ, পেনসিলভেনিয়া, ফ্লোরিডা ও নিউইয়র্ক এবং নিউজার্সির’ নামে এভিনিউ দেখছি। জবাবে তিনি বললেন, পুরো আমেরিকার ৫০টি রাজ্যের নামেই রাজধানী ডিসিতে এভিনিউ রয়েছে। সত্যিই এটা জানা ছিলো না আমার।
এর আগে কয়েক ঘন্টার ঝটিকা সফরে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক অভিজাত ও ইতিহাসের সাক্ষি জানলাম একটি ইমারত নির্মাণ ঘিরে। ইলিনিয়সের রাজ্যের ‘শিকাগো’ সিটি। যে শহরটির সর্বোচ্চ ভবন ‘সিয়ার্স টাওয়ার’ বর্তমান ‘উইলস টাওয়ার’র গর্বিত নির্মাতা ও ডিজাইনার ছিলেন বাংলাদেশের এফ. আর (ফজলুর রহমান) খান। ১৯৭৪ সালে প্রায় ১৪৫০ ফিটের সম্পূর্ণ স্টীলের নির্ভর উঁচু ভবনটি নির্মাণ করে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেন তিনি। ১৯২৯ সালে জন্ম নেয়া এফ আর খান মাত্র ৫২ বছরে মৃত্যুবরণ করেণ ১৯৮২ সালে। যিনি ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক শফিক রেহমানের ক্লাস মেট।
সত্যিই বাংলাদেশীরা আজ পুরো বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে একেক একটি নক্ষত্র। অভিভাসী বান্ধব নিউইয়র্ক সিটিতে তো প্রবাসী বাংলাদেশীদের দাপুটে অবস্থান। আর অন্যান্য রাজ্যে তো রয়েছে। অর্থনৈতিক ভাবে ভঙ্গুর মিশিগানকে নতুন করে সাজিয়ে তুলেছে বাংলাদেশীরা। আফসোস! নিজ জন্মভূমি দেশের মাটিতে মর্যাদা নেই তাদের। এমন আক্ষেপ অনেকের। ক্ষমতা লোভের রাজনীতি আর ভঙ্গুর রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দেশের স্বাধীনতাটাই এখন অর্থহীন মনে হয় সবার অনেকের কাছে। হত্যা, খুন, গুম, ধর্ষণ, দুর্নীতি ও বিচারহীনতার সাথে নতুন যুক্ত হচ্ছে মানবিক ও সামাজিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়।
অসংখ্য তনু, মিতা ও রিতা হত্যার মিছিলে নতুন যুক্ত হয়েছে খাদিজা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী আজ সংসদে দাঁড়িয়ে বদরুলকে দলীয় ভাবে বিবেচনা করে সংবাদ প্রকাশের ক্ষোভ জানান। যদিও বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন! আমার কিছু বলার নাই। শুধু আশা করবো মাগুরায় ছাত্রলীগের গুলিতে মাতৃগর্ভে শিশু গুলিবিদ্ধসহ একজন নিহতের ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামি ও জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুমন সেনের মতো যেনো বদরুলরা মুক্তি না পায়। এর থেকে জাতি মুক্তি পাবে কবে? সেই দেখার প্রতিক্ষায়।………………….!

লেখক: শিবলী চৌধুরী কায়েস
বিশেষ প্রতিনিধি
টাইম টেলিভিশন
নিউইয়র্ক,যুক্তরাষ্ট্র
অক্টোবর ৭, ২০১৬

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

প্রবাস জীবন : আড়াই বছরে-তিন দিনের সফর!

প্রকাশের সময় : ০২:৩৫:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ অক্টোবর ২০১৬

শিবলী চৌধুরী কায়েস: শেষ ঘুমিয়েছি গেল ১ অক্টোবর শনিবার। রোববার কর্মস্থল টাইম টেলিভশনে গেলাম। সাথে ছিল প্রিয় সহকর্মী হাবিব ভাইয়ের দেয়া বেশ ক’টি ট্রাভেল সংক্রান্ত উপহার ও নিজের কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। সেখান থেকেই অফিসের কাজকর্ম শেষ হতেই মধ্যরাত পার। সালাহউদ্দিন (গুড মর্নিং) ভাই ঘরে ফেরার পথে আমাকে লাগোর্ডিয়াতে ফেলে যান। ততক্ষনে ৩ অক্টোবর সোমবার দিনের প্রথম প্রহর কেটে ভোরের আলো ফোটা নতুন সকাল। নিউইয়র্কের লাগোর্ডিয়া এরাপোর্টে দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর গুনে সকাল ৮ঘটিকায় প্রত্যাশিত এয়ারলাইন্সে উঠলাম। এর আগে বহনকারি ল্যাগেজের ‘দৈর্ঘ-প্রস্থে’র মারপ্যাচে বিমান সংশ্লিষ্টদের সাথে খানিক মতোবিরোধের অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। অর্থদন্ড দিয়ে সেই যাত্রা পার হয়ে ফের যাত্রা শুরু করলাম মিশিগানের ডেট্রোয়েট’র উদ্দেশ্যে। সকাল সাড়ে আট ঘটিকায় ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইট/এয়ারটি নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায় সাড়ে দশটায়। এরই মধ্যেই মিশিগানের অভিবাসী ও মুশফিক ভাইয়ের সুহৃদ সেলিম আহমেদ ভাই তার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে হাজির কনক ভাই’সহ চারজন। গাড়ির স্ট্রীয়ারিংয়ে বসা ছিলো…….সেলিম ভাইয়ের চৌকস ভাগিনা। যাই হোক দাঁড়ানোবস্থায় নাস্তা সেরে নিলাম।
এবার যাত্রা শুরু ইলিনিয়স রাজ্যের শিকাগোর উদ্দেশ্য। শনিবারের শেষ ঘুমের পরও ‘ক্লান্তি বাবু’ কোথায় যে হারিয়ে গেছে! এরই মধ্যে প্রিয় মুশফিক ভাইয়ের নানা গল্প………খ্যাত-অখ্যাতদের হুবহু কপি করা কথাবর্তায় সব ক্লান্তি দুর হয়ে গেছে। বিকেলে পৌঁছালাম শিকাগোতে। সেখানে একটি অনুষ্ঠান কাভার করলাম। যদিও এটা ছিল আমার ব্যক্তিগত ভ্রমণ। কিন্তু কথায় আছে না!! ‘ঢেকি স্বর্গে গেলেও নাকি বারা ভানে?’ তার আগে অবশ্যই বিমানবন্দরের ল্যাগেজ’র বিড়ম্বনা দুরিকরণে ‘শিকাগে লেখা’ একটি ট্রাভেল/সাইড ব্যাগ কিনে নিলাম। কারণ রাত পোহালেই ৪ অক্টোবর মঙ্গলবার ‘মিশিগান টু ওয়াশিংটন ডিসি’র ফ্লাইট। তাই পূর্বের বিড়ম্বনায় যাতে না পড়তে হয় সেই ব্যবস্থাও সেরে নিলাম।
শিকাগোর অনুষ্ঠানের সংবাদটির লোভ সামলাতে পারলাম না। নিউজ পাঠাতে ভিডিও আপলোডেই প্রায় মধ্যরাত। খানা-পিনা, কুশলাদি সেরে মিশিগানের সেই ৫জনের যাত্রা শুরু। এর মাঝে আরেক সহকর্মী যিনি বর্তমানে মিশিগানের হামট্রাকের বাসিন্দা। সেই ইকবাল ফেরদৌস ভাইয়ের বাসায় আমাদের দাওয়াত ছিল আগ থেকেই নির্ধারিত। ওয়াদা রক্ষার স্বার্থে আমাদের সাথে ‘মি. ইকবাল ও মিসেস ইকবালের’ও ঘুম হারাম। তাদের প্রতিক্ষার অবসান ঘটলো মঙ্গলবার ভোরের সূর্যদোয়ের ঠিক পূর্ব মুহুর্তে। ‘শিকাগো থেকে মিশিগানে’ যখন আমরা পৌঁছাই; তখন ভোর রাত প্রায় সাড়ে পাঁচটা। যাই হোক ওয়াদা মতো ইকবাল ভাইয়ের বাসায় ভুড়িভোজ সেরে নিলাম। নানা পদের ‘খাওয়া দাওয়া’র তালিকা লিখতে গেলে অনেক দীর্ঘ হবে। তবে, মিসেস ইকবাল ফেরদৌস ভাবীর হাতের ‘মেঙো ফ্লেবার’র ‘টি তথা চা’ ছিল এক কথায় অসাধারণ। ‘খাওয়া-দাওয়া গল্প-গুজব’ শেষে মুশফিক ভাই ও কনক ভাইকে নিয়ে নির্ধারিত হোটেলের দিকে রওয়ানা হলেন সেলিম ভাই। আমি অধম তৈরী হয়ে নিলাম। ৭টার মধ্যে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে যেতে হবে। অবশ্য একটু দেরি হলো। নতুন সংসার, অভিজাত বাড়ী ও দু’দুটো গাড়ির মালিক সহকর্মী ইকবাল ফেরদৌস……….ভোঁ টান দিলেন তার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। ঠিকমতই বিমানে উঠলাম।
kayes-wdc-2এবার একা। গন্তব্য ওয়াশিংটন ডিসি। শরীরের ‘ক্লান্ত বাবু’ এরই মধ্যে মাথা ছাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। সকাল ৯টায় ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইট সোড়া দশটার মধ্যেই অবতরণ করে। বাইরে অপেক্ষমান মুশফিক ভাইয়ের আরেক সুহৃদ কামাল নাজমুল ভাই। আমাকে অভ্যর্থনা জানালেন। কুশল বিনিময়ের মাঝে কামাল ভাইয়ের আবদার, কিছু খেতে হবে। কিন্তু টানা নির্ঘুম রাত-দিন পার করা ও দীর্ঘ জার্নির প্রভাব অনুভব করতে লাগলাম। বললাম, ‘ভাই আমি ঘুম খাবো’। ফোন দিলাম সুহৃদ ও সহকর্মী জাহিদ রহমানকে। তিনি তার বাসায় অভ্যর্থনা জানালেন। পুরো রুম ছেড়ে দিলেন। মাত্র পাঁচ মাস হলো ‘মিসেস জাহিদ’ এক কন্যা সন্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী হলেন। আমাকে ‘নয়েজ ফ্রি’ ঘুমানোর জন্য তাঁরা পুরো ফ্ল্যাট ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলেন। দুপুর ১টা থেকে একটানা ৬টা অবদি ঘুম। এরই মধ্যে অবশ্য আরেকটি ফ্লাইটে মুশফিক ও কনক ভাই ওয়াশিংটন পৌঁছালেন। ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে জাহিদ ভাবীর হাতের অসাধরণ ‘লাঞ্চ কাম ডিনার’ সারলাম। এরপর পুরো প্রাণ ফিরে পেলাম। মনে হলো এবার আরো ২৪ ঘন্টা নির্ঘুম থাকতে পারবো। যাই হোক। কামাল ভাই এসে নিয়ে গেলেন। পরিচয় হলাম……….নাম না জানা অনেকের সাথে। এজিএম হোসেন ভাই, খালিদ তফাদার ভাই, ম্যারিয়ট হোটেলের জাকির ভাই’সহ অনেকে মিলে রেস্টুরেন্টে ফের রাতের খাবার। চলে গেলাম ম্যারিয়টে। রাতের ঘুমটাও ভালো হয়েছে। যদিও ‘নাক ডাকা’ নিয়ে নান হাসি তামাশার অবতারণা ঘটেছে। কিন্তু আমার নাকের অবস্থা ভালো ছিলো বিধায় বেঁচে গেছি।
kayes-wdc-3বুধবার সকালে উঠে ফ্রেস ও উচ্ছ্বসিত মনে খালিদ তফাদার ভাইয়ে গাড়ি করে স্টেট ডিপার্টমেন্টর উদ্দ্যেশে রওনা দিলাম ‘কনক-মুশফিক ও কায়েস’র মিশেলে আমরা ‘তিন রতœ’। চলতি পথে বাংলাদেশী মালিকানার একটু রেস্টুরেন্টে ইলিশ (পদ্মার না) ভোজন। বলা যেতে পারে ‘ব্রেকফাস্ট+লাঞ্চ=ব্রাঞ্চ’ সেরে নিলাম। এক রতœকে রেখেই আমি আর মুশফিক ভাই ব্রিফিংয়ে অংশ নিলাম। অতীতে নিউইয়র্কের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ফরেন প্রেস সেন্টারের বিভিন্ন ব্রিফিংয়ে অংশ নেয়া হলেও. এই প্রথম প্রিয় সহকর্মী মুশফিকুল ফজল আনরসারী ভাইয়ের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট তথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালেয় ব্রিফিংয়ে হাজির ছিলাম। বাংলাদেশী সাংবাদিক মূলত: আমরা দু’জন। ব্রিফিং শেষে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি মুখপাত্র ‘মার্ক টোনার’র সাথে পরিচয় হলাম। কুশল বিনিময় হলো। তিনি সেক্রেটারি অব স্টেট ‘জন কেরি’র বাংলাদেশ সফর’’সহ নানা বিষয়ে আমাদের সাথে তার অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট তথা ‘হ্যারিস এন ট্রুম্যান বিল্ডিং’র সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে ইতিহাসের অংশ হতে চাইলাম। ছবি তোলার জন্য শিকাগো থেকে স্টেট ডিপার্টমেন্টে আসা দু’জন ললনা সুন্দরির সাহায্য চাইলাম। আমি আর মুশফিক ভাই দাঁড়িয়ে ওই দুই শিকাগো ললনার আঙুলের পরসে বন্দি হলাম। এরপর চারজনের যৌথ প্রজোযনায় নিজস্বী/সেলফি………….!!
kayes-wdc-5স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্রিফিং শেষে গেলাম ওয়াশিংটন ন্যাশনাল প্রেসক্লাবে। দুপুরে খাবার হিসেবে ‘পপক্রন’ ও কয়েক চিলতা ‘ফল (ফ্রুটস)’ এবং ‘কপির’ স্বাদ গ্রহণ করলাম। যুক্তরাষ্ট্রের ও মূলধারার সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ওয়াশিংটন ন্যাশনাল প্রেসক্লাব’র সুবিশাল নিজস্ব ভবনে ‘ফরেন প্রেস সেন্টার’ সহ নান ধরণের অফিস ও শপিং মল রয়েছে। এক কথায় একটি স্থায়ী ভবন দিয়েই ‘প্রেসক্লাবটি’ তাদের ব্যয়ের বেশীর ভাগ অর্থ সংগ্রহ করে। শেষে স্থানীয় হোসেন ও নাজমুল ভাইয়ের ভালোবাসার আথিতিয়তায় ‘থাই-স্যুপ’ ডিনার শেষ করলাম।
ডিনার শেষে হোটেলে ম্যারিয়টে। ‘ব্যাগ এন্ড ব্যাগেজ’ নিয়ে বের হলাম বাস স্টেশনের উদ্দেশ্যে। কামাল নাজমুল ভাই নামিয়ে দিলেন। টিকিটও কেটে দিলেন। বুধবার রাত পৌনে বারোটার বাস ওয়াশিংটন ডিসি ছেড়ে নিউইয়র্কে পৌঁছালো বৃহস্পতিবার ভোর চারটায়। কাজিনকে ফোন দিলাম। উনি ‘জিম /ব্যায়াম’ না করেই আমাকে ব্রঙ্কসের বাসায় নামিয়ে দিলেন। ফিরলাম যান্ত্রিক শহর ও বিশ্ব রাজধানী নিউইয়র্ক সিটিতে। খানিকটা ঘুমিয়ে প্রিয় কর্মস্থল টাইম টেলিভিশন অফিসে গেলাম। যথারীতি রাত ১০টার সংবাদ বুলেটিন তৈরী করা। এক প্রকার যুদ্ধ বলা চলে। তবে, কাজটাকে ইনজয় করি বলে……..সমস্যা কম হয়।
বৃহস্পতিবার অফিস শেষে বাসা ফিরলাম। মধ্যরাত তখন দেড়টা। লেখাটি যখন লিখছি; রান্না শুরু করলাম। জ্বলছে গ্যাসের চুলো আর চলছে আমার লেখার হাত। এখন শুক্রবার দিনের প্রথম প্রহর পেরিয়ে ভোররাত সাড়ে চার ঘটিকা। সূর্যের আলোর ফোটার অপেক্ষায়। তবে খানিক ঘুম দেবার প্রস্তুতি চলছে। আল্লাহ চাহে তো, জুমার নামাজ আদায় করে অফিস যাবো।
যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ আড়াই বছরের প্রবাস জীবনে তিন দিনের ঝটিকা সফরে ‘তিন তিন’টি রাজ্য জয় করে ফেললাম। যদিও এর আগে একবার নিউইয়র্কের পাশের রাজ্য নিউজার্সিতে যাওয়া হয়েছে। তাও ‘ডে অফের’ দিন। ভাবলাম ভ্রমণের অভিজ্ঞতা একটু লিখে ফেলি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের প্রবাস জীবনে এই প্রথম ক’দিনের ম্যারাথন’ সফরে একাধিক রাজ্য সফরের অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। এক কথায় মরে যাওয়া রাজ্য মিশিগানের ডেট্রোয়েট ও বাংলাদেশী অধ্যুষিত হ্যামট্রাকের সংক্ষিপ্ত সফরে দেখলাম, কি ভাবে প্রবাসী বাংলাদেশীরা পুরো মিশিগানের সামাজিক ও অর্থনীতির চালিকা শক্তিতে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তবে তিনদিনের সফর হলেও মূলত ছিলাম ‘আড়াই দিন’।
যা বলছিলাম। ওয়াশিংটন ডিসি। ডিস্ট্রিক্ট অব কলোম্বিয়া। ভার্জিনিয়া ও ম্যারিল্যান্ডের মাঝখানে গড়ে উঠা যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী তথা ওয়াশিংটন ডিসি। খুবই অভিভূত হলাম। এত চমৎকার একটি শহর। ৯/১১ ঘটনার পর পুরো শহরটি এক কথায় গোপন ক্যামেরার নজরে বন্দি। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বলয়ে জন সাধারণের মাঝে নেই কোন আতঙ্ক, নেই কোন পুলিশী হয়রাণি। বিশেষ করে ‘হোয়াইট হাউজ ও স্টেট ডিপার্টমেন্ট’ এবং ‘ক্যাপিটল হিল’ এলাকা ঘিরে এমন নিরাপত্তা বেষ্টনি রয়েছে, যা তথ্য না থাকলে কারো বোঝার উপায় নেই।
ভুলে গাড়ি করে কিংবা যে কোন উপায় অস্ত্র তথা গোলাবারুদ বহন করলে স্ক্যানিংয়ে অটো ধরা পড়বে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে যাওয়া পথে অনেক দৃশ্য অবলোকন করলাম। মোবাইল ফোনের ফটো ফ্রেমে বন্দি হলাম। এছাড়াও ‘সেলফি তথা নিজস্বী’ও তোলা হয়েছে গুটি কয়েক। ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসিদের’ গড়া ‘হোয়াইট হাউজের’ পেছনের দিকটায় তথা ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল মলের কাছে শোভা পাচ্ছে দীর্ঘ টাওয়ার ‘ওয়াশিংটন মনোমেন্ট’ যার উপর উঠে পুরো ডিসিকে এক নজরে দেখা সম্ভব। ঠিক পাশেই গড়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম ‘আফ্রিকান-আমেরিকান মিউজিয়াম’ তথা ‘যাদুঘর’। বাইরে থেকে দেখেছি। ভেতরে যাওয়ার সময় সুযোগ হয়ে উঠেনি। সম্প্রতি দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট এই মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা শেষে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। যেখানে আমেরিকার ইতিহাসে কালো মানুষদের ‘দাস-প্রথা’সহ নানা ‘অতীত ইতিহাস’ তুলে ধরা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রর রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির যে অভিজ্ঞতাটি আমি সঞ্চার করি; তাহলো আমি যখন প্রাইভেট গাড়িতে করে ঘুরে বেড়াচ্ছি, শুভাকাঙ্খি কামাল নাজমুল ভাইকে প্রশ্ন করলাম, ‘ভাইজান, ক্যালিফোর্নিয়া এভিনিউ, পেনসিলভেনিয়া, ফ্লোরিডা ও নিউইয়র্ক এবং নিউজার্সির’ নামে এভিনিউ দেখছি। জবাবে তিনি বললেন, পুরো আমেরিকার ৫০টি রাজ্যের নামেই রাজধানী ডিসিতে এভিনিউ রয়েছে। সত্যিই এটা জানা ছিলো না আমার।
এর আগে কয়েক ঘন্টার ঝটিকা সফরে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক অভিজাত ও ইতিহাসের সাক্ষি জানলাম একটি ইমারত নির্মাণ ঘিরে। ইলিনিয়সের রাজ্যের ‘শিকাগো’ সিটি। যে শহরটির সর্বোচ্চ ভবন ‘সিয়ার্স টাওয়ার’ বর্তমান ‘উইলস টাওয়ার’র গর্বিত নির্মাতা ও ডিজাইনার ছিলেন বাংলাদেশের এফ. আর (ফজলুর রহমান) খান। ১৯৭৪ সালে প্রায় ১৪৫০ ফিটের সম্পূর্ণ স্টীলের নির্ভর উঁচু ভবনটি নির্মাণ করে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেন তিনি। ১৯২৯ সালে জন্ম নেয়া এফ আর খান মাত্র ৫২ বছরে মৃত্যুবরণ করেণ ১৯৮২ সালে। যিনি ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক শফিক রেহমানের ক্লাস মেট।
সত্যিই বাংলাদেশীরা আজ পুরো বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে একেক একটি নক্ষত্র। অভিভাসী বান্ধব নিউইয়র্ক সিটিতে তো প্রবাসী বাংলাদেশীদের দাপুটে অবস্থান। আর অন্যান্য রাজ্যে তো রয়েছে। অর্থনৈতিক ভাবে ভঙ্গুর মিশিগানকে নতুন করে সাজিয়ে তুলেছে বাংলাদেশীরা। আফসোস! নিজ জন্মভূমি দেশের মাটিতে মর্যাদা নেই তাদের। এমন আক্ষেপ অনেকের। ক্ষমতা লোভের রাজনীতি আর ভঙ্গুর রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দেশের স্বাধীনতাটাই এখন অর্থহীন মনে হয় সবার অনেকের কাছে। হত্যা, খুন, গুম, ধর্ষণ, দুর্নীতি ও বিচারহীনতার সাথে নতুন যুক্ত হচ্ছে মানবিক ও সামাজিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়।
অসংখ্য তনু, মিতা ও রিতা হত্যার মিছিলে নতুন যুক্ত হয়েছে খাদিজা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী আজ সংসদে দাঁড়িয়ে বদরুলকে দলীয় ভাবে বিবেচনা করে সংবাদ প্রকাশের ক্ষোভ জানান। যদিও বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন! আমার কিছু বলার নাই। শুধু আশা করবো মাগুরায় ছাত্রলীগের গুলিতে মাতৃগর্ভে শিশু গুলিবিদ্ধসহ একজন নিহতের ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামি ও জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুমন সেনের মতো যেনো বদরুলরা মুক্তি না পায়। এর থেকে জাতি মুক্তি পাবে কবে? সেই দেখার প্রতিক্ষায়।………………….!

লেখক: শিবলী চৌধুরী কায়েস
বিশেষ প্রতিনিধি
টাইম টেলিভিশন
নিউইয়র্ক,যুক্তরাষ্ট্র
অক্টোবর ৭, ২০১৬